ঢাকা বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫

ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের সঙ্গে প্রতারণা, ৪০ লাখ ডলার আত্মসাতের নেপথ্যে এক ইসরায়েলি


আন্তর্জাতিক ডেস্ক  photo আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬-১২-২০২৫ বিকাল ৫:১৬

অসুস্থ বা মৃত্যুপথযাত্রী শিশুদের অসহায় বাবা-মায়েদের মানবিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিশ্বজুড়ে একটি বৃহৎ অনলাইন প্রতারণা চক্র লাখ লাখ ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে। সম্প্রতি বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের অনুসন্ধানে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এই মানবিক আবেদনগুলো শিশুদের জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসার জন্য তহবিল সংগ্রহের দাবি করে জনসাধারণকে প্রতারিত করে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই প্রতারণার শিকার অন্তত ১৫টি পরিবার তাদের নামে সংগৃহীত তহবিলের সামান্য অংশই পেয়েছে, অনেকে কিছুই পাননি। অনেক ক্ষেত্রেই পরিবারগুলো জানতেও পারেনি যে তাদের মর্মান্তিক দৃশ্যের শুটিং করা হলেও ক্যাম্পেইনটি আদৌ প্রকাশিত হয়েছে কিনা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ফিলিপাইনের সেবু শহরের সাত বছরের শিশু খলিলকে নিয়ে একটি ভিডিও তৈরির জন্য তার মা আলজিন তাবাসাকে রাজি করানো হয়। খলিলের ক্যানসার ছিল। আলজিনের ভাষ্যমতে, শুটিংয়ের জন্য তার ছেলেকে দিয়ে অভিনয় করানো হয় এবং তাকে একটি ভুয়া স্যালাইন ড্রিপে যুক্ত করে পরিবারের সদস্যদের দিয়ে সাজানো জন্মদিনের অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল। সবচেয়ে নির্মম হলো, শিশুটিকে ইংরেজিতে বলার জন্য একটি স্ক্রিপ্ট দেওয়া হয়, যেখানে সে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘আমার ক্যানসার হয়েছে, আমার জীবন বাঁচান।’
খলিলের কান্না দেখানোর জন্য চোখের নিচে মেনথল এবং পাশে কাটা পেঁয়াজ রাখা হয়েছিল। ১২ ঘণ্টা ধরে এই শুটিং চলে এবং বারবার রিটেক নিতে বলা হয়।
খলিলের নামে প্রকাশিত এই ক্যাম্পেইনে ২৭ হাজার ডলার সংগৃহীত হলেও, আলজিনকে বলা হয়েছিল ক্যাম্পেইনটি ব্যর্থ। তিনি শুধু শুটিংয়ের জন্য ৭০০ ডলার ‘পারিশ্রমিক’ পেয়েছিলেন। এক বছর পর খলিল মারা যায়। আলজিন আক্ষেপ করে বলেন, ‘যদি আমি জানতে পারতাম আমাদের জন্য এত টাকা উঠেছে, তবে হয়তো খলিল আজও আমাদের মাঝে থাকত। আমি বুঝতে পারছি না তারা কীভাবে আমাদের সঙ্গে এটা করতে পারল।’
বিবিসির সঙ্গে কথা বলা ৯টি পরিবার, যাদের ক্যাম্পেইন একই প্রতারণা চক্রের অংশ বলে মনে করা হয়, তারা জানিয়েছে, তাদের নামে তোলা প্রায় ৪০ লাখ ডলার তহবিলের কোনো অংশই তাঁরা পাননি।
এই প্রতারণা চক্রের একজন হুইসেলব্লোয়ার (পর্দা ফাঁসকারী) জানান, ক্যাম্পেইনের জন্য শিশুদের বেছে নেওয়ার করার ক্ষেত্রে তাদের সুনির্দিষ্ট মাপকাঠি ছিল। তারা এমন শিশুদের খুঁজত যারা দেখতে ‘সুন্দর’ এবং তিন থেকে নয় বছর বয়সের মধ্যে, ন্যাড়ামাথা’।
অনুসন্ধানে ইরেজ হাদারী নামের কানাডাবাসী এক ইসরায়েলি ব্যক্তিকে এই চক্রের মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চান্স লেতিকভা বা চান্স ফর হোপ এবং ‘ওয়ালস অব হোপ’ নামের সংগঠনগুলো এসব ক্যাম্পেইন প্রচার করত। ইরেজ হাদারী যখন তহবিল সম্পর্কে আলজিনের জেরার মুখে পড়েন, তখন তিনি কোনো প্রমাণ ছাড়াই জানান যে বিজ্ঞাপন বাবদ সব অর্থ খরচ হয়ে গেছে এবং সংস্থার লোকসান হয়েছে। যদিও চ্যারিটি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যাম্পেইনের মোট সংগৃহীত অর্থের ২০ শতাংশের বেশি বিজ্ঞাপনের পেছনে খরচ হওয়ার কথা নয়।
চক্রের সঙ্গে যুক্ত একজন স্বীকার করেছেন তাঁরা একটি কনভেয়র বেল্টের মতো কাজ করেন। ডজনখানেক কোম্পানি একইভাবে তহবিল সংগ্রহ করে।
ফিলিপাইনের মতো কলম্বিয়া ও ইউক্রেনেও একই ধরনের প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে।
কলম্বিয়ায় আট বছর বয়সী আনার (ব্রেন টিউমার রোগী) বাবাকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজি করানো হয়। আনার নামে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার সংগৃহীত হয়েছিল। মজার বিষয় হলো, আনা সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরেও স্থানীয় দালাল ইজাবেল তাকে মেসেজ করে হাসপাতালের আরও ছবি দিতে বলে। পরে বলে, ক্যাম্পেইনের জন্য বানানো ভিডিওটি অনলাইনে আপলোডই করা হয়নি। যদিও তারা এই ভিডিও দিয়ে অর্থ সংগ্রহ করেছে।
ইউক্রেনের পাঁচ বছর বয়সী ভিক্তোরিয়ার (ব্রেন ক্যানসার রোগী) মা ওলেনা ফিরসোভা জানান, তাঁর মেয়ের ছবি ব্যবহার করে প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার সংগ্রহ করা হলেও তিনি এই ক্যাম্পেইন সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। ভিক্তোরিয়ার শুটিং হয়েছিল অ্যাঞ্জেলহোম ক্লিনিকে। জানা যায়, এই ক্যাম্পেইনের সঙ্গে যুক্ত তেতিয়ানা খালিয়াভকা ওই ক্লিনিকের বিজ্ঞাপন ও যোগাযোগ বিভাগের কর্মী ছিলেন। যদিও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ পরে তাঁর নিয়োগ বাতিল করে দেয় এবং তহবিল সংগ্রহের সঙ্গে তাদের যুক্ত থাকার কথা অস্বীকার করে।
ওলেনা যে চুক্তিতে সই করেছিলেন, তাতে ফিল্মিং (শুটিং) ফি বাবদ ১ হাজার ৫০০ ডলার দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে অতিরিক্ত ৮ হাজার ডলার দেওয়ার কথা থাকলেও, লক্ষ্যমাত্রার ঘরটি ফাঁকা রাখা হয়েছিল।
অনুসন্ধান চলাকালীন ইরেজ হাদারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো অভিযোগেরই উত্তর দেননি।
সবচেয়ে মর্মান্তিক বিষয় হলো, ফিলিপাইনের খলিল এবং মেক্সিকোর হেক্টর—এই দুই শিশুই মারা গেছে—তাদের নামে তৈরি করা তহবিল সংগ্রহের ক্যাম্পেইন এখনো অনলাইনে চালু আছে এবং অর্থ সংগ্রহ চলছেই।
দ্বিতীয়বার ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত ভিক্তোরিয়ার মা ওলেনা এই চক্রের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জেনে বলেন, ‘যখন আপনার সন্তান জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, আর কেউ সেই সুযোগ নিয়ে টাকা কামাচ্ছে, এটা খুবই নোংরা কাজ। এটা প্রাণের বিনিময়ে টাকা।’
বিবিসি তেতিয়ানা খালিয়াভকা এবং অ্যালেক্স কোহেন এবং চান্স লেতিকভা, ওয়ালস অব হোপ, সেন্ট রাফেল, লিটল অ্যাঞ্জেলস এবং সেন্ট তেরেসা নামক সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের জবাব চাওয়া হলেও তারা কেউই সাড়া দেয়নি।
ইসরায়েলের অলাভজনক সংস্থাগুলোর তত্ত্বাবধানকারী ইসরায়েলি করপোরেশন অথোরিটি বিবিসিকে বলেছে, যদি তাদের কাছে প্রমাণ থাকে যে প্রতিষ্ঠাতারা ‘অবৈধ কার্যকলাপের আড়াল’ হিসেবে সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করছেন, তাহলে দেশে নিবন্ধন বাতিল করা হতে পারে এবং প্রতিষ্ঠাতাকে এই খাতে কাজ করতে বাধা দেওয়া হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রক সংস্থা চ্যারিটি কমিশন, দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে দান করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের সব সময় সংস্থাগুলো সম্পর্কে আগে খোঁজখবর নেওয়ার পরামর্শ দেয়। সংস্থাটি নিবন্ধিত কিনা তা যাচাই করতে এবং সন্দেহ হলে উপযুক্ত তহবিল সংগ্রহ নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়।

