আমাদের মনিব দেশের জনগণ: ভূমি সচিব
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ্ আহমেদ বলেছেন, আমরা যারা ভূমি মন্ত্রণালয় কাজ করি, আমরা শুধু পলিসি মেকার। নীতি নির্ধারণ করা বা আইন কানুন, আদেশ নির্দেশ জারি করা। মাঠ পর্যায় কিন্তু কাজ করতে হবে আপনাদের। আমাদের সুনাম, বদনাম সব কিছু আপনাদের ওপর নির্ভর করে। এখন থেকে আপনারা সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী। আমি নিজে একজন কর্মচারী। একটা কথা মাথায় রাখতে হবে আমাদের মনিব কারা? আমাদের মনিব হলো দেশের জনগণ। যারা মাঠে কাজ করে। গতকাল রোববার দুপুরে নব যোগদানকৃত কর্মচারীদের ওরিয়েন্টেশন কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ এস এম সালেহ্ আহমেদ বলেন, আমাদের মতো কাপড়-চোপড় হয়তো তারা পরতে পারে না কিন্তু ফসল মাঠে ফসল তারই ফলায়। আমাদের চেয়ে তারা বেশি আবদান রাখে। কারণ তারা যদি মাঠে ফসল না ফলায় তাহলে আমাদের খাবার জুটবে না। তাদের ট্যক্সের পয়সায় আমাদের বেতন হয় এটা মাথায় রাখতে হবে। বিশেষ করে সারাদেশে জুলাই আগস্টে একটা বিপ্লব ঘটে গেছে তার ফসল হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন ক্ষমতায় আছে। তারা বিভিন্ন ধরণের সংস্কার করতে চায়। সংস্কার হলো একটি পরিবর্তন। আগে যেটা ছিল তা দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। শোষণ বৈশম্যহীন সমাজ গঠনে, এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এই বিপ্লব হয়। জনগণ কিন্তু ১৯৭১ সালেও তাদের মূল্যবান প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে এবং আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। স্বাধীনতার পরে যে প্রত্যাশা ছিলো তা পুরন না হওয়ায় আবার বিপ্লব হয়েছে। আমরা জনগণের প্রত্যাশা পুরণ করতে পারিনি এজন্য মানুষ আবার আন্দোলন করেছে।
তিনি বলেন, একটি ঐতিহাসি মূহুর্তে আপনারা চাকরিতে যোগদান করেছেন। আগে যেভাবে কাজ করা হতো এখন তা চলবে না। আমরা সরকারি কর্মকর্তারা মনে করতাম সকল ক্ষমতা আমাদের জনগণ কিছু না। এখন ধারনা পাল্টে গেছে। আগে যেসব যন্ত্র শাসন করার জন্য ব্যবহার করা হতো তা এখন সেবার জন্য ব্যবহার করছে। আপনার একজন ভাল উপদেষ্টা পেয়ে ছিলেন কিন্তু দুঃখের বিষয় তিনি গত শুক্রবার মারা গেছেন। তিনি আইনের বিষয় খুব ভাল বুঝতেন। তিনি বেচে থাকলে হয়তো আজ আপনাদের সামনে কথা বলতেন। আজকে উপদেষ্টা মণ্ডলির সভা হয়েছে, শোক প্রস্তাব করা হয়েছে। সবাই তার সম্পর্কে অনেক ভালো বলেছেন, সম্মান জানিয়েছেন। আমাদের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কে নিবেন সে বিষয়ও আলোচনা হয়েছে। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ভূমি মন্ত্রণালায়ের দায়িত্বে। আগে কিছু অংক বা ত্রিকোনমিতি ব্যবহার হতো। এই মন্ত্রণালয়ে এখন অনেক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। এটা এখন কম্পিউটর সফটওয়ারের মাধ্যম করা হয়। বর্তমানে ড্রোন ব্যবহার করা হয়, ড্রোনে ছবি তোলা হয়। মিনিটে ৫০০-৬০০ ছবি তোলা হয়। ভূমিকে আমরা দুটি ভাগে করেছি। ভূমি ব্যবস্থাপনা, এর মধ্যে চার রকম সেবা আছে, যেমন, ভূমি উন্নয়ন কর, এটা দিলে তারা একটা দাখিলা পায় সেটা আবার মালিকানার ক্ষেত্রে দলিলের কাজ করে। তারপর মানুষ মারা গেলে ক্রয় বিক্রয়ের মাধ্যমে, অথবা উত্তরাধীকার বা হেবা যেটা দেয় এটার মাধ্যমে ভূমি মালিকানা পরিবর্তন হয়ে যায়। মালিকানা পরিবর্তন হলে নামজারি করতে হয়। আপনারা জানেন, বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষ জমির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আপনারা হয়তো বয়সে নবীন কিন্তু একটা সময় আপনাকে ভূমি তদারকি করতে হবে। চারটা বিষয়কে আমরা ভূমি ব্যবস্থাপনা সেবা বলি সেগুলো যেমন, ভূমি উন্নয়ন কর, নামজারি, পর্চা, নকশা। এগুলো একসময় হতে করা হতো। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে চেষ্টা চলছে অনলাইনে দেয়ার চেষ্টা করছি। একজন লোক বিদেশ থেকে এসে চায় দ্রুত তার ভূমি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা নতুন করে ডাটা তৈরি করছি এবং কম্পিউটর কাউন্সিলের সার্ভার ব্যবহার করছি। আমাদের ডাটার পরিমান তাতে মাঝে মাঝে সার্ভার ডাউন হয়ে যায়, এমনকি ২-৩ দিন বন্ধও থাকে। তখন সেবা দান ব্যহত হয়। আমাদে উপদেষ্টার সঙ্গে বৃহস্পতিবার শেষ কথা হয়েছে, আমি তাকে বলেছিলাম শনিবার একটা মিটিং দিয়েছি, তিনি আশ্বস্ত হলেন। আমি তাকে বললাম, আমরা নিজেরাই একটা সার্ভার প্রভাইট করবো। তিনি আমাকে বললেন তুমি এটা করো। সব কিছু নিজেদের হাতে নিয়ে আসো। কাজ করবো আমরা আর সার্ভার থাকবে অন্য জনের কাছে এটা হয় না।
আমাদের সফটওয়ারে যে পরিমান ডাটা তা অন্য কোন মন্ত্রণালয়ে নেই কারণ, সারা বাংলাদেশের মানুষের তথ্য আমাদের কাছে আছে। ভূমি শুধু না, তার সঙ্গে পেছনে কি অবস্থায় ছিলো সেসব তথ্য থাকছে। ট্যাক্সের ক্ষেত্রে একজনের আয় ব্যয়ের হিসাব থাকে কিন্তু ভূমির ক্ষেত্রে অনেক তথ্য থাকতে হয়। এতদিন আমাদের কোন সার্ভার ছিলো না, আমাদে সার্পোট দিতো আইসিটি মন্ত্রণালয়। আমার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা হয়েছে, তিনি বলেছেন সমস্যা সমাধানের কথা। তবে আপনারা জানেন সরকারি প্রকিউমেন্টে অনেক সময় লাগে। আমরা এটা অল্পসময়ের মধ্যে শুরু করবো। আগের মতো অফিসে সবাই কাজ করবে তবে সেবাগ্রহীতাকে আসতে হবে না। তিনি বাসায় বসেই ভূমি সংক্রান্ত সকল সেবা পাবেন। আমরা মার্চ মাসের মধ্যেই চালু করতে পারবো। আর একটা বিভাগ আছে আমাদের ভূমি জরিপ ও রেকর্ড এই ডিপার্টমেন্টেই আপনারা কাজ করবেন। ব্রিটিশরা একবার বিশ্বাসযোগ্য জরিপ করেছিলো তাতে প্রায় ৫০ বছর লেগেছিল। এরপর খন্ড খন্ড জরিপ হয়েছে। আমরা যদি এই ওয়েববেজ ভূমি সেবা চালু করতে পারি ভবিষতে আমাদের জরিপ কাজ শেষ করতে সময় লাগবে হয়তো ৫ বছর।
সভাপতির বক্তব্যে ভূমিজরিপ ও রের্কড অধিদফতরের মহা-পরিচালক মহা-মনিরুজ্জামন বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের ইতিহাসে এতো বড়ো নিয়োগ আর হয়নি। এমনকি নিয়োগে এক পয়সার দুর্নীতি হয়নি। সকাল হলেই পত্রিকার পাতায় দেখতে পাই শুধু নেগেটিভ নিউজ। নেগেটিভের পাশাপাশি তো পজিটিভ নিউ থাকা উচিৎ। এক সময় সকাল শুরু হতো মিথ্যা দিয়ে। সেটা আল্লাহর রহমতে জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে নশ্যাত হয়েছে। জালিম বিদায় নিয়েছে। শুধু মাত্র বেক্সিমকোর মালিক সালমান এফ রহমান ৫০ হাজার কোটি টাকা লোন নিয়েছে। তিনি এখন কোথায় আছেন আপনারা জানেন। টাকা মানুষের সম্মান বয়ে আনে না। আমাদের জাতীয় চরিত্রই নষ্ট হয়ে গেছে। এই পথ থেকে বের হয়ে আসতে হলে ধর্মের নিয়ম মানতে হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের সময়ের ব্যবধান ৪ ঘন্টার কিন্তু তাদের মধ্যে কোন দুর্নীতি নেই। তিনি বলেন, ভূমিতে যে অনাচার, দুরাচারের বদনাম আছে তা ঘোচাতে হবে। আমরা কারো কাছ থেকে টাকা নেব না। আমরা জনগণের প্রত্যাশা পূরনে কাজ করবো যাতে জনগণ ঘরে বসে ভূমি সেবা পায়। আগামী দিনে হবে এক প্লট, এক খতিয়ান।
এমএসএম / এমএসএম