রমজানে প্রাণ জুড়াবে স্বাস্থ্যকর ফলের শরবত

পবিত্র মাহে রমজান আসন্ন। ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ রোজা পালনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। অপরিকল্পিত খাদ্যাভাসের কারণে রোজায় অনেক স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। তাই রমজানে ইফতার ও সেহরিতে খাদ্যগ্রহণে সর্তক হতে হবে। তাছাড়া রোজা এবার গরমের মৌসুমে। ফলে সারাদিনের রোজায় ক্লান্ত হয়ে পড়বেন প্রায় সকলেই। প্রচণ্ড এ গরমে রোজা রাখার পর সারা দিনের ক্লান্তি কাটাতে ইফতারে চাই এমন কিছু, যা তেষ্টা মেটাবে এবং দূর করবে ক্লান্তি। এক গ্লাস ঠান্ডা ফলের শরবত সারা দিনের ক্লান্তি মুছে শরীরকে চাঙা করতেই শুধু ভূমিকা রাখে না, একই সঙ্গে অবসাদ ঘুচিয়ে দিতেও বেশ কার্যকরী। তাই ইফতারে সবার চাই স্বাস্থ্যকর এক গ্লাস ফলের শরবত অথবা স্মুদি।
কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি ছাড়াই এসব শরবত আপনার ও আপনার পরিবারকে করবে প্রাণবন্ত। সেই সাথে তাজা ফলের তৈরি শরবতের পুষ্টিগুণ আপনাকে করবে সতেজ ও সুন্দর। চলুন চটপট কিছু সহজ, সুস্বাদু শরবত তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ, প্রস্তুত প্রণালী ও উপকারিতা দেখে নেয়া যাক।
লেবুর শরবত
উপকরণ : চিনি- পরিমাণমত, লবণ- একচামচ, পানি- এক বোতল, লেবু- ২/৩টি, লেবুর খোসা- ১ চা-চামচ। ছোট করে গ্রেট করে কাটা। পুদিনা পাতা- কয়েকটি থেঁতো করা, বরফ
প্রণালি : এই শরবত করতে সময় লাগে মিনিট পাঁচেক। বিশেষত যদি চিনির জলটা আলাদা করে আগে থেকে করে রাখেন তাহলে তো কথাই নেই। লেবু কেটে ছাকনির মধ্যে দিয়ে লেবুর রসটা বের করে নিন। চিনি গোলা জলে লেবুর রস দিয়ে দিন। তাতে লেবুর খোসাগুলো ছেড়ে দিয়ে ভালো করে নাড়ুন। পুদিনা পাতাগুলো অল্প থেঁতো করে দিয়ে দিন। এক চিমটে লবণ দিন। ভালো করে নেড়ে লম্বা গ্লাসে বরফ দিয়ে অতিথিকে দিন।
উপকারিতা : লেবুর শরবতে রয়েছে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা। লেবুর মতো সাইট্রাস ফলগুলো ভিটামিন সি-তে ভরপুর, যা আমাদের প্রতিরক্ষা তন্ত্রকে করে আরো সক্রিয়। সংক্রমণ প্রতিরোধেও লেবুর ভূমিকা অত্যাধিক। লেবুর মধ্যে থাকে পলিনিউট্রিয়েন্টস নামের রাসায়নিক, এটি একটি ভালো মানের এন্টি-অক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
বাদাম শরবত
উপকরণ : দুধ- ৪৫০ মিলি, পানি- ১৫০ মিলি, চিনি- ৬০ গ্রাম, আমন্ড- ১৫ গ্রাম জলে ভেজানো আমন্ড, পেস্তা- ১৫ গ্রাম পেস্তাকে জলে ভিজিয়ে উপরের ছালটি ছাড়িয়ে নিতে হবে, জাফরান- এক চিমটে, এলাচ- ৬টি। তবে শরবতের জন্য এলাচের ভেতরের দানাটি বের করে পিষে নিতে হবে।, গোলাপ জল- ৩/৪ ফোঁটা, বরফ
প্রণালি : এই শরবত খেতে খুবই উপাদেয়, কিন্তু কিছুটা ব্যয়সাপেক্ষ। তবে, বিশেষ কোনও অতিথির জন্য এই শরবত করে দেখতে পারেন। দুধ ও পানি একসঙ্গে মিশিয়ে তাতে চিনি দিন। অল্প একটু দুধের সঙ্গে পেস্তা ও আমন্ড মিশিয়ে বেটে নিতে হবে। তৈরি করা এই পেস্টটি দুধ ও পানির মিশ্রণের সঙ্গে মিশিয়ে দিন। জাফরান অল্প পানিতে গুলে তাতে এলাচ দানা বাটাটা ভালো করে মিশিয়ে দিন। এই মিশ্রণটি দুধের সঙ্গে মিশিয়ে দিন। কয়েক ফোঁটা গোলাপ জল দিন। ঠাণ্ডা করুন বা বরফ দিয়ে খেতে দিন।
উপকারিতা : বাদামের শরবত হাড় গঠনে ও মাংসপেশি মজবুত রাখে, ব্রেইনের কার্যক্ষমতা উন্নত করে, ক্যানসার প্রতিরোধ ও ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। বাদামে থাকে ক্যালোরি, প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, কপার, ম্যাংগানিজসহ আরও অনেক উপকারী উপাদান।
আঙুরের শরবত
