মুকসুদপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের টিন নষ্ট হওয়ায় ৪০টি পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর আশ্রয়ণ প্রকল্পে নির্মিত টিনের ঘরগুলোর অনেকটাই এখন বসবাসের অযোগ্য।রোদ-বৃষ্টি আর সময়ের ক্ষয়ক্ষতির কারণে প্রকল্পের প্রায় ৪০টি পরিবারের প্রায় ২০০/৩০০ মানুষ চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা আসার পর দেশের অসহায় ,দরিদ্র ও ভূমিহীন মানুষের বসাবসের কথা বিবেচনা করে ১৯৯৮ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর নির্মাণ করে ভূমিহীনদের থাকার কার্যত্রুম শুরু করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মুকসুদপুর উপজেলার ১০নং দিগনগর ইউনিয়নের দিগনগর বাজার সংলগ্ন এলাকায় ৪০টি পরিবারকে ৪টি টিন সেডের ঘর নির্মাণ এবং প্রত্যেক পরিবারকে ৩ শতক করে জায়গা বন্দোবস্ত করে দেন। ৪০টি পরিবার ঘরপ্রাপ্তির পর হতে পরিবার পরিজনের নিয়ে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করে আসছে। ঘর নির্মাণের কাজ দীর্ঘদিন হওয়ায় অধিকাংশ ঘরের টিনের চাল ছিদ্র হয়ে গেছে, বেরার টিন নষ্ট এবং অধিকাংশ ঘরের কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে বৃষ্টির পানি চুঁইয়ে পড়ে, ঘরের ভিতরে গরমে টিন গরম হয়ে অসহনীয় অবস্থা সৃষ্টি হয়। ভুক্তভোগী রাবেয়া বেগম বলেন,বৃষ্টি হলে ঘরের ভিতরে পানি পড়ে, শুকনো জায়গায় বসতেও পারি না। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি। একই অভিযোগ করেন গৃহবধূ ইসমত আরা বেগম। তিনি বলেন,বিগত সরকারের সময় দেয়া ঘর পেয়ে ছিলাম ঠিকই, কিন্তু এখন এই ঘরে টিকেই থাকতে পারছি না।ঘর মেরামতের সামর্থ্য আমাদের নেই। ভুক্তভোগী রাবেয়া বেগম বলেন,সরকারিভাবেপ্রত্যেক ভূমিহীন পরিবারকে একটি করে ঘর এবং ৩ শতক জমি বন্দোবস্তের লিখিত দলিল দিলেও ৩ শতক জমি সম্পূর্ণ বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। ঘর বন্দোবস্ত কালীন সময়ে তৎকালীন উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ আমাদের ঘরের সামনে ফাকা জায়গা ভোগদখল করে চাষাবাদের মাধ্যমে  ফসল উৎপাদন করে খেতে বলেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে দিগনগর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তাগণ ফাকা জায়গাগুলো অন্য ব্যক্তিদের বন্দোবস্ত দেয়ার পায়তারা করছেন বলে জানা যায়।

 ভুমিহীন রাবেয়া বেগম আরো বলেন,আমাদের পরিবারগুলোতে আগের চেয়ে জনসংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বল্প জায়গায় বসবাস করতে সমস্যা হচ্ছে। এরপরো যদি ঘরের সামনের ফাকা জায়গা অন্যদের বন্দোবস্ত দেয়া হয় তাহলে ছেলে মেয়েদের নিয়ে বসাবস করা বড়ই কঠিন হবে।এব্যাপারে রাবেয়া বেগম ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বরাদ্দকৃত জায়গা না বুঝিয়ে দিয়ে স্থানীয় তহশিলদার কর্তৃক উক্ত জায়গা অন্য ক্ষমতাশীল লোকদেরকে বন্দোবস্ত দেওয়ার বিরুদ্ধে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর ভুক্তভোগীরা একটি অভিযোগ দায়ের করেন। 
এবিষয়ে দিগনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলীর সাথে আলাপকালে তিনি জানিয়েছেন,দিগনগর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪০টি ভুমিহীন পরিবারকে সরকার ঘরসহ জমি বন্দোবস্ত করে দিয়েছে। ঘরগুলো দীর্ঘদিন নির্মিত হওয়ায় টিনের চাল ছিদ্র এবং বেরাগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে ঘর ভিতরে তাদের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। তিনি আরো জানান,আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভুমিহীন,অসহায় ও দরিদ্র মানুষের সমস্যার কারনে ঘরগুলো নতুন করে মেরামতের জন্য তিনি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর বরাবর কয়েকবার আবেদন করেছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আজ পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলে তিনি জানান। মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসনিম আক্তারের সাথে এবিষয়ে নিয়ে আলাপকালে তিনি জানান,আমরা অভিযোগ পেয়েছি। এই মূহুর্তে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাবদ সরকারী ভাবে কোন বরাদ্দ নাই। আশ্রয়ণ প্রকল্প বাবদ সরকার যদি কোন বরাদ্দ প্রদান করে তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 
সরেজমিনে তদন্ত করে দিগনগর আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরিবারগুলো পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপদে বসবাস করতে পারে তার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাছে  জোরালো দাবি জানিয়েছেন।