কাউন্সিল করার জন্য জি এম কাদেরকে চ্যালেঞ্জ দিলেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের "অনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ" জানিয়ে দলটির চলমান বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছেন সাবেক এমপি ও প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা এবং কুমিল্লার সাবেক এমপি অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলনের নেতৃত্বে প্রায় তিন শতাধিক নেতাকর্মী।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে আয়োজিত একাত্মতা প্রকাশ অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মুজিবুল হক চুন্নুর হাতে ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে এই নেতাকর্মীরা জাতীয় পার্টির বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত হন।
জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, এ টি ইউ এম তাজ রহমান, নাজমা আক্তার, মোস্তফা আল মাহমুদ, জহিরুল ইসলাম জহির, আরিফুর রহমান খান, মাসরুর মওলা, এবং জসীম উদ্দীন ভূঁইয়া।
সভাপতির বক্তব্যে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, "বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাতীয় পার্টির বিরাট সম্ভাবনা আছে। এই সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে আমরা দলকে ঐক্যবদ্ধ করছি। কোনোভাবেই জাতীয় পার্টিতে ভাঙতে দেওয়া হবে না।" তিনি আরও বলেন, "অনেক কষ্ট করে এই পার্টিটি আমরা করেছি, এই পার্টি যেন মুসলিম লীগ, জাসদের মতো হয়ে না যায়। সেজন্য জাতীয় পার্টিকে বড় করার চেষ্টা করছি। আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি, জাতীয় পার্টি ভাঙবে না, আরও বৃহৎ হবে।"
তিনি অভিযোগ করেন, "এরশাদ সাহেব আমাকে বলে গেছেন, এ পার্টি যেন সাধারণ মানুষের মাঝে থাকে। সেজন্য আমরা কাজ করছি। আমরা যখন দেখলাম পদ নিয়ে পার্টিতে বাণিজ্য হয়, তখন আমি বাণিজ্য বন্ধ করার জন্য চেয়ারম্যানকে বলেছি। কিন্তু চেয়ারম্যান তা বন্ধ করেননি। গণতান্ত্রিক উপায়ে পার্টি পরিচালনার জন্য ২০-১ ক ধারা বাতিল করার জন্য বলেছি, তিনি তাও শোনেননি।"
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জি এম কাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, "জি এম কাদের কথায় কথায় গণতন্ত্রের কথা বলেন, কিন্তু তিনি দলে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরশাদ সাহেবও কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের সাথে আলোচনা ছাড়া নিতেন না। কিন্তু জি এম কাদের নিজেকে খোদার চেয়ে বেশি শক্তিশালী মনে করেন।" তিনি আরও যোগ করেন, "তুমি বারবার বলো, আমি চেয়ারম্যান আমার কথায় সব। আমি যদি বলি রাত তাহলে রাত। এভাবে কোনো রাজনৈতিক দল চলতে পারে না। সকলের সাথে আলোচনা ছাড়া কোনো সরকারও চলে না। অথচ জি এম কাদের নিজের কর্তৃত্ব বজায় রেখে দলের চালাতে চান।"
তিনি জি এম কাদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, "সাহস থাকলে কাউন্সিল করুন। আমি নিজে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। আমার প্যানেলে মহাসচিব থাকবে রুহুল আমিন হাওলাদার। আমি দেখতে চাই আপনি কত ভোট পান।"
এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, "বাংলাদেশে একটি জাতীয় পার্টি থাকবে, দুইটি জাতীয় পার্টি থাকবে না। কোনো সিন্ডিকেটের মধ্যে জাতীয় পার্টি বন্দী থাকবে না। জাতীয় পার্টি হবে সকল তৃণমূলের নেতাকর্মীদের।" তিনি আরও বলেন, "দেশ আজ অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে, ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে দেশে একটা পরিবর্তন হয়েছে। পৃথিবীর দেশে দেশে এ ধরনের পরিবর্তন হয়। পরিবর্তন সময়ের দাবি। আমাদের দলেও পরিবর্তনের সময় এসেছে, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় পার্টিকে গড়ে তুলতে চাই। সময়ের দাবিতে, গণতান্ত্রিক উপায়ে পরিচালিত হবে।" তিনি উল্লেখ করেন, "আমরা রাজনীতি করি মানুষের জন্য, রাজনৈতিক সহাবস্থানের জন্য, কারো বিরুদ্ধোচরণের জন্য জাতীয় পার্টির রাজনীতি করি না। আগামী দিনে সকলকে নিয়ে একটি শক্তিশালী জাতীয় পার্টি করা হবে। যারা জাতীয় পার্টি ছেড়ে চলে গেছে, তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে। সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে পল্লীবন্ধু এরশাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা কাজ করব।" রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, "জি এম কাদের একজন ব্যারিস্টারকে মহাসচিব করেছেন। সে আমাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে। সে বলে আমরা সিনিয়ররা বেইমানি করেছি। তার কথায় আমরা আঘাত পেয়েছি। তার উচিত, শালীন ভাবে কথা বলা। সে যে এমপি হয়েছে, তার পিছনে আমার কী অবদান তা যেন স্মরণ রাখে।"
