কর্মক্ষেত্রে নারীরা আগের চেয়ে বেশি নিয়োজিত : তৃণা মজুমদার
ইঞ্জিনিয়ার, দক্ষ নৃত্যশিল্পী ও সফল নারী সংগঠক তৃণা মজুমদার। বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সমুন্নত করে তা নতুন প্রজন্মের মাঝে লালনের মানসে তৈরির মহান কাজে গঠন করেছেন ‘ত্রিশূল’। বর্তমান ব্যস্ততা ও সংস্কৃতি নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন ‘দৈনিক সকালের সময়ে’র সঙ্গে। সাক্ষাতকার নিয়েছেন বাবুল হৃদয়।

ত্রিশূল-এর যাত্রা কখন, কিভাবে হয়েছিল?
বাংলাদেশের হাজার বছরের সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেয়ার প্রত্যয় নিয়ে, “স্বোপার্যিত কৃষ্টির নীত”-এই স্লোগান কে ধারন করে ২০১৯-এর নভেম্বরে নওগাঁ জেলার, নিয়ামতপুর উপজেলায় যাত্রা শুরু করে “ ত্রিশূল”। বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সমুন্নত করে তা নতুন প্রজন্মের মাঝে যথাযথ ভাবে লালনের মানসে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টীর সাঁওতাল সম্প্রদায় নিয়ে নতুন ভাবে হয় ত্রিশূল” এর আত্মপ্রকাশ।
ত্রিশূল এর সাংস্কৃতিক কর্মীরা প্রথম পারফর্মেন্স করে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাপী নৃত্যশিল্পীদের সংগঠক The world Dance Alliance-Asia pacific এর উদ্যোগে Ocean Dance Festival-২০১৯ এ।
বর্তমানে ত্রিশূল এর অবস্থান সম্পর্কে বলুন?
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি রত্রিশ জন সাঁওতাল সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও ”ত্রিশূল”এর বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৬শত জন ছাড়িয়ে গেছে। এরা সকলেই সাংস্কৃতিক কর্মী। তাদের মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির সাঁওতাল এবং উড়াও সম্প্রদায়।
সবাইকে একই ছত্র ছায়ার নিচে নিয়ে আসবার প্রধান কারন-
কালের বিবর্তনে আমাদের বাংলা সংস্কৃতির যা আমরা হাড়িয়ে ফেলেছি তার যতদুর সম্ভব যেন আমরা ফিরেপাই। সাংস্কৃতিক কর্মসূচীর পাশাপাশি বিভিন্ন মানবসেবায় নিজেদের নিয়োজিত রাখাও আমাদের ব্রত।
করোনাকালীন সময়ে “ত্রিশূলের” পক্ষ হতে আমরা ৩০,০০০ মাস্ক নিজ হাতে সেলাই করে তা এলাকার অসহায়দের মধ্যে বন্টন, এছাড়াও খাদ্য সহায়তাও সাবান বিতরনের কাজ আমরা করেছি।

শুনেছি ত্রিশূল দেশের বাইরেও কাজ করছে-
ইতোমধ্যে আমরা ভারত সরকারের আমন্ত্রণে ভারতের ছত্তিস গড়ে National Tribal Dance Festival, Raipur, Chhattisgarh-এ অংশগ্রহণ করেছি। ভারতের ২৫টি রাজ্যসহ মোট ৬টা দেশের প্রায় ১৪০০ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নৃত্যশিল্পীরা এই উৎসবে অংশ গ্রহণ করেন।
দেশের বাইরে বাংলাদেশের সংস্কৃতির কদর বরাবরই প্রশংসনীয়। আমাদের গুরুজন যারা আছেন তাঁরা সুযোগ পেলেই বহু কাল যাবৎ ধরে আমাদের দেশী সংস্কৃতির প্রচারও প্রসার বিদেশে করে আসছেন। আমি যতবারই বিদেশের কোন উৎসবে অংশগ্রহণ করেছি বিদেশীদের মুখে আমাদের দেশী সংস্কৃতির প্রশংসা সর্বদাই আমায় মুগ্ধ করেছে।
ত্রিশূল নিয়ে আগামীর ভাবনাকি?