উপকরণ : সাদা বিচিহীন আঙুর- ২২৫ গ্রাম, কালো আঙুর- ১০০ গ্রাম, পানি- এক লিটার, লবণ- এক চিমটে, এলাচ- ৬টি। কিন্তু এলাচের মধ্যেকার দানাগুলোকে বের করে বেটে নিতে হবে। লেবুর রস- ২চা-চামচ, গোলমরিচ- ১ চিমটে, দারচিনির গুঁড়া-১ চিমটে, বরফ কুচি
প্রণালি : আঙুরগুলো ধুয়ে নিন। লিকুইডাইজার বা শরবত করার হাত মেশিনে আঙুরের রস করতে হবে। আঙুর রসটি বড় একটি ছাকনি দিয়ে ছেকে নিন। এককাপ পানি মিশিয়ে রসটিকে আরেকবার ছাঁকতে হবে। বাকি জল আঙুরের রসের সঙ্গে মিশিয়ে দিন। নুন, এলাচ বাটা অ চিনি মিশিয়ে দিন। লেবুর রস, গোলমরিচ ও দারচিনি গুঁড়া দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে বরফ কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন।
উপকারিতা : প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর আঙুরের শরবত নানাভাবে শরীরের কাজে লাগে। এটি খেলে ভালো থাকে হার্ট, সেইসঙ্গে ক্যান্সারের আশঙ্কাও কমে অনেকাংশে। ভালো করে রক্ত সঞ্চালন, নিয়ন্ত্রণে রাখে রক্তচাপ। এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান থাকে আঙুরের খোসা ও বীজে। যে কারণে খাওয়ার সময় এগুলো বাদ দেবেন না।
তরমুজের শরবত
উপকরণ : তরমুজ কুচি দুইকাপ, চিনি ২ টেবিল চামচ, বিট লবণ আধা চা চামচ, লেবুর রস ২ চা চামচ, বরফ কুচি।
প্রণালি : তরমুজ কুচিসহ সব উপকরণ মিশিয়ে ব্লেন্ড করে ফ্রিজে রেখে দিন। প্রয়োজনীয় ঠাণ্ডা হলে নামিয়ে এনে পরিবেশন করুন রঙিন এক গ্লাস ঠাণ্ডা তরমুজ শরবত।
উপকারিতা : দেখতে সুন্দর, স্বাদে ভরপুর এ শরবত ইফতারে আপনাকে দেবে বিশেষ প্রশান্তি। গরমে প্রাণ জুড়াতে তরমুজের শরবতের জুড়ি নেই। সুস্বাদু এ শরবত কিডনি সুস্থ রাখার পাশাপাশি রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। তরমুজের শরবত অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এ ছাড়া প্রোস্টেট ক্যানসার, কোলন ক্যানসার ও ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
আনারসের শরবত
উপকরণ : আনারস কুচি ১ কাপ, বিট লবণ আধা চা চামচ, চিনি ২ চা চামচ, গোলমরিচের গুঁড়া ২ চা চামচ, পানি পরিমাণমতো।
প্রণালি : আনারস কুচির সঙ্গে বিট লবণ, চিনি, গোল মরিচের গুঁড়া ও পানি একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। ব্যস, তৈরি হয়ে গেল আনারসের শরবত। এবার সুন্দর একটি গ্লাসে ঢেলে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
উপকারিতা : আনারসের শরবত খুব পুষ্টিকর একটি পানীয়। অত্যাধিক পরিমাণে ভিটামিন সি ও ফাইবার থাকায় এটি ত্বকের জন্য খুব উপকারী। ইফতারিতে অনায়াসে খেতে পারেন এ শরবত, কারণ খালি পেটে এ শরবত কৃমি নিবারনে সাহায্যকারী। আনারসে আছে উচ্চ মাত্রায় পানিতে দ্রবণীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন-সি এবং পানিতে দ্রবণীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহকে ফ্রি-রেডিকেল থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। ফলে ক্যানসার এবং হৃদরোগের মত মারাত্মক রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে না।
দুধ তোকমার শরবত
উপকরণ : তোকমার দানা ১ টেবিল চামচ, চিনি ১ টেবিল চামচ, বরফকুচি ২ টেবিল চামচ এবং রুহ-আফজা ১/২ চা চামচ।
প্রণালি : প্রথমে দুধ জ্বাল দিয়ে ঠান্ডা করে নিন। শরবত বানানোর আধাঘণ্টা আগে তোকমার দানা ১/২ গ্লাস খাবার পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। ভিজিয়ে রাখা তোকমার দানা ঠান্ডা দুধে মিশিয়ে নিন। চিনি ও রুহ-আফজা দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। বরফকুচি মিশিয়ে ভালো করে ঝাঁকিয়ে নিন। ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন।
