দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী এবং প্রতারক নুরুল ইসলাম সরকার

ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলাধীন লৌহাবে মৌজার নুরুল ইসলাম সরকার এর নিকট হইতে  (এস এ) ১৯৭৯ নং দাগের ৪০৩৫ হালদাগের ২১৯ শতাংশ, ৪০৩৬ হালদাগের ৮ শতাংশ, ৪০৩৭ হালদাগের ৩৮ শতাংশ, (এস এ) ৪৫ দাগের ৪০৪৬ হালদাগের ২০ শতাংশ, (এস এ) ৪৬ দাগের ৪০৫২ হালদাগের ১৫ শতাংশ, সর্বমোট ৩০০ শতাংশ জমি ২৫/০৭/১৬ ইং তারিখে ৬১৮৭ নং সাফ কবলা দলিল মূলে ৫৭, ১৫, ০০০/- ( সাতান্ন  লক্ষ  পনের হাজার ) টাকা দিয়ে রেজিষ্টি করে ক্রয় করেন মেজর কাজী গোলাম ফারুক (অবঃ)।

ক্রয় সূত্রে অত্র সম্পত্তিতে ডাসার  এগ্রো লিঃ নামে  একটি ডেইরি ফার্ম, গরু মোটাতাজাকরণ খামার স্থাপন করেন। দীর্ঘ প্রায় ছয় বছর অত্র ডেইরি ফার্ম চালু হওয়ার পর থেকেই, বিভিন্ন সময়ে প্রতারক নুরুল ইসলাম  সরকার তার প্রভাব খাটিয়ে চাঁদা দাবি করতো, তার এলাকায় ব্যাবসা করতে হলে চাঁদা না দিয়ে  ব্যবসা করতে পারবে না বলে হুমকিও প্রদান করতো। নিরুপায় হয়ে তাকে প্রতি মাসে চাঁদা দিয়ে আসতো বলে জানিয়েছেন অত্র ফার্মের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোঃ আব্দুল হাই (৫২)।

গত কয়েক মাস আগে মোঃ আব্দুল হাই এর নিকট প্রতারক নুরুল ইসলাম সরকার মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবি করে, বিষয়টি ডাসার এগ্রো লিঃ এর চেয়ারম্যান  মেজর কাজী গোলাম ফারুক (অবঃ) এর নিকট জানালে তিনি খোঁজ খবর নিতে গত ২৪/১১/২২ তারিখে ফার্মে আসে, খবর পেয়ে নুরুল ইসলাম সরকার এসে তার নিকট চাঁদার টাকা চাইলে তিনি দিতে অস্বীকার করে। এরপর তিনি ফার্ম থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে  তার গাড়ি থামিয়ে, নুরুল ইসলাম সরকার ও তার সহযোগীরা তাকে মারধর করে। এঘটনায় ভালুকা মডেল থানায় ২৮/১২/২৩ তারিখে নুরুল ইসলাম সরকার সহ নাম উল্লেখিত ৩জন ও অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মারধরের মামলা হয়, যাহার মামলা নং ৪৪/৬২৭।

অত্র মামলা থেকে জামিন নিয়ে ডাসার এগ্রো লিঃ এর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে কর্মরত শ্রমিকদের ভয়-ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে কর্মস্থল ছেড়ে চলে যেতে বলে। এরপর অত্র ফার্মের সম্পত্তি জোরপূর্বক ভাবে দখল করার জন্য গত  ১৭/০১/২৩ তারিখ সকাল ১০টায়, নুরুল ইসলাম সরকার এর পুত্র মোঃ দিদারুল ইসলাম  (৪০) ও দিদারুল ইসলামের স্ত্রী মোছাঃ হালিমা আক্তার ঝুমুর (৩৫) সহ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে, ডাসার  এগ্রো লিঃ এর ভিতরে  জোরপূর্বক প্রবেশ করে কর্মচারীদের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে অত্র প্রতিষ্ঠান থেকে চলে যেতে বলে। সেসময় কারণ জানতে চাইলে দিদারুল ইসলাম বলেন ২০০৪ সালে ৯১৬৯ নং সাফ কবলা দলিল মুলে ২০ শতাংশ জমি ক্রয় সুত্রে মালিক আমার স্ত্রী হালিমা আক্তার ঝুমুর।

কিন্তু (এস এ) ৪৫ নং দাগের ৪০৪৬ হালদাগের ২০ শতাংশ জমি, ২০১৬ সালের  ৬১৮৯ নং সাফ কবলা দলিল মুলে রেজিষ্ট্রিকৃত মালিক ডাসার এগ্রো লিঃ এর চেয়ারম্যান মেজর কাজী গোলাম ফারুক (অবঃ)। এবিষয়ে ডাসার এগ্রো লিঃ এর সম্পত্তি ক্রয় সুত্রে পূর্বের মালিক দুর্ধর্ষ প্রতারক নুরুল ইসলাম সরকার এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, উক্ত ২০ শতাংশ জমি বিগত ২০০৪ সালে আমার পুত্র বধু  ঝুমুর এর নিকট ৯১৬৯ নং সাফ কবলা দলিল মুলে বিক্রি করে দিয়েছি।

এরপর স্থানীয়ভাবে নালিশী সম্পত্তি সমাধানের জন্য তাহাদের জমির কাগজপত্র নিয়ে তলব তাগাদা দেওয়ার পর, (শুক্রবার) ০৩/০২/২৩ তারিখ সকাল ১০টায় স্থানীয় দরবারে লোকজনের উপস্থিতিতে বলেন, উক্ত ২০ শতাংশ জমি বিগত ২০০৪ সালে আমার পুত্র বধু  ঝুমুর এর নিকট ৯১৬৯ নং সাফ কবলা দলিল মুলে বিক্রি করে দিয়েছি,  সুতারাং উক্ত ২০ শতাংশ জমি বা উহার মূল্য বাবদ ২,৯৮,২৮০/- (দুই লক্ষ আটানব্বই হাজার দুইশত আশি) টাকা ফেরৎ দিতে পারবো না, আপনারা যা পারেন তাই করেন, এই কথাবলে তিনি রাগান্বিত হয়ে চলে যাওয়ার সময় আরোও বলেন, অত্র এলাকায় ডাসার এগ্রো লিঃ কে কোনভাবেই ব্যাবসা করতে দিবেনা।

ঐদিন রাত ১০টায় নুরুল ইসলাম সরকার এর নির্দেশে ফার্মের বেত গাছের বেড়া ও বিভিন্ন গাছে অগ্নিকান্ড ঘটিয়েছে বলে  থানায় অভিযোগ দায়ের ডাসার এগ্রো লিঃ এর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আব্দুল হাই। এবিষয়ে ভালুকা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও জাল দলিল বানিয়ে প্রতারনা করে জমি বিক্রি করার দায়ে ডাসার এগ্রো লিঃ এর পক্ষে ব্যাবস্থাপনা পরিচালক, মোঃ আব্দুল হাই বাদী হয়ে গত ১২/০২/২৩ তারিখ ময়মনসিংহ জেলা বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্টেট ৮নং আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন, যাহার নং ভালুকা সি, আর ১২৮/২৩।

