প্রবল শক্তিধর একটি জাতির বিনাশ
কোরআনের বর্ণনা মতে, ইতিহাসের অন্যতম পরাশক্তি ছিল আদ জাতি। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাদের প্রভাব সম্পর্কে বলেন, ‘যার সমতুল্য কোনো জাতি অন্য কোনো দেশে তৈরি হয়নি।’ (সুরা : ফাজর, আয়াত : ৮)
অর্থাৎ আদ জাতি দৈহিক গঠন ও শক্তি-সাহসে অন্য সব জাতি থেকে স্বতন্ত্র ছিল। সুরা আরাফে মহান আল্লাহ তাদেরকে তাঁর এই অমূল্য নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে বলেন, ‘স্মরণ করো, আল্লাহ তোমাদেরকে নুহের সম্প্রদায়ের পর তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছেন।
দৈহিক গঠনের দিক দিয়ে তোমাদের অবয়বকে (অন্যদের তুলনায়) অত্যন্ত সমৃদ্ধ করেছেন।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৬৯)
কিন্তু তারা মহান আল্লাহর অমূল্য এই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করেনি। উপরন্তু নিজেদের ধন-সম্পদ, প্রভাব, শক্তিকে আল্লাহর নাফরমানির কাজে ব্যয় করেছে। তাদের ক্ষমতা তাদের অন্ধ অহংকারে নিপতিত করেছে।
তারা তাদের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে বড়াই করতে শুরু করেছিল। এবং প্রবল পরাক্রমশালী মহান আল্লাহর নিদর্শনকে অস্বীকার করতে শুরু করেছিল।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাদের এই হঠকারী আচরণের কথাও উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তাদের ব্যাপারে বলতে গেলে বলতে হয়, তারা কোনো অধিকার ছাড়াই পৃথিবীর বুকে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের অহংকার করেছে।
তারা বলেছে, কে আছে আমাদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী? তারা কি তাহলে লক্ষ করেনি, যে আল্লাহ তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তিনি তাদের অপেক্ষা শক্তিশালী? অথচ তারা আমার নিদর্শনাবলিকে অস্বীকার করত। (সুরা : হা-মিম সাজদাহ, আয়াত : ১৫)
তাদের এই বেপরোয়া আচরণ একদিন তাদের চূড়ান্ত পতন ডেকে আনে। যে পরাশক্তি নিজেদের বিশ্বের অপ্রতিরোধ্য জাতি বলে দাবি করত, মহান আল্লাহ তাদের কঠিন আজাব দিয়ে ধ্বংস করেন।
কাসাসুল কোরআন নামের গ্রন্থে পবিত্র কোরআনের আয়াতের আলোকে তাদের সেই মর্মান্তিক পতনের বিবরণ দিতে গিয়ে বলা হয়—আদ জাতির অমার্জনীয় হঠকারিতার ফলে প্রাথমিক শাস্তি হিসেবে উপর্যুপরি তিন বছর বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকে। তাদের শস্যক্ষেতসমূহ শুষ্ক বালুকাময় মরুভূমিতে পরিণত হয়।
বাগ-বাগিচা জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। এতদসত্ত্বেও তারা শিরক ও মূর্তিপূজা ত্যাগ করেনি। কিন্তু অবশেষে তারা বাধ্য হয়ে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করে। তখন আসমানে সাদা, কালো ও লাল মেঘ দেখা দেয় এবং গায়েবি আওয়াজ আসে যে তোমরা কোনটি পছন্দ করো? লোকেরা কালো মেঘ কামনা করল। তখন কালো মেঘ এলো। লোকেরা তাকে স্বাগত জানিয়ে বলল, ‘এটি আমাদের বৃষ্টি দেবে।’
জবাবে তাদের নবী হুদ (আ.) বললেন, ‘বরং এটা সেই বস্তু, যা তোমরা তাড়াতাড়ি চেয়েছিলে। এটা এমন বায়ু, যার মধ্যে রয়েছে মর্মন্তুদ আজাব। সে তার প্রভুর আদেশে সবাইকে ধ্বংস করে দেবে...।’
ফলে অবশেষে পরদিন ভোরে আল্লাহর চূড়ান্ত গজব নেমে আসে। সাত রাত ও আট দিন ব্যাপী অনবরত ঝড়-তুফান বইতে থাকে। মেঘের বিকট গর্জন ও বজ্রাঘাতে বাড়ি-ঘর সব ধসে যায়, প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে গাছপালা সব উপড়ে যায়, মানুষ ও জীবজন্তু শূন্যে উত্থিত হয়ে সজোরে জমিনে পতিত হয়। (সূত্র—সুরা : কামার, আয়াত : ২০, সুরা : হাককাহ, আয়াত ৬-৮)
এবং এভাবেই শক্তিশালী ও সুঠাম দেহের অধিকারী বিশালবপু আদ জাতি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
Israt / Israt