কৃতজ্ঞতা প্রকাশে জীবন-জীবিকার প্রশস্ততা

পবিত্র কুরআনের সূচনা হয়েছে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ তথা দয়াময় রাব্বুল আলামিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশক শব্দের মাধ্যমে। জান্নাতিরা জান্নাতে প্রবেশ করে সর্বপ্রথম মহান রবেরই কৃতজ্ঞতা আদায় করবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের উপাসনা করছো, তারা তোমাদের রিজিক প্রদানের মালিক নয়। অতএব, তোমরা আল্লাহর কাছে রিজিক কামনা করো, তার ইবাদত ও কৃতজ্ঞতা আদায় করো’ (সুরা আনকাবুত : ১৭)। আরও বলেন, ‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব এবং আমার কৃতজ্ঞতা আদায় করো, অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ (সুরা বাকারা : ১৫২)
পৃথিবীতে প্রতিটি মুহূর্তে আমরা মহান রবের অগণিত নেয়ামত ভোগ করি। তার দয়া ও নেয়ামত ব্যতীত এক মুহূর্ত কারও বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। হৃদয়ের চোখ দিয়ে তাকালেই আমরা দেখতে পাব, তার করুণা ও নেয়ামতের চাদরে মোড়ানো আমাদের জীবন। সুস্থ দেহ, সুস্থ মন ও সুস্থ পরিবেশ সবই তাঁর নেয়ামত। তাই ভালো-মন্দ, সচ্ছলতা-অসচ্ছলতা ও সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় ধৈর্য ধারণ করা ও তাঁর প্রতি অবিচল আস্থাশীল ও কৃতজ্ঞশীল থাকা ইসলামের সুমহান শিক্ষা। কৃতজ্ঞশীল বান্দার প্রতি মহান আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট থাকেন এবং তাকে নেয়ামতরাজি আরও বাড়িয়ে দেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা আদায় করো তা হলে আমি অবশ্যই তোমাদের আরও বাড়িয়ে দেব। আর যদি তোমরা অস্বীকার করো তা হলে আমার আজাব অবশ্যই কঠিন।’ (সুরা ইবরাহিম : ৭)
হজরত আতা (রহ.) বলেন, আমি একবার উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে বললাম, আপনি রাসুলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে আপনার দেখা সর্বাধিক বিস্ময়কর ঘটনাটি আমাকে শোনান। এ কথা শুনে হজরত আয়েশা (রা.) অঝোরে কাঁদলেন এবং বললেন, এক রাতের ঘটনা-রাসুলুল্লাহ (সা.) আমার ঘরে এলেন এবং আমার সঙ্গে শয্যা গ্রহণ করলেন। অতঃপর তিনি বলে উঠলেন, হে আবু বকরের মেয়ে! আমাকে অনুমতি দাও, আমি আমার রবের ইবাদতে মগ্ন হব। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার সান্নিধ্য আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। কিন্তু আপনার ইচ্ছাকেই আমি আমার পছন্দের ওপর প্রাধান্য দিচ্ছি। এই বলে আমি তাঁকে অনুমতি দিলাম। তিনি উঠে গিয়ে অল্প পানি দ্বারা উত্তমভাবে ওজু করলেন। অতঃপর তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদতে লাগলেন। এমনকি তাঁর নয়নযুগল থেকে অশ্রুধারা প্রবাহিত হয়ে বুক মোবারক সিক্ত হচ্ছিল। অতঃপর তিনি রুকু করলেন, রুকুতেও কাঁদলেন। সেজদায় পড়েও কাঁদলেন। সেজদা থেকে বসেও কাঁদলেন। এভাবে কান্নারত অবস্থার মধ্যেই হজরত বেলাল (রা.) ফজরের আজান শুরু করলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আল্লাহ তো আপনার আগের ও পরের ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়েছেন। তবু আপনি কেন এত ইবাদত করছেন? তিনি বলেন, আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হব না? (বুখারি : ৪৮৩৭)
আল্লাহর রাসুল (সা.) জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিটি পরিবর্তনের সঙ্গে নতুন নতুন পরিস্থিতিতে আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা আদায় করতেন। ঘুম থেকে উঠে বলতেন, সব প্রশংসা মহান আল্লাহর, যিনি আমাদের মৃত্যু দেওয়ার পর আবার জীবন দান করেছেন। আর তাঁর কাছেই তো আমাদের একত্র করা হবে (বুখারি : ৩১১২)। খাবার গ্রহণ করার পর, নতুন জামা পরিধানের পর, সফর থেকে ফিরে এসে এ রকম বিভিন্ন ক্ষেত্রে শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা আদায় করতেন তিনি। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ওই বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন, যে বান্দা কিছু খেলে আল্লাহর প্রশংসা করে এবং কিছু পান করলেও আল্লাহর প্রশংসা করে (মুসলিম : ২৭৩৪)। সবার কর্তব্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা। আল্লাহর ফয়সালার ওপর সন্তুষ্ট থাকা। এতেই বান্দার কল্যাণ ও মঙ্গল নিহিত।
Aminur / Aminur

কোরআনে কল্যাণের পথে অগ্রগামী বলা হয়েছে যাদের

মন্দ কাজ থেকে নিজেকে বাঁচাবেন যেভাবে

কৃতজ্ঞতা প্রকাশে জীবন-জীবিকার প্রশস্ততা

কিবলা পরিবর্তনের নির্দেশ এসেছে কোরআনের যে আয়াতে

মানুষের ওপর আল্লাহর রহমত নিয়ে যা বলেছেন মসজিদুল হারামের খতিব

পবিত্র আশুরা আজ

আশুরার রোজা কবে-কয়টি রাখতে হবে

কারবালার মর্মান্তিক ইতিহাস ও শিক্ষা

পবিত্র হজ আজ, লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত আরাফা

কোরবানির পশু জবেহ করার বিধান

লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত মিনা

কুরবানির শিক্ষা গুরুত্ব ও তাৎপর্য
