ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

মাংস গরিবের না


সিরাজুল ইসলাম photo সিরাজুল ইসলাম
প্রকাশিত: ২২-৩-২০২৩ বিকাল ৫:৫৬

*  শেষ ভরসা ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২৭০/২৮০ টাকা কেজি
*   দেড় মাসে দ্বিগুণ বেড়েছে দাম
*    তিন দিনে কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা
*  ভোক্তা অধিকারের ৮ সুপারিশ


পুষ্টি নয়, গরিব মানুষ মাংস কেনেন মনের চাহিদা মেটাতে। খাসি বা গরুর মাংস তারা কখনো কেনেন না। কোরবানির ঈদে ধনীদের দেওয়া মাংস খেয়ে তারা তৃপ্তি মেটান। তারা মাংসের চাহিদা মেটান মূলত ব্রয়লার মুরগি দিয়ে। অপেক্ষাকৃত বেশি দাম হওয়ায় দেশি, লেয়ার বা পাকিস্তানি মুরগিও তারা কখনো কেনেন না। কিন্তু সেই ব্রয়লার মুরগির দাম হু হু করে বাড়ছে। দেড় মাসের ব্যবধানে এ মুরগির দাম প্রায় দ্বিগুণ দাম বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা। আর তিনদিনের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা। এছাড়া গরুর মাংস ৭২০ টাকা এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকা কেজি। ক্ষোভে তারা বলছেন, মাংস এখন গরিবের না। এদিকে ব্রয়লার মুরগির দাম কমাতে ৮ সুপারিশ করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

জানা গেছে, দেড় মাস আগেও প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৫০ টাকা। অদৃশ্য সিন্ডিকেটের কারণে হু হু করে দাম বাড়তে থাকে। এখন প্রতিকেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়। রোজায় আরও দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রতিকেজি ব্রয়লারের উৎপাদন খরচ ১৩০ টাকা। কিন্তু কয়েকটি হাত ঘুরে ভোক্তাকে সেই মাংস কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। বর্ধিত এই দাম খামারিরা পাচ্ছেন না। এদিকে ব্রয়লারের দাম কমানোর জন্য ৮ দফা সুপারিশ করেছে ভোক্তা অধিদপ্তর।     

সকাল সকাল রাজধানীর মহাখালী বাজারে এসেছেন গার্মেন্টসকর্মী আনোয়ার হোসেন। বাড়িতে মেহমান আসায় তিনি মুরগি কিনতে এসেছেন। ব্রয়লারের দাম শুনেই তার চোখ কপালে উঠার জোগাড়। বিক্রেতা ব্রয়লার মুরগির কেজি চাইলেন ২৮০ টাকা। দাম শুনে তিনি মুরগি কিনবেন কি-না, ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না।

আনোয়ার হোসেন বলেন, ব্রয়লার মুরগির দাম যে এতো বেড়েছে তা জানতাম না। ২৭০/২৮০ টাকা ব্রয়লারের দাম, এটা চিন্তাও করতে পারছি না। এই দৌড় কে ঠেকাবে? দাম বেশি হওয়ায় গরু-খাসির মাংস খেতে পারি না। এবার মুরগির মাংসও খাওয়া বন্ধ হবে। আসলে মাংস এখন আর গরিবের জন্য না।মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়; যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ দাম। শুক্রবারেও প্রতি কেজি বয়লার বিক্রি হয়েছে ২৫০ টাকা। মাত্র ৩ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি বয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। এছাড়া সোনালি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ থেকে ৩৮০ টাকা, লেয়ার মুরগি (লাল) প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩১০ টাকায়।

বিক্রেতারা বলছেন, হঠাৎ ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ কম ও দুই দিনের বৃষ্টিতে ব্রয়লার মুরগির সংকট দেখা দিয়েছিল। তাই দাম বেড়েছে। বেশ কিছু দিন ধরে ব্রয়লারের দাম বাড়তি। সোমবার থেকে পাইকারি বাজারেও অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। এর আগে কখনো এতো দামে ব্রয়লার মুরগি কিনতে হয়নি ক্রেতাদের।

রাজধানীর মালিবাগ বাজারে মুরগি কিনতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা খলিলুর রহমানও দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। তিনি বলেন, আমি মানুষের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করি। ২৭০/২৮০ টাকায় কেজিতে ব্রয়লার মুরগি আমাদের মতো ক্রেতারা কীভাবে কিনবেন? হঠাৎ করেই ব্রয়লার দাম এতটা বেড়ে গেল, কেউ কি দেখার নেই? কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, ব্যবসায়ীরা যেমন ইচ্ছে তেমন দাম বাড়াবে? আমরা সাধারণ গরিব ক্রেতারা এত দামে কি কিনতে পারব? গত শুক্রবারেও বাড়তি দামে ২৫০ টাকায় ব্রয়লার কিনেছি, আজ (মঙ্গলবার) আরও দাম বাড়িয়ে চাওয়া হচ্ছে ২৭০/২৮০ টাকা কেজি।

