ঢাকা বৃহষ্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

বিলুপ্তপ্রায় চৌদ্দগ্রামের বিখ্যাত কাচবালি


মুহা. ফখরুদ্দীন ইমন, চৌদ্দগ্রাম photo মুহা. ফখরুদ্দীন ইমন, চৌদ্দগ্রাম
প্রকাশিত: ৩০-৮-২০২১ দুপুর ১:২৪

দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডকে সোজা রাখতে প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, খনিজ তেল, চুনাপাথর, কাচবালি, সিলিকন বালিসহ বিভিন্ন খনিজসম্পদ বিরাট ভূমিকা রাখে। কাচবালি বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খনিজসম্পদগুলোর একটি, যা সাধারণত কাচ তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দেশের পিএইচপি গ্লাস ফ্যাক্টরিতে সবচেয়ে বেশি ৭১% ভাগ কাচবালি ব্যবহার করা হয়। কোয়ার্টজ কাচশিল্প ছাড়াও সোলার প্যানেলের সিলিকনের চিপ তৈরিসহ এ ধরনের বিভিন্ন কাজে কাচবালি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কাচেত আয়নায় আমরা আমাদের অবয়ব দেখতে পছন্দ করি।

মানব জীবনে কাচের ব্যবহার অতি বিস্তর। এক সময় কাচ শুধুমাত্র জানালায় ব্যবহৃত হলেও এখন বাসার দেয়াল নির্মিত হচ্ছে কাচ দিয়ে। বর্তমান বিকশিত স্থাপত্যের ধারা এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে ভবনে কাচের ব্যবহারে এসেছে অভূতপূর্ব পরিবর্তন ও নতুন মাত্রা। ভবনে ব্যবহৃত হচ্ছে ফটোভোল্টিক কাচ। কাচ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল কাচবালি প্রকৃতিতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে দুটি ফ্লট কাচ কারখানা রয়েছে। একটি চট্টগ্রামে পিএইচপি গ্লাস ফ্যাক্টরি ও অপরটি টাঙ্গাইলে নাসির ফ্লট গ্লাস ফ্যাক্টরি।

জানা যায় যে, পিএইচপি গ্লাস ফ্যাক্টরিতে সর্বনিম্ন ৭১% সিলিকা সমৃদ্ধ বালি বা স্যান্ড ব্যবহৃত হয়। অধিক প্রাচুর্যতাসম্পন্ন সিলিকা বালি বাংলাদেশে অপ্রতুল। বুয়েটের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, বাংলাদেশের কাচবালি ওট্টয়া স্যান্ডের চেয়েও ভালো। বাংলাদেশের শেরপুরের বালিজুরী, হবিগঞ্জের তেলিপাড়া ও শাহজিবাজারে, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় এবং চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলায় কাচবালির মজুদ আছে কিন্তু তার পরিমাণ মাত্র কয়েক মিলিয়ন টন। বাংলাদেশে কাচবালির উল্লেখযোগ্য মজুদ রয়েছে ভূপৃষ্ঠের উপরে বা ভূপৃষ্ঠের সামান্য নিচে বালিজুরীতে (৬ লোখ ৪০ হাজার টন), শাহজিবাজারে (১০ লোখ ৪০ হাজার টন) ও চৌদ্দগ্রামে (২ লাখ ৮৫ হাজার টন)। এছাড়াও ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে মধ্যপাড়ায় (১ কোটি ৭২ লাখ টন) ও বড়পুকুরিয়ায় (৯ কোটি টন) কাচবালির মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে।

একটা সময় চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বিখ্যাত খনিজসম্পদ হিসেবে কাচবালির বেশ সুনাম ও পরিচিতি ছিল। অথচ কালের বিবর্তনে তা আজ বিলীন হয়ে গেছে। চৌদ্দগ্রামের বিখ্যাত কাচবালি ও সিলিকন বালি এখন বিলুপ্তপ্রায়। বিগত ১০ বছরেও দেখা যায়নি এই খনি থেকে বালি উত্তোলন করতে।

