খুলনায় বনমালীর মৃত্যু ঘিরে রহস্য
হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে কোটি টাকা খরচের অভিযোগ

খুলনা রেলস্টেশনের পদ্মা বাণিজ্য ভাণ্ডারের মালিক বনমালী মণ্ডলের মৃত্যু ঘিরে রয়েছে রহস্য। অভিযোগ রয়েছে, ঘোষ ট্রেডার্সের মালিক অমিত ঘোষের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়। আর বনমালীর মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিতে টপ টু বটম প্রায় এক কোটি টাকা খরচ করেছে অমিত ঘোষ।
খুলনা রেলস্টেশনের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, বনমালী মণ্ডলের মৃত্যুর পর তার বড় ভাই কেশব মণ্ডল হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের চাপে সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিয়ে ছেলেকে নিয়ে খুলনা ছাড়েন কেশব মণ্ডল। আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে অমিত ঘোষের ছিল গভীর সখ্যতা, যার সুবাদে ব্যবসায়ী সমিতির মাধ্যমে কিছু টাকা পাইয়ে দিয়ে সাদা কাগজে কেশব মণ্ডলের স্বাক্ষর রেখে তা দিয়ে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করে অমিত ঘোষ। অনেক পরে কেশব মণ্ডল জানতে পারেন মামলা স্থগিত হয়েছে।
অমিত ঘোষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, কেশব মণ্ডলের দায়ের করা মামলার সাক্ষী বনমালীর ম্যানেজার হেমন্ত চাকরি করছেন অমিত ঘোষের আড়তে। বনমালীর মৃত্যুর ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছে হেমন্ত বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র। আর এজন্যই হেমন্তকে মোটা অংকের বেতনে চাকরি দিয়েছে অমিত ঘোষ।
বনমালীর ম্যানেজার হেমন্ত বলেন, আমাকে অমিত দাদা চাকরি দিয়েছেন। বনমালী হত্যা মামলার সাক্ষী হয়ে বিবাদীর আড়তে চাকরি করার বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা তার কাছে এসেছিলেন কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো তদন্তকারী কর্মকর্তা তার কাছে আসেননি। প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বনমালী মণ্ডল তার হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করেছিলেন। কিন্তু সে ফোনটি পুলিশের কাছে।
ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৫ জুন নিখোঁজের এক দিন পর খুলনা রেলওয়ে পুলিশ বনমালী মণ্ডলের লাশ খুলনা রেলওয়ে ইয়ার্ডে খুঁজে পায়। নিখোঁজের দিন সন্ধ্যার দিকে বনমালী মণ্ডলের হোয়াটসঅ্যাপ থেকে একটি মেসেজ বনমালীর ম্যানেজার হেমন্তর হোয়াটসঅ্যাপে আসে। ম্যাসেজে লেখা ছিল, বিকেল সাড়ে ৪টার পর কারা যেনো তাকে একটি বদ্ধ ঘরে আটকে রেখেছে। কারো সাথে আর দেখা নাও হতে পারে। সে বিপদে আছে। বিষয়টি দুলাভাইকে জানাতে বলেন বনমালী। পরদিন সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বনমালীর স্ত্রী সীমান্তী মণ্ডল অমিত ঘোষকে দায়ী করলেও বর্তমানে সে অমিত ঘোষের পক্ষেই রয়েছে।
গত বছরের জুলাইয়ের ২ তারিখ একটি মামলা দায়ের করেন বনমালীর বড় ভাই কেশব মণ্ডল। কিন্তু তথ্যসূত্রে দেখা যায়, এক মাস পর আগস্টের ৮ তারিখ মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেন কেশব মণ্ডল।
খুলনা রেলওয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকার পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের একটি চিঠির মাধ্যমে মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। পিবিআই মামলাটি তদন্ত করে ৩-৪ মাসের মধ্যে তদন্তের ফাইনাল রিপোর্ট দেয়। এদিকে, মামলাটি প্রত্যাহারের বিষয়টি কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে মামলা প্রত্যাহারের কোনো আবেদন করেননি বলে জানান কেশব মণ্ডল।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বনমালী মণ্ডল বিবাদী অমিত ঘোষের আড়তে প্রায় ১০ বছর চাকরি করেছেন। পরবর্তীতে অমিত ঘোষ নিজের পরিচিত সীমান্তী মণ্ডলের সাথে বিয়ে দেন বনমালীকে। বিয়ের পর বনমালী জানতে পারেন তার স্ত্রীর সাথে পূর্ব থেকে অমিত ঘোষের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। আর বিয়ের পর বনমালীর কর্মব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে সীমান্তী ও অমিত ঘোষের মেলামেশা চলছিল। এ নিয়ে বনমালী এবং সীমান্তীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকত। পরে বনমালী পদ্মা বাণিজ্য ভাণ্ডার নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেন রেলস্টেশন এলাকায়।
নিজ ব্যবসার সুবাদে বনমালী প্রায়ই বাসায় থাকায় বন্ধ হয়ে যায় অমিত এবং বনমালীর মেলামেশা। কিন্তু পারিবারিক কলহ চলতে থাকে। এমনকি বনমালী নিখোঁজের দিন সীমান্তী মণ্ডল তার বড় ভাইয়ের বাসায় ছিল। সীমান্তী মণ্ডলের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা এতদিন কোথায় ছিলেন? আমি এ বিষয়ে কিচ্ছু জানি না। আর এ বিষয়ে আমাকে কেন জিজ্ঞাসা করছেন? তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে ইচ্ছুক নন বলে জানিয়ে দেন।
অনুসন্ধানের একপর্যায়ে অমিত ঘোষের মুখোমুখি হলে তিনি বনমালী মণ্ডেলের মৃত্যুর ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান। কারা খুন করেছে আর কোন থানায় মামলা হয়েছে, তাও তিনি জানেন না বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমার সাথে সীমান্তী মণ্ডলের কোনো সম্পর্ক নেই। মামলা প্রত্যাহার হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো উকিল জানেন। আমি কিছু জানি না।
বনমালী মণ্ডলের একজন স্বজন বলেন, বনমালী মণ্ডল আমাদের পরিবারের একজন ছায়া ছিলেন। তার সাথে এমনটা হবে তা আমরা ভাবতেও পারিনি। মৃত্যুর আগে অমিত ঘোষের রোষানলে পড়েন তিনি। আলাদা আড়ত দেয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে অমিত ঘোষ নানান কৌশলে বনমালী মণ্ডলের পেছনে লেগে থাকত। হেমন্তকে দিয়ে অমিত ঘোষ নিজের চেক ব্যাংকে পাঠিয়ে টাকা তোলার নাটক সাজিয়ে বনমালীকে চোর সাজাতে চেয়েছিল। আর ব্যবসা বন্ধ করানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের কৌশল অবলম্বন করত। বনমালীর স্ত্রীকেও নানান সময়ে দামি দামি অলংকার এবং শাড়ি উপহার দিত অমিত। আর তার মৃত্যুর পর অমিত ঘোষ যাবতীয় খরচ দিয়ে সীমান্তী মণ্ডলকে খুলনা শহরে রেখেছে।
বনমালী মণ্ডলের ভাই কেশব মণ্ডল বলেন, মামলা করার পর নানাভাবে হুমকির মুখে পড়েছি। সীমান্তী মণ্ডল আমাকে মামলা করতে বাধা দিয়েছিল। কিন্তু আমি তাকে না জানিয়েই মামলা করি। মামলা করলে আমাকে বিভিন্ন হুমকি দেয় বিবাদীর লোকজন। আমার ছেলে সুন্দরবন কলেজে পড়ালেখা করত। হুমকির মুখে পড়ে তাকে আমি গ্রামে এনে এখানকার কলেজে ভর্তি করেছি।
তিনি আরো বলেন, আমি মামলা প্রত্যাহারের কোনো আবেদন করিনি। আমাকে দিয়ে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে রাখে এবং বনমালীর পরিবারের জন্য এককালীন কিছু টাকা দেয় বৈঠকে থাকা প্রভাবশালী কিছু লোকজন। তারা এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্যও বলে। এক প্রকার অসহায় হয়ে তাদরে কথা মেনে নিয়ে আর আদালতে যাইনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টাকা হলে সব সম্ভব। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পরিবর্তনও সম্ভব। যারা এতকিছু করল, তাদের দ্বারা সবই সম্ভব। সব জায়গাই অমিত ঘোষ টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করিয়ে রেখেছে।
এমএসএম / জামান

