বিষেভরা বিষখালী নদীর দুই তীর ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ ও বায়ুমন্ডল

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমির বুক চিরে বয়ে গেছে সুমিষ্ট জলরাশির দৃষ্টিনন্দন নদী বিষখালী। কিছু অসাধু ব্যবসা-সম্পৃক্ত লোক সেই নদীর দুই তীর ভরে দিয়েছে বিষে। তাই নদীর নদীর নাম বিষখালী এখন প্রাসঙ্গিক। নদীর তীরে তৈরি ইটভাটা ও কয়লা তৈরির কারখানা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ার বিষক্রিয়ায় বিষাক্ত হয়ে উঠছে বিষখালী নদীর উপকূলীয় অঞ্চলের বায়ুমন্ডল।
বিষখালী নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঝালকাঠি ও বরগুনা জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১০৫ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৭৬০ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃক নাম্বার অনুযায়ী বিষখালী নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর ৬০। বিষখালী নদীটি অত্যন্ত খরস্রোতা। ঝালকাঠি জেলায় এসে নদীটি বড় বাঁক নিয়ে বরগুনা জেলার মধ্যভাগ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে। গতিপথের প্রথম ৩০ কিমি এর গড় প্রস্থ হল ১ কিমি। পরবর্তি ৬৬ কিমি এই নদীর গড় প্রস্থ প্রায় ২ কিমি। এর গড় গভীরতা ১৬ মিটার। কাউখালি এবং গাবখান খালের মাধ্যমে মধুমতি এবং কচা নদীর পানি বিষখালী নদীতে প্রবাহিত হয়েছে। জোয়ারভাটা এই নদীতে সক্রিয়। সমুদ্রতটের খুব কাছে হওয়ায় এই নদীর পানিতে লবনাক্ততার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। বিষখালীর দুইটি শাখা নদী খাগদোন খাল ও বদনখালি খাল।
ইটভাটা এবং কয়লা তৈরির কারখানায় পোড়ানো হয় লক্ষ লক্ষ টন শুকনো কাঠ। কারখানার নির্গত কালো ধোঁয়ায় ব্যহত হয় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। কালো ধোঁয়ার আক্রমণে সেখানে বসবাস করা সববয়সী মানুষের শ্বাসকষ্টসহ নানাপ্রকার রোগ ব্যায়াধি লেগেই থাকে। প্রায় তিন দশক ধরে ওই অঞ্চলে ইটভাটার কালো ধোয়া ছড়িয়ে জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। সরকারি দলের পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে কিছু লোক এই অবৈধ কাজ চলমান রাখছে। সাধারণ মানুষেরা নিরুপায় চিত্তে এ-সব অপকর্ম সহ্য করে যাচ্ছে। প্রশাসনের সহায়তায় বরগুনা পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র শাহাদাত হোসেন কাকচিড়া ফেরিঘাটে ইট তৈরির কারখানা করে নদীর তীর কেটে ইটভাটার কালো ধোয়া ছড়িয়ে জনস্বাস্থ্যের চরমভাবে ক্ষতি করছে। কালমেঘা পাথরঘাটা ছাড়াও নদীর দুই তীরে বহু ইটবাটা তৈরি হয়েছে। কামাল খান নামের ইটবাটার একজন মালিকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি কথা বলতে রাজি হয়নি। পাথরঘাটার কাকচিড়া বাজেট সংলগ্ন নদীর তীরে কয়লা তৈরির কারখানা আছে ফজলুল হকের নামের ৫৮ বছর বয়সী এক ব্যবসায়ীর। ফজলুল হকের নিজস্ব ট্রলার দিয়ে তার কারখানায় তৈরি কয়লা খুলনা এবং ঢাকায় সরবারহ করা হয়। ফজলুল হক যেখানে কয়লা তৈরির কারখানা দিয়েছে তার নিকটে একটি প্রাইমারী বিদ্যালয় আছে। কয়লার কারখানা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশেপাশের এলাকায় পৌঁছে যায়। এতে শিশুদের রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই কালো ধোয়ার প্রভাবে স্থানীয় গাছপালা মরে যায় এবং নিশ্চিহ্ন হয়েছে গাছে বসবাস করা প্রাণী ও পাখি। ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ ও বায়ুমন্ডল।