ঢাকা সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫

শিল্পী উপমার গান মানুষের আত্মার খোরাক


শামীম আহমদ photo শামীম আহমদ
প্রকাশিত: ১০-১২-২০২৩ দুপুর ২:৩৪

আমি শৈশবে বেশি সুখী ছিলাম গান শুনে। বড় হয়ে সুখী হয়েছি বই পড়ে। সুখী মানুষ সৃজনশীল। সুখের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে অনেকেরই নাজেহাল অবস্থা। মানুষ সব অযাচিত আবেগ-অনুভূতির সাথে যুদ্ধে পরাভূত হচ্ছে। এমন সব সংকটের মুহুর্তে আমি নিজের আত্মার সাথে সর্বদা বিজয়ী। আমি জীবনে কখনই দুঃখী নই। বইয়ের মাঝে সুখের সন্ধান পেয়েছি। তবে গানের সুরে সেই সুখের পুর্নতা মেলে। এতো সুখের মাঝেও শহরে একা থাকার কারনে পরিবারের অন্য সদস্যদের মিস করি। তবে, গান আমাকে সব নিঃসঙ্গতা দুর করে দেয়। গানকে মনের খোরাক হিসেবে অনেকেই গ্রহন করছে। যে গানে একটি পরিবারকে একত্রিত করার মন্ত্র আছে। সেই গান সবারই শুনতে হয়। যে গান একা থাকার অনুভুতি ভুলিয়ে পরিবারকে কাছে টানতে পারে, গতমাসে তেমনই একটি গান বার বার শুনছি। বাঙালি সেই তরুন গানের শিল্পী শারমিন সুলতানা উপমা। তার গান দিয়ে একটি পরিবারকে সুখী করার ক্ষমতা রাখে। "মা"কে নিয়ে উপমার গানটি শুনছি বহুবার। সুখী হতে চাইলে সংগীতকে ভালোবাসার বিকল্প নাই। গান হচ্ছে সুখের মহৌষধ।

আপনার মনে যদি প্রশ্ন আসে, গান মানুষকে সুখী করতে পারে? আমি বলবো আমাকে অনেকটা করেছে। সুখের খোঁজে কত কী-ই না করে মানুষ। সুখের আকাঙ্ক্ষা যেন সার্বজনীন। কিন্তু সত্যিকারভাবে কজনই-বা সুখের দেখা পায়? গুণীজনেরা বলেন, সত্যিকারের সুখের ছটায় সবসময় ঝলমল করে ওঠে একজন মানুষের চেহারা, অভিব্যক্তি ও আচরণ। প্রত্যেক মানুষই পারে অফুরান আনন্দ আর সুখের অনুভূতিতে নিজের জীবনকে পরিপূর্ণ করে তুলতে। আমার সহিষ্ণু দৃষ্টি এবং ঠোঁটের কোণে নিরন্তর একটা ছোট্ট হাসি স্থায়ি করে নিয়েছি সবসময়ের জন্যেই। কেউ জানেনা আমার এ নিরন্তর সুখের রহস্য কী? এই আনন্দপূর্ণ জীবনের এক অভাবনীয় ক্ষমতা কিভাবে অর্জন করছি? "সুস্থ সুন্দর মন থেকে উৎসারিত এক গভীর অনুভূতিই হলো সুখ"। ‘সুখ হচ্ছে এমন এক প্রশান্ত অনুভূতি, যা অযাচিত সব দুঃখ অশান্তি আবেগকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়'’। আমি ভেবে দেখছি মানুষ নিজেই ভুল করে অসুখী থাকে।

সুখের জন্যে আমরা চারপাশের অনেক কিছুতে অবলম্বন খুঁজে বেড়াই। কিন্তু আসলে এর সন্ধান করা উচিত নিজের অন্তর্গত আনন্দলোকে। আমি বিশ্বাস করি, সুখী হওয়ার একমাত্র উপায় এটাই। আর আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন-চারপাশে কী ঘটছে তা মোটেও বিবেচ্য নয়, বরং পারিপার্শ্বিক এ ঘটনাগুলোকে আমরা কীভাবে দেখছি অর্থাৎ আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপরই নির্ভর করে জীবনের সুখ ও আনন্দ। ‘পৃথিবীর সবকিছুকে আমি কখনোই নিজের ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করে ফেলতে পারবো না কিন্তু নিজের মনটাকে তো পরিবর্তন করতে পারি আমি। আর যিনি নিজের মনকে পরিবর্তন করতে পারেন অর্থাৎ নিজেকে বদলাতে পারেন তিনি পৃথিবীটাকেই পারেন বদলে দিতে।’