এছাড়াও তার অপকর্মের ব্যাপারে সরজমিনে খোঁজখবর নিয়ে জনা গেছে, একই এলাকার রামপুর গ্রামের রমজান আলীর ছেলে চাঁন মিয়া, ১৯৯৫ সালের দিকে একটি মার্ডার মামলার আসামী হয়, সেসময় চাঁন মিয়ার পিতা রমজান আলী কে মামলাটি আপোষ করিয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রায় দুই একর জমি বিক্রির নগদ টাকা নেয়, কিন্তু সেই মামলার বাদী পক্ষের সঙ্গে আপোষ না করিয়ে পুরো টাকাটা সে আত্মসাৎ করে। এদিকে ওই মামলায় চাঁন মিয়ার সাজা হয়ে যায়, সে দির্ঘ প্রায় ১৭ বছর কারাগারে কাটিয়ে বর্তমানে তিনি বাড়িতে। শুধু এখানেই শেষ নয়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অত্র এলাকার অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে এরকম আরোও অনেক পরিবার ধংস হয়ে যাওয়ার পিছনে নুরুল ইসলাম সরকার দায়ী।

একাধিক মামলার আসামী হয়েও আইনের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে গায়েবী ক্ষমতাবলে সন্ত্রাসী কায়দায় এখনো দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। এত অপকর্ম করার পরেও বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত কোন বিচার না হওয়ায়, এলাকায় তার অপকর্মের বিরুদ্ধে এখন আর কেউ ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায়না। সর্বশেষ সে একজন সেনা কর্মকর্তা (অবঃ) মেজর কে মারধর করে এবং তার ব্যাবসায়ীক প্রতিষ্ঠান চালাতে দিবেনা বলে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র করছে।

এব্যাপারে মেদুয়ারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জেসমিন নাহার রানী এর নিকট জানতে চাওয়া হয় যে, তার ইউনিয়নের অধিনস্ত ডাসার এগ্রো লিঃ নামে প্রতিষ্ঠানে চাঁদা দাবী করা নুরুল ইসলাম সরকার এর ব্যাপারে, প্রতিত্তুরে তিনি বলেন নুরুল ইসলাম সরকার খুবই খরাপ প্রকৃতির একজন লোক, তিনি আরোও বলেন নুরুল ইসলাম সরকার  বিএনপি নেতা হওয়া সত্বেও, বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের ভালুকা উপজেলার প্রভাবশালী এক জনপ্রতিনিধির নাম ভাঙিয়ে এলাকায় চাঁদাবাজি সহ ননা অপকর্ম করছে, এই ধরনের অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। এছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী সহ এই ঘটনার ভুক্তভোগী সকলেরই দাবি নুরুল ইসলাম সরকারকে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দেওয়া হোক।

এতক্ষণ যেই ব্যাক্তির অপকর্মের কথা বলছিলাম  তিনি হলেন, ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার মেদুয়ারী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বরাইদ গ্রামের, মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে মোঃ নুরুল ইসলাম সরকার (৬১)। তিনি দির্ঘ প্রায় ৪০ বছর পূর্বে মেদুয়ারী ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম সরকার ছিলেন, এরপর রাজনিতিতে যোগদিয়ে অত্র ইউনিয়ন বিএনপির সহ- সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি হয়ে উঠেন হিংস্র সন্ত্রাস।

জীবনে এত অপকর্ম করার পরেও বর্তমানে তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা হলেও তাকে আটক করা হয়না, সুযোগ করে দেওয়া হয় অগ্রিম জামিন নেওয়ার। এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে ভালুকা মডেল থানায় কর্মরত উপ-পরিদর্শক মানিকুল এর বিরুদ্ধে। এ সকল ঘটনার বিষয়ে নুরুল ইসলাম সরকার এর বাড়িতে গিয়ে তাকে না পেয়ে, মুঠোফোনে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন সকল ঘটনা মিথ্যা।

জামিন নিয়ে আবারও তিনি ব্যাবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করার জন্য, কার্যক্রমে বাধা প্রদান সহ অগ্নিকান্ড ঘটানোর দায়ে ভালুকা মডেল থানায় অভিযোগের বিষয়ে, একাধিক মামলার আসামী ঐ নুরুল ইসলাম সরকারের ব্যাপারে, ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার এর নিকট সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য তার কার্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া গেলেও তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কথা বলতে রাজি হননি।