স্থানীয় প্রবীণদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে পাকা ঘর ও সরকারি স্থাপনা নির্মাণের জন্য এই খনি থেকে বালি উত্তোলন শুরু করা হয়। শ্রমিকরা গরুর গাড়িতে করে বিভিন্ন স্থানে এ বালি আনা-নেয়ার কাজ করত। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায়, এ বালি কাচ ও সিলিকন তৈরির কাঁচামাল। সেই থেকে এ বালি চৌদ্দগ্রামসহ সারাদেশে কাচবালি বা সিলিকন বালি হিসেবে পরিচিতি পায়। তখনকার সময়ে জেলা কালেক্টর অফিসার ও রাজস্ব কর্মকর্তা নির্দিষ্ট স্থানের এই বালি খনিটি ইজারা দিতেন। এখান থেকে উত্তোলনকৃত বালি দ্বারা দেশ-বিদেশে গ্লাস তৈরি হতো। ফলে সরকারি কোষাগারে মোটা অংকের রাজস্ব জমা পড়ত। কালের বিবর্তনে একবিংশ শতাব্দীতে এসে এই খনি থেকে আর কাচবালি উত্তোলিত হয় না। বর্তমানে এটি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, দেশ বিভাজনের পর এ খনি থেকে বালি উত্তোলন করতেন উপজেলার চিওড়া কাজী বাড়ির কৃতী সন্তান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর একান্ত সহযোগী ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা মরহুম কাজী আফতাবুল ইসলাম গেদু মিয়া। তিনি তৎকালীন কালেক্টর অফিসারের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে বালি উত্তোলন করে চট্টগ্রামের ওসমানিয়া গ্লাস ফ্যাক্টরিতে চালান করতেন। তার মৃত্যুর পরে স্থানীয় কর্তাব্যক্তিরা বিভিন্ন সরকারের আমলে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এ বালি উত্তোলন করতেন এবং রাতের আঁধারে চোরাই পথে তা পাচার করা হতো। ২০০৬ সালে ভারত সরকার সীমান্তবর্তী এলাকায় নো-ম্যান্স ল্যান্ডে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করলে এ খনিজসম্পদটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। বিগত কয়েক বছর যাবৎ এই খনি থেকে বালি উত্তোলনের চেষ্টা করেও এর দেখা মেলেনি।

ভূতত্ত্ববিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতে, খনিটির অবস্থান ছিল রগুনন্দন পাহাড়ের পাদদেশে। জানা গেছে, দেশের লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পাশে উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১০ কিলোমিটারজুড়ে এই খনিটি বিদ্যমান ছিল। জগন্নাথদীঘির উত্তর প্রান্তে কেচকিমুড়া, ডিমাতলী, সুজাতপুর, দুর্গাপুর, আনন্দপুর, নানকরা, কালিকাপুর পর্যন্ত অবস্থিত ছিল এর পরিধি।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, বালি খনির মুখটি ভারতে অবস্থান পরিবর্তন করে, যার ফলে অনায়াশেই সে দেশের সরকার এই বালি উত্তোলন করছে। বর্তমানে বালি উত্তোলনের স্থানটিতে বড় বড় স্থাপনাসহ শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন নতুন নতুন আবাসিক ভবন নির্মিত হওয়ায় কাচবালি সম্পদটি ধ্বংস হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মনজুরুল হক বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কল-কারখানা ও ব্যক্তি মালিকানাধীন নতুন নতুন আবাসিক ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কাচবালি উত্তোলন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারী কোনো সিদ্ধান্ত এলে উপজেলা প্রশাসন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

এমএসএম / জামান

ভারতকে প্রতিহত করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়াই যথেষ্ট : ফারুক

তাবলিগ জামাতের দুগ্রুপের সংঘর্ষ, ভাঙচুর

নেত্রকোনায় মগড়া নদী সুষ্ঠ প্রবাহ নিশ্চিতে করনীয় বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত

পিরোজপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে চুরি হওয়া ২৫ মোবাইল ফোন উদ্ধার করে ফেরত দিলো পুলিশ সুপার

উলিপুরে ছাত্রদের মারধরের ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান ও সাবেক কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

গোপালগঞ্জের শিক্ষাঃ বর্তমান ও ভবিষ্যত’-এ নিয়ে শিক্ষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত

কুয়াকাটায় সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে,নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ বিএনপির

আক্কেলপুরে মহিলা ডিগ্রি কলেজে কমিটি নিয়ে সংঘর্ষ

নবাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় (টাউন হাইস্কুল) থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় তিনটি ককটেল উদ্ধার

চৌদ্দগ্রামে মুন্সীরহাট ছাত্র সংগঠনের উদ্যোগে কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা

মিরসরাইয়ে বিপুল পরিমাণ গাঁজা ভর্তি প্রাইভেটকারসহ একজন আটক

নগরকান্দায় নবজাতকের লাশ উদ্ধার

লোহাগড়ায় শরিফুল মোল্লার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, বিএনপির প্রতিবাদ