বাংলাদেশ ও ভারতে গবেষণার জন্য তালিকাভুক্ত ডঃ নুরুন নবীর বই
ড. নূরুন নবীর জন্ম বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে। ছোটবেলা থেকেই বেড়ে ওঠেছেন টাঙ্গাইলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর তিনি ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন বিভাগে।
এটি সেই সময়ের কথা, যখন বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ নতুন এক নূরুন নবীর জন্ম দেয়। সেই সময়ে তিনি সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে হয়ে উঠেন একজন অসাধারণ, সাহসী এবং বিচক্ষণ মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি ৩ বার ভারতে গিয়েছেন এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের রনকৌশল, বিশেষ করে টাঙ্গাইলের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ভারতের সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের অবগত করেন। সেই সময় নৌ-পথে ভারত থেকে বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলা বারুদ এনে টাঙ্গাইলের মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দেন, যা পাকিস্তানিদের পরাজিত করতে এবং ঢাকাকে শত্রুমুক্ত করতে বিশেষ অবদান রেখেছিল।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ডা. নূরুন নবী গবেষনার জন্য জাপানে যান।
১৯৭৫ সালে গবেষণা শেষে জাপান থেকে বাংলাদেশে তাঁর ফিরে আসার কথা ছিলো। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা এবং হত্যা পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থার কারণে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসতে পারেননি। তাই জাপান থেকে আমেরিকায় চলে যান। এরপর দীর্ঘ সংগ্রাম এবং অধ্যবসায়ের ফলে আমেরিকায় একজন বিজ্ঞানী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। কোলগেট টুথপেষ্টসহ প্রায় ১০০টি পণ্যের পেটেন্ট আবিস্কারক।
এর পাশাপাশি তিনি আমেরিকার মূল ধারার রাজনীতির সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। যুদ্ধ ও জীবনের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য লেখেন বই। যা মূলত বাংলা ভাষায় লেখা। সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা বাংলাদেশি ও আমেরিকানদের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়ার জন্য ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে ড. নূরুন নবীর বেশ কয়েকটি বই। যা প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ এবং আমেরিকা থেকে। কিছুদিন আগে ডা. নূরুন নবীর লেখা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বইগুলো পাঠ ও গবেষণার জন্য নির্বাচিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগারে। এর আগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে গবেষণার জন্য ভারতের ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিভাগে নির্বাচিত হয়েছে এই বাংলাদেশি লেখক ও বিজ্ঞানীর লেখা দুটি বই। প্রায় ৩শ’ বছরের পুরনো এবং পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রন্থাগার হিসেবে পরিচিত ভারতের ন্যাশনাল লাইব্রেরি। ডা. নূরুন নবীর লেখা ‘বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের যুদ্ধাপরাধ ও প্রেসিডেন্ট নিক্সন- ড. কিসিঞ্জারের দায়’ এবং ‘মুক্তিযুদ্ধে ভারত’ বই দুটি গবেষণার জন্য নির্বাচিত হয়েছে ভারতের ন্যশনাল লাইব্রেরিতে।
লেখক তার যুদ্ধ জীবনের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন বই দুটিতে। মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে লেখক ড. নূরুন নবীর এ পর্যন্ত ১৭টি বই প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য- অনিবার্য মুক্তিযুদ্ধ, জন্ম ঝড়ের বাংলাদেশ, বাংলাদেশে পাকিস্তানের যুদ্ধাপরাধ ও প্রেসিডেন্ট নিক্সন- ড. কিসিঞ্জারের দায়, জাপানিদের চোখে বাঙালি বীর, স্মৃতিময় নিপ্পন, আমার একাত্তর, জন্মেছি এই বাংলায়, আমেরিকায় জাহানারা ইমামের শেষ দিনগুলি, শামসুর রাহমান-স্বাধীনতার কবি, অন্তরঙ্গ আলোচনায় বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু ও বিশ্ববন্ধু, Born in Bangla, Bangabandhu and Turbulet Bangladesh, BULLETS of’71 A Freedom Fighter’s Story.
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ২০২০ সালে একুশে পদক পেয়েছেন ড. নূরুন নবী।
যুদ্ধের সময় ভারতের আর্মি অফিসারদের মধ্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সান্ত সিং, মেজর জেনারেল গিল এবং লেফটেনেন্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরাসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন। ১৯৭২ সালে ফারইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউতে তাকে ‘দ্য ব্রেইন অব কাদেরিয়া বাহিনী’ বলে উল্লেখ করেছিল। সম্প্রতি আনুষা নন্দকুমার এবং সন্দীপ স্যাকেটের লেখা- The War that Made R&AW বইটির একটি অধ্যায়ে- ড. নূরুন নবীর বীরত্ব, বিচক্ষণতা ও সাহসিকতার গল্প তুলে ধরা হয়েছে। বইটিতে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের আগের ১০ দিনের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে।
এমএসএম / এমএসএম