ঢাকা শনিবার, ১০ মে, ২০২৫

বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনা


অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া photo অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া
প্রকাশিত: ৬-৭-২০২১ দুপুর ২:২৩

মানব সভ্যতার উন্মেষ প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে। পাঁচ লক্ষ বছর আগেও ভারতবর্ষে মানুষের বসতি ছিল। প্রাগৈতিহাসিক ভারত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক পরিচয় ও সভ্যতার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। বৈদিক ভারত, বৈদিক সমাজ, সিন্ধু ও আর্য সভ্যতা, বেদান্ত, পুরাণ, জাতিবেদ, ব্রাক্ষণ, ক্ষত্রীয়, বৈশ্য, শুদ্র, হিন্দু ধর্ম, জৈন ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, মৌর্য সাম্রাজ্য, গৌড় ও গুপ্ত সাম্রাজ্য, মগদের সাম্রাজ্য, গৌড় শাসন, পাল সাম্রাজ্য, সেন সাম্রাজ্য, তুরস্ক শক্তির আবির্ভাব, সুলতানী আমল, পাঠান, মোগল নবাবী আমল, প্রায় ২০০ বছরের ইংরেজ শাসন-শোষণ, ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতি বিশেষত হিন্দু মুসলমানের হাতে ঘটে যাওয়া মহাবিদ্রোহের পর হিন্দু মুসলমানদের বিভক্তি ঘটে ১৯০৫-এর বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন নিয়ে।
১৯৪৬ সালে ১৩ আগস্ট ভয়াবহ কলকাতা দাঙ্গা ভারতের ইতিহাসে কলঙ্কময় দিন। এরপর ঘটে ১৯৪৬ এর ভয়াবহ নোয়াখালী দাঙ্গা। ১৯৪৭ সালে পাঞ্জাবে ভয়ঙ্কর রক্তপাত, মানুষ বিভক্ত হয় ধর্মের নামে। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন হয় ভারতবর্ষ। ১৯৪৭ সালের ৩ জুন ব্রিটিশ সরকার ভারতকে ধর্মের ভিত্তিতে দ্বিজাতিতত্ত্বে দ্বিখণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে, যা যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে পাস হয়। 
ভারতের স্বাধীনতা আইন অনুসারে ভারত ও পাকিস্তান দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আইন পাস হয়ে কার্যকর হয় ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট। ভারত ও বাঙালির প্রশাসন এই বঙ্গে ধর্মের ভিত্তি যেমন রচিত হয়েছে, তেমনি এই বঙ্গে সব ধর্মের, বর্ণের, গোত্রের একসঙ্গে বসবাস শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। সম্প্রীতির এই শক্তি বাঙালির সভ্যতা নির্মাণ করেছে। স্বার্থান্বেষী মহল সম্প্রীতির সহজাত বাঁধনে ফাটল ধরাতে মাঠে নেমেছে বহুবার। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বঙ্গভূমির মানুষ সম্প্রীতির বিপরীতে বিভাজিতও হয়েছে। ১৯৪৭ সালে ধর্মীয় দ্বিজাতিত্বত্তের ভিত্তিতে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র কাঠামো ছিল ভৌগলিক ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সভ্যতায় পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। শুরু হয় পশ্চিম পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসন, শোষণ ও নির্যাতন। এই শাসন, শোষণ ও নির্যাতন ছিল ভাষার ওপর সংস্কৃতির ওপর, জাতিগত মর্যাদার ওপর, অর্থনীতির ওপর। যেখানে সাম্যতা, ন্যায্যতা ও অধিকার কিছুই ছিল না। তখন পূর্ব বাংলার নেতা ছিলেন হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক। 
শেখ মুজিব কলকাতার ইসলামিয়া কলেজের অধ্যয়ন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন। পশ্চিম পাকিস্তানের পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলীম লীগের কর্তৃত্ব সর্বত্রই। ধীরে ধীরে শেখ মুজিব ছাত্রদের সংগঠিত করে অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ১৯৪৮-এর ৪ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির বেতন বৃদ্ধি নিয়ে আন্দোলন ও ধর্মঘট করলে শেখ মুজিব তাদের দাবি সমর্থন ও প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গ্রেফতার করায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে। ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন মওলানা আকরাম খান এবং খাজা নাজিম উদ্দিন। সেখানে সোহ্রাওয়ার্দী এবং আবুল হাশেম নেতৃত্বাধীন উদারপন্থী ব্লক উপেক্ষিত ছিল। নতুন দল গঠনের চিন্তা নিয়ে ১৫০, মোঘলটুলীতে সোহ্রাওয়ার্দীর নেতৃত্বে কর্মী শিবির স্থাপন করেন, যেখানে কলকাতা থেকে এসে শেখ মুজিবুর রহমান এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হন। 
