চট্টগ্রামের উন্নয়নের কান্ডারী আব্দুল্লাহ আল নোমান'

চট্টগ্রাম, বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী, সমুদ্র বন্দরের শহর। শত বছরের ইতিহাসের মধ্যে চট্টগ্রামের সাফল্য, সংগ্রাম এবং আত্মমর্যাদার চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। এই শহর শুধু অর্থনৈতিক দিক থেকে নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও অতুলনীয়। চট্টগ্রামের এই ঐতিহ্যবাহী অগ্রযাত্রার ইতিহাসে একজন নেতা, যিনি শুধু রাজনীতির আঙিনায়, বরং সমাজের প্রতিটি স্তরে নিজের অবদান রেখে গেছেন, তিনি হলেন আব্দুল আল নোমান। আজ, যখন এই মহান নেতা আমাদের মাঝে নেই, তার রেখে যাওয়া অবদানগুলো চট্টগ্রামের মানুষের হৃদয়ে চিরকাল অমলিন হয়ে থাকবে। তার অবদান যে শুধুমাত্র শহরের উন্নয়নের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তা মানুষের জীবনে আশার আলো হয়ে রইল, তা আজকের এই স্মরণে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আমি একজন সাধারণ কর্মী, একজন রাজনৈতিক সচেতন নাগরিক হিসেবে, চট্টগ্রামের উন্নয়নের ইতিহাসে আব্দুল আল নোমানকে চিরকাল মনে রাখবো। ৮৭/৮৮ সালে ছাত্র আন্দোলনের সময়ে প্রথম তাকে চিনেছিলাম। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে যখন আমরা রাজপথে ছিলাম, তখন নোমান ভাই ছিলেন আমাদের কাছে এক আদর্শ। তার নেতৃত্ব ছিল শক্তিশালী এবং আমাদের সবাইকে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছিলেন। ৮৬ থেকে ৮৮ সাল পর্যন্ত বিএনপির মহাসচিব হিসেবে কে এম ওবায়দুর রহমানের নেতৃত্বে দল পরিচালিত হচ্ছিল, কিন্তু এক পর্যায়ে বেগম খালেদা জিয়ার সাথে বিরোধ হওয়ার পরও তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর হাতে চট্টগ্রামবাসী উপভোগ করেছে সেবা, উন্নয়ন এবং মানুষের কল্যাণে নিরন্তর অবদান।
নোমান ভাইয়ের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। ৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর, তিনি প্রথম মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার সময়ে চট্টগ্রাম, বিশেষ করে বৃহত্তর চট্টগ্রাম, ব্যাপক উন্নতির সাক্ষী হয়। তিনি ছিলেন একজন রাজনৈতিক নেতা, তবে তার অন্তর ছিল মানুষের প্রতি, চট্টগ্রামের প্রতি ভালোবাসায় ভরা। মন্ত্রী হওয়ার পরও তার কাজগুলো শুধু রাজনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, সামাজিক কল্যাণের ভিত্তিতেও বিস্তৃত ছিল। তিনি চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য কখনো বিরতি নেননি।
এটি তার মধ্যে এক অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য ছিল। চট্টগ্রামের উন্নয়ন আন্দোলন, যে আন্দোলন বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন গণ সংগ্রাম কমিটি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিল, তাতে নোমান ভাই একজন নিষ্ঠাবান সৈনিক ছিলেন। তিনি আন্দোলনের মাধ্যমে চট্টগ্রামের জন্য একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প আদায় করতেন। তিনি শুধু আন্দোলনেই সীমাবদ্ধ থাকতেন না, বরং উন্নয়নের মূল লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যেতেন। তার নেতৃত্বে চট্টগ্রামে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটেছিল যা আজও মানুষের কাছে স্মরণীয়। নোমান ভাইয়ের হাতে বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প গড়ে উঠেছে। ৯১ সালে তিনি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর চট্টগ্রামের উন্নয়ন শুরু হয়েছিল। চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামের উন্নয়ন ছিল তার অন্যতম বড় অবদান। তার উদ্যোগেই চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং তার সাথে শিক্ষা বোর্ডের প্রতিষ্ঠা, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা—এসব ছিল তার বড় বড় পদক্ষেপ। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জেনারেল হাসপাতালের উন্নয়নও তার সময়ে হয়েছে।
এছাড়া শাহ আমানত সেতু, বন্দরের আধুনিকীকরণ, বাকলিয়া শহীদ স্মৃতি কলেজ, মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র—এগুলোর সবই তার সময়ে গড়ে উঠেছিল। এসব প্রকল্প কেবল উন্নয়ন নয়, বরং চট্টগ্রামের সমৃদ্ধি এবং আলোকিত ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নোমান ভাইয়ের কর্মজীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় কাজ ছিল ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রামের মাষ্টার প্ল্যান তৈরি করা। এটি ছিল এক দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। চট্টগ্রামের উন্নয়নের এক দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন তিনি, যার মাধ্যমে এই শহর আগামী ৫০ বছরেও আধুনিক নগর হিসেবে পরিচিত হবে। তার সময়ে চট্টগ্রাম উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বেশি বাজেট বরাদ্দ হয়েছিল। চট্টগ্রাম শহরের প্রতিটি সড়ক, প্রতিটি প্রান্তে উন্নয়নের ছোঁয়া ছিল। শুধু শহরের মধ্যেই নয়, শহরের বাইরেও তার অবদান ছিল দৃশ্যমান। বিশেষ করে রাউজানে তার উদ্যোগে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গড়ে উঠেছিল।
নোমান ভাইয়ের পথচলাতে অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল। তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বহুবার তার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থামানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তার দৃঢ় মনোবল এবং জনগণের সমর্থনে তিনি কখনোই থেমে যাননি। চট্টগ্রামের মানুষ তার কাজ এবং নেতৃত্বকে সবসময় সমর্থন করেছে। আজ, তার মৃত্যুতে আমরা লক্ষ করি, তার জানাজার নামাজে হাজার হাজার মানুষের সমাগম—এটাই প্রমাণ করে দেয় যে তিনি ছিলেন এক জনপ্রিয় নেতা। তার প্রতি মানুষের ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা তার বিশাল রাজনৈতিক শক্তির পরিচায়ক। তিনি শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না, বরং চট্টগ্রামের উন্নয়নের একজন আদর্শ কান্ডারী ছিলেন। তার মৃত্যুর পরও চট্টগ্রামের প্রতিটি সড়ক, প্রতিটি প্রকল্প, তার হাতে গড়া প্রতিটি প্রতিষ্ঠান তাকে স্মরণ করবে। চট্টগ্রামের উন্নয়ন ইতিহাসে তার অবদান চিরকাল অমর হয়ে থাকবে।
আজকের এই দিনটি চট্টগ্রামের জন্য এক অত্যন্ত বেদনাদায়ক দিন। আমাদের প্রিয় নেতা আব্দুল আল নোমান আমাদের মাঝে নেই, তবে তার রেখে যাওয়া উন্নয়ন, তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং তার ভালোবাসা আমাদের পথ দেখাবে। তার অগণিত অবদান এবং তার দেওয়া শিক্ষা চিরকাল আমাদের সঙ্গে থাকবে। আমরা, চট্টগ্রামের প্রতিটি নাগরিক, আজ নোমান ভাইকে শ্রদ্ধা জানাই এবং তার অবদান চিরকাল স্মরণে রাখবো।
আজকের জানাজা, লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি, এই শহরের মানুষের গভীর শ্রদ্ধা—এ সবই প্রমাণ করে দেয়, আব্দুল আল নোমান শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন চট্টগ্রামের উন্নয়নের এক অমূল্য রত্ন। তার অভাব কখনো পূর্ণ হবে না, কিন্তু তার কাজ এবং অবদান চিরকাল আমাদের সঙ্গে থাকবে।
লেখকঃ সাংবাদিক গবেষক টেলিভিশন উপস্থাপক ও মহাসচিব, চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম।
এমএসএম / এমএসএম

