ভূমিকম্পে ধ্বংসপ্রাপ্ত সামুদ জাতির কাহিনি
পৃথিবীতে পাপের পরিমাণ বাড়লে ভূমিকম্প হবে বলে কুরআনে বারবার হুঁশিয়ারি করা হয়েছে। পাপের কারণে ভূমিকম্পে ধ্বংসপ্রাপ্ত কিছু জাতির ঘটনাও উল্লেখ করা হয়েছে কুরআনে। এমন একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির নাম সামুদ। সামুদ জাতি বসবাস করত হিজাজ ও তাবুক অঞ্চলের মধ্যবর্তী পাহাড়ি এলাকায়। তারা মূর্তিপূজা ও বিভিন্ন রকম পাপাচারে অভ্যস্ত ছিল। এই জাতিকে সৎপথে ফিরে আসার জন্য নবী হিসেবে পাঠানো হয় হজরত সালেহ (আ.)-কে। হজরত সালেহ (আ.) তার জাতিকে এক আল্লাহর ইবাদতের দাওয়াত দেন, মূর্তিপূজা পরিত্যাগ করতে বলেন, পাপাচার পরিত্যাগ করতে বলেন। কিন্তু তারা নবী সালেহের (আ.) দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করেন।
সালেহ (আ.) তাদের বারবার তাগিদ দিয়ে বলেন, যেন তারা সেই রবের ইবাদত করে, যিনি তাদের সৃষ্টি করেছেন, রিজিক দান করেন এবং যিনি তাদের আদ জাতির পরে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি বানিয়েছেন। তিনি তাদের ওপর আল্লাহর বিভিন্ন রকম নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। কিন্তু সামুদ জাতির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরাসহ বেশিরভাগ মানুষ সালেহকে (আ.) মিথ্যাবাদী বলে আখ্যায়িত করে এবং তাকে পাগল ও জাদুকর বলে। সালেহ (আ.) তাদের বলেন, তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত একজন রাসুল। তিনি তো তাদের কাছে কোনো বিনিময় বা প্রতিদান চান না। সামুদ জাতি ইসলাম গ্রহণ করলে তার ব্যক্তিগত কোনো লাভ নেই। তাই তিনি কেন মিথ্যা বলবেন?
সামুদ জাতি সালেহের (আ.) নবুয়্যতের প্রমাণ হিসেবে মুজিজা বা অলৌকিক কোনো ঘটনা দেখাতে বলে। সালেহ (আ.) তাদের জিজ্ঞাসা করেন, তারা কী ধরনের মুজিজা চায়? সামুদ জাতির অবিশ্বাসীরা একটি বৃহৎ পাথর দেখিয়ে বলে, তিনি যেন এই পাথর থেকে একটি উষ্ট্রী বের করে আনেন। তারা উষ্ট্রীর শারীরিক গঠনের ব্যাপারে এমন কিছু শর্তও আরোপ করে, যা সাধারণ উষ্ট্রীর থাকে না। সালেহ (আ.) আল্লাহর কাছে দোয়া করেন যেন সেই পাথর থেকে তাদের শর্ত অনুযায়ী উষ্ট্রী বের হয়ে আসে। আল্লাহ তালার ইচ্ছায় সেই পাথর থেকে একটি উষ্ট্রী বের হয়ে আসে, ঠিক যেমন তারা চেয়েছিল এবং তাদের চোখের সামনেই তা ঘটে। তারা বিস্ময়ে অভিভূত হয়। তাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক ব্যক্তি সালেহের (আ.) ওপর ইমান আনে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ সুস্পষ্ট মুজিজা দেখার পরও কুফরিতে অটল থাকে। সালেহ (আ.) সামুদ জাতিকে বলেন, এই উষ্ট্রী আল্লাহ তালার পক্ষ থেকে নিদর্শন হিসেবে এসেছে তোমাদের দাবি অনুযায়ী, এটা আল্লাহর উষ্ট্রী, তাই তোমরা যেন এই উষ্ট্রীকে কষ্ট না দাও। এই উষ্ট্রীকে কোনোভাবে কষ্ট দিলে আল্লাহ তালার শাস্তি নেমে আসবে।
উষ্ট্রীটি প্রচুর পানি খেত। সালেহ (আ.) নিয়ম করে দেন, সামুদের এলাকার কূপ থেকে একদিন এই উষ্ট্রী পানি গ্রহণ করবে, অন্যদিন সামুদ জাতির অন্যরা নিজেদের প্রয়োজনীয় পানি গ্রহণ করবে। কিছুদিনের মধ্যে সামুদ জাতির অবিশ্বাসীরা অলৌকিক উষ্ট্রীর ওপর বিরক্ত হয়ে যায়। উষ্ট্রীটি তাদের পানি ও পশুখাদ্যে ভাগ বসাচ্ছে এটা তাদের অসহ্য বোধ হয়। তারা উষ্ট্রীটিকে মেরে ফেলার ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা শুরু করে। সামুদের অনেকেই এটাকে একটা বিপজ্জনক কাজ বলে সাবধান করে। কিন্তু কিছু মানুষ উষ্ট্রীটিকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্তে অটল থাকে। একদিন সুযোগ বুঝে তারা অলৌকিক উষ্ট্রীকে মেরে ফেলে, তার বাচ্চাকেও মেরে ফেলে। এই সংবাদ নবী সালেহের (আ.) কাছে পৌঁছলে তিনি বলেন, তাদের জন্য আল্লাহ তালার শাস্তি অবধারিত হয়ে গেছে। তিন দিনের মধ্যে তাদের ওপর আল্লাহর কঠিন শাস্তি নেমে আসবে।
সামুদের অবিশ্বাসীরা নবী সালেহের (আ.) এই সাবধানবাণী অবিশ্বাস করে এবং এটা নিয়ে উপহাস করে। তারা সালেহকেও (আ.) হত্যার ষড়যন্ত্র করে। আল্লাহ তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেন। নবী সালেহের (আ.) সাবধানবাণী অনুযায়ী সামুদ জাতির অবিশ্বাসীদের ওপর আল্লাহ তালার শাস্তির লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। প্রথম দিনে তাদের চেহারা উজ্জ্বল হয়ে যায়, দ্বিতীয় দিনে তা লালচে হয়ে ওঠে, আর
তৃতীয় দিন শনিবার তাদের মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায়। রোববার সকালে আকাশ থেকে প্রচণ্ড এক গর্জন ভেসে আসে, সঙ্গে সঙ্গে ভূমিকম্পও হয় এবং সামুদ জাতির অবিশ্বাসীরা মারা যায়। কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ সামুদ জাতির কথা বর্ণনা করেছেন। সুরা আরাফের ৭৩-৭৯ আয়াতে সে কাহিনি সবিস্তারে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাদের পরিণতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে বলেছেন।
Aminur / Aminur
সাহাবিদের মতো জীবন গড়ার শিক্ষা
ভূমিকম্পে ধ্বংসপ্রাপ্ত সামুদ জাতির কাহিনি
পুরোনো কাপড় দান করে সওয়াব অর্জন
হালাল সম্পদ উপার্জনের নির্দেশনা
উত্তম চরিত্রের অনন্য পুরস্কার
পাপের ভারে ভূমিকম্প বাড়ে
সুস্বাস্থ্যের জন্য যে দোয়া করবেন
পারিবারিক জীবনে ভরণপোষণের গুরুত্ব
অবসরে জান্নাত সাজানোর সুযোগ
চলাফেরায় জিকিরের সওয়াব লাভের সুযোগ
মুমিনের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান
বাম হাতে তসবি পড়া যাবে?