নারী উদ্যোক্তাদের প্রথম দরকার পরিবারের সহযোগিতা: মুনা চৌধুরী
সফল নারী উদ্যোক্তা ও সংগঠক মুনা চৌধুরী। আলোচিত সংগঠন ইয়ুথ বাংলা কালচারাল ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান তিনি। ক্যারিয়ার ও সংগঠনের নানা দিক নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেছেন ‘দৈনিক সকালের সময়’-এর সঙ্গে। সাক্ষাতকার নিয়েছেন বাবুল হৃদয়।
প্রথমেই ইয়ুথ বাংলা কালচারাল ফাউন্ডেশন নিয়ে বলুন
মুনা চৌধুরী : ইয়ুথ বাংলা কালচারাল ফাউন্ডেশন প্রতিবছর উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি বড় মেলার আয়োজন করে থাকে। উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার জন্য এই মেলার আয়োজন করা হয়। তিন থেকে চারদিনের একটি মেলা (ফেস্টিবেল) করি। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নারীরা যারা কাজ করছে তাদেরকে একটা প্লাটফর্ম দেওয়া, তাদের একটা সুযোগ করে দেওয়াই প্রধান উদ্দেশ্য।
এছাড়া তাদের আমরা ইন্টারভিউ করছি, তাদের যেনো ভালো সেল হয়, মাকের্টিং হয়, মানুষের কাছে যেন তাদের প্রোডাক্টটি পৌঁছাতে পারে সেই ব্যবস্থাটি আমরা করে দেওয়ার চেষ্টা করছি।তাদেরকে আরো বেশি উৎসাহিত করতে কালচারাল প্রোগ্রাম করি এবং তাদেরকে একটি অ্যাওয়ার্ড ও সার্টিফিকেট তুলে দেওয়ার চেষ্টা করি। যেটা আমরা বিগত দিনেও করেছি, প্রতি বছর করছি।
এছাড়া ইয়ুথ বাংলা থেকে আমরা মানবিক সেবা ও করছি। যেমন প্রতিবছর শীতে কম্বল বিতরণ, প্রতি ঈদুল ফিতরে ইফতার দিচ্ছি, ঈদ উপহার দিচ্ছি, বৃদ্ধাশ্রমে খাবার দিচ্ছি, অনাথ শিশুদের এতিমখানায়ও আমরা খাবার দিয়ে থাকি। যেহেতু আমরা মিডিয়ায় কাজ করছি করোনার সময় মধ্যবিও পরিবার এখানে যারা ডিরেক্টর, প্রোডিউসার, মেকআপ আর্টিস্ট, মিউজিশিয়ান, লাইটম্যান অর্থ্যাৎ যারা পর্দার পেছনে কাজ করে আমরা তাদের এক মাসের বাজার পৌঁছে দেওয়া, তাদের ছেলে-মেয়েদের স্কুলের বেতনটা দিয়েছি এবং অসুস্থ রোগীদের সেবা বা তাদের সংসারের বাড়ি ভাড়াটা আমরা দিয়েছি। এগুলো কিন্তু আমরা অকপটে করে গিয়েছি। কারণ আমাদের ইয়ুথ বাংলা একটি অরাজনৈতিক সংগঠন এবং এখানে আমরা প্রায় চারশ’র কাছাকাছি আমাদের সকল শিল্পীদেরকে নিয়ে আমাদের ইয়ুথ বাংলা কালচারাল ফাউন্ডেশন’।
এছাড়া গ্রামে ডিপটিউবওয়েল দিয়েছি। রাখালদের গরু দিয়েছি যাতে গরুটা বড় করে তারা যেন স্বাবলম্বী হয়, আমরা অনেক মহিলাদেরকে সেলাই মেশিন দিয়েছি। নোয়াখালীতে একটি পরিবারকে আমরা চার রুমের ঘর তুলে দিয়েছি, একটি রিকশা দিয়েছি। তাদেরকে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করেছি।
দেশের বাইরে ইয়ুথ বাংলা কালচারাল ফাউন্ডেশন-এর শাখা রয়েছে-
