রংপুরে সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রের ২ সদস্য গ্রেফতার
মধ্যপ্রাচ্যে পাচার হওয়া ভুক্তভোগী তার কাছে থাকা প্রমাণস্বরুপ বিভিন্ন কাগজপত্রাদিসহ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব-১৩, রংপুরে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। উক্ত অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে র্যাবের একটি দল ছায়া তদন্ত শুরু করে। র্যাব-১৩-এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রংপুর জেলার বদরগঞ্জ থানা এবং গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থানা এলাকা হতে মানবপাচারের সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য গাইবান্ধার মো. মুজিবুর রহমান মুছা (৫৫) এবং রংপুরের মো. অহিদুল ইসলামকে (৫০) গ্রেফতার করে।
র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তারা স্বীকার করে যে, দীর্ঘদিন যাবৎ তারা গ্রামের সহজ-সরল লোকদের টার্গেট করে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার ফাঁদ পেতে মানবপাচার করত। নিরীহ লোকজনদের সর্বস্বান্ত করাই তাদের একমাত্র নেশা ও পেশা। তাদের এহেন কর্মকাণ্ডের ফলে আজ বহু মানুষ শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক ক্ষতির শিকার। এমনই একজন ভুক্তভোগী সহজ-সরল গ্রামের বাজারে একটি মোবাইল মেরামত দোকানের মালিক পরিবারবর্গ নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। একদিন ভুক্তভোগীর দোকানে তারা ফ্লেক্সিলোড করার জন্য এলে এক কথায় দুই কথায় আলাপচারিতায় ওই ভুক্তভোগীর সাথে পরিচয় হয়। তারা জানায়, অতি অল্প টাকায় অধিক সুযোগ-সুবিধায় মধ্যপ্রাচ্যে লোক পাঠিয়ে থাকে এবং একপর্যায় ভুক্তভোগীকে মধ্যপ্রাচ্যে নেয়ার প্রস্তাব দেয়। ভুক্তভোগী বিশ্বাস স্থাপন করে তাদের কথায় রাজি হয়।
২০১৭ সালের ২৬ জুন তারা (মানবপাচারকারী) দুজন ভুক্তভোগীর দোকানে এলে ভুক্তভোগী তার পাসপোর্ট প্রদান করেন। তাদের দেয়া ভিসা অনুযায়ী ভুক্তভোগী গত ০৮/১১/২০১৮ তারিখে কাতার হয়ে মধ্যপ্রাচ্যে গমন করেন। সেখানে গমন করার পর সেখান থেকে মো. নাজমুল ইসলাম (৪০)-সহ অজ্ঞাতনামা ২-৩ জন তাদের (মানবপাচারকারী) দলের সদস্য ভুক্তভোগীকে রিসিভ করে ইরাকস্থ একটি ভবনের কক্ষে নিয়ে আটকে রাখে। উক্ত কক্ষে ভুক্তভোগীর মতো আরো ২১ জন ছিলেন। উক্ত কক্ষে আটকে রেখে ভুক্তভোগীদের শারীরিক নির্যাতনসহ ২-৩ দিন কিছু না খেতে দিয়ে বিভিন্ন রকমের কষ্ট দিতে থাকে এবং বাড়িতে ফোন করে আরো অর্থের দাবি করে। তাদের (মানবপাচারকারী) নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ভুক্তভোগী আনুমানিক এক মাস পর গোপনে আটকে রাখা কক্ষ থেকে পালিয়ে যান এবং বিভিন্ন লোকজনের সহায়তা নিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের সাহায্যে বাংলাদেশে চলে আসেন। তারা সম্প্রতি গ্রেফতারকৃত পাচার চক্রের মূল হোতা লিটন @ ডাক্তার লিটনের (৪৫) সহযোগী বলে তারা স্বীকার করেছে। তাদের সাথে জড়িত অন্য মানবপাচারকারীদের আইনের আওতায় আনার জন্য আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
এমএসএম / জামান