আনন্দময় সুখের পথে সবচেয়ে বড় হুমকি হলো অহংকার ও আত্মকেন্দ্রিকতা। হাজার পরিশ্রম আর সাফল্যের পরও সুখ যেন জীবনে ধরাই দিতে চায় না। সেলিব্রেটিদের জীবনে তো সুখ আরো দুষ্প্রাপ্য। ‘আমি আসলেই খুবই সুখী একজন মানুষ। অনেকের নিকট আমার কথা হাস্যকর হতে পারে। জীবনের সাথে ধীরে ধীরে এগিয়ে চললে আপনি একটা সময় বুঝতে পারবেন এটা কত মূল্যবান কথা বলেছি। যখন আপনার জীবন উপভোগ করার মতো ক্ষমতা সহজাত, প্রাকৃতিকভাবে থাকবে-সে বিষয়টাও দারুণ হবে।’

জীবনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা যেকোনো অনুভূতিতে হৃদয়ের গোপন স্থানে প্রতিনিয়ত ধ্বনিত হতে থাকে সুরের ব্যঞ্জনা। কম-বেশি গান শুনতে পছন্দ করেন, গানের প্রেমে আপ্লুত হননি- এমন মানুষ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া খুবই দুরুহ। আবেগের গান শুনতে আমি ফের সেই বাঙালী জনপ্রিয় তরুন শিল্পী উপমার অন্য দুটি গানে মনযোগ দিয়েছি, সপেছি মন ও নীল খাম। শিল্পী উপমার গানের কথা দুবার অবতারনা করছি নিজের আবেগ থেকেই। কারণ সাধারণ মানুষ যুগ যুগ ধরে সুরের সঙ্গে এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ। বিভিন্ন মানুষ তাদের রুচি অনুযায়ী পছসন্দই গানটি শুনে থাকেন, আমি শুনি উপমার গান। এছাড়াও আমার পছন্দের তালিকায় রবীন্দ্র সংগীত তো আছেই।

নিজেকে সুখী করতে চাইলে সর্বপ্রথম স্নায়ুচাপ কমাতে হবে। জীবনের স্নায়ুচাপ ও অবসাদ কাটাতে দরকার গান। মানসিক চাপ বর্তমানে আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় সমস্যা। কাজের চাপ, ব্যস্ততা, সম্পর্কের টানাপোড়েন, আর্থিক চিন্তা বিভিন্ন কারণে আসা চাপের মোকাবেলা করতে ক্রমশই জনপ্রিয় হচ্ছে বিভিন্ন থেরাপি। ম্যাসাজ, রিল্যাক্সেশনের মতোই চাপ কমাতে জনপ্রিয় মিউজিক থেরাপি। মিউজিক থেরাপি কতটা কার্যকর তা প্রমাণ করতে গবেষণা চালায় ব্রিটেনের মাইন্ডল্যাব ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি সংস্থা। মনোবৈজ্ঞানিক ডেভিড লুইজ হজসন সাসেক্সের ২৬ জনের একটি দলের উপর গবেষণাটি চালান। তাদের দেয়া তথ্যমতে, সঙ্গীত শ্রবণ চাপ কমানোর জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায়। হাজার কাজের কারণে মনে বাড়তি চাপ ভিড় করে আমাদের জীবনে নিয়মিত। এই অবস্থা কাটাতে শুনুন আপনার পছন্দের গান। অনেক রিল্যাক্স লাগবে। যদি কোনও কারণে মন খারাপ থাকে বা অবসাদে ভোগেন তাহলে গলা ছেড়ে গান গাওয়া শুরু করে দিন। আপনার মন ভাল হতে বাধ্য। একঘেয়েমি জীবন, মানসিক দুশ্চিন্তা, কর্মক্ষেত্রের চাপ ইত্যাদি নানা কারনে মানুষ অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ থেকে মুক্তি পেতে গান খুব সাহায্য করে।

কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে গান টনিকের মতো কাজ করে। গান শুনতে শুনতে শারীরিক কাজ করলে শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। মনোবিদ্যার এক জার্নাল থেকে জানা যায় যে, যাদের একই ধরনের কাজ করতে করতে একঘেয়েমি আসে, তাদের জন্য গান একধরনের টনিক। এক্ষেত্রে রিদমিক মিউজিক বা ড্যান্স মিউজিক শুনলে শরীরে এক্সট্রা এনার্জি অনুভুত হয় যা কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে প্রভুত সাহায্য করে। মুখমন্ডলের অভিব্যক্তি প্রকাশে গান এক মৌলিক উপাদান হিসেবে কাজ করে। গান আপনার মুখমন্ডলে সুখী এবং দু:খিত মনের ভাব প্রকাশে সাহায্য করে। আনন্দিত অবস্থায় যেমন লাউড মিউজিক বা রিদমিক মিউজিক শুনতে পছন্দ করি, তেমনি দু:খিত মনের ভাব প্রকাশে স্যাড মিউজিক যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন মিউজিকের ধরণের উপর মানুষের মুখমন্ডলের অভিব্যক্তি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হতে থাকে। সঙ্গীত মস্তিষ্ক উদ্দীপক। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভাল রাখতেও সাহায্য করে ভাল গান। ব্যায়াম বাদে সমগ্র মস্তিষ্ককে উদ্দীপ্ত করতে ‍মিউজিকের জুড়ি মেলা ভার। দেখা গিয়েছে প্রধানত বয়স্ক মানুষদের ব্রেন স্বাস্থ্যবান রাখার জন্য কার্যকরী প্রভাব রয়েছে গানের।

শারীরিক অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করতেও সাহায্য করে গান। প্রতিনিয়ত ব্যায়াম করতে করতে একঘেয়েমি চলে আসে, বিরুক্তি ‍ও ক্লান্তিবোধ হতে থাকে। এক্ষেত্রে গান কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। যদি আপনি গান শুনতে শুনতে ব্যায়াম করেন, তাহলে সহজে ক্লান্তি আসে না। শুনতে আশ্চর্যজনক হলেও ফ্রন্টিয়র সাইকোলজির একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে, যাঁরা তাঁদের পছন্দের গান বেশি শোনেন তাঁরা তুলনামূলক বেশি উদার হন। অদ্ভুত হলেও সত্য যে, গানের ছন্দের সঙ্গে প্রায় মিলে যায় আমাদের হৃদপিণ্ডের ছন্দও। উদ্বেগ, মানসিক চাপমুক্ত রেখে করোনারী হার্ট ডিজিজ থেকে রক্ষা পেতে কাজ করে মিউজিক। ১,৫০০ রোগীদের নিয়ে এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা প্রতিনিয়ত গান শুনেছেন তাদের রক্ত চাপ, হার্ট রেট এবং হৃদরোগ রোগীদের উদ্বেগ কমাতে সাহায়তা করেছে। থেরাপি হিসেবে গানের উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রয়েছে। মিউজিক রোগীর শারীরিক ব্যথা উপশমে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক এডভান্স নার্সিংয়ের উপর প্রকাশিত এক জার্নাল থেকে জানা যায়, থেরাপি হিসেবে মিউজিক ব্যবহারের মাধ্যমে আর্থারাইটিস আক্রান্ত রোগীদের ২১ শতাংশ ব্যথা উপশমে এবং ২৫ শতাংশ বিষন্নতা কমাতে সাহায্য করে। আপনি কি জানেন ডিস্কোতে কেন লাউড মিউজিক বাজানো হয়? যাতে আপনি বেশি পানীয় খেতে পারেন। দেখা গিয়েছে, স্লো মিউজিকের তুলনায় লাউড মিউজিকে মানুষ বেশি পান করেন। মনঃসংযোগ বৃদ্ধিতে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের কোনো তুলনা নেই। গান শোনা এমনই একটি কাজ যাতে আমাদের সম্পূর্ণ মস্তিষ্ক একসঙ্গে কর্মক্ষম হয়ে ওঠে। এক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীদের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শোনানো হলে তারা দ্রুত শারীরিক অসুস্থতা হতে বেরিয়ে আসতে পারে।

গাছের বৃদ্ধিতে মিউজিকে ভুমিকা রয়েছে। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি যে গাছেদেরও অনুভূতি রয়েছে। দেখা গিয়েছে, মিউজিক্যাল পরিবেশের মধ্যে যদি গাছ রাখা হয় তাহলে তার বৃদ্ধি হয় অনেক তাড়াতাড়ি। শিশুদের শান্ত রাখার এক অব্যর্থ ঔষধ হলো মিউজিক। এক গবেষণাভিত্তিক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, শিশুদেরকে কিছু বলে শান্ত করার চেয়ে তাদের যদি পরিচিত কোনো গান শোনানো হয়, তাহলে তারা দ্রুত সাড়া দেয় এবং শান্ত হয়ে পড়ে। ২৩০০ বছর আগে চীনের কনফুসিয়ান চিন্তক মেনসিউস যুদ্ধ জড়িত নির্দয় রাজনৈতিক নেতাদের পরামর্শ দিতে চেয়েছিলেন, যদি আমরা "ন্যায়পরায়ণ কাজ" ও "প্রাণবন্ত শক্তি" দিয়ে কাউকে পুষ্ট করার জন্য সন্তুষ্টি বা পরিতোষ অনুভব না করি , তবে সেই শক্তি কোঁচকিয়ে যাবে। সংগীতের মাধ্যমে মহান গুণাবলী গুলির অনুশীলনকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন তিনি। গানের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন সর্বকালের গবেষকরা।

