শেকৃবির নতুন উপাচার্যের কাছে শিক্ষার্থীদের যত প্রত্যাশা

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে বর্তমানে দায়িত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল লতিফ। নুতন উপাচার্যের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও ভাবনা তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি তাহিরুল হাসান ফাহিম। 

শেকৃবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলম বলেন, নতুন বিজয়ের নতুন শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য স্যারের কাছে নতুন কিছু করার চেয়ে পুরাতন কিছু বিষয়ে সংস্কারের অনুরোধ থাকবে। যেখানে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করে সৎ, দক্ষ, যোগ্য ও নেতৃত্বের গুণাবলীসম্পন্ন ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে হবে। এছাড়াও গেস্টরুম কালচার নামে অমানুষিক নির্যাতন, গ্রুপিং করে হলে সিট দখলের প্রতিযোগিতা, ক্যান্টিন, ডাইনিংয়ে বাকি খাওয়ার কালচার, হলের ছাদে বা রুমে দলবদ্ধ হয়ে মাদকদ্রব্য সেবন, নারীর নিরাপত্তা প্রদানসহ লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির মূলোৎপাটন করা, বিসিএস থেকে মুখ ফিরিয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য মোটিভেশন সেল গঠন করা, একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি লুকিয়ে থাকা সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ সাধনে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। যেখানে সবাই একে অপরের ভাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ থাকবে এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় উপহার দেবেন- এটাই প্রত্যাশা।

শেকৃবি ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি কাইয়ুম কাফি বলেন, শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য যে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেগুলো সঠিকভাবে পালন করার আশা করি। এছাড়াও শিক্ষার্থীবান্ধব এমন একটি ক্যাম্পাস তৈরি করবেন, যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থী তার মেধা বিকাশের সর্বোচ্চ সহযোগিতা পায়। শুধু একাডেমিক পড়াশোনার চাপ নয়, সহ-পাঠক্রমিক কার্যক্রমগুলো যাতে সুন্দরভাবে চলতে পারে, এজন্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশা করি। শুদ্ধ বুদ্ধির চর্চা, মেধার বিকাশ এবং গবেষণা আরো সমৃদ্ধতর হোক- এটাই প্রত্যাশা।

শেকৃবি রোভার স্কাউট গ্রুপের সিনিয়র রোভারমেট এহসানুল কবির বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করা, সাথে বন্ধ হয়ে যাওয়া সার্ক ট্যুর চালু, প্রতি সেমিস্টার ফিল্ড ট্রিপের ব্যবস্থা করা, ক্লাস রুমগুলোর প্রয়োজনীয় সংস্করণ করা, গবেষণা কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় সংস্করণ, নিত্যনতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তির সংযোজন ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রমের মানোন্নয়ন করা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সেক্টরে যেসব অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো নির্মূলপূর্বক স্বচ্ছতা আনবেন বলে আশা করি। সর্বোপরি, স্যার একজন শিক্ষার্থীবান্ধব অভিভাবক হবেন- এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করি।

শেকৃবি ইয়েস গ্রুপের দলনেতা আল মোন্তাকিম মাহদী নোমান বলেন, স্নাতকোত্তরের দুটি সেশন একসাথে হওয়ায় এমএস-এর ক্লাসরুম সংকট সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ, প্রতি সেমিস্টারে সম্মানিত শিক্ষকদের মান মূল্যায়নের ব্যবস্থা করে শিক্ষার মান বাড়ানো, উচ্চতর শিক্ষার জন্য অন্যান্য দেশে অ্যাপ্লিকেশনের রিপ্লে আসতে অনেক সময় লাগে, তাই এডুকেশনাল মেইলের মেয়াদ না রাখা এবং সকলের প্রাণের দাবি কৃষি অনুষদে ইন্টার্ন সিস্টেম চালু করা। সর্বোপরি দুর্নীতিমুক্ত শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যাশা করি।

শেকৃবি বন্ধুসভার সভাপতি নাবিয়া সুলতানা রিনি বলেন, নবনিযুক্ত ভিসি মহোদয়ের কাছে কিছু মৌলিক প্রত্যাশা থাকবে এই যে, অবিলম্বে সকল ক্লাব যেন তাদের নিজ নিজ ক্লাবরুম পায় এবং নিজস্ব কর্মসূচি বাস্তবায়নে কখনো যেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হতে না হয়। সাংস্কৃতিক সপ্তাহ ঘোষণার মাধ্যমে শেকৃবির দীর্ঘদিন ধরে চলা আসা সাংস্কৃতিক মনোভাব যেন আবার জাগিয়ে তোলা যায়, সে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। শেকৃবি বন্ধুসভা পরিবার থেকে অনুরোধ থাকবে- আসন্ন শীতে ক্যাম্পাসজুড়ে 'পিঠা উৎসব'-এর পুনরায় আয়োজন করা হোক।

শেকৃবি কিষাণ থিয়েটারের সভাপতি নিলয় রায়হান বলেন, জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশ পেয়েছে এক নতুন স্বাধীনতা৷ সেই ধারায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ও পিছিয়ে নেই৷ যে নতুনত্ব শেকৃবি পেয়েছে, নতুন উপাচার্যের পদায়নে তা যেন এই ক্যাম্পাসে পুনরায় প্রাণের সঞ্চার ঘটায়- এ আশা সকল শিক্ষার্থীর৷ একটি শিক্ষার্থীবান্ধব, যুগোপযোগী প্রশাসন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানোন্নয়নে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে৷ একটি জাতির মানদণ্ড নির্ধারণ করে তার সংস্কৃতি ও শিক্ষা পদ্ধতি৷ শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে সমানতালে এগিয়ে নিতে এবং শিক্ষার্থীদের ভেতর সাংগঠনিক মনোভাব বিকাশ করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও উৎসাহ আমাদের সকলের চাওয়া৷ এজন্য ছাত্র, শিক্ষক ও প্রশাসনের ভেতর অবাধ যোগাযোগ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব অতীব জরুরি৷ নতুনত্বের মাধ্যমে শেকৃবি উন্নতির উচ্চশিখরে পদার্পণ করবে- এই আশা ব্যক্ত করছি৷

শেকৃবি ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সওবান চৌধরী বলেন, যখন একটি প্রক্রিয়ায় অনিয়ম দীর্ঘ সময় ধরে হয়ে আসে, সেখানে নিয়মতান্ত্রিক কাজগুলো করাই দুরুহ হয়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সর্বোচ্চ প্রাপ্তি অনেকের কাছে অনেক রকম হতে পারে। তবে গবেষণায় অগ্রগতি কোনো তালিকা থেকেই বাদ পড়বে না। গবেষণা যেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নামমাত্র দায়মুক্তি না হয়। কার্যকরী, অগ্রগামী ও টেকসই কৃষি গবেষণার জন্যে শেকৃবিতে ব্যাপক কাঠামোগত ও পদ্ধতিগত পরিবর্তন প্রয়োজন। পরিবর্তন প্রয়োজন চিন্তা জগত ও নিয়তের। দরকার প্রশিক্ষণের। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে সামগ্রিক অগ্রগতিকে সামনে রেখে অনতিবিলম্বে এই পরিবর্তন দেখতে চাই।