এদিকে টাঙ্গাইলে প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ পদত্যাগ করলে আসনটি শূন্য হলে ২ দফা মুসলিম লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে দেন মওলানা ভাসানী এবং শামসুল হক। মুসলিম লীগের সাথে ধীরে ধীরে দূরত্ব বৃদ্ধি হওয়ায় পূর্ব বাংলার অধিকার আদায়ে স্বাতান্ত্রিক একটি দল গঠনের ভাবনা থেকে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ জনের উপস্থিতিতে কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক এবং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানকে (তখন তিনি ছিলেন কারাগারে) নিয়ে ৪০ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এভাবে আওয়ামী মুসলিম লীগের যাত্রা শুরু। তারপর বেশ কয়েকবার এ দল নেতৃত্বের মতদ্বৈততা ও ভাঙনর মুখে পড়ে। প্রথমত মতদ্বৈততা, দলের নামে ‘মুসলিম’ শব্দটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে মওলানা ভাসানী বাদ দেয়ার পক্ষে আর সোহ্রাওয়ার্দী ছিলেন বিপক্ষে। ১৯৫৫ সালে শেষ পর্যন্ত ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামে অসাম্প্রদায়িক সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। সে যাত্রায় সোহ্রাওয়ার্দী সাহেব মেনে নিয়েছিলেন। দ্বিতীয় মতদ্বৈততা ১৯৫৭ সালে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে। তখন আওয়ামী লীগ পাকিস্তান সরকারের সাথে পূর্ব বাংলার ক্ষমতায় ছিল। পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সিয়েটো চুক্তি এবং সেন্টো সামরিক জোটের সদস্য হিসেবে যুক্ত হওয়া নিয়ে চরম মতদ্বৈততা দেখা দেয়। মওলানা ভাসানী মার্কিন চুক্তি বাতিলের দাবি করছিলেন। তাতে প্রধানমন্ত্রী সোহ্রাওয়ার্দী রাজী নন। ১৯৫৭ সালে টাঙ্গাইলের কাগমারী সম্মেলনে এ প্রস্তাব ভোটাভুটিতে দিলে মওলানা ভাসানী হেরে যান। মওলানা ভাসানী ও তার পন্থীরা আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে আসেন। 
মওলানা ভাসানী ১৯৫৭ সালের ১৮ মার্চ পদত্যাগপত্র জমা দেন। তাকে বারবার অনুরোধ করা হলেও তিনি সিদ্ধান্তে অনড় থেকে ১৯৫৭ সালের ২৫ জুলাই ন্যাশনাল আওয়ামী লীগ (ন্যাপ) গঠন করেন। ১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে আবদুর রশিদ তর্কবাগিশকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ঘোষণা করেন। তৃতীয়বার মতদ্বৈততা ১৯৬৬ সালে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা নিয়ে বিরোধিতা করেন সংগঠনের সভাপতি তর্কবাগিশ নিজেই। এই বিরোধিতা নিয়ে তর্কবাগিশসহ অনেকেই বেরিয়ে গেলেন। ১৮-২০ মার্চ ১৯৬৬ সালে রোজ গার্ডেনের কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদের নাম সর্বসম্মতভাবে ঘোষিত হয়। এরপর আর বাঙালি জাতিকে পিছু তাকাতে হয়নি। বাঙালির নেতা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফার মাধ্যমে সাড়ে সাত কোটি মানুষের হৃদয়ের নয়নমণি হয়ে উঠলেন এবং বাঙালির আত্মবিশ্বাস ও বাতিঘরে পরিণত হলেন। 
হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর ১৯৬৪ সালে মৃত্যু, মওলানা ভাসানীর রাজনীতির কক্ষচ্যুত, শেরে বাংলার অস্পষ্ট রাজনীতি, তর্কবাগিশদের ৬ দফা প্রশ্নে দলত্যাগ- বাঙালির মুক্তি, স্বাধিকারের প্রশ্নে অবিচল থাকতে পারেনি। এ প্রশ্নে বাংলার একমাত্র ঠিকানা হয়ে উঠলেন শেখ মুজিব। জনগণের সর্মথন ও ভালোবাসা নিয়ে বঙ্গবন্ধু সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে নিয়ে পাকিস্তানি জান্তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। ১৯৬৮ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে আবার সভাপতির দায়িত্ব পান শেখ মুজিব। ১৯৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্রের মামলায় প্রধান আসামি শেখ মুজিব। রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান গং আগরতলা ষড়যন্ত্রের মামলায় নেতা মুজিব গ্রেফতার হন। 
১৯৭০-এ ৬ দফায় স্বপক্ষে নিরঙ্কুশ ম্যান্ডেট নিয়ে পূর্ব বাংলার নেতা নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। এই নেতার নেতৃত্বেই পাকিস্তান ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা। ১৯৪৮-এর মার্চে পূর্ব বাংলার রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে সর্বাত্মক ভাষার জন্য প্রথম হরতাল এবং শেখ মুজিবসহ নেতৃবৃন্দ গ্রেফতার হন। এটাই বঙ্গবন্ধুর প্রথম গ্রেফতার। ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে সমর্থন ও অংশগ্রহণের জন্য শেখ মুজিব আবার গ্রেফতার হন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন, কারাগারে অংশগ্রহণ করেন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নিবার্চন, ১৯৫৪ সালে গোপালগঞ্জ থেকে প্রথম নির্বাচিত হন এবং পূর্ব বাংলা যুক্তফ্রন্ট সরকারের তরুণ শেখ মুজিব কৃষি, সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলন ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়। 
