শিক্ষার্থী কল্যাণ থেকে আন্তর্জাতিক চুক্তি- এক বছরে বহুমুখী সাফল্য
পরিবর্তনের পথে এক বছর
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সপ্তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মো. আহাঙ্গীর আলম। ২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর, এক অস্থির সময়ে যখন তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন বিশ্ববিদ্যালয় নানা সংকট ও অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে এক নতুন গতি ও শৃঙ্খলার পথে নিয়ে এসেছেন। একাডেমিক, প্রশাসনিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারী—সবাইকে তিনি ঐক্যবদ্ধ করেছেন একটি সুন্দর শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য।
অবকাঠামোগত উন্নয়ন
দায়িত্ব নেওয়ার অল্প সময় পরেই উপাচার্যের হাত ধরে উদ্বোধন হয় দ্বিতীয় প্রশাসনিক ভবন ও কর্মচারী কোয়ার্টার ‘বন্ধন’। নতুন কলা ভবন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের হালনাগাদ ওয়েবসাইটও উদ্বোধন করা হয়। নজরুল ভাস্কর্যের সংস্কার, কেন্দ্রীয় মসজিদের উন্নয়ন ও এয়ারকন্ডিশন স্থাপনসহ বহু উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের চেহারায় আসে দৃশ্যমান পরিবর্তন। বর্তমানে ক্যাম্পাসের রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, মেডিকেল সেন্টার, টিএসসি ভবন, দশতলা ছাত্র ও ছাত্রী হল, দশতলা ইন্সটিটিউট ভবন এবং কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজের নতুন ভবন নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।
পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে সৌন্দর্যবর্ধনে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে পিডিবির সঙ্গে সমন্বয় করে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। পাশাপাশি আন্ডারগ্রাউন্ড বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপনের কাজও শেষ পর্যায়ে।
আন্তর্জাতিক সংযোগ
বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক পরিসরে যুক্ত করতে উপাচার্যের উদ্যোগে সম্পন্ন হয়েছে একাধিক সমঝোতা চুক্তি। আকিজ রিসোর্সের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি এবং মালয়েশিয়ার লিংকন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক এরই ফল। এর মাধ্যমে গবেষণা, শিক্ষার্থী বিনিময় এবং বিভিন্ন একাডেমিক কার্যক্রমে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।
একাডেমিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম
উপাচার্যের নেতৃত্বে গত এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয় সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছে জিএসটি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের হাতে ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে তুলে দেওয়া হয়েছে একাডেমিক ক্যালেন্ডার। আয়োজন করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় গবেষণা মেলা, যেখানে বিভিন্ন বিভাগ ও ইন্সটিটিউট নিজেদের গবেষণা কার্যক্রম তুলে ধরে।
বাংলা নববর্ষ, নজরুল জয়ন্তী, রবীন্দ্র জয়ন্তী, প্রয়াণ দিবস, জাতীয় দিবসগুলো পালন করা হয়েছে যথাযোগ্য মর্যাদায়। জুলাই-আগস্ট ২০২৪ অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে নানা আয়োজনের পাশাপাশি শহিদ ইনতিশারুল হকের কবর জিয়ারত করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
শিক্ষার্থীদের পাশে উপাচার্য
শিক্ষার্থীদের যে কোনো সংকটে তিনি পাশে দাঁড়িয়েছেন। আহত বা অসুস্থ শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান থেকে শুরু করে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য হুইলচেয়ার হস্তান্তর—সব ক্ষেত্রেই তার সরাসরি সম্পৃক্ততা লক্ষ্য করা গেছে। এমনকি জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ স্থানীয় যুবকের চিকিৎসায়ও তিনি আর্থিক সহায়তা দেন। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণও তার সময়ে গৃহীত একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
খেলাধুলা ও প্রতিযোগিতা
একাডেমিকের পাশাপাশি খেলাধুলাকেও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন উপাচার্য আহাঙ্গীর আলম। আন্তঃবিভাগ ফুটবল, আন্তঃঅনুষদ ক্রিকেট, ভলিবল প্রতিযোগিতা—সবখানেই শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল প্রাণবন্ত। এসব আয়োজনে প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহায়তা শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত করেছে।
বৃত্তি ও গবেষণার প্রসার
ইন্সটিটিউট অব নজরুল স্টাডিজ থেকে বৃত্তি প্রদান এবং শিক্ষার্থী গবেষকদের হাতে গবেষণা প্রকল্পের চেক হস্তান্তর করা হয়েছে। কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলেও যথাসময়ে বই বিতরণ, বার্ষিক প্রতিযোগিতা ও বৃত্তি প্রদান সম্পন্ন হয়েছে।
প্রশাসনিক অগ্রগতি
শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নিয়োগ ও পর্যায়োন্নয়ন প্রক্রিয়ায় গতিশীলতা এসেছে। প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
উপাচার্যের প্রত্যাশা
দায়িত্ব পালনের এক বছর পূর্তিতে প্রফেসর ড. মো. আহাঙ্গীর আলম বলেন—
“শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের ঐকান্তিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা। বাজেট ঘাটতি থাকলেও সরকারের সীমিত বরাদ্দ সর্বোচ্চ কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি।”
সমাপনী কথা
মাত্র এক বছরের মধ্যে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো, একাডেমিক কার্যক্রম, আন্তর্জাতিক সংযোগ এবং শিক্ষার্থী কল্যাণে দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে। এই অর্জন কেবল একজন উপাচার্যের নয়, বরং পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। তবে এই অগ্রযাত্রাকে স্থায়ী ও টেকসই করতে সামনে আরও চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।
এমএসএম / এমএসএম
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কার্যালয় অভিমুখে ডাকসুর মার্চ শুরু
ইবিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবস পালন উপলক্ষে কর্মসূচী ঘোষণা
মাধ্যমিকের বই বছরের শুরুতে পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছেই না
৬ দিনের অচলাবস্থার পর আজ শুরু সরকারি প্রাথমিকের বার্ষিক পরীক্ষা
জাবিতে চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির নতুন নেতৃত্বে রিয়াদ-তানভীর
ইবিতে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উদযাপন
নকল সাইটেশনে দেশসেরা গবেষকের তালিকায় শেকৃবি প্রোভিসি অধ্যাপক বেলাল
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির নাম ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার: চাকরিচ্যুত মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
জাবিতে অর্থনীতি বিভাগকে মাত্র ১ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন দর্শন বিভাগ
সায়েন্সল্যাব অবরোধ করেছেন ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা
জবিস্থ চুয়াডাঙ্গা ছাত্রকল্যাণের নেতৃত্বে সজিব ও তরিকুল
অপ্রচলিত ফসল খাদ্যনিরাপত্তায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে: বাকৃবি সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা