শিক্ষা উপকরণের ব্যবহার ও গুরুত্ব, বাংলাদেশ প্রেক্ষিত

শিখন শিক্ষনে উপকরণের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদের নিকট সহজ ও আকর্ষণীযভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে শিখনকে দীর্ঘ স্থায়ী ও ফলপ্রসূ করে তোলার লক্ষ্যেই শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করা হয়। সাধারণত শিখন শিক্ষন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত দ্রব্য সামগ্রীকেই শিক্ষা উপকরণ বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, যেসব বস্তু বা সামগ্রী উত্তমরূপে ব্যবহার করে বিষয়বস্তুকে সহজ, আকর্ষণীয় ও সাবলীলভাবে উপস্থাপন করা যায়, পাঠের প্রতি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করা যায় এবং শিক্ষাদান কার্যকর ও স্থায়ী করা সম্ভব হয় তাদেরকে শিক্ষা উপকরণ বলা হয়। শিক্ষা উপকরণ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। সাধারণত বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে শিক্ষক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন কোন পাঠে কোন উপকরণ ব্যবহৃত হবে। তাই শিক্ষককে বিষয়ের উপকরণ নির্বাচন, উপকরণ তৈরি ও সংগ্রহ, সঠিক সময়ে সেগুলোর সঠিক ব্যবহার এবং সেগুলোর সংরক্ষণ বিষয়ে অত্যন্ত বিচক্ষণ হতে হয়। উপকরণ বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট না হলে অথবা উপকরণ সঠিক সময়ে সঠিকভাবে প্রদশিত না হলে শিক্ষনের ক্ষেত্রে তা ইতিবাচক প্রভাবের পরিবর্তে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। শিক্ষার সতর ও শ্রেণীভেদ পাঠদানের বিষয়ের চাহিদার আলোকে ভিন্ন ভিন্ন উপকরণ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। শিক্ষাবিদগণ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষা উপকরণক শ্রেনীবিভাগ করেছেন। সংগ্রহের উৎস হিসেবে উপকরণ দূ ধরনের। যথা:১. বানিজ্যিক উপকরণ ( শিল্প কারখানায় তৈরি এবং দোকান থেকে কেনা) ২. সহজলভ্য বানিজ্যিক উপকরণ ( পরিবেশ থেকে সংগৃহীত, শিক্ষক/ শিক্ষার্থী কতৃক সংগৃহীত বা অল্প খরচে স্থানীয়ভাবে তৈরি) কার্যকারিতার ধরন অনুযায়ী শিক্ষা উপকরণ দুধরনের। যথা: প্রক্ষেপক উপকরণ (সব ধরনের আলোক যন্ত্র যার সাহায্যে দেয়াল বা পর্দায় যে কোন ধরনের ছবি, ম্যাপ লেখা, স্লাইড ইত্যাদি প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করা যায়) ২. প্রক্ষেপহীন উপকরণ (যেসব উপকরণ দ্বারা কোন প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করা যায় না) । শিক্ষার্থীদের বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধরন অনুযায়ী শিক্ষা উপকরণ তিন প্রকার যথা:১. ব্যক্তিগত / একক শিক্ষার্থর জন্য উপকরণ ২. দলগত / শ্রেনী শিক্ষার জন্য উপকরণ ৩. সমষ্টিগত / গন শিক্ষার জন্য উপকরণ। মানব শিশুর শিক্ষা লাভের উৎস সমূহের ধরন অনুযায়ী শিক্ষা উপকরণ তিন ধরনের হতে পারে। ১. সরাসরি ইন্দ্রীয় সংযোজক বস্তূ ২. ঘটনার প্রতিনিধিত্বকারী চিত্র বা অনুরূপ দ্রব্য ৩. মৌখিক বা মুদ্রিত শব্দাবলী উপরের বিভিন্ন দিক থেকে শিক্ষা উপকরণের শ্রেনীকরন করা হয়েছে। গুনডেদে থেকে শিক্ষা উপকরণকে আবার পাচ ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা:১. শ্রবণ ভিত্তিক উপকরণ (Auditory Teaching Aids) । শ্রবণ ভিত্তিক উপকরণগুলো নিম্নরুপ: রেডিও, টেপ রেকর্ডার, মাইক্রোফোন, ইত্যাদি। ২. দর্শন ভিত্তিক উপকরণ (Visual Teaching Aids)। দর্শন ভিত্তিক উপকরণগুলো নিম্নরুপ: পাঠ্যপুস্তক, বিভিন্ন রেফারেন্স বই, পত্র পত্রিকা, ম্যাগাজিন, জার্নাল, পাঠ্য সংশ্লিষ্ট বস্তু বা দ্রব্য, বিভিন্ন মডেল , চক বোর্ড ও চক, হোয়াইট বোর্ড, ও হোয়াইট বোর্ড মার্কার, ফিলিপ চার্ট, বুলেটিন বোর্ড, বা ফেলট বোর্ড, ওভার হেড প্রজেক্টর(OHP) , স্লাইড প্রজেক্টর , ৩ শ্রবণ দর্শন ভিত্তিক উপকরণ (Audio Visual Teaching Aids) । শ্রবণ দর্শন ভিত্তিক উপকরণগুলো নিম্নরুপ: টেলিভিশন, ভিডিও প্লেয়ার, মনিটর, কম্পিউটার, চলচ্চিত্র ৪.,অনুসন্ধানমূলক উপকরণ(Investigatory Teaching Aids) অনুসন্ধানমূলক উপকরণ সমূহ নিম্নরুপ: পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্য সামগ্রী, পরিমাপক যন্ত্রাদি বিভিন্ন পরীক্ষণ যন্ত্র ইত্যাদি। ৫. কর্ম সম্পাদন মূলক উপকরণ (Work Oriented Teaching Aids) । কর্ম সম্পাদনমূলক উপকরণগুলো নিম্নরুপ: খামার, দর্শনীয় বস্তু, দর্শনীয় স্থান, মিউজিয়াম, পরিবেশ প্রকৃতি ইত্যাদি।
উপকরণ ব্যবহার করে পাঠদান করলে পাঠদানের আধুনিক পদ্ধতি ও কৌশলগুলো সহজেই শ্রেনী কক্ষে প্রয়োগ করা যায়। শ্রেনী কক্ষে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য এবং পাঠের প্রতি শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য উপকরণ ব্যবহার কার্যকর ভূমিকা রাখে উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনীশক্তি, কল্পনা শক্তি ও চিন্তা শক্তির বিকাশ হয়। শিক্ষার্থীর প্রেষণা জাগ্রত করে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিখনে উদ্দীপ্ত করে। পাঠ গ্রহণে অংশগ্রহণকারীগন সক্রিয় থাকে। শিক্ষা উপকরণ বিমূর্ত ধারনাকে মূর্ত করে তোলে। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের শিখন সহজ ও স্বতঃস্ফূর্ত হয়। অধিক মনে রাখা নিশ্চিত করে এবং শিখন দীর্ঘ স্থায়ী হয়। অল্প সময়ে শিখন সম্ভব হয়। জ্ঞানের ও চিন্ত
শক্তির বিকাশ লাভের সুযোগ ঘটে। শিক্ষার্থীগণ ' হাতে কলমে' শেখার সুযোগ লাভ করে। সমস্যা সমাধানের এবং সঠিকভাবে কাজ করার অভ্যাস সৃষ্টি হয় ; ফলে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি ভঙ্গি গঠিত হয়। পাঠ দানে শিক্ষা উপকরণ ব্যবহারের প্রয়োজন যেমন রয়েছে, উপকরণগুলো নির্বাচন এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছুটা সতর্কতার ও প্রয়োজন আছে। অনেক সময় শিক্ষকগণ অতি উৎসাহের সাথে উপকরণের আধিক্য সৃষ্টি করেন। কিন্তু এটা মনে রাখা দরকার উপকরণ পর্যাপ্ত এবং দামী হলেই শিখন ফলপ্রসূ হবে এমনটি আশা করা যায় না। বরং অধিক উপকরণের সমাবেশ শিখন প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করতে পারে। উপকরণের বাহুল্যে অনেক সময় আসল বিষয় বস্তু চাপা পড়ে যায়। আমাদের আরো মনে রাখা দরকার শুধু উপকরণের শিখন কার্যকর হয় না, বরং তা ব্যবহারের গুনেই অনেকাংশে কার্যকর হয়ে ওঠে। শিক্ষকের ব্যবহারই তাদের প্রাণবন্ত করে তোলে। পাঠদানে প্রতিদিন নতুন নতুন উপকরণ ক্রয় করা সম্ভব নয়। তাছাড়া শিখন- শেখানো কার্যক্রমে কেবল দামী উপকরণ ব্যবহার করতে হবে এমন কোন কথা নেই। কাজেই শিক্ষককে নিজ উদ্যোগে আশপাশে সহজে পাওয়া যায় এমন উপাদান, বস্তু, সামগ্র সংগ্রহ করে উপকরণ তৈরি করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। শিক্ষক উদ্ভাবনীমূলক ক্ষমতার অধিকারী হলে সহজেই নিম্ন বর্ণিত উপকরণ তৈরি করতে পারেন; কাঠের টুকরো, কাগজ, হার্ড বোর্ড, পেরেক, সুতা ইত্যাদি ব্যবহার করে শ্রেনী কক্ষ, বাসগৃহ, আসবাবপত্র, পাহাড় পর্বত ইত্যাদির মডেল তৈরি করতে