 

Aminur / Aminur

ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের সঙ্গে প্রতারণা, ৪০ লাখ ডলার আত্মসাতের নেপথ্যে এক ইসরায়েলি

সীমান্ত উত্তেজনার মধ্যেই সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা থাইল্যান্ডের

সৌদি আরবে গান গাইতে এসে হিজাব পরলেন মার্কিন র‌্যাপার

রাশিয়ার সাবমেরিনে ইউক্রেনের হামলা

বিজয় দিবসে মোদির পোস্ট— একবারও উল্লেখ করলেন না বাংলাদেশের নাম

এক ঘণ্টার বর্ষণে মরক্কোতে আকস্মিক বন্যা, ২১ জন নিহত

সুদানে ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত, হামলার নিন্দা পাকিস্তানের

বাংলাদেশি শান্তিকর্মীদের ওপর হামলা, সুদানকে সতর্কবার্তা জাতিসংঘের

উড্ডয়নের পরপর ইঞ্জিন বিকল, যুক্তরাষ্ট্রে বিমানের জরুরি অবতরণ

চোরাই তেলবাহী ট্যাঙ্কার জব্দ করল ইরান, আটক বাংলাদেশিসহ ১৮ ক্রু

সংঘাতের ৬ দিনে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ায় নিহত ২৩, বাস্তুচ্যুত ৭ লাখ

মাত্র ৪ দিনের মধ্যে ফের বড় ভূমিকম্প জাপানে, সুনামি সতর্কতা

যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণকারীদের সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট খতিয়ে দেখার প্রস্তাব