কুতুবদিয়ায় আগাম তরমুজ ও খিরা চাষ করে স্বাবলম্বী কৃষক
কুতুবদিয়ায় স্থানীয় বাজারে পাওয়া যাচ্ছে তরমুজ। প্রতিবছর শীতের মৌসুমে আগাম তরমুজ ও খিরা চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেকেই। ষাট থেকে সত্তর হাজার টাকা খরচ করে লাভ প্রায় দ্বিগুণ বলে জানিয়েছেন।
স্থানীয় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগাম তরমুজ ও খিরার দাম একটু বেশি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি তরমুজের দাম পড়ে ১শ থেকে ১শ ২০টা পর্যন্ত। তবে স্থানীয় বাজারে কেজিতে তরমুজ বিক্রি হয় না। ছোট,মাঝারি সাইজের তরমুজ বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ৫৫০ টাকায়। তবে আগাম খিরার কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। পরে তা নেমে হয় ৪০-৫০ টাকা।
স্থানীয়রা জানান,স্বাদে অতুলনীয় বলে বাজারে এই তরমুজের চাহিদাও বেশি। তাবালের চর এলাকার চেয়ে আলী ফকির ডেইল এলাকার তরমুজ অধিক মিষ্টি বলে তারা জানান।
৬ কেজি ওজনের একটি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৫শ থেকে ৭শ টাকায়। ২ থেকে ৩ কেজি ওজনের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩শ টাকায়। বাঙ্গিও সাইজ অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে।
জানা যায়, উপজেলার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের তাবালের চর ও সন্দ্বীপি পাড়াসহ উপজেলায় সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ হেক্টর জমিতে তরমুজ, বাঙ্গি ও খিরার চাষ হয়েছে। সেখানে প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে তরমুজ, ১৩ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি ও ৮/৯হেক্টর জমিতে খিরা ক্ষেত করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার ফলন ভালো হয়েছে বাঙ্গির। কৃষক বাঙ্গিতে লাভবান হবে। সন্দ্বীপি পাড়ার ক্ষেত থেকে আগাম তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। খিরা আরও আগে থেকে বিক্রি হচ্ছে বলে তারা জানান।
সরেজমিন তরমুজ ক্ষেত ঘুরে দেখা গেছে, দৃষ্টি যতদূর যায় তরমুজ,বাঙি আর মাঝে মাঝে ক্ষিরা ক্ষেতের সমাহার। চারদিকে সবুজের সমারোহ। এরই মাঝে কৃষাণীর আনাগোনা। দেখতেই যেন মনটা ভরে যায়।
কুতুবদিয়ায় ঘুরতে আসা পর্যটকদের আকর্ষণ করেছে এই সুস্বাদু রসালু মিষ্টি তরজুম। তাঁরা সদলবলে ছুটে যান তরমুজ ক্ষেতে। দেশবিদেশ ছড়িয়ে পড়েছে কুতুবদিয়ার তরমুজের সুখ্যাতি।
কথা হয় বেশ কয়েকজনের কৃষাণীর সাথে। তারা জানিয়েছেন আগাম তরমুজে দাম পাওয়া যায় বেশি। এসময়ে বাজারে তরমুজের চাহিদা বেশি থাকে। শুধু তরমুজ নয়। বাঙ্গী ও খিরার চাহিদাও থাকে প্রচুর। আগাম খিরা প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১শ,১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। যোগান বাড়তে থাকলে দামটা আসতে আসতে কমে যায়। যেমন বর্তমান বাজারে খিরা বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। তবে এবার গত বছরের তুলনায় তরমুজের ফলন কম হয়েছে বলে দামটা একটু বাড়তি থাকতে পারে।
একজন কৃষাণী জানান, তিনি ৫০ শতক জমির তরমুজ বিক্রি করেছেন ১লাখ ৭০ হাজার টাকায়। তার কানি প্রতি (৪০শতক) জমিতে খরচ হয়েছে ৬০-৭০ হাজার টাকা।
এই ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিজানুল জানান,তাঁর ব্লকে প্রায় ৩৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ ও বাঙ্গী চাষ হয়েছে। এবার তরমুজে তুলনায় বাঙ্গীর ফলন ভালো হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত থেকে আগাম তরমুজ ও বাঙ্গী বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে ক্রেতারা জানান, আগাম তরমুজের দাম হাতের নাগালের বাইরে। অন্যসময়ে সবচেয়ে বড় একটি তরমুজের দাম সর্বোচ্চ ৪শ টাকা হয়। কিন্তু আগাম তরমুজের প্রতি কেজির দাম পড়ে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
মেডিকেল গেইট এলাকায় গিয়াসউদ্দিন নামের একজন বিক্রেতা জানান, তিনি ৫০ শতকের একটি তরমুজ ক্ষেত ক্রয় করেছেন ১লক্ষ৭০ হাজার টাকায়। ক্ষেতে ছোট-বড় আড়াই হাজার মতো তরমুজ রয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি ২০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, উপজেলায় প্রায় ৪০ হেক্টর জমিতে তরমুজ, বাঙ্গি ও ক্ষীরা/শসা ক্ষেত হয়েছে। এসব ক্ষেত করার জন্য উপজেলায ১৭ জন কৃষাণীকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। সার ও উন্নত জাতের বীজ সরবরাহ করা হয়েছে।
শিক্ষিত যুবকরা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মৌসুমি এই জাতীয় সবজি উৎপাদনে নিয়োজিত হলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি অল্প সময়ের মধ্যে স্বাবলম্বী হতে পারবে। বেকারত্ব গুছিয়ে পরিবার,সমাজ ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে।
T.A.S / T.A.S