ঢাকা বৃহষ্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪

মুমিনের গুন ও মুনাফিকের স্বভাব


আরাফাত বিন শাহ আলম photo আরাফাত বিন শাহ আলম
প্রকাশিত: ২৩-১০-২০২৪ দুপুর ১২:৯

সত্যবাদিতা মুমিনের গুন, মিথ্যা মুনাফিকের স্বভাব।মিথ্যা মানুষকে লাঞ্চিত অপনিত করে। মিথ্যা অপদস্থতার পথ তরান্বিত করে। সারাজীবনের অর্জন ম্লান হয়ে যেতে পারে একটি মিথ্যায়। মিথ্যা জঘন্য অপরাধ।  মিথ্যা মহাপাপ, কবিরা গুনাহ। সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার পিছনে কোন না কোন মিথ্যার আশ্রয় থাকে। অন্যায় কাজে সর্বদা মিথ্যা কথা বা কাজের আশ্রয় গ্রহণ করা লাগে।

এক অন্যায় আরেক অন্যায়ের দরজা খুলে দেয়। এক মিথ্যা গোপন করতে আরো হাজারো মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়। কোন সভ্য জাতির স্বভাব মিথ্যা হতে পারেনা। মিথ্যা মুনাফিকের জন্যই শোভা পায়। মুমিন মুনাফিকের মাঝে পার্থক্য হলো সত্য মিথ্যার। মুমিন সত্য কথা বলে। মনাফিক মিথ্যাকে নিজের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ বানিয়ে নেয়।

মুমিন আল্লাহর প্রিয় বান্দা। সর্বদা আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলার চেষ্টা করে। মিথ্যা থেকে দূরে থাকে। মিথ্যাকে ঘৃণা করে। মিথ্যা কর্মকাণ্ড অপছন্দ করে। সদা সত্য কথা বলে। কেননা আল্লাহ আদেশ করেছেন সদা সত্য কথা বলতে।
হে মুমিনগণ! আল্লহকে ভয় কর এবং সত্য সঠিক কথা বল। (আল-আহযাব-৭০)

জঘন্য অপরাধ হওয়ায়, মিথ্যুক আল্লাহর রহমত ও দয়া থেকে বঞ্চিত থাকে। মিথ্যুক সীমালঙ্ঘনকারী। মিথ্যুকের কপালে হেদায়াত নেই।
আল্লাহ কোন সীমালঙ্ঘনকারী, মিথ্যুককে হেদায়াত দান করেন না। (আল-মু'মিন-২৮)

যেমনি আগুন ও পানি একসাথ হয়না তেমনি সত্য মিথ্যা একসাথ হয়না দু'টো দুই মেরুতে অবস্থান করছে। সত্য যার পাথেয়, ছাওয়াব তার সম্বল, জান্নাত তার পুরস্কার। পক্ষান্তরে মিথ্যা এর বিপরীত। মিথ্যা অন্যায়, মহাপাপ, কবীরা গুনাহ। তার শাস্তি জাহান্নাম। 

আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত:
নবী   বলেছেনঃ সত্য নেকীর দিকে পরিচালিত করে আর নেকী জান্নাতে পৌঁছায়। আর মানুষ সত্যের উপর কায়িম থেকে অবশেষে সিদ্দীক -এর দরজা লাভ করে। আর মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে নিয়ে যায়, পাপ তাকে জাহান্নামে নিয়ে যায়। আর মানুষ মিথ্যা কথা বলতে বলতে অবশেষে আল্লাহ্‌র কাছে মহামিথ্যাচারী প্রতিপন্ন হয়ে যায়।
(সহীহ বুখারী-৬০৯৪)

মিথ্যা আল্লাহর কাছে একেবারেই পছন্দনীয়। কুরআন মিথ্যা পরিহারের নির্দেশ দেয়।
واجتنبوا قول الزور
এবং মিথ্যা কথা থেকে বেঁচে থাক, (আল-হাজ্জ্ব-৩০)
মিথ্যা সাক্ষ্যও নিষেধ, মুমিন মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখে।
এবং (রহমানের বান্দা তারা) যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়না। (আল-ফুরকান-৭২)

মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য, যাচাই-বাছাই ছাড়া শুনা কথা প্রচার করাই যথেষ্ট। শুনা কথায়, গুনা হয়।
যাচাই না করে, কোন কথা শুনে তাহা অন্যত্র বলে বেড়ানো আমাদের সমাজের গঠনতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। এমন হীনমন্যতাই আপনাকে মিথ্যুক বানিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত:
নবী কারীম(ﷺ) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির মিথ্যাবাদী সাভ্যস্ত হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে কোন কথা শোনামাত্রই (যাচাই না করে) বলে বেড়ায়। (আবু দাউদ ৪৯৯২)

রসিকতার চলেও মিথ্যা বলা নিষেধ, মানুষ হাসাতে মিথ্যা বলে যারা, দুর্ভোগের ভাগিদার তারা।
তিনি বলেন, 
বাহয ইবনে হাকীম (রাহি.) থেকে বর্ণিত:
আমার পিতা তার পিতার সূত্রে আমাকে হাদীস বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছিঃ মানুষকে হাসানোর জন্য যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে তার জন্য ধ্বংস, তার জন্য ধ্বংস, তার জন্য ধ্বংস। (আবু দাউদ-৪৯৯০)

মিথ্যা বলা স্পষ্ট মুনাফিকের স্বভাব।
আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) হতে বর্ণিত:
নবী (ﷺ) বলেনঃ চারটি স্বভাব যার মধ্যে বিদ্যমান সে হচ্ছে খাঁটি মুনাফিক। যার মধ্যে এর কোন একটি স্বভাব থাকবে, তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থেকে যায়। ১. আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে; 
২. কথা বললে মিথ্যা বলে; 
৩. অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে; এবং 
৪. বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীলভাবে গালাগালি (সহীহ বুখারী-৩৪)

যারা মিথ্যা বলে তাদের সঙ্গ গ্রহণ করা যাবেনা। তাদের থেকে দূরে থাকতে হবে। সত্যবাদীদের সঙ্গী হতে হবে। আল-কুরআনের নির্দেশও তাই।
হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমরা সত্যবাদীদের সঙ্গে থাক। (আত-তাওবাহ্- ১১৯)

পরকালে মিথ্যা কোন উপকারে আসবেনা, সেদিন সততা সত্যবাদীতাই আপনার কাজে আসবে।
এবং আপনাকে পৌছিয়ে দিবে চিরস্থায়ী সুখের ঠিকানা জান্নাতে। এবং এটাই হবে সফলতা।

আল্লাহ বলবেন, এটা সেই দিন, যে দিন সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যতা উপকৃত করবে। তাদের জন্য রয়েছে এমন সব উদ্যান, যার তলদেশে নহর প্রবহমান। তাতে তারা সর্বদা থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এটাই মহা সাফল্য।(আল-মায়িদাহ-১১৯)

সফল হতে হলে, মুমিনের গুন অর্জন করি। মুনাফিকের স্বভাব ছাড়ি। সত্যকে পাথেয় হওসাবে গ্রহণ করি। মিথ্যা পরিহার করি। জান্নাতের বাসিন্দা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করি।
আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক দান করুন। আমীন।

এমএসএম / এমএসএম