গাজীপুর-৩ আসনে আলোচনায় বিএনপির ৪ প্রার্থী, একক প্রার্থী নিয়ে নিশ্চিন্ত অন্য দল

আদালতের দোতলা থেকে লাফ দিয়ে পালানোর চেষ্টা হত্যা মামলার আসামির

রায়পুরে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে মানববন্ধন

চট্টগ্রাম-১৩ আসনে তৃণমূল নেতাকর্মীদের পছন্দের শীর্ষে এস এম মামুন মিয়া

চাঁদপুরে কল্যাণ ট্রাস্টের চেক পেয়েছেন ১৯ সাংবাদিক

জুড়ীতে কৃষ্ণনগর বাছিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে উপহার প্রদান

গাছে ঝুলন্ত লাশ, পা মাটিতে-শ্বশুরবাড়ি থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার

রূপগঞ্জে বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ

মানিকগঞ্জ শহরের প্রবেশমুখে গোলচত্বর ও ফ্লাইওভারের দাবিতে মানববন্ধন

ভূরুঙ্গামারীতে নবযোগদানকৃত কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক এর সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে

রাণীশংকৈলে গরু ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ৫

হাটহাজারী নাগরিক সেবা নিয়ে বিপাকে পৌরবাসী। তবে কর্তৃপক্ষের দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
