কানাডায় ফেডারেল নির্বাচনে প্রার্থী মোহসিন ভূঁইয়া

২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে কানাডার মধ্যবর্তী ফেডারেল নির্বাচন। এ নির্বাচনে কানাডিয়ানরা তাঁদের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করবেন। সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশটিতে মোট ৩৩৮টি আসন রয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবারও প্রতিদ্বন্দিতা হবে মূলত তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে। দলগুলো হচ্ছে বর্তমান ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি, কনজারভেটিভ পার্টি ও নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি। কানাডার রাজনীতির দিকে দৃষ্টি রেখেছেন দৈনিক সকালের সময়ের কূটনৈতিক প্রতিনিধি মশিউর আনন্দ কথা বলেছেন বর্তমান প্রধান বিরোধীদল কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী মোহসিন ভূঁইয়ার সাথে উঠে এসেছে কানাডার বিভিন্ন সামাজিক - সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রসঙ্গ।
সকালের সময়: একজন বাংলাদেশী হিসেবে দীর্ঘদিন কানাডাতে বসবাস করছেন কানাডাতে আসার পিছনের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?
উত্তর:জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে বাংলাদেশ থেকে মূলত আমার কানাডাতে আসা।নবাবপুরে ছিল আমাদের পারিবারিক ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান কিন্তু ওই সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই প্রেক্ষাপটে কানাডাতে আশার জন্য আমি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। তাছাড়া কানাডা অনেক শান্তিপ্রিয় দেশ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুন্দর একটা পরিবেশে প্রতিষ্ঠা করাও আমার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল।
সকালের সময়: কানাডায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন। কানাডার রাজনীতির সাথে কিভাবে সম্পৃক্ত হলেন?
উত্তর: আমি প্রায় ত্রিশ বছর আগে কানাডাতে এসেছি। একটা সময় প্রায়ই মনে হতো আবার আমি দেশে ফিরে যাব কিন্তু দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক সংকট বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে কানাডাতে আমাদের প্রজন্ম বড় হচ্ছে আমি নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি ফলে মনের ভেতর কানাডা আমার নিজের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। যদিও দেশের প্রতি যথেষ্ট মমতা রয়েছে । মহামূল্যবান আমার দেশটা। কানাডার কনজারভেটিভ পার্টি ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা চমৎকার ভাবে গ্রহণ করেছে ফলে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের কানাডাতে এসে বসবাস করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। পৃথিবীর আয়তনে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ কানাডা বিদেশি নাগরিকদের ইমিগ্রান্ট মর্যাদা দেওয়ার উপর নির্ভরশীল। নিজের জন্য, দেশের জন্য ও কানাডাতে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের জন্য কিছু করতে হলে রাজনীতির মূল ধারায় আমার আসার প্রয়োজন রয়েছে। এই চিন্তা ও পরিকল্পনা থেকেই আমি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হই।
আমার ভিতরে একটা বন্ধুত্বসুলভ ভাব রয়েছে আমি খুব সহজেই মানুষের সাথে মিশে যেতে পারি। কানাডাতে আমার প্রতিবেশীরা মনে করেন সমাজকে নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলী আমার রয়েছে। সেই দিক থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি ২০১৮ সালে সিটি কাউন্সিল নির্বাচন করি সেখানে দশজনের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে আমি তৃতীয় স্থান অর্জন করি যা আমার জন্য প্রেরণা ছিল। এটা আমাকে মূল ধারার রাজনীতির সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সকালের সময়:জন্মসূত্রে আপনি কানাডিয়ান না অথচ একজন বাঙালি হিসেবে আপনি কানাডাতে রাজনীতি করছেন। ঠিক চ্যালেঞ্জ কতটা অনুভব করলেন?
উত্তর:কানাডাতে পার্টির ব্যানারে যে সমস্ত ইলেকশনগুলো হয় তাদের নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে এটা প্রার্থির জন্য একটা সুযোগ। দ্বিতীয়ত:আমি এবং আমার মতো ইমিগ্রান্টধারী যারা আছেন তারা সবাই এবং কানাডাতে জন্মগ্রহণ করা নাগরিকেরা কখনোই বলবে না আপনি আমাদের জন্য সংসদে কি করতে পারলেন?আমরা কানাডার নিয়ম মেনে সমস্ত কাজগুলো করে থাকি। এখানে নাগরিকদের জন্য আইনের শাসন সরকার বাস্তবায়ন করার আপ্রাণ চেষ্টা করে। অবশ্য আমাদের একটা দুর্বলতা আছে আমরা কানাডিয়ানদের মতো ইংরেজি বলতে পারি না কিন্তু আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে আমি আশাবাদী এই প্রজন্ম একদিন কানাডার মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী হবে। এরকম একটা স্বপ্ন থেকেই মূলত আমার রাজনীতিতে আসা।
সকালের সময়: কানাডায় কনজারভেটিভ পার্টির পাশাপাশি আরও দুটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল রয়েছে, কনজারভেটিভ পার্টি ঠিক কেন বেছে নিলেন?