পারেন, প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে বাতাসের গতিবেগ, বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস, সূর্যের ঋতু ভিত্তক অবস্থান ইত্যাদি সম্পর্কিত chart, বিবরনী তৈরি করতে পারেন। তামার পাত্র, বৈদ্যুতিক তারের ছেড়া টুকরো, পুরাতন ব্যাটারি, ইত্যাদি ব্যবহার করে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি তৈরি করতে পারেন। কৃষি কাজে প্রয়োগ করা যায় এমন তথ্য সম্বলিত chart নির্দেশনা তালিকা ইত্যাদি। বাশ, কাঠের টুকরো, টিনের খন্ডিত অংশ ইত্যাদি ব্যবহার করে বিভিন্ন হাতিয়ারের মডেল ইত্যাদি। শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ ও তৈরি হয়ে গেলে এগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও সংগঠন করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সঠিকভাবে শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ ও তৈরি হয়ে গেলে এসবের যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে উপকরণ সংগ্রহ ও তৈরি করার পুরো প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হবে। কাজেই শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ ও তৈরি হয়ে গেলে এসবের সংরক্ষণ করা জরুরী। শিক্ষা উপকরণ সংগঠন ও সংরক্ষণের জন্য অনুসরণ করা যায় এমন কিছু উপায় নিচে তুলে ধরা হলো: উপকরণ সংরক্ষণের জন্য একটি নির্দিষ্ট কক্ষ নির্ধারণ করতে হবে। রাসায়নিক সরঞ্জাম ও বিভিন্ন প্রকার বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি সংরক্ষণের জন্য ল্যাবরেটরি কক্ষের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। জীবাণু মুক্ত ও কীটপতঙ্গ মুক্ত হতে হবে। দামী ও দূর্লভ উপকরণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। বিষয়ভিত্তিক উপকরণ আলাদা আলাদাভাবে রাখতে হবে। উপকরণ ব্যবহার হয়ে গেলে তা নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে। পচনশীল উপকরণ সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি, ফরমালিন ইত্যাদি মিশিয়ে রাখতে হবে।
আমাদের দেশের শিক্ষক সমাজ সনাতনী পদ্ধতিতে পাঠদানে অভ্যস্ত এই জগ মগ পদ্ধতি হতে শিক্ষকদের বের হতে হবে এবং কার্যকর শিখন- শেখানো পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। তাতে শিক্ষার্থী সহ দেশ ও জাতি লাভবান হবে।
লেখক গোপীকান্ত কুমার ঘোষ
সহকারী শিক্ষক (গনিত)
বি, এস, সি(অনার্স),এম, এস, সি
বি. এড, এম.এড(ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
এমএসএম / এমএসএম

বাংলাদেশ সংবিধানের আলোচিত ৭০ অনুচ্ছেদ প্রেক্ষিতঃ রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত

শতাব্দির সেরা মাটির সৈনিক কৃষক যোদ্ধা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট ও জনগণের প্রত্যাশা

ট্রাম্প-সালমান কথোপকথনে বিশ্ব কী বার্তা পেল

এফবিসিসিআইর ডিজিটাল রূপান্তর : ব্যবসায়িক নেতাদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল সেবা

জাতীয় ঐকমত্য কঠিন হলেও উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

রাজনৈতিক অঙ্গনে এক অনন্য উচ্চতায় তারেক জিয়া

কেমিক্যাল আতঙ্ক নয়, চাই বিজ্ঞানসম্মত আমচাষ ও প্রশাসনিক সচেতনতা

শুভ অক্ষয় তৃতীয়া: দানে ধ্যানে অনন্তকালের পূণ্যলাভ

শিক্ষা উপকরণের ব্যবহার ও গুরুত্ব, বাংলাদেশ প্রেক্ষিত

ইসরায়েলের বর্বরোচিত যুদ্ধের অবসান হোক

চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে তিস্তা পাড় বাসীর প্রত্যাশা
