হালাল সম্পদ উপার্জনের নির্দেশনা
মহান আল্লাহ পৃথিবীজুড়ে সৃষ্টি করেছেন অসংখ্য প্রাণী। প্রতিটি প্রাণীর জীবিকার দায়িত্ব মহান আল্লাহ নিজেই গ্রহণ করেছেন। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘পৃথিবীতে বিচরণশীল যত প্রকার প্রাণী রয়েছে, সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ নিয়েছেন। তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়। সবকিছুই এক সুবিন্যস্ত কিতাবে রয়েছে’ (সুরা হুদ : ৬)। কাজেই যার জন্য যে পরিমাণ রিজিক বরাদ্দ আছে সে তা পাবেই। একজন মুসলমান আন্তরিকভাবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকে এবং একমাত্র তাঁরই ওপর ভরসা রাখে।
রিজিকের ব্যাপারে এই তাওয়াক্কুল যেমন তাঁর নির্দেশ, তেমনি এর পাশাপাশি নিজের জন্য বরাদ্দকৃত সেই রিজিক অন্বেষণে কোনো উপায় অবলম্বন করাও তাঁর নির্দেশ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন জায়গায় সে নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) তালাশ করো ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও’ (সুরা জুমা : ১০)। তাই হালাল পন্থায় রিজিক অন্বেষণ করা আল্লাহর বিধান ও ইবাদত। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘হালাল জীবিকা অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ’ (মুজামুল আওসাত : ৮৬১)। অন্য বর্ণনায় রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘হালাল জীবিকা অন্বেষণ করা মূল ফরজের পর আরেকটি ফরজ।’ (মুজামুল কাবির : ৯৯৯৩)
ইসলাম সবসময় জীবনমুখী দর্শন লালন করে। জীবনমুখিতার অন্যতম প্রধান দিক হলো কাজ ও পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবিকা উপার্জন করা এবং বৈধ সম্পদের মাধ্যমে জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা। তাই শ্রম আমাদের জীবনে এক অপরিহার্য বিষয়। ইসলামে শ্রমের গুরুত্ব খুবই বেশি। শ্রম দিলে সাহায্যের জন্য মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হয় না। অনর্থক, অনৈতিক কাজ থেকেও বেঁঁচে থাকা সহজ হয়। অন্যদিকে অলস মস্তিষ্ককে শয়তান বেশি ধোঁকা দিতে পারে। ইসলাম অলসতার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং পরনির্ভরতাকে চরম অপছন্দীয় কাজ বলে ঘোষণা করেছে। স্বনির্ভরতা খুব উত্তম গুণ। নবী-রাসুল সবাই শ্রমনির্ভর ছিলেন। নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন। কুরআন-হাদিসে শ্রমের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘লা রাহবানিয়াতা ফিল ইসলাম, অর্থাৎ ইসলামে কোনো বৈরাগ্য নেই’ (মুসনাদে আহমাদ : ৬/২২৬)। বৈরাগ্য মানুষকে মূলত কর্ম ও সমাজবিমুখ করে দেয়। মিকদাদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘এর চেয়ে উত্তম খাদ্য আর নেই, যা মানুষ নিজ হাতে উপার্জনের মাধ্যমে ক্রয় করে। নবী দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন’ (বুখারি : ২০৭২)। আরেক হাদিসে নিজ হাতে উপার্জিত রিজিককে সর্বোত্তম রিজিক বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিজ হাতে উপার্জিত জীবিকার খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাদ্য কখনো কেউ খায় না।’ (বুখারি : ২০৭২)
হালাল উপায়ে নিজ হাতে উপার্জন করা শুধু ইবাদতই না, বরং আম্বিয়ায়ে কেরামের সুন্নত। মহানবীসহ (সা.) পূর্ববতী প্রায় সব নবী-রাসুল নিজ হাতে জীবিকা উপার্জন করেছেন। পৃথিবীর সর্বপ্রথম উপার্জনকারী ছিলেন আদি পিতা হজরত আদম (আ.)। হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত আদম (আ.) যখন জান্নাত থেকে দুনিয়াতে অবতরণ করেন তখন জিবরাইল (আ.) গম নিয়ে এসে তাঁকে চাষাবাদ করার আদেশ করেন। তেমনি নুহ (আ.) ছিলেন কাঠমিস্ত্রি, তিনি এর মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। হজরত ইদরিস (আ.) ছিলেন দর্জি (মুস্তাদরাকে হাকেম : ২/৫৯৬)। অন্য হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর নবী দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জন থেকেই খেতেন (বুখারি : ২০৭৩)। এ ছাড়া হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, হজরত আদম (আ.) ছিলেন চাষি, নুহ (আ.) কাঠমিস্ত্রি, ইদরিস (আ.) দর্জি, দাউদ (আ.) বর্মনির্মাতা, মুসা (আ.) রাখাল (রক্ষক) এবং ইবরাহিম (আ.) কৃষক ছিলেন (ফাতহুল বারি : ৪/৫৯৬)। হজরত সুলায়মান (আ.)-এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে, তিনি খেজুর গাছের পাতা দিয়ে ঝুড়ি তৈরি করতেন এবং এর দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করতেন (কিতাবুল কাসব : ৭৭)। হজরত যাকারিয়া (আ.)-এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে, তিনিও নুহ (আ.)-এর মতো কাঠমিস্ত্রি ছিলেন। (মুসলিম : ১৫/১৩৫; ইবনে মাজাহ : ২/৭২৭)এ ছাড়া মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-ও বিভিন্ন সময় পশু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মহান আল্লাহ এমন কোনো নবী পাঠাননি, যিনি বকরি চরাননি। তখন সাহাবিরা বলেন, আপনিও? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি কয়েক কিরাতের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের বকরি চরাতাম’ (বুখারি : ২১১৯)। মোটকথা, জীবিকা উপার্জন করা পার্থিব জীবনের অতি প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। এটি কখনোই ইসলাম পালনের বিপরীত নয়, বরং জীবন-জীবিকা উপেক্ষা করে চলাই ইসলামের শিক্ষাবহির্ভূত বিষয়। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ নবী-রাসুলদের দিয়ে আল্লাহ জীবিকা উপার্জন করিয়ে এ শিক্ষা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ সবাইকে বোঝার ও আমল করার তওফিক দিন।
Aminur / Aminur
হালাল সম্পদ উপার্জনের নির্দেশনা
উত্তম চরিত্রের অনন্য পুরস্কার
পাপের ভারে ভূমিকম্প বাড়ে
সুস্বাস্থ্যের জন্য যে দোয়া করবেন
পারিবারিক জীবনে ভরণপোষণের গুরুত্ব
অবসরে জান্নাত সাজানোর সুযোগ
চলাফেরায় জিকিরের সওয়াব লাভের সুযোগ
মুমিনের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান
বাম হাতে তসবি পড়া যাবে?
তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের পদ্ধতি
কুরআনের আলোকে মৌমাছি ও মধু
জান্নাতে প্রবেশে কিছু বাধা