উত্তর: কনজারভেটিভ শব্দটির বাংলা অর্থ রক্ষণশীল কানাডাতে আমরা কিন্তু সবাই রক্ষনশীল পরিবার থেকে এসেছি। হিন্দু- মুসলিম-খৃষ্টান বিশেষ করে আমরা এশিয়ান যারা কানাডাতে এসেছি তারা প্রায় রক্ষণশীল। তবে কনজারভেটিভ দল পুঁজিবাদ দর্শনে বিশ্বাসী। অন্যদিকে আমি একজন ব্যবসায়ী অর্থাৎ পুঁজিবাদী সুতরাং কনজারভেটিভ আমার জন্য শ্রেষ্ঠ প্ল্যাটফর্ম। কনজারভেটিভ পার্টি যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই দেশের উন্নয়নে অর্থনীতিকে গুরুত্ব দিয়েছে অন্যদিকে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাকে সুন্দর করে সাজিয়েছে। কনজারভেটিভ পার্টি ইমিগ্রান্টদের জন্য সহায়ক অনেক অবৈধ বিদেশিদের সাধারণ ক্ষমা করে নাগরিকত্ব দিয়েছেন। তবে কিছু কট্টর মত রয়েছে এটা সব দলেরই থাকে।
সকালের সময়:আপনি কানাডার অন্টারিও
প্রভিন্সের স্কারবোরো সাউথওয়েস্ট নির্বাচনী আসন থেকে নির্বাচন করছেন।এবারের নির্বাচনে কানাডাতে বিশেষ করে আপনার আসনে আপনার দল কতটা জনপ্রিয় ও শক্তিশালী?
উত্তর:কানাডার এই আসনটি বাঙালির অধ্যুষিত এলাকা অবশ্যই এটা লেবারেল পার্টির আসন। অনেকে মনে করেন লেবারেল এবারও অনেক এগিয়ে আছে। আমি অনেক লেবারেল সমর্থকদের কনজারভেটিভ পার্টি তে কনভার্ট করার চেষ্টা করেছি। আমার এখানে শক্তিশালী একটা টিম রয়েছে তাঁরা নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা তিনি দুই মেয়াদে পার্টি থেকে নির্বাচিত হয়ে বর্তমান মন্ত্রী। নির্বাচনের চূড়ান্ত মুহূর্তে আমি যদি ভোটারদের আরো আশ্বস্ত করতে পারি তাহলে আমি আশাকরি জয়লাভ করবো
সকালের সময়:নির্বাচনে জয়লাভের জন্য কোন ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর:এখানে অধিকাংশ লেবারেল পার্টির সমর্থক তাদেরকে কনজারভেটিভ পার্টিতে কনভার্ট করতে হচ্ছে। কতজন লোককে আমরা আমাদের দলে ভেড়াতে পারছি এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।এই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে আমরা জয় ছিনিয়ে আনতে চাই।
সকালের সময়: কানাডার ফেডারেল নির্বাচনে বাঙ্গালীদের মধ্যে কতটা উৎসাহ দেখছেন? আপনার জয় নিশ্চিতে কতটা আশাবাদী?
উত্তর:এই আসনে বাংলাদেশীরা আমার শক্তি তাদের মধ্যে যথেষ্ট উৎসাহ দেখছি। আমিও উৎসাহিত হচ্ছি। যারা প্রকৃত কনজারভেটিভ তাঁরা নির্বাচনে ডোনেট করছে সবাই লং সাইন দিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে এগুলো খুবই উৎসাহ ব্যঞ্জক এতে আমি অনুপ্রাণিত।
সকালের সময়:কানাডাতে বাংলা সংস্কৃতির উন্নয়নে কোনো সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে কিনা? কানাডাতে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির উন্নয়ন কতটা হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর:বাংলাদেশ কমিউনিটি সব সময় সচেতন। বাংলা সংস্কৃতির বিকাশে আমরা সবসময় কাজ করে যাচ্ছি। বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব, বাংলাদেশের জাতীয় উৎসব ও বাঙালির সাংস্কৃতিক উৎসব আমরা গুরুত্বের সঙ্গে মর্যাদা দিয়ে পালন করে থাকি। এ বছরই টরোন্টোতে শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ করে গত এক দশকে বাংলা সংস্কৃতির উন্নতি হয়েছে । বাংলা সংস্কৃতি উন্নয়নকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
সকালের সময়:নির্বাচনে জয়ী হলে বিশেষ করে বাংলা সংস্কৃতি, বাঙালি ও বাংলাদেশী কমিউনিটির উন্নয়নে কি ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে চান?
উত্তর: আমি মনে-প্রাণে একজন বাঙালি। বাঙালি কমিউনিটিতে যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলোর সমাধান করে বাংলা সংস্কৃতিকে আরো সমৃদ্ধ করা। বাংলাদেশ থেকে যারা কানাডাতে আসতে চায় তাঁদের সহযোগিতা করা। ছাত্ররা যাতে খুব সহজে কানাডাতে আসতে পারে সে জন্য সরকারি পর্যায়ে পরিকল্পনা তৈরি করা। এখানে যে সমস্ত মসজিদ-মন্দির রয়েছে সেগুলোর পরিচর্যা করা এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও উন্নত করা।
সকালের সময়:কানাডার রাজনীতির সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থার কি কি পরিবর্তন লক্ষ্য করেন?
উত্তর: বাংলাদেশের রাজনীতির সাথে আমি কানাডা রাজনীতির তুলনা করতে চাই না। এখানকার রাজনীতি অনেক স্বচ্ছ, দুর্নীতি মুক্ত, ধনী হওয়ার জন্য কেউ রাজনীতি করেনা। সেবা করা হচ্ছে এদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য। এরা দেশের সেবা করতে চাই।
সকালের সময় :উত্তর আমেরিকাতে বিশেষ করে কানাডাতে বিভিন্নভাবে বাংলাদেশকে আপনারা তুলে ধরছেন। আগামীর বাংলাদেশ কোন দিকে যাচ্ছে? বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আপনি কতটা আশাবাদী?
উত্তর: কানাডাতে থাকার কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে অতপ্রোতভাবে জড়িত থাকার সুযোগ হয় না। তবে বাংলাদেশ নিয়ে আমি আশাবাদী।দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি অনেক খারাপ সংবাদ শুনে আমাদের খারাপ হয়ে যায়। দেশে যারা সচেতন শিক্ষিত তাঁদেরকে বলব দেশকে ভালোবাসুন, দেশের জন্য কাজ করুন। এতে আমার আপনার পরবর্তী প্রজন্ম নিরাপদে থাকবে। যারা এই সমাজের অগ্রদূত তাঁদের বলব ব্যক্তিকেন্দ্রিক না হয়ে সমষ্টিগত চিন্তা করতে।
সকালের সময় : বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।
উত্তর:আপনাকেও ধন্যবাদ আমাকে সময় দেওয়ার জন্য।
এমএসএম / এমএসএম

