চট্টগ্রামে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে রাস্তা দখল, বাড়ছে ভোগান্তি

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার কেরানিহাটের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখলে নিয়েছে নিয়েছে একটি চক্র। সরকারি জায়গায় হকার বসিয়ে  হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা, ব্যবহার হচ্ছে মসজিদের বিদ্যুৎ-নেপথ্যে মসজিদ কমিটি। এতে করে একদিকে রাস্তায় যানজটে বাড়ছে জনভোগান্তি অন্যদিকে সরকারি বিদ্যুতের বিলের টাকা আত্মসাত করছে সিন্ডিকেট। স্থানীয় প্রশাসন একাধিকবার উচ্ছেদ করেও দখলমুক্ত রাখতে পারছে না রাস্তাটি।
জানা যায়, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া কেরানীহাট এখন পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামের বানিজ্যিক নগরী হিসেবে পরিচিতি পেতে শুরু করেছে।  চট্টগ্রাম কক্সবাজার বাজার মহাসড়ক ও  পর্যটন নগরী বান্দরবান যাওয়ার একমাত্র সড়কের টার্নিং পয়েন্ট হচ্ছে কেরানী হাট, ফলে কেরানী হাট বৃহত্তর চট্টগ্রামে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিনি সিটিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। তাই স্টেশনে অনেক লোকের আনাগোনা স্বাভাবিক ভাবেই বেশী। তবে পথচারীদের চলার জন্য ফুটপাত ও গাড়ী থামানোর জন্য খালি জায়গা এবং আগত দর্শনার্থীদের কিংবা পর্যটকদের গাড়ী রাখার সুনির্দিষ্ট কোন স্টেশন নেই।

অপরদিকে বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের  অল্প খোলা জায়গা যা আছে তাও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পবিত্র বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সের নাম দিয়ে দখলে নিয়ে হকার বসিয়ে বায়তুশ শরফ মসজিদ কমপ্লেক্সের কমিটিরা গিলে খেতে শুরু করেছে।
এদিকে সূত্র নিশ্চিত করেছেন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের দোহায় দিয়ে বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের সরকারি জায়গা দখল করে হকার বসিয়ে, এবং বায়তুশ শরফ মসজিদ থেকে নিজস্ব নামীয় মিটার থেকে বিদ্যুৎ খরচ করে অবৈধ পন্থায় হকার পরিচালনা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন, সেই  বিষয়টা মূলত স্বনামধন্য বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সের কেন্দ্রীয় কমিটিও জানেনা।
কেরানীহাটের স্থানীয় হকার ও ব্যবসায়ী  সূত্রে জানা যায়, মুছা কোম্পানি, ছৈয়দ ড্রাইভার, আইয়ুব ড্রাইভার, আহমদ ড্রাইভার এরা চারজন মসজিদ কমিটির আস্থাশীল ব্যক্তি। মূলত এরা চারজন  সরকারি জায়গায় চারটি দোকানের স্থায়ী  মালিক। এবং ওই সরকারী জায়গায়  আরো অন্তত ২০/২৫টি দোকান বসিয়ে মাসে প্রতি দোকান থেকে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা করে ভাড়া আদায় করছে। এসব অবৈধ দোকান বসানোর সময় দোকানপ্রতি অফেরতযোগ্য ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা গ্রহণ করা হয়েছে।

বর্তমানে বান্দরবান সড়ক ও জনপদ বিভাগের বিশাল জায়গা তারা মসজিদ কমিটির নাম দিয়ে দখল করে রেখেছে। যার ফলে সাধারণ মানুষের দূর্ভোগের অন্ত নেই।
সাতকানিয়ার সিনিয়র সাংবাদিক মঞ্জুর আলম এই বিষয়ে তার ভেরিফাইড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন, কেরানীহাট বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সের সামনের জায়গাটা বান্দরবান সড়ক ও জনপদ বিভাগের সম্পত্তি। কিন্তু এই মহা মূল্যবান জায়গাটি এখন বেদখল হয়ে গেছে। সড়কের পাশের অধিকাংশ জায়গায় অর্থের বিনিময়ে অবৈধ দোকান বসিয়ে মাসিক ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। 

অন্যদিকে বিশাল একটি জায়গায় দেয়াল তৈরি করে দখল করে রাখা হয়েছে। যার ফলে মসজিদে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লী, পাশের হাসপাতালে আসা রোগী, স্কুলে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক এবং নিত্য প্রয়োজনে আসা সাধারণ মানুষ গুলো গাড়ি পার্কিং করতে চরম বেকায়দায় পড়েছে। 

এই জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি জায়গাটি অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাগবের জন্য বান্দরবান সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তা ও সাতকানিয়া উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

