মার্কেটিং বিক্রি বাড়ায়, যোগাযোগ ব্র্যান্ড তৈরি করে

বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যবসায় টিকে থাকা কিংবা এগিয়ে যাওয়ার জন্য শুধু পণ্য বা সেবা যথেষ্ট নয়। যত বড় বা আধুনিক কোনো প্রতিষ্ঠানই হোক না কেন, তারা যদি কেবল বিক্রির দিকে নজর দেয়, তবে হয়তো সাময়িক সফলতা পাবে; কিন্তু স্থায়ী পরিচিতি বা মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিক্রির বাইরেও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে—সেটি হলো যোগাযোগ। আর এই যোগাযোগই ধীরে ধীরে গড়ে তোলে একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড।
আমাদের দেশে কিংবা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে, যারা প্রথম দিকে আক্রমণাত্মক মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত বিক্রি বাড়াতে সক্ষম হয়েছিল। বড় বড় বিজ্ঞাপন, আকর্ষণীয় অফার, সোশ্যাল মিডিয়ার ক্যাম্পেইন—সবকিছুই ছিল চোখ ধাঁধানো। এতে অবশ্যই তাৎক্ষণিক বিক্রির হার বেড়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সেই বিক্রি কি দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকে? অথবা সেই প্রতিষ্ঠানগুলো কি কেবল পণ্যের জন্য নয়, বিশ্বাসের জন্যও পরিচিত হতে পেরেছে?
সত্যি কথা বলতে কী, শুধু বিক্রির পেছনে ছুটলে মানুষ কখনোই একটি ব্র্যান্ডকে আপন করে নেয় না। কারণ বিক্রি হয় মূলত তথ্য দিয়ে, কিন্তু ব্র্যান্ড তৈরি হয় অনুভূতির মাধ্যমে। আর সেই অনুভূতি আসে সুস্পষ্ট ও মানবিক যোগাযোগ থেকে।
যোগাযোগ মানে কেবল বিজ্ঞাপন নয়, বরং গ্রাহকের সাথে খোলামেলা কথোপকথন, তাদের অভিযোগ ও পরামর্শ গুরুত্বের সাথে শোনা, সমাজ ও পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ, এমনকি প্রতিষ্ঠানটির ভেতরের সংস্কৃতিও এর অংশ। একটি প্রতিষ্ঠান যত বেশি মানুষের সাথে আন্তরিকভাবে যুক্ত হতে পারে, তত দ্রুত তারা মানুষের মন জয় করতে পারে।
আমরা যদি বিশ্বের বিখ্যাত কিছু ব্র্যান্ডের দিকে তাকাই, যেমন—এপল, কোকা-কোলা বা ইউনিলিভার—তাহলে দেখবো, তাদের সাফল্যের পেছনে কেবল পণ্যের গুণগত মান নয়, বরং মানুষের মনে গভীর সম্পর্ক তৈরির কৌশল কাজ করেছে। তারা শুধু বলে না যে 'আমাদের পণ্য কিনুন', বরং বোঝানোর চেষ্টা করে 'আমরা আপনার জীবনের অংশ হতে চাই'।
অন্যদিকে, আমাদের দেশেও কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা শুরুতে শুধু বিক্রির দিকে নজর দিয়েছিল। একসময় তাদের বিজ্ঞাপন ছিল সর্বত্র, কিন্তু গ্রাহকের প্রশ্নের জবাব, অভিযোগের সমাধান, সামাজিক দায়িত্ব পালনে তারা পিছিয়ে ছিল। ফলাফল হলো, মানুষ সেই প্রতিষ্ঠানকে ক্ষণিকের জন্য মনে রেখেছে, কিন্তু ভালোবাসা বা আস্থার জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি।
বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নতির কারণে গ্রাহকরা অনেক বেশি সচেতন ও সংযুক্ত। তারা শুধু বিজ্ঞাপন দেখেই সিদ্ধান্ত নেয় না, তারা প্রতিষ্ঠানটির আচরণ, মূল্যবোধ, এমনকি গ্রাহক সেবার মানও খতিয়ে দেখে। তাই এখন ব্যবসার মূল মন্ত্র হতে হবে—'বিক্রির পাশাপাশি সম্পর্ক গড়ে তোলা'।
মার্কেটিং আমাদের জানায়, পণ্য বা সেবা কেন দরকার। কিন্তু যোগাযোগ আমাদের বোঝায়, সেই পণ্য বা সেবা আমাদের জীবনে কীভাবে মূল্য যোগ করবে। এই দুয়ের সমন্বয়ই শেষ পর্যন্ত তৈরি করে দীর্ঘমেয়াদী সফলতা এবং শক্তিশালী ব্র্যান্ড।
তাই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য সময় এসেছে শুধু বিক্রি বাড়ানোর লক্ষ্য না রেখে, মানুষের সাথে সত্যিকারের যোগাযোগ গড়ে তোলার দিকে মনোযোগ দেওয়ার। কারণ বিক্রি হয় মুহূর্তের জন্য, কিন্তু সম্পর্ক থাকে বছরের পর বছর। আর সেই সম্পর্কই তৈরি করে বিশ্বাস, পরিচিতি এবং শেষ পর্যন্ত একটি অবিচল ব্র্যান্ড।
মোঃ সাজ্জাদুল ইসলাম
পাবলিক রিলেশন অফিসার, ডিপার্টমেন্ট অব বিসিপিআর, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি
এমএসএম / এমএসএম

মার্কেটিং বিক্রি বাড়ায়, যোগাযোগ ব্র্যান্ড তৈরি করে

নির্বাচনী ব্যবস্থায় গণমাধ্যম নীতিমালার প্রস্তাবিত সংস্কার ও গণমানুষের প্রত্যাশা

বাংলাদেশ সংবিধানের আলোচিত ৭০ অনুচ্ছেদ প্রেক্ষিতঃ রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত

শতাব্দির সেরা মাটির সৈনিক কৃষক যোদ্ধা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট ও জনগণের প্রত্যাশা

ট্রাম্প-সালমান কথোপকথনে বিশ্ব কী বার্তা পেল

এফবিসিসিআইর ডিজিটাল রূপান্তর : ব্যবসায়িক নেতাদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল সেবা

জাতীয় ঐকমত্য কঠিন হলেও উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

রাজনৈতিক অঙ্গনে এক অনন্য উচ্চতায় তারেক জিয়া

কেমিক্যাল আতঙ্ক নয়, চাই বিজ্ঞানসম্মত আমচাষ ও প্রশাসনিক সচেতনতা

শুভ অক্ষয় তৃতীয়া: দানে ধ্যানে অনন্তকালের পূণ্যলাভ

শিক্ষা উপকরণের ব্যবহার ও গুরুত্ব, বাংলাদেশ প্রেক্ষিত