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষাও সংস্কৃতি তথা বাংলার সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা এবং তা বিশ্ব দরবারে উপস্থাপনের ক্ষেত্র প্রস্তুতের উদ্দেশ্যে আগামীতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করাই আমাদের ভাবনা। পাশাপাশি ক্ষুদ্রনৃ-গোষ্ঠীসহ সমাজে পিছিয়ে পড়া এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মানব সম্পদ উন্নয়ন,দারিদ্র বিমোচন ও কল্যাণের লক্ষ্যে তথা আর্থ সামাজিক উন্নয়নে সরকার কর্তৃক গৃহীত বহুমাত্রিক পদক্ষেপের সাথে মিল রেখে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণকরা।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কে নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা কথা শুনি-
আমাদের গ্রামের (নিয়ামতপুর,নওগাঁ) বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদের আমি আমার জন্মের পর থেকেই দেখে আসছি। তাদের সাথে আমাদের একাত্বতা সবসময় ছিল এবং আছে। খুব কাছে থেকেই আমি তাদের জীবন-যাপনের পরিবর্তন দেখে আসছি। একসময় শুধু তারা কৃষিকাজ করেই জীবিকা অর্জন করতো।
কিন্তু বর্তমানে সুযোগ পেলেই শিক্ষাগ্রহণ এবং সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রেও নিজেদেরকে উদ্ভুদ্ধ করে থাকে। তারা অনেক প্রতিভাবান এবং পরিশ্রমী। আরও একটি কথা না উল্লেখ করলেই নয় ,সাঁওতালরা প্রকৃতিপ্রেমীএবং তারা উৎসব খুব পছন্দ করে। তারা যে কোনো পরিবেশ কে উৎসব মুখর করে তুলতে পারে। যেমন-বসন্তে “বাহা” , শীতে “সহরাই”, দূর্গাপূজায় দাঁশাই, জ্যৈষ্ঠর ফলমূল উৎপাদনের সময় “এরোয়” , ফসল ঘরে তোলার সময় “লবান” ইত্যাদি আরও অনেক রকম উৎসবে তারা মেতে উঠে আনন্দে, কিন্তু এই সংস্কৃতি বলতে গেলে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। শুধু আমাদের একটু সহযোগিতাই পারে তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে।
সফল সংগঠকের পাশাপাশি আপনি একজন নৃত্যশিল্পীও-
একদম ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনার পাশাপাশি আমার নৃত্যচর্চা। আমার প্রয়াত মা চাচ্ছিল লেখাপড়ার পাশাপাশি যেন আমি নৃত্য শিখি। আমার পরিবারের সবাই সংস্কৃতিমনা। আমার বড় তিন বোন আমাকে সঙ্গে আমার প্রথম নৃত্য গুরু প্রয়াত আব্দুস সামাদ পলাশের কাছে নিয়ে যায়।
নাচে তালিম নিয়েছেন কাদের থেকে-
প্রয়াত গুরু আব্দুস সামাদ পলাশ স্যারের কাছে আমার নৃত্যচর্চা শুরু হয়। গুরু শিবলী মোহাম্মদ স্যারের কাছে কিছুদিন শাস্ত্রীয় কথক নৃত্যের উপর তালিম নিয়েছি। পরবর্তীতে গুরু ওয়ার্দা রিহ্যাবের কাছে আমি শাস্ত্রীয় মনিপুরী নৃত্যে এবং ভারতের গুরু জয়দীপ পালিতের কাছে বর্তমানে আমি “টফধু ঝযধহশধৎ উধহপব ঝঃুষব” নৃত্যে তালিম নিচ্ছি।
আপনার জন্ম, শৈশর ও পড়াশুনা নিয়ে বলেন?
আমার জন্ম নওগাঁ জেলায়। সেখানেই আমার শৈশব কাটে। আমার স্কুল ছিল “নওগাঁ সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়” এবং “কলেজ হলিক্রস কলেজ,”। আমি Ahsanullah University of Science and Technology হতে ÒElectrical and Electronics Engineering(EEE) তে BSC শেষ করেছি।
Summit Communication Limited company তে আমি প্রায় ৪ বছর ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলাম। যেহেতু বর্তমান যুগ ডিজিটাল যুগ। সরকার Information Technology (IT) ব্যবহার করে পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীদের জীবনের মান উন্নয়ন করার জন্য বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এবং ইতিমধ্যেই তা বাস্তবায়ন হয়েছে।
আমি প্রকৌশলী হিসেবে আমার সংস্থা ” ত্রিশূল ” এর মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মানব সম্পদ উন্নয়নের লক্ষে Information technology সম্পর্কে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।
আর নাচ নিয়ে আগামী ইচ্ছে কি?