১৯৭০-এর নির্বাচন, নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলার একক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ও স্বাধীনতার দিকনির্দেশনা ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা, শেখ মুজিবকে গ্রেফতার, বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ, মেহেরপুরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন, স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং, শরণার্থী আশ্রয়, মুক্তিযুদ্ধে তাদের সশস্ত্র অংশগ্রহণ, বুদ্ধিজীবী হত্যা, নিয়াজীর আত্মসমর্পণ, ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় রচিত হয় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, লাল-সবুজের পতাকা, আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি- জাতীয় সংগীত। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, শপথ গ্রহণ, রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিয়ে পবিত্র সংবিধান প্রণয়ন এবং জাতির পিতা হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সংসদীয় পদ্ধতি প্রবর্তন করেন। বিশ্ব শান্তি পরিষদ কর্তৃক ‘জুলিও কুরি’ পদকে ভূষিত হন। ১৯৭৩ সালে সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়। আলজেরিয়া জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান, জাতিসংঘের সদস্যপদ অর্জন এবং ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রথম ‘বাংলায়’ ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু এবং একই বছরে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ১৩০টি দেশ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালোরাত্রি জাতির কলঙ্ককজনক দিন। জাতির পিতা, বঙ্গমাতা ও শিশু রাসেলসহ সপরিবার হত্যার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি, সংবিধান আর রাষ্ট্রের উল্টোপথে চলা শুরু, ষড়যন্ত্র, জাতীয় চার নেতাকে হত্যা, বেইমানি, সংবিধান কাটাছেঁড়া, মূলনীতি থেকে দূরে সরে যাওয়া, পাকিস্তানি কায়দায় রাষ্ট্র পরিচালনা, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ, খুনীদের পুনর্বাসন, স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার-আলবদরসহ যুদ্ধাপরাধীদের কারাগার থেকে মুক্ত করে ধর্মীয় রাজনীতির পুনর্বাসনসহ নাগরিকত্ব প্রদান এবং ক্ষমতায় অংশগ্রহণ। স্বাধীনতার পক্ষে সৈন্যদের বিনা বিচারে হত্যা, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান সামরিক আইন প্রশাসক প্রেসিডেন্ট পদে আসীন, প্রহসনের হ্যাঁ-না ভোট, স্বাধীনতার সেøাগান ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ নিষিদ্ধকরণ এবং দল গঠন, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা। ‘আই উইল মেক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর পলিটিশিয়ান, মানি ইজ নো প্রবলেম’ রাজনীতি চালু করেন মেজর জেনারেল জিয়া।
আওয়ামী লীগের দলে চতুর্থবারের মতো ভাঙন, খন্দকার মোশতাকসহ মীরজাফরদের দল থেকে পলায়ন। ১৯৭৬ সালে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব নেন মহিউদ্দিন আহমেদ এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন বেগম সাজেদা চৌধুরী। ১৯৭৭ সালে সাংগঠনিক আহ্বায়ক হন সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন। ১৯৭৮ সালে দলের হাল ধরেন আবদুল মালেক উকিল সভাপতি হিসেবে আর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আবদুর রাজ্জাক। প্রথমবার ১৯৭৮ সালে মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে পাল্টা আওয়ামী লীগ গঠন হয়। অবশেষে আওয়ামী লীগকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করেন শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালে ইডেন গার্ডেনের কাউন্সিল অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে সভানেত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখানে লক্ষণীয়, বঙ্গবন্ধু যখন আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হন তখন তিনি করাগারে। শেখ হাসিনা যখন সভানেত্রী নির্বাচিত হন তখন তিনি ভারতে নির্বাসনে ছিলেন। দুজন নেতার অবর্তমানেই দলে নেতা নির্বাচিত হয়ে েিলন। ১৭ মে ১৯৮১ সালে ঝড়-বৃষ্টির দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মাঝে সেদিন দিল্লি, কলকাতা হয়ে কুর্মিটোলায় ১৫ লাখ মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে সেদিন শেখ হাসিনা বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলার মানুষ পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য আমি দেশে এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আমার আর হারাবার কিছু নেই। সবকিছু হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে ফিরে এসেছি। পিতা-মাতা, ভাই-বোন, ছোট ভাই রাসেলসহ সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই।’ তারপরের ইতিহাস আপনারা সকলে জানেন। দীর্ঘ পথে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, স্বৈরাচার পতন, দলের ভেতর-বাইরে সমস্যা, ষষ্ঠবার ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে আবার আরেক দফা ভাঙন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে শেখ হাসিনা সভানেত্রী, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ক্রমান্বয়ে আবদুর রাজ্জাক, বেগম সাজেদা চৌধুরী, জিল্লুর রহমান, আব্দুল জলিল, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং সর্বশেষ ওবায়দুল কাদের দায়িত্ব পালন করেন। 