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, "জি এম কাদের অসাংগঠনিক, অগণতান্ত্রিক ও বেআইনিভাবে আমাদের ১১ জনকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এই অব্যাহতি আমরা মানি না। আমরা আগামীকাল কাউন্সিল পর্যন্ত নিজ নিজ পদে বহাল আছি।" তিনি আরও বলেন, "জি এম কাদের এককভাবে তার স্ত্রীকে নিয়ে সিন্ডিকেট করে দল চালাতে চান, কিন্তু আমরা যারা এ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা, তারা কোনোভাবে জাতীয় পার্টিকে ভাঙতে দেব না, ছোট হতে দেব না, কোনো সিন্ডিকেটের হাতে জাতীয় পার্টিকে তুলে দিতে পারি না।" মুজিবুল হক চুন্নু আরও যোগ করেন, "কাউন্সিল আহ্বান করার পর, কাউকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ নেই। শুধুমাত্র কাউন্সিলে যাতে করে জি এম কাদেরকে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে না পারে, সেজন্য তিনি ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে তড়িঘড়ি করে আমাদের অব্যাহতি দেওয়ার নাটক করেছেন। তবে যে উদ্দেশ্যে তিনি এই নাটক করছেন, তা তিনি সফল হতে পারবেন না। সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাখ লাখ এরশাদ প্রেমিক জাতীয় পার্টির কর্মী তার সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ করে দেবে।"
লিয়াকত হোসেন খোকা তার বক্তব্যে বলেন, "আমি জি এম কাদেরকে অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ করবার জন্য। কিন্তু আমি ব্যর্থ হয়েছি। জি এম কাদেরের আশেপাশে থাকা কিছু তথাকথিত নেতা একটি সিন্ডিকেট করে নিজের ব্যক্তি স্বার্থে দলকে ছোট করছে। তারা চায়না দল বড় হোক, ঐক্যবদ্ধ হোক।" তিনি আরও বলেন, "কিন্তু জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতাকর্মীরা চায়, জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ হোক বড় হোক। জাতীয় পার্টি এক আছে এবং ভবিষ্যতে আরও বৃহৎ হবে। কোনো গোষ্ঠী ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। জাতীয় পার্টির মালিক কোনো একক ব্যক্তি নয়, এরশাদ প্রেমিক তৃণমূলের সকল নেতাকর্মী হচ্ছে জাতীয় পার্টির মালিক।"
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির উপদেষ্টা সরদার শাহজাহান, হারুন আর রশীদ, ভাইস-চেয়ারম্যান শেখ আলমগীর হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, আমানত হোসেন আমানত, শফিকুল ইসলাম শফিক, যুগ্ম মহাসচিব মোঃ বেলাল হোসেন, ফখরুল আহসান শাহজাদা, দফতর সম্পাদক এম এ রাজ্জাক খান, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, যুগ্ম সম্পাদক সেকান্দার আলী সেরনিয়াবাত, শারমিন পারভীন লিজা, মাশুক আহমেদ, ডাঃ সেলিমা খান, শাহনাজ পারভীন, শরফুদ্দিন আহমেদ শিপু, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সাত্তার, মিজানুর রহমান দুলাল, জিয়া উর রহমান বিপুল, জাকির মাহমুদ সেলিম, তাসলিমা আকবর রুনা, ফজলে এলাহী সোহাগ, মোঃ মিজানুর রহমান, আলমগীর হোসেন, কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হাফেজ মাহমুদুল আনোয়ার, কেন্দ্রীয় সদস্য আমিনুল হক সাইদুল, মাহবুবুর রহমান কামাল, নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সানাউল্লাহ সানু, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবু রিপন বাওয়াল, আনিসুর রহমান বাবু, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা জাতীয় পার্টির সভাপতি কাজী মোঃ মহসিন, সোনারগাঁও উপজেলা জাতীয় যুব সংহতির সভাপতি কাজী নাজমুল ইসলাম লিটু, সোনারগাঁও উপজেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, জাকির সরকার, সহিদ বাদশা মেম্বর, দেলোয়ার খান, আরিফুর রহমান, সদস্য সচিব সেকান্দার আলী, ইয়ামিন সুজন, এবং জহির হোসেন প্রমুখ।
এমএসএম / এমএসএম

জিএম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে দ্বিধা কাটিয়ে এক জায়গায় পৌঁছা যাবে

ফখরুলের বক্তব্য সত্য নয়, জাতীয় সরকারের প্রস্তাবে রাজি হননি তারেক

সাদিক কায়েম সমন্বয়ক ছিল না, ৫ আগস্ট থেকে এই পরিচয় ব্যবহার করেছে : নাহিদ

ফখরুলের বক্তব্য সত্য নয়, জাতীয় সরকারের প্রস্তাবে রাজি হননি তারেক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ

জুলাই সনদের খসড়ায় আপত্তি এনসিপি ও জামায়াতের

পদ্মা ব্যারেজ-দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রয়োজন

এক বছরে বিএনপির আয় সাড়ে ১৫ কোটি টাকা : রিজভী

উপদেষ্টার অপসারণ ছাড়া স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার সম্ভব নয়: ইরান

আগে ঘুষ দিতে হতো ১ লাখ, এখন দিতে হয় ৫ লাখ: মির্জা ফখরুল

কোথাও নিয়ন্ত্রণ নেই, আগে ১ লাখ টাকা ঘুস নিলে এখন নিচ্ছে ৫ লাখ