কেরানী হাটের একাধিক বাসিন্দা প্রতিবেদককে আরো জানিয়েছেন, ৫ আগষ্টের পরে সাতকানিয়া সহকারী কমিশনার ভূমি ফারিস্তা করিম বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সের সামনের জায়গায় থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছিলেন, তাঁর বদলীর পরপর আবারো বায়তুশ শরফ মসজিদের চলতি বছরের ১৬ আগস্টের অনুমোদিত নতুন কমিটি কর্তৃক পবিত্র মসজিদের জন্য আর্থিক ইনকামের কথা বলে সরকারি জায়গা দখলে নিয়ে নতুন কমিটির কর্তাগণ মাসে লাখ লাখ টাকা কামাচ্ছে। 
স্থানীয়রা আরো জানান,বায়তুশ শরফ মসজিদ কমিটির কর্তাগণ অনেকেই সমাজে  প্রতিষ্ঠিত হলেও পবিত্র মসজিদ কমপ্লেক্সের নাম দিয়ে জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করে তাও আবার মসজিদের বিদ্যুৎ এর অপব্যবহার করে সরকারি জায়গা দখল করে টাকা কামানোটা আসলেই সম্মানজনক  হচ্ছেনা।
পবিত্র মসজিদের দোহায় দিয়ে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পবিত্র নামকে পুঁজি করে এই কমিটি মাসে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র প্রতিবেদককে নিশ্চিত  করেন। 
এদিকে কেরানী হাটের ব্যবসায়ী মহলে এই নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।  মসজিদ নামীয় মিটার থেকে লাইন বের করে হকারদের বিদ্যুৎ দিয়ে দৈনিক ও মাসিক যে পরিমাণ টাকা কামাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা, সেই টাকা মসজিদের হিসাবে নথিভুক্ত হচ্ছে কিনা তা নিয়ে আছে সমালোচনা। নথিভুক্ত হলেও সরকারি জায়গা দখলে নিয়ে পথচারীদের কষ্ট দিয়ে ওই অবৈধ ইনকাম গ্রহণ করা পবিত্র মসজিদ কমিটির পক্ষে কতটা যৌক্তিক? দিন দিন এমন প্রশ্ন ওঠতে শুরু করেছে পুরো কেরানী হাটের উপশহর  জুড়ে।

এই বিষয়ে মসজিদের সাবেক পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক ব্যবসায়ী  মূসা কোম্পানি বলেন, আমি বহু আগে সাধারণ সম্পাদক পদ ছেড়ে দিয়েছি এবং আমার কোন দোকানটোকান কিংবা হকার নেই। আমি এসবে কখনো বিন্দু মাত্রও জড়িত নয় কিংবা জড়িত ছিলাম না। বরং আমি যে এসব অপকর্মের সাথে জড়িত কেউ প্রমাণ করতে পারলে আমি তাকে এক লক্ষ টাকা পুরস্কার দিবো।
মসজিদের খতিব ও বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সের সাধারণ সম্পাদক কপিল উদদীন এসব বিষয় স্বীকার করে বলেন, হ্যাঁ, কমপ্লেক্সই হকার থেকে টাকা উত্তোলন করেন, তবে আমি না, এসব তোলার জন্য অফিসে আলাদা স্টাফ আছে ওরাই টাকার হিসাব দেখেন। হকারের ব্যবহৃত বিদ্যুৎও মসজিদের মিটার থেকে দেয়া হয় বলে স্বীকার  করেছেন উক্ত মসজিদের খতিব মাওলানা কপিল উদদীন। 

কার কার দোকান আছে, কি পরিমাণ টাকা মাসে ইনকাম হয় এবং সরকারী জায়গার উক্ত টাকা কোন খাতে ব্যয় হয় তেমন প্রশ্নের উত্তরে খতিব ও কমপ্লেক্সের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা কপিল উদদীন বলেন, অবশ্যই টাকাগুলি মসজিদের খাতে ব্যয় হবে যেহেতু কমিটি উত্তোলন করেন তবুও আপনাকে এটা জেনে বলতে হবে।
সূত্র জানায়, বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সের মিটারের রিডিং দেখে বিল নেয়া হয়না বলে সূত্র নিশ্চিত করেছেন, এবং ওই এলাকার মিটার রিডার হারুনুর রশিদকে ম্যানেজ করে মাসিক মাসোহারা নিয়েই মনগড়া বিল লেখা হয় বলে সূত্র নিশ্চিত করেছেন। 
সরকারি জায়গা দখলে নিয়ে বসে থাকা হকারদের বৈদ্যতিক লাইন বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী, মসজিদের বৈদ্যুতিক  লাইন নিয়ে সরকারি জায়গা দখল করে হকার ব্যবসার বিষয়ে সাতকানিয়া পিডিবি বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্র এর আবাসিক প্রকৌশলী সৌভন ভৌমিককে কল করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে উত্তর নেওয়া সম্ভব হয়নি।
শুধু তাই নয়, উপজেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ এটা পুনরায় উচ্ছেদ না করলে কেরানী হাটের তৌহিদ জনতা উচ্ছেদের উদ্যোগ নিতে পারেন তাতে আইনশৃংখলার চরম অবনতি হতে পারে বলেও স্থানীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।