আমিরাতে লটারিতে ৬৬ কোটি জিতলেন এক বাংলাদেশি, আরেকজন পেলেন রেঞ্জ রোভার

কাতারে লক্ষীপুর জেলা ঐক্য পরিষদ গঠনকল্পে এক সভা অনুষ্ঠিত

কাতারে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সাংবাদিক সাদ্দামকে বিশেষ সম্মাননা স্মারক প্রদান

কাতারে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান আল রুয়াইস ট্রাভেলস এর দ্বিতীয় শাখা

কাতারে বিএনপির ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত

পর্তুগালে সন্ত্রাসীদের গুলিতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী নিহত

আরাফাতের ময়দান মুখর হয়ে উঠেছে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে

ঈদুল আজহায় কাতার মাতাবেন নগর বাউল জেমস সহ বাংলাদেশী শিল্পীরা

গ্লোবাল জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের পর্তুগাল শাখার কমিটি গঠন

কাতারে বাংলাদেশ দূতাবাসের আয়োজনে ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে

কাতারে যাত্রা শুরু করলো, বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান এ আর ট্রাস্ট ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজম

বাংলাদেশিদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা

কাতারে কাশেম আলী'র মৃত্যুতে দোয়া মাহফিল করেছে প্রবাসী চট্রগ্রামবাসী
Link Copied