আমাকে দলে হয়তো আর দরকার নেই : মুশফিক
বিশ্রাম নয়, আমাকে দলে হয়তো আর দরকার নেই, এমনাটাই জানিয়েছেন মুশি। সোজা কথায় পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে পারফরম্যান্সের কারণে বাদ পড়েছেন মুশফিকুর রহিম। দল থেকে বাদ পড়ায় আক্ষেপ নেই মুশফিকের মনে। হাসিমুখে মেনে নিয়েছেন। তবে কিছু বিষয় নিয়ে মুশফিকের আক্ষেপ আছে। কেন এমনটি তার সাথে হয়, তিনি নিজেও তা জানেন না।
অবশেষে নিজের মনের সেই না বলা কথা বললেন। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের কিছু কথা তুলে ধরা হলো সকালের সময়ের পাঠকদের জন্য। সেরকমই একটি শট তো স্কুপ। কিন্তু আপনার এই শট নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়। অনেক সময়ই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এই শটে আউট হয়েছেন,জানতে চাইলে মুশফিক বলেন,গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আউট হলে, আউটের অনেক ধরন থাকতে পারে। আমার এটা ‘গো টু’ শটগুলির একটি। এটা বলতে পারেন যে ওই সময় হয়তো অমন খেলা উচিত হয়নি। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে যে, নিজেদের ‘গো টু’ শট যদি আমি চেষ্টা করলে আমারই সুযোগ বেশি থাকবে। আমার যদি ‘গো টু’ শট থাকত জস বাটলারের মতো ডাউন দা উইকেট গিয়ে সোজা ছক্কা মারা, তাহলে আমি সেটাই চেষ্টা করতাম।
বাটলারের মতো ব্যাটসম্যান যদি সেমিফাইনালে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে আউট হয়, তাহলে তো তাকে দলে রাখাই উচিত না! সে চাইলেই তো মিচেল স্টার্কের মতো বোলারকে ১০০ মিটার লম্বা ছক্কা মারতে পারে। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল একবার শামসির বলে বোল্ড হলো রিভার্স খেলে, তার পর আবার পাকিস্তানের বিপক্ষে ডিপে ফিল্ডার দেখার পরও একই শট খেলতে গিয়ে আউট হলো। ওর তো দরকার ছিল না!
এটা একটা সংস্কৃতিরও ব্যাপার। কেউ ওই শটে অনেক রান করবে, আবার অনেক আউটও হবে। তার মানে এই নয় যে ওই শট খেলা যাবে না বা আউট হলে পরেরবার খেলা যাবে না। ড্রেসিং রুমের ভেতরে-বাইরের সংস্কৃতি এখানে বড় ব্যাপার। ওই নিজেদের ‘গো টু’ শটে তাতের আস্থা আছে। লেগে গেলে ভালো, না লাগলেও সমস্যা নেই। কারণ, সে জানে, অনুশীলনে সে এটা হাজার-লাখ-কোটিবার খেলেছে স্রেফ ম্যাচে করার জন্যই।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের উন্নতির জন্য মুশফিক জানান, উইকেট ভালো করতে হবে। মিরপুরের উইকেটে ঘরোয়া ক্রিকেটেও খেলা কঠিন। শুধু আমাদের জন্য নয়, বাইরের যারা আসেন ব্যাটসম্যানরা, সবার জন্যই এখানে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলা কঠিন। বিপিএল ও অন্যান্য সময় দেখেছেন। তাদের কাছে জিজ্ঞেস করলেও জানতে পারবেন। চট্টগ্রাম-সিলেটে খেলতে বেশি পছন্দ করে তারা।
উইকেট যদি আরেকটু স্পোর্টিং হয়, বোলারদের জন্যও কিন্তু চ্যালেঞ্জিং হয়। মিরপুরে স্পিনারদের জন্য কাজ সহজ। বিশ্বকাপে বা অন্যান্য দেশে ওরকম টার্ন থাকে না বা বল উঠা-নামা হয় না। মিরপুরেও সেরকম উইকেট হলে বোলাররা চ্যালেঞ্জর মুখে পড়বে, নতুন স্কিল শিখবে সারভাইভ করার জন্য।
