চবিতে শেষ গ্রুপ - উপগ্রুপের ছাত্রলীগের রাজনীতি

ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পতনের আগ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগের ছিল একচ্ছত্র আধিপত্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো থেকে শুরু করে সমগ্র ক্যাম্পাস জুড়েই ছিল তাদের দাপট। আবাসিক হলগুলোতে থাকতে পারতো শুধুমাত্র ছাত্রলীগের কর্মীরাই। তাই হলে থাকতে হলে পূর্বশর্ত ছিল ছাত্রলীগের কোন উপগ্রুপের (বগি) সদস্য হওয়া।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ মূলত নিয়ন্ত্রিত হতো চট্টগ্রামের দুই প্রভাবশালী নেতা সাবেক সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহীবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের ছত্রছায়ায়। শাটল ট্রেনের বগি কেন্দ্রিক পরিচালিত হতো ছাত্রলীগের কার্যক্রম।
১১ টি গ্রুপ- উপগ্রুপে বিভক্ত ছিল চবি ছাত্রলীগ। এরমাঝে ২ টি উপগ্রুপ সিএফসি এবং বিজয় ছিল নওফেলের অনুসারী। বাকি ৯ টি উপগ্রুপ সিক্সটি নাইন,ভিএক্স, বাংলার মুখ, এপিটাফ, কনকর্ড, একাকার, রেড সিগন্যাল, উল্কা, স্বাধীনতা ছিল আ জ ম নাছিরের অনুসারী।
এই গ্রুপ - উপগ্রুপের মাঝে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার, ভাগ বাটোয়ারা, স্টেশন কিংবা ঝুপড়িতে বসার মতো ক্ষুদ্র বিষয়কে কেন্দ্র করেও নিয়মিত সংঘাত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতো। এতে ব্যাহত হতো শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ। নিরাপত্তাহীনতা ও শঙ্কায় দিন কাটতো শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। সর্বশেষ ২১ মে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র দখলের জেরে চবি ছাত্রলীগের ২ গ্রুপের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ১০ আহত হয়। কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিজয় গ্রুপের কর্মী ও চবি ছাত্রলীগের সাবেক উপ-ক্রীড়া সম্পাদক সালা উদ্দিনকে।
কুপিয়ে জখম করা নেতা কর্মীরা ছাত্রলীগের আরেক গ্রুপ চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ারের ( সিএফসি) কর্মী।
গত ১৪ জুলাই রাত সোয়া ১১টার দিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় আন্দোলনকারীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় ছাত্রলীগের কর্মীরা। এতে দুজন সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হয়। পরদিন ১৫ জুলাই কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের উপর ফের কয়েক দফায় হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায়ও দুই শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। ঐদিন দুপুর আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারী জিম্মি হওয়া শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে যাওয়ার পথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে তাদেরকে আটকে বেধড়ক মারধর করে ছাত্রলীগের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাইম আরাফাত, আইন বিভাগের ১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের খালেদ মাসুদ, সমাজতত্ত্ব বিভাগের ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আরাফাত রায়হান, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২১-২২ শিক্ষাবর্ষের রনি ইসলামসহ কয়েকজন। এসময় তারা এক শিক্ষার্থীকে রাস্তায় ফেলে বাঁশ-তক্তা দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক জখম করে ও ছাত্রীদের হেনস্তা করে। হামলায় গুরুতর আহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. মাহবুবুর রহমান।
জানতে চাইলে শাহ আমানত হলের থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রিফাত হোসেন ফাহিম বলেন, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই তখন আর্থিক সংকটের কারনে হলে উঠতে হয়। আর চবিতে হলে উঠতে হলে অবশ্যই ছাত্রলীগের কর্মী হতে হয়। এজন্যই আমাকে শাহ আমানত হলে উঠতে সিএফসির কর্মী হতে হয়। হলে উঠার পর দেখতে পাই ছাত্রলীগ নেতাদের পৈশাচিক দৃশ্য। হলে থাকা শিক্ষার্থীরা নানাভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হতো। অসুস্থ থাকলে কিংবা পরিক্ষা থাকলেও মিছিল মিটিং এ যেত হতো। প্রায় রাতে ঘুমাতে পারতাম না। হলের কোন সিনিয়রের জম্মদিন থাকলে তা পালন করতে যেতে হতো। আর তাদের উপরে কথা বললেই হল ছেড়ে দিতে হতো। কথা না শুনলে বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে মারধর করার পাশাপাশি টাকা দাবি করতো।
একই শিক্ষাবর্ষের আরেক শিক্ষার্থী চৌধুরী হাসিনুর রহমান আরাফাত বলেন, হলে থাকা শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের নেতাদের দ্বারা প্রায়শই নির্যাতনের শিকার হতো। কেউ তাদের উপর কথা বলতে পারতো না। হলগুলোতে ছিল মাদক আর অস্ত্রের ঝনঝনানি। বলা চলে হলগুলো ছিল আবাসিক কারাগার। নেতাদের স্বার্থে কয়েকদিন পরপরই মারামারি, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতো। ইচ্ছা না থাকলেও যেতে হতো এসব মারামারিতে। কোটা বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় ওরা আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের রক্তের বিনিময়ে দেশে আবারও মুক্ত বাতাস এসেছে। আমরা চাই না ছাত্রলীগের মতো এমন বীভৎস
অতীত ফিরে আসুক। এখন সময় এসেছে নতুন করে দেশ গড়ার। আমরা আমাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে ছাত্রসংসদের মাধ্যমে আমাদের দাবি দাওয়া তুলে ধরতে চাই।
২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নুসাইবা আনজুম হক অর্থী বলেন, কোটা বিরোধী আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের ছেলেরা আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বিশ্রী ও নোংরা ভাষায় আমাদের গালি দেয়। আমরা প্রক্টর অফিস থেকে আসার সময় আমাদের পথ আটকে টিজিং করে। নানাভাবে হুমকি দিত। হয়রানির ভয় দেখাতো। ক্যাম্পাসে মেয়েরা নিরাপদ ছিল না। ক্যাম্পাসে কারো স্বাধীনতা ছিল না। আজকে এ ক্যাম্পাসে মুক্তভাবে হাঁটতে পারছি, কথা বলতে পারছি। মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারছি, এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া। আমরা চাচ্ছি না আর ছাত্র রাজনীতি থাকুক এক্যাম্পাসে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, যেকোন ধরনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের কথা উঠেছে। কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত নিবে ছাত্র রাজনীতি থাকবে কিনা। তবে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা চাচ্ছি ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী কারোই কোন ধরনের রাজনীতি ক্যাম্পাসে না থাকুক। শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো এবং যৌক্তিক দাবিগুলো তুলে ধরার জন্য দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ গঠিত হোক। সেসাথে আমাদের এই যৌক্তিক আন্দোলনে যারা আমাদের ভাই বোনদের হামলা করেছে তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
T.A.S / এমএসএম

জবি ঊষার সভাপতি নাইম, সম্পাদক লিশা

মৎস বীজ কেন্দ্র অধিগ্রহণ দাবিকে আমি মুগ্ধর দাবি হিসেবে গ্রহণ করছিঃ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার

পরীক্ষার ফি কমানোর দাবিতে বার কাউন্সিলে স্মারকলিপি প্রদান

ধর্ষণের সর্বোচ্চ বিচার দাবিতে মধ্যরাতে মহাসড়ক অবরোধ জাবি শিক্ষার্থীদের

তিতুমীর কলেজস্থ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদের নতুন কমিটি ঘোষণা

নিষিদ্ধ 'হিযবুত তাহেরীর' সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে কুবির দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা

শিশু ধর্ষণের প্রতিবাদে জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

থিসিস লেখায় দক্ষতা বাড়াতে খুবির রিসার্চ সোসাইটির প্রশিক্ষণ

খুবির শহীদ মীর মুগ্ধ তোরণের উদ্ধোধন আগামী রবিবার

নিজ বিভাগ থেকে সভাপতি নিয়োগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান, প্রশাসনের আশ্বাসে কর্মসূচি প্রতাহার

বার কাউন্সিলের ফি কমানোর দাবিতে জবিতে মানববন্ধন

সাবেক ছাত্রদল ও সাংবাদিক নেতা সুজার শেল্টারে হত্যা মামলার আসামীর ক্যাম্পাসে প্রবেশ
