ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করলেও সওয়াব


ডেস্ক রিপোর্ট  photo ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১৫-১২-২০২৫ সকাল ৯:২৯

মহান আল্লাহর কুদরতের একটি প্রমাণ বিশাল সৃষ্টিজগৎ। আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা বা সাধনা করলে ঈমান মজবুত হয়, তাঁর সন্তুষ্টিও অর্জন করা যায়। আল্লাহকে স্মরণ করতে সৃষ্টির ভাবনায় অনেক অজানা বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা যায় এবং অঢেল পুণ্যও অর্জিত হয়। আল্লাহর এই বিশাল ব্রহ্মাণ্ডের মাঝে অসংখ্য সৃষ্টি থেকে আমরা হরেকরকম উপকার পাই। 
খাদ্য সংগ্রহ করে যেমন আমরা জীবন বাঁচাই, তেমনি এর মাঝে বিদ্যমান হাজারো নিদর্শন থেকে আমরা শিক্ষা লাভ করতে পারি। যা আমাদের জান্নাতের পথে পাথেয় হিসেবে থাকবে। অলি-আওলিয়ারা আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে ধ্যানমগ্ন হতেন। এমনকি আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যান করতেন।
আর আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করতে তিনি নিজেই বলেছেন, ‘নিশ্চয় আসমান ও জমিন সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্য। যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা-গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে, তারা বলে পরওয়ারদেগার! এসব আপনি অনর্থক সৃষ্টি করেননি। সব পবিত্রতা আপনারই, আমাদের আপনি দোজখের শাস্তি থেকে বাঁচান।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৯০-১৯১)
রাত পেরিয়ে যখন দিন আসে তখন সূর্যের আলোয় সৃষ্টিরাজি অবলোকন করা যায়। বাড়ির পাশে, বনে, অরণ্যে আচ্ছাদিত আছে অগণিত সৃষ্টি; যা নিয়ে ভাবলে, চিন্তা করলে নিশ্চয়ই আল্লাহর কথা স্মরণ হবে। ঈমান বৃদ্ধি পাবে। দিনের শেষে নিকষকালো অন্ধকার কিংবা চাঁদ আর আকাশভর্তি তারা নিয়ে হাজির হয় রাত। দিনের ব্যস্ততা থেমে গেলে রাতে অসীম আকাশের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যায়। 
মৃদু আলো বিলানো তারকারাজি, চাঁদের দিকে নজর দিয়ে এই সৃষ্টির স্রষ্টাকে অন্বেষণ করলে হৃদয়ে উদ্ভাসিত হবে পরওয়ারদেগারের ভাবনা। অন্তরে জাগ্রত হবে খোদার ভয়। যে ভয় এবং প্রেম আমাদের মুত্তাকিদের কাতারেই শামিল করবে। আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেন, ‘নিশ্চয় আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে মুমিনদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা জাসিয়া)
দুই চোখের দৃষ্টি যেখানে পড়ে সেখানেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে আল্লাহর কোনো না কোনো সৃষ্টি। যেখানে আমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। কল্পনার রাজ্যে মন্দকে স্থান না দিয়ে এই সৃষ্টি নিয়ে অল্প কল্পনা করলে অধিক পুণ্য মিলবে এবং মহান রবের নির্দেশনা মানতেও অন্তরে তীব্র আকাক্সক্ষার জোয়ার বইবে। অবসরে আমরা দুনিয়ার আড্ডায় নিমজ্জিত না হয়ে চারপাশের সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করলে অন্তরে তৃপ্তি আসবে এবং অসংখ্য সওয়াবও পাওয়া যাবে। 
চোখ-কান থাকা সত্ত্বেও যদি আল্লাহ পাকের সৃষ্টির অপার মহিমা, রহস্য দেখেও এড়িয়ে যাওয়া হয়, শুনেও না শোনার ভান করা হয়, তবে কুরআনে বর্ণিত চতুষ্পদ জন্তু ও মানুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকতে পারে না। আল্লাহ বলেন, ‘আমি সৃষ্টি করেছি দোজখের জন্য বহু জিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না; তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না; আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মতো, বরং তার চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হলো গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ।’ (সুরা আরাফ : ১৭৯)
আমাদের ইন্দ্রিয় শক্তি, মেধা-মননশীলতা সবকিছু দিয়েই আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে। অন্তরে রবের স্মরণ ও দ্বীনি চিন্তার চর্চা না থাকলে সেই মস্তিষ্ক হবে শয়তানের আখড়া। বৃদ্ধি পাবে আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে দূরত্ব। নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে যা কিছু সৃষ্টি আছে সবকিছু জ্ঞানীদের জন্য আল্লাহর নিদর্শন। 
গাছপালা-তরুলতা, পাহাড়-পর্বত এবং সমুদ্রের বিশাল জলরাশির নিচে যে বৈচিত্র্যময় সৃষ্টিজগৎ আছে সেটা নিয়েও মুমিনদের ভাবতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তবে কি তারা লক্ষ করে না উটের প্রতি, কীভাবে তা সৃষ্টি করা হয়েছে? আকাশের প্রতি, কীভাবে তাকে উঁচু করা হয়েছে? পাহাড়গুলোর প্রতি, কীভাবে তাকে প্রোথিত করা হয়েছে? এবং ভূমির প্রতি, কীভাবে তা সমতলে বিছানো হয়েছে? (সুরা গাসিয়া : ১৭-২০)
প্রতিটি সৃষ্টি রহস্য এবং কুদরতে ঘেরা। যা নিয়ে চিন্তা-ফিকির করলে আসলেই আল্লাহর প্রেমে হৃদয় ভরে যায়। জ্ঞানের স্বল্পতা কিংবা শয়তানের কুমন্ত্রণায় মস্তিষ্কে অনেক উদ্ভট প্রশ্নের অবতারণা হতে পারে। কিন্তু সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে আল্লাহর সৃষ্টিজগতের দিকে।
যেখান থেকে আমরা সাবলীল উত্তর পাব এবং অন্তরে খোদাভীতি জাগ্রত হবে। তবেই আমরা সব অস্থিরতা পরিত্যাগ করে একাগ্রচিত্তে আল্লাহ তায়ালার ইবাদতে মশগুল থাকতে পারব। যা আখেরাতের অনন্ত জীবনের অমূল্য সম্পদ। মহান আল্লাহ তাঁর অসীম কুদরত সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করা এবং এর মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধি ও পুণ্য অর্জনের তওফিক দিন।

এমএসএম / এমএসএম