আফগানিস্তানকে হারিয়ে সিরিজে সমতায় বাংলাদেশ
প্রথম ম্যাচে মোহাম্মদ গাজানফারের সামনে দাঁড়াতে না পারা বাংলাদেশের জন্য দ্বিতীয় ওয়ানডে ছিল অনেকটা বাঁচা-মরার। হারলেই সিরিজ খোয়ানো, জিতলে সিরিজে টিকে থাকা। এমন সমীকরণের ম্যাচে ব্যাট হাতে বাংলাদেশকে পথ দেখিয়েছেন সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন শান্ত। অধিনায়কের ৭৬ রানের ইনিংসের পর শেষের বেলায় নাসুম আহমেদ ও জাকের আলী অনিকের ক্যামিওতে ২৫৩ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। লক্ষ্য তাড়ায় নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় আফগানিস্তান। রহমত শাহ হাফ সেঞ্চুরি করলেও শেষ পর্যন্ত হারতে হয়েছে স্বাগতিকদের।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আফগানিস্তানকে ৬৮ রানে হারিয়ে সিরিজে সমতা ফেরাল বাংলাদেশ। শারজাহতে এটিই বাংলাদেশের প্রথম জয়।শারজাহতে এক ম্যাচ বাকি থাকতে সিরিজ জিততে হলে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ২৫৩ রান তাড়া করতে হবে আফগানিস্তানকে। আড়াইশ পেরোনো লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে স্বাগতিকরা। তাসকিন আহমেদের অফ স্টাম্পের খানিকটা বাইরের ডেলিভারিতে স্লিপে দাঁড়ানো সৌম্য সরকারের পাশ দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ। তবে নিজের চাওয়া মতো খেলতে পারেননি ডানহাতি ওপেনার। ফলে স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা সৌম্যর হাতে ক্যাচ দিয়ে মাত্র ২ রানে ফিরতে হয়েছে গুরবাজকে। ডানহাতি ব্যাটারকে ফেরানোর পর আফগানদের চেপে ধরার চেষ্টা করে বাংলাদেশ।
পাওয়ার প্লে আরও ভালো হতো পারত বাংলাদেশের জন্য। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে উইকেটের পেছনে রহমত ক্যাচ দিলেও সেটা লুফে নিতে পারেননি জাকের আলী অনিক। ফলে সেদিকউল্লাহ ও রহমত মিলে অবশ্য শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়েছেন ভালোভাবেই। তবে তাদের দুজনের জমে ওঠা জুটি ভেঙেছেন নাসুম আহমেদ। মিরাজের অবিশ্বাস্য ক্যাচে নিজের ফেরার ম্যাচেই উইকেটের দেখা পেয়েছেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনারের বলে সুইপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে থাকা মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ৩৯ রান করা সেদিকউল্লাহ।
বাঁহাতি ব্যাটার ফেরার পর থেকে আফগানদের এগিয়ে নিচ্ছিলেন রহমত ও হাশমতউল্লাহ শহীদি। মাঝে সুযোগ তৈরি হলেও উইকেট তুলে নিতে পারেনি বাংলাদেশ। অবশেষে তাদের দুজনের জুটি ভেঙেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি পেসারের বলে ফাইন লেগ দিয়ে ছক্কা মারতে চেয়েছিলেন হাশমতউল্লাহ। তবে সীমানার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা শরিফুল ইসলামের হাতে ক্যাচ দিতে হয়েছে ১৭ রান করা আফগান অধিনায়ককে। পরের ওভারে আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে ফেরান নাসুম। বাঁহাতি স্পিনারের বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন তিনি। টানা দুই ম্যাচে গোল্ডেন ডাক মারলেন ওমরজাই।
একই ওভারে রহমতকেও ফিরিয়েছে বাংলাদেশ। নাসুমের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে সামনে ঠেলে দিয়ে এক রান নিতে চেয়েছিলেন গুলবাদিন নাইব। ডানহাতি ব্যাটারের ডাকে সাড়াও দিয়েছিলেন রহমত। তবে নিজেদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝিতে দুজনই স্ট্রাইক প্রান্তে চলে যান। এদিকে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে নন স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্প ভাঙে বাংলাদেশ। ৭৬ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলে রান আউটে কাটা পড়তে হয়েছে অভিজ্ঞ রহমতকে। এরপর গুলবাদিন নাইব ও মোহাম্মদ জুটিতে বাংলাদেশকে চোখ রাঙাচ্ছিল আফগানিস্তান। তবে তাদের দুজনের জমে ওঠা জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে স্বস্তি এনে দিয়েছেন শরিফুল।
প্রথম তিন বলে এক ছক্কা ও চারে ১২ রান দেয়া বাঁহাতি এই পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে তাওহীদ হৃদয়ের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন গুলবাদিন। ডানহাতি ব্যাটার ফিরেছেন ২৬ রানে। পরের ওভারে বোলিংয়ে এসে নবিকে নিজের শিকার বানিয়েছেন মিরাজ। ডানহাতি অফ স্পিনারের টার্ন করে ভেতরে ঢোকা এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়েছেন ১৭ রান করা নবি। একটু পর খারোটেকেও ফেরান মিরাজ। উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় বলের লাইন মিস করেছিলেন খারোটে। উইকেটের পেছনে থেকে স্টাম্পিং করতে বাকি কাজটা সেরেছেন জাকের।
৮ উইকেট হারানো আফগানিস্তানকে জয়ের কাছে নিয়ে যেতে পারেননি রশিদ খান। মুস্তাফিজের স্লোয়ার আর কাটারে বোকা বনে গেছেন তিনি। বাঁহাতি বলে উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ১৪ রান করা রশিদ। শেষ ব্যাটার হিসেবে গাজানফারকে বোল্ড করে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন নাসুম। বাঁহাতি স্পিনার এদিন নিয়েছেন ৩ উইকেট। এ ছাড়া দুটি করে উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজ ও মিরাজ।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশকে বেশ ভালো শুরু এনে দেন দুই ওপেনার সৌম্য ও তানজিদ হাসান তামিম। তবে তানজিদই বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন। আগের ম্যাচে ৬ উইকেট নেয়া গাজানফারকে লং অন দিয়ে ছক্কা মেরে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। তবে পরের বলেই অফ স্টাম্পের বাইরের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অনে নবিকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ১৭ বলে ২২ রান করা এই ব্যাটার।
একটু পর সাজঘরে ফেরেন মিরাজ। রশিদের গুগলিতে ব্যাকফুটে গিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে আফগান লেগ স্পিনারের গুগলি বুঝে উঠতে পারেননি তিনি। ২২ রানে ফিরতে হয়েছে বোল্ড হয়ে। তৃতীয় উইকেট জুটিতে দুজনে মিলে ৮৩ বলে ৫৩ রানও তুলে ফেলেছিলেন। তাদের ব্যাটে ভর করেই দেড়শ পাড় করে বাংলাদেশ দল।
এরপর শান্তকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি তাওহীদ হৃদয়। বড় শট খেলার নেশায় তিনি খারোটের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে স্কয়ারে সেদিকউল্লাহর হাতে ধরে পড়েন। তার ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ১৬ বলে ১১ রান। পঞ্চম উইকেটে শান্তর সঙ্গে যোগ দেন অভিজ্ঞ ব্যাটার মাহমুদউল্লাহ। খারোট ফিরতি ওভার করতে এসে শান্তকেও আউট করেছেন।
ব্যক্তিগত ৭৬ রানে ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে লং অন দিয়ে উড়িয়ে মেরেছিলেন শান্ত। তবে বল সীমানা পাড় করতে পারেননি। সেই বল সহজেই লুফে নিয়েছেন নবি। আর তাতেই শেষ হয় শান্তর ৬টি চার ও একটি ছক্কায় সাজানো এই ইনিংস। মাহমুদউল্লাহ দুই বল পর একই কায়দায় ক্যাচ দিয়েছেন লং অনের সীমানায় দাঁড়ানো ওমরজাইকে। ফলে ষষ্ঠ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
সপ্তম উইকেটে অভিষিক্ত জাকেরকে নিয়ে ৪৬ রানের জুটি গড়েন নাসুম। আর তাতেই আড়াইশ রানের স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ। নাসুম ২৪ বলে ২৫ রানের ইনিংস খেলে গাজানফারকে আক্রমণ করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন। এক বল আগেই এই স্পিনারকে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মেরেছিলেন নাসুম। তার ইনিংস জুড়ে ছিল দুটি ছক্কা ও একটি চার।
আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন জাকেরও। ফজলহক ফারুকিকে টানা দুই বলে ছক্কা মেরেছিলেন তিনি। অবশ্য ১৯ রানেই ফিরতে পারতেন তিনি। গাজানফারের ওপর চড়াও হতে গিয়েছিলেন জাকের। তবে টপ এজ হয়ে যায়। কাভার থেকে ছুটে এসে মিড অফে ক্যাচ ফসকেছেন হাসমতউল্লাহ শহীদি। এরপর তাসকিনকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত খেলেছেন জাকের। তাতেই আড়াইশ পেরিয়ে যায় টাইগাররা।
এমএসএম / এমএসএম