নেটে ভালো ব্যাটিং করে সেই আত্মবিশ্বাস মাঠে নিয়ে যেতে হয়। আমরা তা পারি না। টি-টোয়েন্টির ব্যাটিংয়ের সেইরকম উইকেট ও পরিবেশ না পেলে ম্যাচে তা করে দেখানো কঠিন। একটা সেট-আপ করা বা রেঞ্জ হিটিং করতে হলে তো উইকেটে সেই সহায়তা থাকতে হবে। উইকেট স্পোর্টিং হলে সেখানে খেলে সবাই অভ্যস্ত হবে, ব্যাটসম্যানদের শটের রেঞ্জ বাড়বে, সেটা ম্যাচে নিয়ে আসতে পারলে এবং দুই-একবার ক্লিক করলে, সেই বিশ্বাস ও ফ্রিডম নিয়ে খেলতে পারবে, তার পর আস্তে আস্তে উন্নতি হবে।
২০১২ এশিয়া কাপের আগে যে বিপিএল হয়েছিল, ওই সময়ের উইকেট ছিল সেরা। সেখানে খেলার পর এশিয়া কাপে রানার্স আপ হই। ম্যাচগুলিতে ধারাবাহিক ছিলাম আমরা, ভারতের বিপক্ষে ২৯০ তাড়া করলাম। এটা সম্ভব হয়েছে কেন? শেষ ২০ ওভারে আমাদের ১৬০ রানের বেশি দরকার ছিল। তখনও আমাদের বিশ্বাস ছিল, কারণ কিছুদিন আগেই বিপিএলে আমরা ২০ ওভারে ১৬০ করেছি। সেই বিশ্বাস থেকেই ওই রান তাড়া করেছি। উইকেটের প্রভাব তাই অনেক বড়।
আরেকটা ব্যাপার, টি-টোয়েন্টিতে রোলগুলি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিকেটারদের যা ভূমিকা, তা যদি সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া যায়, তাহলে খুব ভালো হয়। আমার মতো ব্যাটসম্যান, যারা হয়তো পাওয়ার হিটিং বা রেঞ্জ হিটিং পারি না, কিন্তু তার মানে এই নয় যে রানই করতে পারি না। অন্য পথ আছে আমার রান করার। পাওয়ার হিটিংই একমাত্র পথ হলে বাংলাদেশ কখনোই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতত না (২০১৮ সালে)।
টি-টোয়েন্টির অন্য স্কিলও আছে। আমাদের দেশে হয়তো ওসবের কদর হয় না অতটা। কিন্তু অনেক স্কিল আছে।
নির্বাচকদের সঙ্গে যোগাযোগের কথা বললেন। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগেও যোগাযোগের ঘাটতির কারণে আপনি খেলতে পারেননি। অনেক সময়ই শোনা যায় যে, আপনাকে তারা অনেক কিছু বলতে সঙ্কোচ করেন। এর জবাবে মুশফিক বলেন,আমি কি খাঁচার বাঘ, যে আমাকে ছেড়ে দিয়েছে, এখন আমি তাদেরকে বা অন্যদেরকে খেয়ে ফেলব?
আমার অভিষেক হয়েছে সুমন ভাইয়ের (নির্বাচক ও সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার) অধিনায়কত্বে। এখন উনি যদি বলতে না পারেন ছোট ভাইকে কোনো কথা… শুধু উনি কেন, আকরাম ভাই, নান্নু ভাই, উনারা বিকেএসপিতে খেলতে গিয়েছিলেন, আমরা বল থ্রো করেছিলাম, তখন আমাদের জন্য স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ব্যাপার ছিল। এখন তাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে পারছি। এখানে যদি উনারা কথা বলতে না পারেন আমার সঙ্গে… আমি তো সবসময়ই ওয়েলকাম করি।
কিছু ক্রিকেটার আছে, যাদেরকে অন্যভাবে বলতে হয়। সেটা তো তাদের জানতে হবে। আমারও বুঝতে হবে।
অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগে নান্নু ভাই ফোন করে আমার বাবা-মায়ের খোঁজখবর নিয়েছে। আমি বলেছিলাম যে উন্নতি হচ্ছে অবস্থার। এর কদিন পর আমি নিজেই নান্নু ভাইকে ফোন করে বলেছি যে, মা-বাবার অবস্থা ভালো এখন, আমি মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি (অস্ট্রেলিয়া সিরিজের জন্য)। তার পরও উনারা আমাকেত কিছু বলতে না পারলে আমার দিক থেকে কিছু করার নেই।
আমাকে ছাড়াই তো অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে জিতেছে। তারা হয়তো ভেবেছে যে আমাকে দলে হয়তো আর দরকারও নেই।
বিশ্রাম বিষয়ে তিনি বলেন : আমাকে বলেছে, নির্বাচক কমিটি, ম্যানেজমেন্ট, হেড কোচ ও টিম ডিরেক্টর, সবাই মিলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে রাখা হবে না আমাকে।