১৭৭৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থমাস জেফারসন দ্বারা লিখিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি ব্যাপকভাবে আলোচিত রাজনৈতিক মূল্যবোধ ছিল কারণ তিনি উল্লেখ করেছিলেন, "সুখের অনুধাবন করা" একটি সর্বজনীন অধিকার । মনে হচ্ছে এটি একটি বিষয়ভিত্তিক ব্যাখ্যা করার কথা বলে তারপরেও তা একাই আবেগ অতিক্রম করে । আসলে, এই আলোচনাটি প্রায়শই সহজ ধারণার উপর ভিত্তি করে চলতেছে যে সুখ শব্দটি একই জিনিস বোঝায় যা ১৯৭৬ সালে ছিল এবং আজও তাই আছে । প্রকৃতপক্ষে, অষ্টাদশ শতকে সুখ বলতে বুঝাতো "সমৃদ্ধি, উন্নতি এবং সুস্থতা"। এখনও আমি সেটাই বুঝাতে চেয়েছি। নিজের সুখী জীবনের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ নিরন্তর। সংগীত নিয়ে ইন্ডিয়ান প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি ঢাকায় এসে বলেছিলেন:-"আমি পড়ুয়া, পড়তে ভালবাসি গান শুনতেও ভালবাসি, এখন হয়ত ঈশ্বরের সমন আসবে- তুই অনেক পড়ছিস এখন চলে আয়" বাংলাদেশ সফররত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বলেছেন, শুধু পরিবেশ দূষণ নয়, এর চেয়ে আরো বড় দূষণ রয়েছে মানুষের মনে ও চিন্তায়। এই দূষণ দূর করতে হবে। একমাত্র শিল্পী, স্রষ্টা, লেখক, কবি, সাহিত্যিকরাই চিন্তার ও মনের সেই দূষণ দূর করতে পারেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভয়াবহ এই দূষণের হাত থেকে বাঁচানোর দায়িত্ব স্রষ্টাদের। সাহিত্যিক, কবি, লেখকরা নতুন পৃথিবী সৃষ্টি করবে’। তিনি আরো বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে মানব সভ্যতার ইতিহাস এ কথা বলে গেছে যে হিটলার, মুসোলিনিরা নয়, সভ্যতার ইতিহাস নির্মাণ করে গেছেন প্রফেট, ক্রাইস্ট, বুদ্ধা। দিগ্বিজয়ী বীরেরা নয়, সভ্যতার ইতিহাসের দিক নির্মাণ করেছেন লেখক-কবি-সাহিত্যিক তথা শিল্পীরা’। 

১৫ জানুয়ারি ২০১৮ সালে সোমবার বিকেলে রাজধানীর বাংলা একাডেমি চত্ত্বরে নজরুল মঞ্চে আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন-১৪২৪’- এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বলেন, ‘একটি বড় যুদ্ধে যত মানুষ মারা যায়, গত এক দশকে তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে শুধু সন্ত্রাসবাদের কারণে’। বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ববাংলা) মানুষ রক্ত দিয়ে বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শুধু একুশে ফেব্রুয়ারি নয়, যারা আন্দোলন করে বাংলা ভাষাকে রক্ষা করেছেন তাদেরকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই। গর্বের বিষয় একুশে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পেয়েছে’। ভাষা আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রণব মুখার্জি বলেন, হাজার বছরের বাঙালি ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভাষা ও সাহিত্যকে তারা লুট হয়ে যেতে দেননি। আগ্রাসকদের হাতে ধ্বংস হয়ে যেতে দেননি। সংস্কৃতিকে তারা রক্ষা করেছেন। মাতৃভাষার অধিকারকে প্রতিষ্ঠায় বুকের রক্ত ঢেলেছে বাঙালি, তারপর অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে বাংলাকে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে বাঙালিরা।

বাংলাদেশই হচ্ছে বাংলা ভাষার রক্ষক- একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ দেশে আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন হবে না তো কোথায় হবে?’ তিনি আরো বলেন, ‘পরীক্ষা পাসের জন্য দিগ্বিজয়ী বীরদের নিয়ে পড়াশোনা করা যায়, পাসের পর তা বেমালুম ভুলে যাই। কিন্তু শিল্পীর ছবি, কবিতা বা প্রিয় উপন্যাস কখনো ভোলা যায় কি? যে গান, সানাই বা সরোদের সুর আমাদের প্রিয়, তা কখনো ভুলতে পারি আমরা? ১৯৬৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণ করে প্রণব মুখার্জি বলেন, ‘আমি পড়ুয়া, পড়তে ভালবাসি। তবে রাজনৈতিক জীবনে পড়তে পারিনি। ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে এত বই রয়েছে যে তিনবার রাষ্ট্রপতি হলেও তা পড়ে শেষ করা যাবে না’। ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসাবে রাষ্ট্রপতি ভবনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি ভবনে আধুনিক ভারতবর্ষের প্রচুর কাগজপত্র, অনেক দুষ্প্রাপ্য গোপনীয় রেকর্ড, পড়বার জন্য প্রচুর উপাদান পেয়ে গেলাম। হিসাব করে দেখলাম এসব পড়তে গেলে তো এক প্রেসিডেন্সিয়াল টার্মে হবে না, তিনটা টার্ম লাগবে। তার আগেই ঈশ্বরের সমন এসে যাবে। আমি ভাবলাম, যতটা পারা যায়, আমি পড়ব’। বই পড়া ও গান শোনা আমার দৈনন্দিন কর্ম। সংগীত মানুষের জীবনে ব্যপক ভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

সেদিন থেকে আমি সংগীতের ব্যাপারে আগ্রহী। শারমিন সুলতানা "উপমার" গান তারই বাস্তব নিদর্শন। উপমার গান জীবনে সত্যিকারের সুখের সন্ধান দেয়। আমার প্রত্যাশা জীবনে অনেক বেশি সাফল্য পাবে উপমা, সবার হৃদয়ে বেঁচে থাকবে। বিশেষ করে সঙ্গীতপ্রেমীদের হৃদয়ে চিরদিন বেঁচে থাকবে। ইন্ডিয়ান প্রেসিডেন্টের কথা এখানে উল্লেখ করা একটিই কারন, তিনি সংগীত পছন্দ করতেন। প্রণব মুখার্জি আমাদের জাতীয় উন্নয়নের ধারায় অনন্য স্বাক্ষর রেখে গেছেন। একজন অসামান্য জ্ঞানী, একজন গৌরবময় রাষ্ট্রনায়ক, যিনি সব ধরণের রাজনীতিতে সম্মানিত এবং সমাজের সব অংশে প্রশংসিত ছিলেন।" প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে ভারত হারালো একজন বিজ্ঞ ও দেশপ্রেমিক নেতাকে আর বাংলাদেশ হারালো একজন আপনজনকে। তিনি উপমহাদেশের রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে বেঁচে থাকবেন।

এমএসএম / এমএসএম

জটিল রোগে আক্রান্ত ঋতাভরী, লাফ দিতে চেয়েছিলেন গাড়ি থেকে

বাবা-মায়ের নাম লিখলেন বীর, ভিডিও শেয়ার করলেন বুবলী

আমি এসবের কিছুই পাত্তা দেই না : মিথিলা

পুরুষালি হওয়ার দরকার নেই, আরও বেশি ‘নারী’ হয়ে উঠুন : কঙ্গনা

পরকীয়ায় জড়ান অভিনেতা, হাতেনাতে ধরেন স্ত্রী!

নুসরাত ফারিয়াকে চিনছেন না কেউ!

বিয়ের আগেই শ্বশুরবাড়িতে আপত্তিকর অবস্থায় তারকা জুটি, সমালোচনার ঝড়

মুক্তির অপেক্ষায় সকাল রাজের ‘আতরবিবিলেন’

সাদী ডেট করছে- ওর মুখ থেকে শুনলেও কিছু বলতে পারতাম : শ্যামন্তী

ভালোবাসায় আপ্লুত নায়িকা

রাগে-ঘৃণায় বলিউড ছাড়লেন অনুরাগ কাশ্যপ!

বাবাকে নিয়ে আবেগঘন পোস্ট তানজিন তিশার

আসছে এস.ডি.জীবন'র নাটক "আপন-পর"