সাতকানিয়ায় চেয়ারম্যানের যোগসাজশে শতকোটি টাকার মালিক ইউপি সচিব!
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর আহমদের মনগড়া ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা ও ইউনিয়ন পরিষদ সচিব আবুল কালামের মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে কোনো প্রকার রসিদ ছাড়াই অবৈধভাবে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও চেয়ারম্যান এবং সচিব কর্তৃক স্বাক্ষর জালিয়াতি করে তিন রোহিঙ্গা সহোদরকে টাকার বিনিময়ে জন্ম নিবন্ধন দেয়ার সুস্পষ্ট অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। এ ব্যাপারে গত ৯ সেপ্টেম্বর সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা।
অভিযোগ সূত্র ও সরেজমিন জানা যায়, সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব দীর্ঘ ৩০ বছর ধরেই একটি পরিষদের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সেই সুবাদে পরিষদে আসা সব চেয়ারম্যানকে দাপটের সহিত কাবুও করেছেন। সর্বশেষ বর্তমান চেয়ারম্যান নুর আহমদের আমলে অন্তত ২০০ জন রোহিঙ্গাকে নাগরিকত্ব দিয়ে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। শুধু তাই নই, নুর আহমদ চেয়ারম্যানের আশীর্বাদে সোনাকানিয়া পরিষদের সচিব আবুল কালাম স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্ম সনদের ওপর চড়া ফিস বসিয়ে দিয়ে কামিয়েছেন প্রায় ৫ কোটি টাকা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে সচিব আবুল কালামোর দীর্ঘ ৩০বছরে চাকরির জীবনে ক্যাডারের ভূমিকায় মারামারির অভিযোগও রয়েছে অন্তত শতাধিক। এত কোটি কোটি টাকা ইনকাম এবং বেপরোয়া মনোভাবের ফলেও ৩০ বছর ধরে একটি অফিসে চাকরিতে বহাল, যা বাংলাদেশে সরকারি চাকরি নীতিমালার একটি কালো অধ্যায় বলেও উল্লেখ করেন সোনাকানিয়ার সন্তান এপিপি অ্যাডভোকেট শাহরিয়ার ও অতিরিক্ত পিপি মো. কামাল উদদীন।
সরেজমিন আরো তথ্য পাওয়া গেছে, যা অবিশাস্য হলেও সত্য। অনলাইনে ফরম পূরণ করে স্থানীয় ইউপি সদস্যের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে স্বয়ং ইউপি সদস্যের সন্তান সাজিয়ে অন্তত ৫০ জন রোহিঙ্গাকে দিয়েছে নাগরিকত্ব। তবে শুধু এখানেই শেষ নয়, তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এই সচিব আবুল কালাম এতটা বেপরোয়া এবং ৩০ বছর ধরে কিভাবে একই জায়গায় চাকরি এবং এত কোটি কোটি টাকা অবৈধ পন্থায় ইনকাম করেও কেন এতটা দাপুটে সচিব আবুল কালাম!
দেখা যায়, স্থানীয় একটি আওয়ামী লীগের বলয় এই আবুল কালামের পৃষ্ঠাপোষক। শুধু তাই নয়, বহু ইউপি সদস্যদের প্রতিনিধিত্ব খেয়ে ফেলারও হুমকি দেন এই সচিব আবুল কালাম। সর্বশেষ গত ১০ সেপ্টেম্বর ইউপি সদস্য আব্দুল কাদেরের মেম্বারিত্ব খেয়ে ফেলার হুমকি প্রদর্শন করেন সচিব আবুল কালাম।
এদিকে সচিব আবুল কালামের কক্ষ কয়েক দিন ধরেই বন্ধ। পরে তার ফোনে কল করা হলে তিনি মেম্বার আব্দুল কাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে ইউএনওর নির্দেশে অফিস অফ রাখেন বলে ফোন কেটে দেন।
এদিকে উদ্যোক্তাকে বাদ দিয়ে সচিব নিজের ছেলেকে কেন নিয়মবহির্ভূতভাবে কাজ চালাচ্ছেন, তার হদিসের জন্য পরবর্তীতে একাধিক কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
ইউপি সদস্য আব্দুল কাদের বলেন, আমার স্বাষর নকল করে উল্টো আমার সন্তানের নামে মিল রেখে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিল এই সচিব!
এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাতকানিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ জোহরা জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চেয়ারম্যান নুর আহমদ আর সচিব আবুল কালামের যোগসাজশে দেয়া জন্ম সনদ আর এনআইডি দিয়ে বহু রোহিঙ্গা বিদেশ পার হয়েছেন বলে চট্টগ্রাম পাসপোর্ট অফিসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান।
শুধু এখানে শেষ নই, কতিপয় ট্রাভেল এজেন্সির সাথেও রয়েছে এই সচিব আবুল কালামের সখ্যতা।
চেয়ারম্যন নুর আহমদ বলেন, আমি আমার ক্ষমতায় তার অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছি না। সবাই তার বিরুদ্ধে বলে বাট কেউ তার ঘাড় ধাক্কা দিয়ে এখান থেকে ছাঁটাই করে না। আমি তার অপকর্ম শুনতে শুনতে ক্লান্ত।
প্রসঙ্গত, নুর আহমদ চৌধুরী জামায়াতের পদবিধারী নেতা হলেও ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের প্যাডের সুপারিশে নৌকার মনোনয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
এমএসএম / এমএসএম