মুনা চৌধুরী : ইয়ুথ বাংলা কালচারাল ফাউন্ডেশন বাংলাদেশসহ মোট ২৮টি দেশে শাখা আছে। যেমন- স্পেন, জাপান, সিঙ্গাপুর, ইংল্যান্ড ইত্যাদি দেশে শাখা আছে। তারাও সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করছে এবং বাংলাদেশে যখন নিজেদের অর্থয়ানে সমস্য হয় তখন তারাও অর্থায়নের বিষয়ে সহযোগিতা করে কারণ যে আটাশটা দেশ আছে সেখানকার সদস্যবৃন্দ আমরা সকলে একটা পরিবারের মতো। তাছাড়া সংস্কৃতি মন্ত্রনালয় থেকেও আমাদের সহযোগিতা করছেন।
ইয়ুথ বাংলা কালচারাল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কে
মুনা চৌধুরী : ইয়ুথ বাংলা কালচারাল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হচ্ছে মোজাহের উদ্দিন চৌধুরী কমল এবং আমি মুনা চৌধুরী ভাইস চেয়ারম্যান একদম প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে আছি।
প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য কি ?
মুনা চৌধুরী : আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো, আমাদের বাংলাদেশের যে সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যে সঠিক ইতিহাস আমরা বিশ্বের দরবারে তুলে দিবো। আমাদের প্রবাসী বাঙালীদের যে এই প্রজন্ম তাদের কাছে আমরা সংস্কৃতির মাধ্যমে আমরা বাঙালি সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে চাই। ওদেরকে জানাতে চাই আমাদের বাংলার সংস্কৃতি অসম্ভব সুন্দর, অসম্ভব রঙিন এবং এটার মধ্যে একটা আন্তরিকতা আছে, একটা ভালবাসা আছে।
আরেকটি কথা বাংলাদেশ যে পতাকার জন্য যুদ্ধ করেছে, ত্রিশ লক্ষ শহীদ এবং শহীদদের রক্তের বিনিময়ে এবং তিন লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পেয়েছি আমাদের এই বিজয় এটি আসলে আমার মনে হয় প্রত্যেক প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের জানা দরকার। এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে নিয়ে আমরা সংস্কৃতির কর্মীরা মিলে আমরা এই সংগঠনটা গড়ে তুলি। যেমন আমাদের ইয়ুথ বাংলার যে অফিস এটা মুলত হোরাইজনের অফিস এখানে আমরা আলোচনা করি, এখানে একটি স্টুডিও আছে এখানে বাচ্চাদের বিনামূল্যে কবিতা শেখানো হয়, গান প্র্যাকটিস করতে পারে, রেকর্ডিং করতে পারে, নাচ শিখতে পারে এবং এগুলোর জন্য কাউকে কোনো অর্থ দিতে হবে না।
আমাদের যে গানের শিল্পী, চিএশিল্পী আছে তারা তাদের ইচ্ছামত এখানে কাজ করছে এবং এটি তাদের নিজেদের অফিস। এখানে তারা বিভিন্ন রকম সুযোগ- সুবিধা পেয়ে থাকে। এমনকি নতুন প্রজন্মের কলাকুশলীরা তাদের থেকে বড় আর্টিস্টদের সাথে দেখা করতে পারছে, কথা বলতে পারছে, একসাথে কাজ করতে পারছে।
প্রাপ্তি নিয়ে বলেন-
মুনা চৌধুরী : ইয়ুথ বাংলা কালচারাল ফাউন্ডেশন সংস্কৃতিতে অসামান্য ভূমিকা রাখার জন্য ২০১৭ সালের ১০ই জানুয়ারী রাষ্ট্রপতি এ্যাওর্য়াড পায় । এটি একটি রেজিষ্ট্রেশনকৃত সংগঠন। ২০২২ সালের ২৪ই জুন একটি আর্ন্তজাতিক অ্যাওর্য়াড পেয়েছি, যেটি আমি নিজ হাতে থাইল্যান্ড থেকে নিয়ে এসেছি। তখন আমি প্রেসিডেন্ট পদে নিযুক্ত ছিলাম। এটি হচ্ছে ইয়ুথ গ্লোবাল অ্যাওর্য়াড ২০২২।
উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করার অনভুুতির কথা শুনি-
মুনা চৌধুরী : যখন নারীদের নিয়ে কাজ করি তখন নিজেকে নিয়ে অনেক গর্বিতবোধ করি কারণ আমি একজন নারী এবং আমি আরও দশজন নারী উদ্যোক্তাকে উৎসাহিত করতে পারছি। সুযোগ করে দিতে পারছি। আমরা যেমন উদ্যোক্তারা আছি সবাই কিন্তু করোনার সময় ভীষণ হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম যে কিভাবে কাজের পরিচিতি পাবে তো সেই সময় আমরা প্রতন্ত অঞ্চল থেকে নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে অনলাইনে ফেস্টিভ্যাল করতে একটি পেজ ওপেন করি এবং সেখানে আমরা উদ্যোক্তাদের একঘন্টা করে একটি লাইভ ইন্টারভিউ নেই। এই ইন্টারভিউর মাধ্যমে তারা কিন্তু অনেক লাভবান হয়েছিল। পরবর্তীতে তারা আমাকে জানিয়েছে যে তাদের সেল অনেক ভালো হয়েছে, গ্রাহক বেড়েছে। এই শান্তির বানী শুনে অনেক আনন্দ পাই। শুনতে ভালোও লাগে। এজন্য আমি মনে করি এটাই ইয়ুথ বাংলার অর্জন।
আপনার আরও কিছু প্রতিষ্ঠান আছে
মুনা চৌধুরী: হোরাইজম নামে আমার একটি প্রতিষ্ঠান আছে। যার চেয়ারম্যান আমি। হোরাইজমের ফিশ অ্যান্ড এগ্রো আছে, একটি মাল্টিমিডিয়া আছে, ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড আছে, বির্ল্ডাস লিমিটেড আছে, হোরাইজমের মিউজিক স্টুডিও আছে, যেখানে গান রেকর্ড করা হয় এবং হোরাইজম কার ওর্য়াকশপ আছে যেটা উত্তরা বেড়িবাঁধে অবস্থিত।
এছাড়া ফ্যাশন এ্যান্ড গ্লামার পত্রিকার সম্পাদক এবং প্রকাশক আমার স্বামী, আমিও এটার দেখাশোনা করছি। আমার ‘কালার টাচ’ নামে বুটিক হাউস আছে । আমি নাটকও তৈরি করেছি। প্রায়ই চুরাশিটার মত নাটক আমি করেছি। মোটামুটি অনেক কিছুর সাথে জড়িত আছি।
একজন নারী হয়ে এতকিছু কিভাবে সামাল দেন
মুনা চৌধুরী : আমরা নারী, আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার কিন্তু আমাদের সংসার, স্বামী, সন্তান। এই তিনটা জিনিস সেট করে কিন্তু আমাদের বাইরের কাজ করতে হয়। সেক্ষেত্রে প্রথম দরকার হলো পরিবারের সহযোগিতা। আপনাকে পরিবার যদি সহযোগিতা না করে আপনি কিন্তু অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবেন না। আমি অনেক ভাগ্যবান যে আমার পরিবার আমাকে সহযোগিতা করে। আমার ছেলেমেয়েরা কিন্তু জানে যে আমি বাইরে কাজ করি সেক্ষেত্রে তারাও আমাকে অনেক বোঝে। যদি আপনার জীবনটাকে খুব গুছিয়ে ফেলেন যে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমি একটা রুটিনে চলবো সেক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয় না।
আমরা আপনার জন্ম, শৈশব নিয়ে বলেন-