পাকিস্তানের ২৪ বছর, ‘জিয়া-এরশাদ-খালেদা’ ৩১ বছরসহ সর্বমোট ৫৫ বছর পাকিস্তানি ভাবধারায় এ দেশ (পাকিস্তান ও বাংলাদেশ) পরিচালিত হয়। আর বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছর ও শেখ হাসিনা সাড়ে ১৭ বছরসহ মাত্র সাড়ে ২০ বছর স্বাধীনতার পক্ষের সরকার, গরিব-দুখী ও মানুষের মেহনতি মানুষের সরকার, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের সরকার দায়িত্বে ছিল।
উপমহাদেশের প্রাচীন ও ঐতিহাসিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও বাঙালি জাতীয়তাবোধের ধারক ও বাহক এই দল আর এই দলের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বেই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত ২০ বছর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সভাপতি বা সভানেত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর তনয়া শেখ হাসিনা ১৯৮১ থেকে ২০২১ অদ্যাবধি ৪০ বছর এ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি এ সংগঠনের ১৯৭৮ সালে সহ-সভাপতি ছিলেন, ১৯৮১ থেকে প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে যাত্রা শুরু হয়। এ পর্যন্ত মোট কাউন্সিল হয়েছে ২৬ বার। বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশন ছিল ৬ বার। কমিটি গঠন কল্পে দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন হয়েছে ২০ বার। প্রথম কমিটির সদস্য সংখ্যা ছিল ৪০। বর্তমান কমিটির সদস্য সংখ্যা ৮১। প্রথম মহিলা সম্পাদিকা পদটি গঠিত হয় ১৯৫৫ সালে, যার সম্পাদিকা ছিলেন সেলিনা বানু। ১৯৫৭ ও ১৯৫৪ সালে মেহেরুন্নেসা খাতুন এবং ১৯৬৬ ও ১৯৬৮ সালে আমেনা বেগম আর ১৯৭০ সালে বদরুন্নেসা আহমেদ, ১৯৭৮ সালে আইভি রহমান এবং ২০০৯ সাল থেকে ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা মহিলা সম্পাদিকা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে কোনো চাঁদা ছিল না। ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত বার্র্ষিক সদস্য চাঁদা ছিল ১ আনা। ১৯৬৮ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত ১০ পয়সা। ১৯৭৪-এ ২৫ পয়সা, ১৯৭৪ থেকে ২০০১ পর্যন্ত ২ টাকা, ২০০২ সালে ৫ টাকা, ২০০৯ সালে ১০ টাকা, ২০১৬ সালে ২০ টাকা।
বাংলাদেশের সবচেয় বৃহত্তম দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। গৌরবদীপ্ত সংগ্রামী পথচলার একমাত্র অগ্রসেনানী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ। 
বঙ্গবন্ধু একটি অবিনশ্বর নাম, ভালোবাসার কাঙ্গাল, সংগ্রামী এক মহানায়কের নাম, হৃদয় যার দীঘির মতো সমুদ্রের মতো ছিল বিশাল, মন ছিল আকাশের মতো উদার, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, যার অমর বাণী- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের আপোসহীন নেতা। 
জাতির সূর্যসন্তান আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে ২১ বার হত্যা করতে চেয়েছে। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, গণতন্ত্র বারবার হোঁচট খেয়েছে। শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের একমাত্র ঠিকানা। তার নেতৃত্ব জাতিকে বারবার পথ দেখায়। এছাড়া এ দেশের মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জাতির জনকের বিচার হওয়ার মধ্যদিয়ে আইনের শাসনের প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ১/১১ থেকে মানুষকে মুক্তি দেন শেখ হাসিনা। পার্বত্য শান্তিচুক্তি, ৫৫ বছরের জঞ্জাল ছিটমহল চুুক্তি, তিস্তা চুক্তি, সমুদ্র বিজয়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আকাশ বিজয়, অনুন্নত দেশ থেকে স্বল্পোন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণসহ জাতিসংঘে নেতৃত্বে দিচ্ছেন। বিশ্বনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। কমিউনিটি ক্লিনিক, এমডিজি অর্জন, পদ্মা সেতু ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, দেশকে রোল মডেল দেশে রূপান্তর, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ অনেক কিছুই বাংলাদেশকে আজ বিশ্বে মর্যাদার আসনে আসীন করেছে। তাই কৃতজ্ঞতা আর শ্রদ্ধাভরে বলতে চাই- আওয়ামী লীগ মানেই বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ মানেই শেখ হাসিনা। জয়তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জয়তু শেখ হাসিনা।