উপকারিতা : এ গরমে দেহের তাপ কমাতে এ শরবত বিশেষ সহায়ক। শুধু ইফতার নয়, সেহেরিতেও খেতে পারেন কারণ এতে রয়েছে প্রচুর আঁশ, যা বাড়তি ক্ষুধা দূর করে এবং পেট দীর্ঘক্ষণ পরিপূর্ণ থাকার অনুভূতি দেয়। দেহের ওজন কমাতে এ বীজের জুড়ি নেই। তোকমার ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এ ছাড়া এর নানা উপাদান দেহের চর্বি কমাতে সহায়তা করে।
আদা লেবুর শরবত
উপকরণ : আদার রস ১ চা চামচ, লেবুর রস ১ টেবিল চামচ, চিনি ২ টেবিল চামচ, ঠাণ্ডা পানি ১ গ্লাস।
প্রণালি : সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে শরবত বানাতে হবে। ইফতারের সময় এই শরবত খুবই ভালো লাগবে।
উপকারিতা : দীর্ঘ সময় রোজা রাখার ফলে হাতে-পায়ের বা শরীরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে এ শরবত। এ ছাড়া ক্যানসার, বমি বমি ভাব, রক্তচাপ কমাতেও বিশেষ উপকারী আদা লেবুর শরবত। ইফতারে ভাজাপোড়া খাবার বেশি খাওয়া হয়। তাই লেবুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চর্বি কমাতে সাহায্য করবে আশা করা যায়।
আমের শরবত
উপকরণ : কাঁচা আম কুচি এককাপ, চিনি স্বাদমতো, পানি আধাকাপ, বিট লবণ এক চিমটি, পরিমাণমতো বরফ কুচি।
প্রণালি : আম ভালোভাবে ধুয়ে কেটে টুকরো করে নিন। এবার ব্লেন্ডারে একে একে আম, পরিমানমতো বিট লবন, কাচামরিচ, চিনি ও পানি দিন। সবকিছু একসাথে ভালোকরে ব্লেন্ড করুন ২ মিনিট। হয়ে গেলো দারুন স্বাদের কাঁচা আমের শরবত। গ্লাসে ঢেলে বরফ টুকরো দিয়ে পরিবেশন করুন।
উপকারিতা : গরমের প্রধান প্রশান্তি বলা চলে আমকে। প্রচন্ড সুস্বাদু আমের শরবত ইফতারে পান করলে এক নিমিষে জুড়িয়ে যাবে আপনার মনপ্রাণ। ফাইবার সমৃদ্ধ এ ফল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিশেষ সহায়ক। ভিটামিন-সি যুক্ত হওয়ায় ঠান্ডাজনিত রোগ নিরাময়ে উপকারী। অ্যাসিডিটি নিয়ন্ত্রণে সাহায্যকারী এ শরবত পানে শরীর নানাবিধ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে আশা করা যায়।
তেঁতুলের শরবত
উপকরণ ; তেঁতুল, বিট লবণ, চিনি, কাঁচা মরিচ কুচি, ধনিয়া পাতা কুচি, শুকনা মরিচের গুড়া, ঠাণ্ডা পানি।
প্রণালি : প্রথমে তেঁতুল থেকে বিচি আলাদা করে একটি পাত্রে তেঁতুল গুলে নিন। গোলানো তেঁতুলের সঙ্গে পরিমানমতো ঠাণ্ডা পানি মিশান। এবার তেঁতুলের সঙ্গে একে একে পরিমানমতো চিনি, বিট লবণ, টেলে রাখা শুকনা মরিচের গুড়া, কাঁচা মরিচ কুচি ও ধনিয়া পাতা কুচি দিন এবং নেড়ে ১০ মিনিট রাখুন। তেঁতুলের মিশ্রনটি অন্য একটি পাত্রে ছাকনি দিয়ে ছেকে নিন। গ্লাসে ঢেলে বরফ কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন।
উপকারিতা : গরমে তেঁতুলের শরবত দেবে অতুলনীয় প্রশান্তি। তেঁতুল রক্তের কোলস্টেরল কমায়। তাই এ রমজানে পেটে গ্যাস হলে তেঁতুলের শরবত অনেকটা সাহায্য করবে। তেঁতুলে থাকা ভিটামিন-মিনারেলস স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী।
জামান / জামান

অফিসে দীর্ঘ সময় বসে থাকলে কি হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়

মিষ্টি পেয়ারা চিনবেন কীভাবে?

খেজুর কতটা উপকারী?

তিরামিসু তৈরির রেসিপি

মোচার বড়া তৈরির রেসিপি

চালতার আচার তৈরির রেসিপি

চুল পড়া বন্ধ করবে এই ৪ খাবার

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ৫টি ঘরোয়া উপায়

ত্বকে বয়সের ছাপ কমাবে যেসব পানীয়

ক্রিম মাশরুম স্যুপ তৈরির রেসিপি

গর্ভাবস্থার শেষের দিকে আয়রনের ঘাটতি পূরণে যা খাবেন

পেটফাঁপা কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্য, এই ৫ বীজ খেলে মিলবে উপকার