শান্তিগঞ্জে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়ন শীর্ষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

নাফনদীর মোহনায় ট্রলার ডুবি, ৭জেলে উদ্ধার

বালিয়াকান্দিতে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময়

বাউফলে চেয়ারম্যান পরিবহন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

আদমদীঘিতে সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

জয়পুরহাটে পৌর হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির কার্যক্রম স্থগিতের দাবীতে স্মারকলিপি প্রদান

দৌলতপুরে মুখ বাঁধা অবস্থায় নারীর মরদেহ উদ্ধার

কমিউনিটি পুলিশিং সভা ও উদ্ধারকৃত মোবাইল-অর্থ হস্তান্তর: মেহেরপুর জেলা পুলিশের জনবান্ধব উদ্যোগ

ভূরুঙ্গামারীতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নবজাতক শিশুদের জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত করছে উপজেলা প্রশাসন

পাবনায় ট্রিপল মার্ডারের রায়ে একজনের মৃত্যুদন্ড

গলাচিপা সরকারি কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে জামায়াতের এমপি পদ প্রার্থীর মত বিনিময় সভা

ত্রিশালে মসজিদে চুরি করতে গিয়ে গণপিটুনিতে নিহত

চৌগাছা সরকারী হাসপাতালে ডাক্তার সংকট, চিকিৎসা সেবা ব্যহত
Link Copied