অবশ্যই, সত্যিকারের সৎ ও সত্যি ভাবনাটাই বলা উচিত। দলের আগে, দেশের আগে তো কেউ না। সেখানে আমি তো নগণ্যতম একজন সদস্য।
পারফরম্যান্সে উঠা-নামা থাকবে এবং একজন ক্রিকেটারকে অবশ্যই পারফরম্যান্স ও ফিটনেস দিয়ে বিচার করবেন। সেটা পরিস্কার করে বললেই হতো যে, ‘আমরা অন্যরকম চিন্তা করছি, এই সিরিজে না, সামনে যদি পারফর্ম করে আসতে পারো…”, যেটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া আর কী।
এই ব্যাপারগুলো পরিস্কার করে বললে আমার কাছেও অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করত যে তারা আমাকে এতটুকু হলেও সম্মান করেছে। যদি সামনের চারটি টেস্ট ম্যাচের (পাকিস্তান ও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে) কথাই সত্যি ভেবে থাকেন, তাহলে বিশ্বকাপের আগেও তাহলে বলতে পারত যে, ‘সামনে এই টেস্টগুলো আছে, টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে তুমি বিরতি নিতে পারো’, তাহলে হয়তো আরও উপযুক্ত হতো, মানসিকভাবে তৈরি থাকতাম। আমি নিজেও হয়তো সেভাবে পরিকল্পনা করতাম যে বিশ্বকাপ থেকে ফিরে জাতীয় লিগে একটি-দুটি ম্যাচ খেলতাম। আমাকে এত দেরিতে জানিয়েছে যে, (টেস্টের) প্রস্তুতির সেরকম কিছু পাচ্ছি না।
একটু খোলামেলা কথা বললে ভালো হয়। তারা যদি আমাকে বলতেন যে ‘আমরা এরকম চিন্তা করছি’, তাহলে আরেকটু প্রস্তুতি নিতে পারতাম (টেস্টের জন্য)। কিন্তু আমাকে জিজ্ঞেস করা হলো যে অ্যাভেইলঅ্যাবল কিনা, এরপর হুট করে … (বিশ্রাম)। তখনও যদি তারা বলতেন যে বাইরে রাখার চিন্তা করছে, তাহলে অন্যভাবে পরিকল্পনা করতে পারতাম। কিন্তু সবকিছু শেষে হুট করেই বলা হলো, প্রস্তুতি নেওয়া এখন কঠিন।
এখন পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে ইতিবাচকভাবেই নিতে হবে এসব এবং নিচ্ছি। টি-টোয়েন্টি আমার জন্য এখন অন্যরকম চ্যালেঞ্জ এবং এখানে ফিরে আসতে চাই। আপাতত টেস্ট সিরিজটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সেরা ফরম্যাট এটি। সেটার জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছি।
নির্বাচকদের সঙ্গে যোগাযোগের কথা বললেন। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগেও যোগাযোগের ঘাটতির কারণে আপনি খেলতে পারেননি। অনেক সময়ই শোনা যায় যে, আপনাকে তারা অনেক কিছু বলতে সঙ্কোচ করেন…মুশফিক: আমি কি খাঁচার বাঘ, যে আমাকে ছেড়ে দিয়েছে, এখন আমি তাদেরকে বা অন্যদেরকে খেয়ে ফেলব।
এমএসএম / জামান
তামিমের সেঞ্চুরিতে সিরিজ হার এড়াল বাংলাদেশ
৮৮১ মিনিটে প্রথম গোল খেল আর্সেনাল
ইসলামিক গেমসে ভারত্তোলনে ব্রোঞ্জ জিতল বাংলাদেশ
বিশ্বকাপে খেলার ঘোষণা তাহলে দিয়েই দিলেন মেসি!
বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দল ঘোষণা করলো ইংল্যান্ড
জাহানারার মতো ভুক্তভোগীদের সাহস নিয়ে মুখ খোলার অনুরোধ তামিমের
জাহানারার গুরুতর অভিযোগ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত বিসিবির
বিক্রি হয়ে যাচ্ছে কোহলির বেঙ্গালুরু
মেসির হাতে মায়ামি শহরের চাবি, দেওয়া হলো যে কারণে
ব্রাজিলিয়ান ডিজাইনারের হাতে প্রস্তুত মেসিদের বিশ্বকাপ জার্সি
হন্ডুরাসকে ৭ গোলে উড়িয়ে দিলো ব্রাজিল
‘শিগগিরই অবসর নেব’, রোনালদোর বার্তা