 

এমএসএম / এমএসএম

কেমিক্যাল আতঙ্ক নয়, চাই বিজ্ঞানসম্মত আমচাষ ও প্রশাসনিক সচেতনতা

শুভ অক্ষয় তৃতীয়া: দানে ধ্যানে অনন্তকালের পূণ্যলাভ

শিক্ষা উপকরণের ব্যবহার ও গুরুত্ব, বাংলাদেশ প্রেক্ষিত

ইসরায়েলের বর্বরোচিত যুদ্ধের অবসান হোক

চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে তিস্তা পাড় বাসীর প্রত্যাশা

বিশ্ববাণিজ্যে বড় চ্যালেঞ্জ ট্রাম্পের শুল্কনীতি

রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রমী নেত্রী খালেদা জিয়া

সমুদ্রসীমা রক্ষা এবং কৌশলগত অংশীদারত্ব

ইউরোপ, আমেরিকার ফাটল এখন কাঠামোবদ্ধ রূপ পাচ্ছে

কর্মসংস্থানের বিষয়টি দেশের সার্বিক উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত

গত ২৫ বছরে বাংলাদেশে বেকারত্বের তথ্যচিত্র এবং পরিসংখ্যানগত তুলনামূলক বিশ্লেষণ!

শুভ নববর্ষ ১৪৩২

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর ও আমাদের প্রত্যাশা