ডুয়েটে দুইদিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের শুরু

ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট) শুক্রবার দুইদিন ব্যাপী ‘নেক্সট জেনারেশন কম্পিউটিং, আইওটি অ্যান্ড মেশিন লার্নিং (এনসিআইএম ২০২৫)’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনফারেন্স শুরু হয়েছে। ডুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ-এর (সিএসই) আয়োজনে চতুর্থ  শিল্প বিপ্লবের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিক্ষার্থী, গবেষক এবং শিক্ষাবিদদের মানসম্পন্ন গবেষণা সম্পাদনে সহায়তা ও উৎসাহিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আহ্সান উল্লাহ মাস্টার অডিটোরিয়ামে সকালে এ কনফারেন্সের উদ্বোধন করা হয়।   

এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জয়নাল আবেদীন বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আমাদের সামনে যেমন নতুন সম্ভাবনা এনেছে, তেমনি চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছে। তবে মানবিকতা, নৈতিকতা ও উদ্ভাবনের সঙ্গে গবেষণার সমন্বয় ঘটিয়ে আগামীর পঞ্চম শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করলেই একটি প্রযুক্তিনির্ভর, টেকসই ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব।

চীফ প্যাট্রন হিসেবে উপাচার্য আরও বলেন, কনফারেন্সটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ক্লাউড কম্পিউটিং ও আইওটির মতো চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তি এবং পঞ্চম শিল্পবিপ্লবের মেশিন লার্নিং, বিগ ডেটা ও সাইবার-ফিজিক্যাল সিস্টেমের মাধ্যমে মানবিক ও প্রযুক্তির সংযোগ বিষয়ে বিশ্বজুড়ে গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন নতুন প্রজন্মের গবেষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে এবং একাডেমিক গবেষণাকে বাস্তব সমস্যার সমাধানে রূপান্তর করতে সহায়ক হবে। তিনি সম্মেলন আয়োজনের জন্য সিএসই বিভাগ ও অংশগ্রহণকারী সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

অন্যতম পৃষ্ঠপোষক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আরেফিন কাউসার বলেন- পরবর্তী প্রজন্মের কম্পিউটিং, ইন্টারনেট অব থিংস (IoT) ও মেশিন লার্নিং আজ শুধুমাত্র প্রযুক্তি নয়, বাস্তব সমস্যা সমাধানের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে—বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে। তিনি ডুয়েটের শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী সাফল্য যেমন রোবোটিক্স, অটোমেশন এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে স্বীকৃত গবেষণার কথা তুলে ধরেন এবং নবীন গবেষকদের সাহসী চিন্তা ও দায়িত্বশীল উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, সম্মেলনের জেনারেল চেয়ার অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম এবং সম্মেলন বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 

পরিশেষে, মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জয়নাল আবেদিনের নেতৃত্ব ও উপস্থিতির জন্য বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন এবং সকলকে উদ্ভাবন, সহযোগিতা ও বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে চলার আহ্বান জানান।
এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের জেনারেল চেয়ার অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, এ সম্মেলন কেবল একটি প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং ভবিষ্যৎ গঠনের একটি সম্মিলিত উদ্যোগ। তিনি বলেন, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, আইওটি ও মেশিন লার্নিং-এর যুগে প্রবেশ করে বিশ্ব আজ স্মার্ট ও মানব-কেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিকে এগোচ্ছে এবং বাংলাদেশেও এসব প্রযুক্তির বাস্তব প্রয়োগ ঘটছে কৃষি, স্বাস্থ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়। তিনি অংশগ্রহণকারী তরুণ গবেষক ও শিল্পসংশ্লিষ্টদের জ্ঞানকে উদ্ভাবনে রূপান্তরের আহ্বান জানান। 

সিএসই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও কনফারেন্সটির জেনারেল চেয়ার অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কী-নোট স্পীকার হিসেবে বক্তব্য রাখেন মোহাম্মাদ হিরওয়ান সুলাইমান, সহযোগী অধ্যাপক, বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক্স প্রকৌশল প্রযুক্তি অনুষদ, ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া পাহাং আল-সুলতান আবদুল্লাহ (ইউএমপিএসএ)। 

আরো বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানের সেশন চেয়ার  ড. মোহাম্মদ শহিদ উজ জামান এবং সেশন কো-চেয়ার ও অর্গানাজিং সেক্রেটারি ড. মমতাজ বেগম। মঞ্চে আরো উপস্থিত ছিলেন কনফারেন্সের অরগানাইজিং চেয়ার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল কাশেম, অরগানাইজিং কো-চেয়ার ও সেশন কো-চেয়ার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রউফ । 
এ আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের স্পন্সর হিসেবে রয়েছে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), গাজীপুর। টেকনিক্যাল কো-স্পন্সর হিসেবে রয়েছে ‘আই-ইইই’ ও ‘আই-ইইই কম্পিউটার সোসাইটি’ এবং টেকনিক্যাল সাপোর্ট হিসেবে থাকছে ‘আই-ইইই কম্পিউটার সোসাইটি বাংলাদেশ চ্যাপ্টার’। এছাড়াও ইলেকট্রনিক মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ‘এটিএন বাংলা’ এবং প্রিন্ট মিডিয়া পার্টনার হিসেবে থাকছে ‘দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ও দেশ রুপান্তর’ অনলাইন মিডিয়া পার্টনার হিসেবে থাকছে ‘ দি ডেইলি ক্যাম্পাস’। দুইদিন ব্যাপী এই কনফারেন্সে বাংলাদেশসহ ১৯ টি দেশ থেকে ৩০০ জনের অধিক গবেষক অংশগ্রহণ করবেন এবং ১৭৩ টি গবেষণাপত্র উপস্থাপিত হবে। অংশগ্রহণকারীদের উপস্থাপনা ও কাজের ভিত্তিতে সেরাদেরকে পুরস্কৃত করা হবে। কনফারেন্সে অংশগ্রহণকারী দেশসমূহ হচ্ছে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, মালয়েশিয়া, স্পেন, ইন্ডিয়া, সৌদি আরব এবং দক্ষিণ কোরিয়াসহ আরও অনান্য। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ডীন, বিভাগীয় প্রধান, পরিচালক এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ দেশ-বিদেশের শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী ও গবেষকগণ অংশগ্রহণ করেন।