রাজধানীর গুলশান সংলগ্ন লেকপাড় বাজারে ব্রয়লার মুরগির বিক্রেতা বারেক মিয়া বলেন, সোমবার থেকে ব্রয়লারের বাজার আবার বেড়েছে। পাইকারি বাজার থেকেই বেশি দামে কিনেছি। গত দুই দিনে বৃষ্টি ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। ব্রয়লারের বাচ্চার দাম আর ফিডের দাম বাড়তি থাকায় মুরগির দামও বেড়েছে। তবে কারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে তা জানা নেই। রমজানের আগে বাজার আরও বাড়তে পারে। এখন যে দামে ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে তা ব্রয়লারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক (বাজার তথ্য) নাসির উদ্দিন তালুকদার জানিয়েছেন, সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২৬০ টাকায়। যা এক মাস আগেও ছিল ২১০ থেকে ২৩০ টাকা। সেই হিসেবে এক বছর আগে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। সব মিলিয়ে এক বছরে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১০০ টাকার বেশি বেড়েছে।

জানা গেছে, জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর গত রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠিতে উল্লেখ করেছে, মুরগির খাবারসহ অন্যান্য ব্যয় বৃদ্ধির পরও এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন ব্যয় করপোরেট প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। অন্যদিকে প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে খরচ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। তাতে বর্তমানে উৎপাদন খরচসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম সর্বোচ্চ ২০০ টাকা হতে পারে।

ভোক্তা অধিদপ্তরের ৮ সুপারিশ: মূল্যতালিকা টানানো বাধ্যতামূলক থাকলেও তা করা হচ্ছে না, পাইকারি পর্যায়ে পাকা রসিদ বা ক্যাশ মেমো সংরক্ষণ করা হয় না। ক্রেতাকে পাকা রসিদ দেওয়া হয় না, দোকানে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, ওজনে কম দেওয়া এবং পাইকারি ও খুচরা দামে বিস্তর ব্যবধান। পোলট্রি মুরগি বিক্রিতে এ রকম নানান অনিয়ম-অসঙ্গতি তুলে ধরেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। মুরগির দাম নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আটটি সুপারিশও তুলে ধরেছে অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে এসব অসঙ্গতি তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, উৎপাদন পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির ব্যয় করপোরেট পর্যায়ে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। অথচ খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৬০ টাকা; যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

সুপারিশগুলো হচ্ছে- ১. ব্রয়লার মুরগির যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণে কোনো প্রকার অনিয়ম কিংবা মনোপলি (একচেটিয়া) হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকে অনুরোধ করা যেতে পারে। ২. বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে ব্রয়লার মুরগির যৌক্তিক মূল্যের বিষয়ে গবেষণামূলক প্রতিবেদন প্রদানের অনুরোধ। ৩. প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে ব্রয়লার মুরগির মূল্য নির্ধারণের উদ্যোগ। ৪. পোলট্রি ফিড এবং মুরগির বাজারে অত্যধিক মূল্য বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা গ্রহণ। ৫. কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী যেন অযৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে সমগ্র দেশে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে সে লক্ষ্যে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি বৃদ্ধি করা। ৬. বিভিন্ন বাজার কমিটি কর্তৃক সংশ্লিষ্ট বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য তালিকা প্রদর্শন নিশ্চিত করা, এ ক্ষেত্রে যেসব বাজারে মূল্য তালিকা প্রদর্শন করা হবে না, সে ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং এফবিসিসিআই কর্তৃক ওই বাজার কমিটিকে বিলুপ্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৭. অযৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে রাজার অস্থিতিশীল করার প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৮. আসন্ন রমজানে পোলট্রির বাজার স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তর, সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে দেশব্যাপী নিবিড়ভাবে বাজার তদারকি অভিযান পরিচালনা জোরদার করা।

 

এমএসএম / এমএসএম

চট্টগ্রাম বন্দরে মাশুল বাড়বে ৪১ শতাংশ, বৈঠকে বসছে নৌ মন্ত্রণালয়

ইলিশের দেখা মিললেও দামে হাত পোড়ার জোগাড়

৮০ টাকার নিচে নামছেই না সবজি

এক মোটরসাইকেলে ৪ জন, প্রাইভেটকারের ধাক্কায় নিহত ৩

পেঁয়াজের ঝাঁজে পুড়ছে ক্রেতার পকেট, খুচরায় কমেনি দাম

আন্দোলনের জেরে এনবিআরের আরও ৪ কর্মকর্তা বরখাস্ত

সরবরাহ বাড়ার পরও ইলিশের কেজি ২ হাজারের বেশি

জ্বালানি তেল কিনে গত বছর সাশ্রয় ১৪০০ কোটি টাকা: ফাওজুল কবির

বাজারে ৮০ থেকে ১০০ টাকার নিচে কোনও সবজি নেই

প্রথম ১০ দিনে ১ লাখ করদাতার ই-রিটার্ন দাখিল

চাপে ভারতের অর্থনীতি, বাণিজ্য ঘাটতির রেকর্ড

১২ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এলো ১০৫ কোটি ডলার

ঋণখেলাপিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না : অর্থ উপদেষ্টা