মঞ্চে নৃত্য পরিবেশন করতে হলে সময় জ্ঞান, পরিমিতবোধ,পরিচ্ছন্ন কোরিওগ্রাফি প্রয়োজন। ত্রিশূলের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর নাচ গুলোকে মঞ্চায়স্থ করতে হলে আমাকে সেই নাচটির মূল বিষয়টিকে মাথায় রেখে এমনভাবে কোরিওগ্রাফি করতে হয় যাতে বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে দর্শক সেইটা আনন্দে উপভোগ করতে পারেন। কারণ আজকাল আমাদের নিজ সংস্কৃতির সাথে ওয়েস্টার্ন এতো মিশে গেছে যে একদম গোড়াতে ফিরে যেতে কেউ আমরা চাইলেও পারছিনা।
আমি চাই সেই শিখড়ে পৌঁছতে যেখানে আমরা ফেলে এসেছি আমাদের স্বোপার্জিত সংস্কৃতি। যা দর্শকের কাছে তুলে ধরলে আরো বেশি উপভোগ করতে পারবে।
একজন নারী হয়ে কাজের সমস্য ও সম্ভাবনার কথা বলেন-
আমি শুধু সম্ভাবনাই দেখার চেষ্টা করি। কারণ সমস্যা যত আছে বা যত আমি দেখতে যাই আমার কাজের গতিকে তা ক্রমশ স্থির করে দেয়। নারীদের প্রতি দৃষ্টিভংগী অনেকটা আগের থেকে বর্তমানে ভালোর দিকে। তবে কিছু লোক বদলে গেলেও একটি বিরাট অংশই বদলায়নি, কিন্তু তাই বলে নারীরা পিছিয়ে নেই। কর্মক্ষেত্রে নারীরা নিজেদেরকে আগের থেকে আরো বেশি নিয়োজিত করছেন। অনেকেই ঊ-পড়সসবৎপব এর আওতায় ছোট ছোট ব্যবসার উদ্যোগ নিচ্ছেন। নারী উদ্যোগতার হার এখন আগের থেকে নিঃসন্দেহে অনেক বেশি।
ত্রিশূলে নারীদের অংশগ্রহন কেমন? তাদের মাঝে কেমন সম্ভাবনা দেখতে পারছেন?
ত্রিশূলের সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে নারীদের অংশগ্রহণ পুরুষের তুলনায় বেশি। এখানকার নারীরা একদম গ্রাম অঞ্চলের হলেও তারা বেশির ভাগই লেখাপড়া করে, শুধু তাই না জীবন ও জীবিকার ত্যাগিদে তারা পুরুষের পাশাপাশি মাঠে গিয়ে ধান লাগানো, ফসলের পরিচর্চা, গবাদি পশুপালন অর্থাৎ বিভিন্ন কৃষিকাজে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে। এইভাবে তারা ছোট থেকেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে।
এমএসএম / এমএসএম
এইউবিতে ‘ফাউন্ডার অ্যাওয়ার্ড’ পাচ্ছেন ৬ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ৪৪৭তম পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি-এর শরীয়াহ্ সুপারভাইজারী কমিটির ৯০তম সভা অনুষ্ঠিত
পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের জন্য এএমএলন ও সিএফটি সংক্রান্ত সচেতনতামূলক কর্মশালার আয়োজন করলো আইএফআইসি ব্যাংক
সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটিতে মহান বিজয় দিবস উদযাপন
নিজ উদ্যোগে ড্রোন উদ্ভাবনে অনন্য আনসার সদস্য আবুল হোসেন, মিলছে মহাপরিচালকের পৃষ্ঠপোষকতা
তিতাস গ্যাসে প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে ২% নগদ লভ্যাংশ অনুমোদিত
অ্যাপার্টমেন্ট কেনার আগে ৫টি জরুরি বিষয়!
যমুনা ব্যাংক পিএলসি কক্সবাজারের হিমছড়িতে হোটেল বেস্ট ওয়েস্টার্ন প্লাস বে হিলসের সাথে কর্পোরেট চুক্তি স্বাক্ষর করেছে
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের ৩৮তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
*নিজ উদ্যোগে ড্রোন উদ্ভাবনে অনন্য আনসার সদস্য আবুল হোসেন, মিলছে মহাপরিচালকের পৃষ্ঠপোষকতা*
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২; চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কোস্ট গার্ড ও পুলিশের যৌথ অভিযানে ১ জন আটক