আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার সময়সীমা
দুনিয়ামুখী মানুষের সব স্বপ্ন ও আয়োজন দুনিয়া ঘিরে। গগনচুম্বী সব টাওয়ার, পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, দম্ভ-অহংকার যে দুনিয়াকে কেন্দ্র করে, ওই দুনিয়া নিমেষে ধ্বংস হয়ে যাবে। যে ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার মোহে পড়ে মানুষ চিরস্থায়ী আখিরাতকে ভুলে যায়, সে দুনিয়া সম্পর্কে এর স্রষ্টা মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআন মাজিদে সুস্পষ্ট বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। এখানে সে বিষয়ে উল্লেখ করা হলো—
ধোঁকার উপকরণ : পার্থিব জীবনকে আল্লাহ খেল-তামাশা ও ধোঁকার উপকরণ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘অতঃপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সেই-ই হবে সফল। বস্তুত পার্থিব জীবন ধোঁকার উপকরণ ছাড়া কিছুই নয়।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮৫)
খেল-তামাশা : দুনিয়ার জীবন প্রকৃতপক্ষে সাময়িক সুখ ও ভোগের উপকরণ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘পার্থিব জীবন খেল-তামাশা ছাড়া কিছুই নয়।
আর নিঃসন্দেহে আল্লাহভীরুদের জন্য পরকালীন জীবনই উত্তম। এর পরও কি তোমরা বুঝবে না।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৩২)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘এই পার্থিব জীবন তো খেল-তামাশা ছাড়া কিছু নয়। আর পরকালীন জীবন হলো চিরস্থায়ী, যদি তারা জানত।
’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৬৪)
ধ্বংসপ্রাপ্ত শস্যক্ষেতের মতো : দুনিয়াকে আল্লাহ বৃষ্টির পানিতে উৎপন্ন ফসলভরা মাঠ এবং আল্লাহর হুকুমে নিমেষে তা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘দুনিয়ার জীবনের দৃষ্টান্ত যেমন বৃষ্টির পানি, যা আমরা আকাশ থেকে বর্ষণ করি। অতঃপর জমিনের উদ্ভিদসমূহ তার সঙ্গে মিশ্রিত হয়, যা থেকে মানুষ ও গবাদি পশু ভক্ষণ করে। অবশেষে যখন জমিন শস্য-শ্যামল ও সুশোভিত হয় এবং ক্ষেতের মালিক মনে করে যে এবার তারা ফসল ঘরে তুলতে সক্ষম হবে, এমন সময় হঠাৎ রাতে বা দিনের বেলায় ওই ক্ষেতের ওপর আমাদের (শাস্তির) নির্দেশ এসে যায়। অতঃপর সেটিকে আমরা খড়-কুটোয় পরিণত করে ফেলি, যেন গতকাল সেখানে কিছুই ছিল না।
এভাবে আমরা আয়াতসমূহকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করি—চিন্তাশীল লোকদের জন্য।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ২৪)
দুনিয়ার জীবন সাময়িক ভোগ্যবস্তু : মহান আল্লাহ বলেন, ‘দুনিয়ার এই জীবন সাময়িক ভোগ্যবস্তু ছাড়া কিছুই নয়। আর নিশ্চয়ই আখিরাত হলো চিরস্থায়ী নিবাস।’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ৩৯)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের জন্য শোভনীয় করা হয়েছে তাদের আসক্তিসমূহকে তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি, স্বর্ণ ও রৌপ্যের রাশিকৃত সঞ্চয়সমূহের প্রতি, চিহ্নিত অশ্বরাজি, গবাদি পশু ও শস্যক্ষেতসমূহের প্রতি। এসবই পার্থিব জীবনের ভোগ্যবস্তু মাত্র। আর আল্লাহর কাছেই আছে সুন্দরতম ঠিকানা।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫
আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার সময়সীমা
আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার সময়সীমা অতি নগণ্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘আর যেদিন তিনি তাদের একত্র করবেন (সেদিন তারা মনে করবে), যেন তারা পৃথিবীতে শুধু দিনের একটা মুহূর্ত অবস্থান করেছিল। সেদিন তারা পরস্পরকে চিনবে। নিশ্চয়ই সেদিন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যারা আল্লাহর সাক্ষােক মিথ্যা বলেছিল এবং যারা সুপথপ্রাপ্ত ছিল না।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৪৫)
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘আল্লাহ বলবেন, বছরের হিসাবে তোমরা পৃথিবীতে কত দিন ছিলে? তারা বলবে, আমরা ছিলাম এক দিন বা তার কিছু অংশ। অতএব, গণনাকারীদের (ফেরেশতাদের) জিজ্ঞেস করুন! আল্লাহ বলবেন, তোমরা সেখানে ছিলে মাত্র অল্প সময়—যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ১১২-১১৪)
রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহর শপথ! আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার দৃষ্টান্ত হলো যেমন তোমাদের কেউ মহাসমুদ্রের মধ্যে নিজের একটি আঙুল ডুবিয়ে দেয়। এরপর সে লক্ষ্য করে দেখুক যে তা কি (পরিমাণ পানি) নিয়ে এলো। [তিরিমিজি, ২৩২৩)]
Israt / Israt