মুনা চৌধুরী : আমার জন্মস্থান বরিশাল। আমার শৈশবটা ভীষণ মজার। আমরা চার বোন। আমাদের কোনো ভাই নেই। আমার বাবা বিদেশে সারা জীবন কাটিয়েছে। আমার মা ঘরে আমাদের দেখাশোনার পাশাপাশি নিজের পড়াশোনা চালিয়ে গেছে। আমার দুই মামা মুক্তিযুদ্ধে কিন্তু শহীদ হয়েছেন। আমার মা কিন্তু শহীদ পরিবারের একজন। তাছাড়া আমাদের শৈশব আমরা অনেক আনন্দের কাটিয়েছি।
নারীদের এগিয়ে যেতে আপনার পরামর্শ-
মুনা চৌধুরী : বড় হতে নারীদের প্রচন্ড পরিমাণে আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। নিজের উপরে এবং প্রচন্ড পরিশ্রমী হতে হবে। যখন একজন উদ্যোক্তা হবেন বা কোনো ব্যবসার সাথে জড়িত হবেন তখন অল্প সময়ের মধ্যে কোনো ফলাফলের আশা করবেন না। মনে মনে চাইতে হবে আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে এই ব্যবসাটাকে তুলে ধরবো। ব্যবসায় লাভ লোকসান আছে যদি ক্ষতি হয় তাহলে আপনি ভেঙে পরতে পারবেন না।
আমরা নারীরা কিন্তু প্রচন্ড সঞ্চয়ী। আমরা কিন্তু কোনো ক্ষতি হোক এমন প্রজেক্টে কিন্তু যেতে চাই না। আপনাকে যদি লক্ষ্যে পৌঁছাতে হয় তাহলে আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে, কষ্ট করতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে এবং এটার পিছনে লেগে থাকতে হবে ও কাজের পাশাপাশি আপনাকে সংসারের জন্যও সময় দিতে হবে।
ধন্যবাদ আপনাকে
মুনা চৌধুরী : ধন্যবাদ ‘দৈনিক সকালের সময়’ ও আপনাকে।
এমএসএম / এমএসএম
এইউবিতে ‘ফাউন্ডার অ্যাওয়ার্ড’ পাচ্ছেন ৬ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ৪৪৭তম পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি-এর শরীয়াহ্ সুপারভাইজারী কমিটির ৯০তম সভা অনুষ্ঠিত
পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের জন্য এএমএলন ও সিএফটি সংক্রান্ত সচেতনতামূলক কর্মশালার আয়োজন করলো আইএফআইসি ব্যাংক
সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটিতে মহান বিজয় দিবস উদযাপন
নিজ উদ্যোগে ড্রোন উদ্ভাবনে অনন্য আনসার সদস্য আবুল হোসেন, মিলছে মহাপরিচালকের পৃষ্ঠপোষকতা
তিতাস গ্যাসে প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে ২% নগদ লভ্যাংশ অনুমোদিত
অ্যাপার্টমেন্ট কেনার আগে ৫টি জরুরি বিষয়!
যমুনা ব্যাংক পিএলসি কক্সবাজারের হিমছড়িতে হোটেল বেস্ট ওয়েস্টার্ন প্লাস বে হিলসের সাথে কর্পোরেট চুক্তি স্বাক্ষর করেছে
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের ৩৮তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
*নিজ উদ্যোগে ড্রোন উদ্ভাবনে অনন্য আনসার সদস্য আবুল হোসেন, মিলছে মহাপরিচালকের পৃষ্ঠপোষকতা*
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২; চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কোস্ট গার্ড ও পুলিশের যৌথ অভিযানে ১ জন আটক