নেত্রকোনার খালিয়াজুরীতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দকৃত বীর নিবাস নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক বাতিল করায় মুক্তিযোদ্ধা হরকুমার সরকার ও ব্রজেন্দ্র চৌধুরী জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মুজিব শতবর্ষপূর্তি ও স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে বীর নিবাসের বরাদ্দ হয় দুজন মুক্তিযোদ্ধার নামে। দুটি বীর নিবাসের যথারীতি নিয়ম-কানুনের মাধ্যমে প্রাপ্ত হওয়ার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ টেন্ডার আহ্বায়ন করে ঠিকাদারের মাধ্যমে বীর নিবাসের কাজ বাস্তবায়ন করার জন্য প্রাপ্ত হয়ে নির্মাণসামগ্রী প্রেরণও করা হয়। কিন্তু গত ১ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোনো ধরনের নোটিস দ্বারা অবগত না করে হঠাৎ করে উক্ত বীর নিবাসের প্রকল্প বাতিল করেন।
জানা যায়, গত ১ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম আরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে রেজুলেশন মাধ্যমে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ অর্থ বছর ২০২১-২০২২ এ প্যাকেজ-১ হরকুমার সরকার ও প্যাকেজ-২, উমেশ চন্দ্র সরকার, ব্রজেন্দ্র চৌধুরীকে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প পরিচালক( অতিরিক্ত সচিব) স্বাক্ষরিত উল্লিখিত তিনজনের নাম বাতিল করে নির্বাহী কর্মকর্তা ইচ্ছামাফিক অত্র উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের পাঁচহাট গ্রামের মো. মোতালিব, মিয়া হোসেন, মোক্তার হোসেনের নামে বীর নিবাস স্থানান্তর করা হয় বলে দাবি করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা হরকুমার সরকার ও ব্রজেন্দ্র চৌধুরী।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজুলেশনে উল্লেখ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা হরকুমার সরকার ও ব্রজেন্দ্র চৌধুরী তাদের ভূমির খাজনা পার্শ্ববর্তী উপজেলা ইটনায় প্রদান করায় তাদের ঘর নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না ও বীর মুক্তিযোদ্ধা উমেশ সরকারের তফসিল অনুয়ায়ী না হওয়ায় বীর নিবাসের কাজ বন্ধ করে অন্যত্র প্রদান করা হল।
বীর মুক্তিযোদ্ধা হরকুমার সরকার বলেন,আমরা পূর্ব পুরুষ ব্রিটিশ আমল হইতে অদ্যাবধি পর্যন্ত থানা প্রশাসনিক খালিয়াজুরী জেলা প্রশাসনিক ময়মনসিংহ সদর অতঃপর নেত্রকোণায় করিয়া আসিতেছি। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমও খালিয়াজুরী উপজেলা থেকেই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে ইউ,পি নির্বাচন,উপজেলা নির্বাচন,জাতীয় সংসদ নির্বাচনও জমি সংক্রান্ত ফৌজদারি মামলা কার্যক্রম পরিচালনা করিয়া আসিতেছি। শুধুমাত্র জমির খাজনা / রাজস্ব আমাদের নিজ গ্রাম চাদপুর খোশালপুর মৌজায় হওয়ায় জমির খাজনা আমাদের সুবিধার্থে বহু পূর্ব হইতে আমাদের বাড়ির নিকটে ইটনা থানার ধনপুর কাচারিতে প্রদান করি।
মুক্তিযোদ্ধা ব্রজেন্দ্র চৌধুরী বলেন, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৪ সালে মহমান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ উপ-২ শাখা প্রজ্ঞাপনে খালিয়াজুরী উপজেলার নগর ইউনিয়নে খোশালপুর মৌজাকে অন্তর্ভূক্তের কথা উল্লেখ থাকলেও তা অদ্যাবধি পর্যন্ত অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। যে কারণে সারাবাংলাদেশে মুজিব শত বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী উপহারের ঘর খোশালপুর ও চাদপুরের হত দরিদ্র মানুষ বঞ্চিত হয়ে আসছে। তিনি আরো বলেন, মন্ত্রনালয় থেকে বরাদ্দ হয়ে যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ইচ্ছে মাফিক ঘরগুলো বাতিল করে অন্যত্র দিয়ে দিয়েছেন যা সম্পুর্ন নিয়ম নীতির বর্হিভুত।
খোশালপুর ও চাদপুরের গ্রামবাসী আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ভোটাধিকার থেকে শুরু করে ফৌজদারি কার্যক্রমসহ সকল কর্মকান্ড খালিয়াজুরী প্রশাসন করবে আর শুধুমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের বেলায় আমাদেরকে ইটনা থানার বলে চালিয়ে দিবে এটা হতে পারে না। তাদের প্রশ্ন খোশালপুর অথবা চাদপুর গ্রামের কোন মুক্তিযোদ্ধা যদি মারা যায় তবে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত কে করবেন? ইটনা না খালিয়াজুরী প্রশাসন। গ্রামবাসী আরো বলেন ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৪ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ৯০ তম নিকারের সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী আমাদের ইউনিয়নের ১৪ টি মৌজার মধ্যে একটি মাত্র মৌজা খোশালপুর উক্ত মৌজার খাজনা বর্তমান কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার অন্তর্গত ধনপুর কাচারী হইতে প্রত্যাহার করে আইনের জটিলতা ও কুটতর্ক নিরসন করা অতীব জরুরী বলে মনে করেন গ্রামবাসী।
খালিয়াজুরীর কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী বাচ্চু আক্ষেপ করে বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর উপহার বীর নিবাস প্রাপ্ত হয়েও ঘরের নির্মান সামগ্রী নিম্ন মানের মত প্রকাশ করায় আমার ঘরের কাজ স্থগিত করে নির্মান সামগ্রী ফেরত নিয়ে আসা হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম আরিফুল ইসলামের কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, অভিযোগ নয়, তারা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন। অভিযোগ আর আবেদন এক নয়।
তিনি আরো বলেন, গতকাল জেলা প্রশাসক মহোদয়ের অফিসে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যদি তাদের জায়গা থাকে তবে তাদের ঘর করে দেয়া হবে।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিসকে মুটোফোনে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি এ বিষয়ে নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। মুক্তিযোদ্ধারা যেভাবে ঘর পান সে ব্যবস্থা করা হবে।
খালিয়াজুরী উপজেলার নগর ইউনিয়নের জাতির শ্রেষ্ট সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদ্বয় ও গ্রামবাসী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এ ব্যাপারে আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দিয়েছি। আমরা প্রত্যাশা করি অচিরেই এ সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার।