ফারজানা বাতেন
বংশপরম্পরায় রান্নার স্বাদ

আমার ছোটবেলা কেটেছে ঢাকার মোহাম্মাদপুরে। সে সময় আমি কিশলয় স্কুলে পড়তাম। শৈশবের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে আজ মনে পড়ছে সেসব দিনের কথা। আমার এই আমি হয়ে উঠার পেছনে আছে সেই শৈশব ও দূরন্তপনার গল্প। ছোটবেলায় আমি আল্পনা আঁকতে পছন্দ করতাম। আমার বিয়ের গায়ে হলুদের স্টেজ আমি নিজেই সাজিয়েছিলাম। শৈশব থেকেই সাজার প্রতি আকর্ষণ ছিল। নতুন জিনিস তৈরি করতে চাইতাম। নতুন কিছু বানানোর অভ্যাস নতুন করে সাজানোর অভ্যাস আমার মাঝে ছিলো ছোটবেলা থেকেই। অভ্যাসগুলো আছে এখনও। আমার আব্বা মো: আব্দুল বাতেন ছাত্র পড়াতেন।
তখন আমিও আব্বার সাথে পড়াতে সাহায্য করতাম। তখন আব্বার কিছু ছাত্র আমার কাছেই পড়তে ভালোবাসতো। আমার আম্মা তখন সবার জন্য মজার মজার নাস্তা চা বানাতো। আম্মার সেসব মজার নাস্তা একেকদিন একেক রকম স্বাদের হতো। সে সময় বিভিন্ন পদের খাবার দেখে দেখে আমিও রান্নার প্রতি আকৃষ্ট হই। আমরা থাকতাম রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ভিতরে।আমাদের বাসার সামনে খুব সুন্দর একটি বাগান ছিলো। সেখানে সুন্দর তাজা সবজি, পেঁয়ারা, আম, কাঁঠালসহ অনেক গাছ আম্মা আব্বা লাগাতেন। বাগানের তাজা সবজি দিয়ে আম্মা দুর্দান্ত সব রান্না করতেন। আমার আম্মার হাতের রান্নার বেশ সুনাম ছিল। তাই আমার রান্নার হাতেখড়ি আম্মার হাত ধরেই। আমি ছোটবেলায় বাগানের কচু বাসায় এনে নিজে রান্না করতাম। সেটাই ছিলো শখের রান্না। আমাদের বাসার কাছে তখন একটা পুকুর ছিলো। প্রতি মাসে মাছ ধরা হতো ছুটির দিনে। সেই টাটকা মাছ, টাটকা সবজি দিয়ে আম্মার হাতের রান্না। আহা! আমার আম্মার হাতের কাকরোল দিয়ে বড় চিংড়ি মাছ, কাঁচা আম দিয়ে ইলিশ মাছের ঝোল, গরুর মাংস ঝাল করে রান্না আর বিভিন্ন রকমের পাকোরা, সজনে পাতার ঝোল, এসব খাবার অন্য কারোর হাতে রান্না যত ভালোই হোক, আমার আম্মার হাতের রান্নার মতো নয়। আমিও আমার আম্মার হাত ধরেই এসব খাবার বেশ ভালো করে রান্না করতে শিখেছি। এখন আমার শ্বশুর মো: সিদ্দিকুর রহমান আমার হাতের রান্না ছাড়া অন্য কারো হাতের রান্না পছন্দ করেন না। এটি সত্যি আমার অনেক বড় পাওয়া। আমার হাজব্যান্ড মো: রবিউল হাসান আমার রান্নার বড় ভক্ত। আমার মেয়েরা আমার হাতে তৈরি বিরিয়ানি, কাবাব, কেক, পুডিং, নতুন নতুন রেসিপি ভীষণ পছন্দ করে। ওদের কাছে মনে হয় বিয়ে বাড়ির খাবারের থেকেও আমার রান্না বেশি পছন্দ। আমি যত ব্যস্তই থাকি, আমার মেয়েদের জন্য নতুন নতুন খাবার তৈরি করি। খাবারগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে পরিবেশন করি। করোনার সময় যখন সব রেস্টুরেন্ট বন্ধ ছিলো, সে সময় আমি আমার বাসায় সম্পূর্ণ রেস্টুরেন্ট স্টাইলে, সাজিয়ে গুছিয়ে খাবার পরিবেশন করতাম। আসলে আমার এ সুন্দর পরিপাটি সাজানো দেখেই আমার মেয়েরা এখন এ ধারায় চলছে। আমার মেয়েদের আমি কখনো কোন রান্না করতে দেইনি। আমি যদিও ছোটবেলায় শখ করে রান্না করতাম। আমার মেয়েরা তাও করেনি। তবে এখন আমার বড় মেয়ে ফাতিমা হাসান রাইসা পড়াশোনা করার জন্য কানাডায় বসবাস করছে। এখন ও নিজের হাতে রান্না করে। ঘর গোছায়। নিজের সব কাজ একাই করে। আমার মেয়ে পড়াশোনা ও চাকরি করার পাশাপাশি এতো সুন্দর করে এসব করছে, আমি সত্যি হতবাক। আমার মেয়েরা আমার রেসিপি ফলো করে। খুব সুন্দর ভাবে বিরিয়ানিসহ যেসব পদ ওদের পছন্দ, সেগুলো রান্না করে। মা হিসেবে এটি আমার বড়ো পাওয়া। আদিকাল থেকে রান্না শেখার পক্রিয়াটি এভাবেই উন্নত হয়েছে। বংশ পরম্পরায় মায়ের হাত ধরেই মেয়েরা রান্নার জগতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি আমার আম্মার হাতের দেশীয় খাবার যেমন ভালো করে রান্না করতে শিখেছি, আমার মেয়েরা আমার কাছে শিখেছে দেশী বিদেশি খাবারের রান্না। আমাকে দেখে দেখে আমার মেয়েরা রান্না করে, আমার রেসিপি বুক ফলো করে, নিজে নিজে রান্না করে ব্লগ ভিডিও তৈরি করে।এটা এক পরম আত্মতৃপ্তি। একজন মেয়ের পরিপূর্ণ নারী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পেছনে মায়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রতিটি মেয়েই একদিন মা হয়ে প্রতিটি পরিবারকে আলোকিত করে। দেশ এগিয়ে নিয়ে যায় নিজেদের দক্ষতা দিয়ে, পরিশ্রম দিয়ে। জয় হোক সকল মায়ের।
Sunny / Sunny

ভর্তার সৃজনশীল প্রকাশ ফারজানা বাতেন এর বই শত ভর্তার ভুবনে

চিংড়ি মাছের তিল ললিপপ

ডিম আলুরচপ

রেনেসন্স ঢাকা গুলশান হোটেল নিয়ে এসেছে রমজানে বিশেষ আয়োজন

মিষ্টি আলুর স্যুপ

রেডি টু কুক

কিভাবে চিনবেন দেশী মাছ দেশী হাঁস

গাজরের ক্ষীরসা পাটিসাপটা

বাঁশপাতা সিদল শুটকির ভর্তা

ক্রিসমাস ফ্রুটস কেক

চকলেট লেয়ার উইথ চকোলেট কেক

ভ্যানিলা কাপ কেক
