ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

অধিকার বঞ্চিত ভোক্তারা প্রতিকার পাবে


ফয়েজ রেজা  photo ফয়েজ রেজা
প্রকাশিত: ১৬-১১-২০২২ দুপুর ১১:৫৮

নিজের অধিকার সম্পর্কে ভোক্তাদের অধিকার সচেতন করা, বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা এবং কোনো ভোক্তা যদি প্রতারিত হয়ে অভিযোগ করে, তাহলে প্রতারণার অভিযোগের নিষ্পত্তি করাসহ ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এই সময়ে ভোক্তাদের অভিযোগ ও তা নিষ্পত্তির নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক- এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দৈনিক সকালের সময় এর যুগ্ম সম্পাদক- ফয়েজ রেজা। 

সকালের সময় :  আজকের দিনে কেনাকাটার ধরন বদলে গেছে। ভোক্তাদের অভিযোগের ধরনেও পরিবর্তন আসার কথা। এই সময়ে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে কোন ধরনের অভিযোগ বেশি আসে এবং জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কিভাবে তা সমন্বয় করে?  
এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান : জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মূল যে কার্যক্রম, তা ২০০৯ সালের আইনে উল্লেখ আছে। তিনটি বিষয় সেখানে গুরুত্ব পায়। প্রথমত- ভোক্তাদের যে অধিকার, সে অধিকার সম্পর্কে ভোক্তাদের সচেতন করা। ভোক্তা তার অধিকার সম্পর্কে জানবে, অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবে এবং সে অধিকার বঞ্চিত হলে তার প্রতিকার চাইবে এবং প্রতিকার পাবে। এ কাজ গুরুত্বের সাথে করছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। 
সময়ের চাহিদা অনুযায়ী জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নিজস্ব একটি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। একটি নির্দিষ্ট ফেসবুক পেইজ আছে। যেখানে নিয়মিত বিভিন্ন বিষয় ধরে তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। ভোক্তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে অথবা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানগুলো নিয়মিত পরিচালিত হয়। এসব অভিযানের মাধ্যমে মানুষ তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে পারছে। দেশে যদি প্রতারণা নতুন নতুন ছক তৈরি হয়, সেসব প্রতারণার ধরন সম্পর্কে ভোক্তারা সচেতন হতে পারছে। 

দ্বিতীয়ত- দেশের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে সচেতনতামূলক তথ্য প্রচার ও প্রকাশ করা হয়।  আমরা যে অভিযান পরিচালনা করি, এই অভিযানগুলো মূলত করা হয় বাজার পর্যবেক্ষণ ও বাজার নিয়ন্ত্রণের কাজের অংশ হিসেবে।  বাজারে অভিযান পরিচালনার ফলে বিক্রেতারা সচেতন হচ্ছে, ক্রেতারাও সচেতন হচ্ছে।
তৃতীয়ত- কোনো ভোক্তা যদি প্রতারিত হয় এবং প্রতারিত হওয়ার পর যদি অভিযোগ করে, তাহলে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তাকে ডেকে সমস্যাটি সমাধান করা হয়। এক্ষেত্রে যদি আইন অনুযায়ী জরিমানা করা হয়, তাহলে জরিমানার ২৫ শতাংশ ভোক্তা পায়। এটি করা হয় অভিযোগের বিষয়ে ভোক্তাদের উৎসাহিত করার জন্য। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে অভিযোগের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। গেল এক বছরে যত অভিযোগ জমা পড়েছে, গত ২ মাসে তার দ্বিগুণ অভিযোগ এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশি অভিযোগ আসছে ডিজিটাল প্রতারণার বিষয়ে।
সকালের সময়: অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে অনেক বেশি সময় নেয় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এটি অনেক ভোক্তার অভিযোগ। এর সত্যতা কতটুকু?  
এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান : আমরা চেষ্টা করি নির্ধারিত সময়ে সকল অভিযোগ নিষ্পত্তি করার জন্য। গত এক বছরে অনলাইন ও ডিজিটাল প্লাটফর্মের অনেক উদ্যোক্তাকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। অনেকে প্রতারণার দায়ে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রাপ্ত হয়ে জেলে আছেন। এর পরেও এটি মানতে হবে, হাজার হাজার অভিযোগ অমীমাংসিত আছে। অভিযোগ অমীমাংসিত থাকার কারণ, ডিজিটাল প্লাটফর্মের অনেক ব্যবসায়ী প্রতারণা করার পর তারা দেশে থেকে পালিয়ে গিয়েছেন। আমরা যাদের খুঁজে পাচ্ছি, তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারছি। যাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, সেগুলো অমীমাংসিত অবস্থায় আছে। 
সকালের সময়: এরকম অমীমাংসিত অভিযোগের সংখ্যা কত? 
এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান : প্রায় ১০ হাজারের মতো হবে।  
সকালের সময়: সংখ্যাটি অনেক বড়। অভিযোগ জমা হয়েছে, নিষ্পত্তি হয়নি, এরকম সংখ্যা যদি ১০ হাজার হয়, অভিযোগ জমা পড়েনি এরকম প্রতারণার সংখ্যা নিশ্চয়ই আরও আছে। এই সংকট সমাধানের জন্য পদ্ধতিগত কোনো পরিবর্তনের কথা ভাবছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর?
এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান : এসব নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টাক্সফোর্স কাজ করছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আমি ডিজিটাল টাস্কফোর্সের দায়িত্বে ছিলাম। তখনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাছে আমরা বিষয়গুলো তুলে ধরেছি। মানি লন্ডারিং হলে তা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিআইডি কাজ করছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অন্য যে অভিযোগগুলো আছে, যেমন- সঠিক পণ্য বুঝে না পাওয়া, নিম্নমানের পণ্য পাওয়া, অনেক সময় পণ্য পূর্ণ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নষ্ট হয়ে যাওয়া, খাবার পরিবেশনের কিছু বিষয় নিয়ে, খাবারের মান বিষয়ে অভিযোগ আছে, এসব বিষয় নিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত কাজ করছে। 

সকালের সময়: খাবারে ভেজাল আমাদের দেশে নিয়মিত পাওয়া যায়। চিকিৎসকরাও বলছেন দেশে কিডনির অসুখ বেড়ে যাওয়া, হার্ট এ্যাটাক বেড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা বেশি ঘটছে খাবারে ভেজালের মিশ্রণ থাকার কারণে। খাবারে ভেজাল অনেক সময় খোলা চোখে দেখা যায় না। এক্ষেত্রে আপনারা বিষয়গুলো কিভাবে নিষ্পত্তি করেন? 
এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান : নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এটি নিয়ে কাজ করছে। বিএসটিআই এসব বিষয়ে কাজ করছে। আমরা বিভিন্ন হোটেল রেস্টুরেন্টে যাচ্ছি। সেখানে নিম্নমানের যে খাবার পাওয়া যাচ্ছে, খাবার তৈরির অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া অথবা খাবার তৈরি বা পরিবেশনের পরিবেশ যদি মানসম্মত না হয়, সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। 
সকালের সময়: জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান হিসেবে আপনার চোখে কোন চ্যালেঞ্জগুলো বেশি?
এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান :  জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের যে অভিযান বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে, তা যথেষ্ট নয়। এর জন্য ব্যবসায়িক কমিউনিটিকে সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা এগিয়ে এসেছে। তবে ব্যবসার অনেক ধরন আছে। কেউ উৎপাদন করে। কেউ বিপণন করে। পাইকারি বাজার আছে। খুচরা বাজার আছে। প্রত্যেকটি জায়গায় পর্যবেক্ষণ করার বিষয় আছে। একটি জায়গায় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। অন্য জায়গায় পণ্যের মান কমে যায়। অন্য জায়গায় দেখা যায়, পণ্যের সাথে মিশ্রণ ঢুকে যাচ্ছে। আমরা বিষয়গুলো সিরিয়াসভাবে সমাধান করার চেষ্টা করছি। বর্তমান যে কঠিন সময় যাচ্ছে এই সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক মানসিকতা পরিহার করে সেবার মানসিকতা নিয়ে ব্যবসা করতে হবে। মানুষ যাতে স্বস্তি পায়, সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। 
সকালের সময়: ভোক্তাদের সাথে প্রতারণা করার সঙ্গে দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার সম্পর্ক কতটুকু? 
এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান : এই সময়ে আমরা আসলেই একটি কঠিন সময় পার করছি। করোনাকালীন আমরা এক ধরনের সমস্যায় ছিলাম। বর্তমান সময়ের সমস্যাগুলো অন্যরকম। পণ্যমূল্য এখন অনেক বেড়ে গেছে। মানুষের কষ্ট হচ্ছে। এই সময়ে শুধু ব্যবসায়ীদের নয়, ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী বাজার অতিষ্ঠ করার চেষ্টা করে। এই সংকটের সময়ে অতীতের অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করতে হবে। মানুষের কষ্ট অনুধাবন করে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। 

সকালের সময়: বর্তমান সংকট সমাধানে সবাই সাশ্রয়ী নীতি মেনে চলার চেষ্টা করছে। অন্যদের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী নীতি কার্যকর হলেও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ক্ষেত্রে বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয় আসবে। এ বিষয়ে আপনি কি ভাবছেন? 
এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান : সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আমাদের আসলে যা দরকার, তা পুরোটা আমরা পাই না। এটি সত্য। আমাদের কাজের যে পরিমাণ, ব্যাপ্তি যেভাবে বেড়েছে, তার জন্য যে সংখ্যক জনবল দরকার, তা আমাদের নেই। বর্তমানে ২১৭ জন জনবল নিয়ে সারা দেশে আমরা কাজ করছি। ৪৬৫ জন জনবল বৃদ্ধির একটি প্রস্তাবনা আমরা দিয়েছি। আমাদের আইনটিও ২০০৯ সালের। তা এই সময়ের অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য যথেষ্ট নয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে চাহিদা অনুযায়ী আইন রিভিউ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্তমান সময়ে যেটুকু জনবল ও সুবিধা আছে, তা নিয়ে আমরা চেষ্টা করছি ভোক্তাদের স্বস্তিতে রাখার জন্য। 

এমএসএম / এমএসএম

কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না: অর্থ উপদেষ্টা

আমাদের সাফল্যের সূর্য উদয় হয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা

দেশের অর্থনীতি অবস্থা ভয়াবহ: অর্থ উপদেষ্টা

৪৩ টি প্রতিষ্ঠানকে ১৯ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিল সরকার

কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে না : গভর্নর

নভেম্বরের ১৬ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৫ হাজার কোটি টাকা

খেলাপি ঋণ এখন ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা: বাংলাদেশ ব্যাংক

আমদানি ও বেসরকারি খাতে বিদুৎ উৎপানের কারনেই বিদুৎতের দাম বাড়তি

শাহজালাল বিমানবন্দরে কাস্টমস হেল্প ডেস্ক চালু

ভবিষ্যতে কেউ টাকা পাচার করলেই ধরা পড়বে : অর্থ উপদেষ্টা

৩ মাসে ৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে বাংলাদেশে

সার আমদানির এলসি মার্জিন শিথিল করলো বাংলাদেশ ব্যাংক

দুর্বল সাত ব্যাংক পেল সোয়া ৬ হাজার কোটি টাকা