বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ ‘সিবিএ’র বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি আবুল হোসেনসহ ৮ নেতাকর্মীকে একের পর এক মিথ্যা মামলায় হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংস্থার ফ্লোটিং ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের আহ্বায়ক ওসমান গনি সিন্ডিকেট এ হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

ওসমান গনি ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা ‘সিবিএ’ সংগঠনে পদ-পদবী না পেয়ে বিভিন্ন সময়ে আবুল হোসেনদের নামে মামলা দিয়ে আসছে। শেষ পর্যায়ে মামলাগুলো খারিজ হয়ে যায়। কারণ মামলার বাদী ‘সাক্ষ্য-প্রমাণ’ আদালতে দাখিল করতে ব্যর্থ হয় এবং আদালত অসংখ্যবার মামলার শুনানিতে ডাকলেও হাজিরা না দেয়ায় আদালত মামলাগুলো খারিজ করে দেয়। এতে আবুল হোসেন ও তার সংগঠনের নেতাকর্মীরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছে; কিন্তু ওসমান গনির দেয়া এক মামলা শেষ না হতেই শুরু হয় আরেক মামলায় হয়রানি। 

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বিআইডব্লিউটিএ’র শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন হয়। এর নং-২১৭৬। একই বছর ২২ জুন নির্বাচনের মাধ্যমে কার্যকরী কমিটিতে আবুল হোসেন সভাপতি ও রফিকুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক হন। এর ৩ মাস পরে হাইকোর্টে সিবিএ রেজিস্ট্রেশনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুর্র্নীতির সংবাদও প্রকাশিত হয়। ফলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির ৬ বছর তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে গত বছরের ২২ জুন সভাপতি আবুল হোসেনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়। পাশাপাশি মন্ত্রণালয় দুইবার তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় বিআইডব্লিউটিএ’র আইন অনুযায়ী এবং দুদকের মামলার নিষ্পত্তির সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে।

জানা গেছে, ওসমান গনি বিআইডব্লিউটিএ’র ফ্লোটিং ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের আহ্বায়ক। তিনি এই পদে থেকে সভাপতি হওয়ার জন্য এবং ক্ষমতায় দীর্ঘস্থায়ীভাবে থাকার জন্য নানা পরিকল্পনায় নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। প্রতিপক্ষের কেউ যেন সভাপতি হতে না পারেন সে জন্য তাদেরকে দমন করতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির জাল বিস্তার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আবুল হোসেনসহ ৭ নেতার নামে অর্থ আত্মসাতসহ নানা অভিযোগ এনে একাধিক মামলা করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে মামলাগুলো খারিজ করে দেন আদালত। ওসমান গনির দায়েরকৃত ১৫১৬/২১নং সিআর মামলাটি আদালত ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি ফৌজদারী কার্যবিধির ২০৩ ধারা মোতাবেক খারিজ করে দেন। ওসমান গনি এই মামলায় আবুল হোসেনসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে আসামি করেন। অভিযোগ করেন আবুল হোসেন ‘বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর ও বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ’ করেছে। মামলাটি মতিঝিল থানার সাব- ইন্সপেক্টর মো. শফিকুল ইসলাম আকন্দ তদন্ত করেন। তদন্তে প্রমাণ মেলেনি। ওসমান গনি ও তার সিন্ডিকেট আবুল হোসেনের নামে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করে। প্রমাণ না পাওয়ায় আবুল হোসেনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় দুদক। অভিযোগ রয়েছে সিবিএ সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে সভাপতি আবুল হোসেনকে অপসারণ করা হয়েছে মর্মে নোটিশ বানিয়ে প্রচার করে ওসমান গনি। পরবর্তীতে রফিকুল ইসলাম নোটিশে স্বাক্ষরটি জাল বলে ঘোষণা দেন। 

ওসমান গনি ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি আবুল হোসেনসহ ৬ জনের নামে নারায়ণগঞ্জ কোর্টে মামলা করেন। (মামলা নং-৩১/২২)। তিনি অভিযোগ উল্লেখ করেন আবুল হোসেন ও তার লোকজনরা তাকে ও তার লোকজনকে মারধর করেছে। পিবিআই’র এসআই নজরুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করেন। এ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেন ওসমান গণি। পরে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান নারায়ণগঞ্জ জেলা সিআইডির এসআই মুন্সী শহিদুল ইসলাম। তিনিও আসামীরা নির্দোষ বলে প্রতিবেদন দাখিন করেন। ওসমান সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য মুজিবুর রহমানের দায়েরকৃত ১৭৮১/১৮নং সিআর মামলাটিও আদালত ২০১৯ সালের ২১ আগস্ট খারিজ করে দেন। আবুল হোসেনকে জামায়াত-বিএনপি ঘরানার লোক বানানোর অপচেষ্টা চালিয়েছে ওসমান গনি। কিন্তু আবুল হোসেন ১৯৯২/৯৩ সালে কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্যের পদ লাভ করেন তিনি। তিনি কর্মজীবনে বিআইডব্লিউটিয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় শ্রমিক লীগ বিআইডব্লিউটি শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বিআইডব্লিউটিএ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (রেজি.২১৭৬) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে করেছেন। ওসমান গনির বিরুদ্ধে বিআইডব্লিউটিএ’র ফ্লোটিং ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের অর্থ তসরূপের অভিযোগও রয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে ওসমান গণিকে কয়েকবার ফোন করা হয়; কিন্তু তিনি ফোনকল গ্রহণ করেননি।