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধভাবে এসব ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে এসব অবৈধ ইটভাটা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া ইটভাটায় নিম্নমানের জ্বালানি ব্যবহারের ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। ২৩ জুলাই বিষখালী নদীর একাংশের জেলা বরগুনা ভ্রমণে গিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করার সময় সেখানকার জেলার বিদায়ী জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান অবৈধ ইটভাটা বন্ধের জন্য কোন পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা জানতে খোঁজ নিয়ে জানা যায় জেলা প্রশাসক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য (২১ জুলাই) শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বরগুনার বেশ কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, ডিসি সাহেব বরগুনার প্রশাসনের সমস্ত পর্যায়ে ঘুষ লেনদেনের ট্রেনিং দিয়ে গেছে। ডিসি সাহেব বরগুনার ইটভাটাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি নগদ নিয়ে অবৈধ ইটভাটাগুলো পরিচালনার সুযোগ করে দিয়েছে। বরগুনা জেলার প্রভাবশালী একটি দৈনিক সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক সমাজবিজ্ঞানী ইউনুস সোহাগ জানিয়েছেন ইট প্রস্তুত কারখানায় জ্বালানি কাঠ ও অত্যন্ত নিম্নমানের কয়লা পোড়ানো হয় তাছাড়াও স্বল্প উচ্চতার ড্রাম চিমনি ব্যবহার করায় ইটভাটাগুলোতে নির্গত হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে কালো ধোঁয়া। সে ধোঁয়া বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে চার পাশে। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়সহ জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে।
বরগুনার বামনার উপজেলার বিষখালী নদীর তীরবর্তী অন্তত ১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়েই চলছে এক দিকে ভাঙন আর অন্য দিকে বেকু মেশিন ও মাটিকাটা শ্রমিকদের দল বেঁধে মাটি কাটার মহোৎসব। এই মাটি কেটে নিচ্ছে ইট ভাটা মালিক চক্র। এই চক্র কখনো দিনের আলোয় আবার কখনো রাতের আঁধারে চালায় নদী তীরের মাটি কেটে নেওয়ার কাজ। তবুও প্রশাসন যেন নির্বিকার। বামনা উপজেলার প্রায় ১২টি ইটভাটা রয়েছে। এই ইটভাটাগুলোর ইট তৈরিতে প্রতিদিন কাচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে হাজার হাজার ঘনফুট মাটি। আর এই মাটির সবটুকুই যোগান দিচ্ছে বিষখালী নদী তীরের কাঁদামাটি। প্রতিদিন রাত শেষ হতে না হতেই বিষখালীর দুই তীর জুড়ে চোখে পড়ে সারি সারি ট্রলার আর শত শত মাটি কাটার শ্রমিকদের। প্রায় তিন যুগ ধরে বিষখালী নদীর দুই তীর জুড়ে চলছে অব্যাহত ভাঙন। সেই ভাঙন কবলিত স্থানগুলো থেকে প্রকাশ্য দিবালোকে বেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ট্রলারে করে ইট ভাটায় নিয়ে যাচ্ছে মাটি খেকোর দল। মাটি খেকোরদল নির্বিঘ্নে নদীর পাড়ের মাটি কেটে নেওয়ার ফলে নদী ভাঙন আরো তীব্র হয়ে উঠছে। এদিকে নদী তীরের মাটি কেটে নেওয়ায় হুমকীর মুখে রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ গুলো।
কখনো কখনো দ্রুত ও অধিক মাটি কাটার জন্য এই বাটা মালিকরা ব্যবহার করে মাটি কাটার বেকু মেশিন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বামনা উপজেলার চেঁচান, খোলপটুয়া, রামনা, দক্ষিন রামনা ও চলাভাঙ্গার বিভিন্ন এলাকাসহ নদী তীরবর্তী প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিষখালী নদীর তীব্র ভাঙন অব্যহত রয়েছে। এতে অন্তত ১২টি গ্রামের আবাদি জমি বিলনি হয়ে যাচ্ছে। যুগ যুগ ধরে বামনার বিস্তীর্ণ জনপদ বিষখালীর নদীর অব্যহত ভাঙনে বিলীন হলেও শুধুমাত্র রঞ্চঘাট এলাকা ছারা ভাঙনরোধের কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড। এমন বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে এক শ্রেণীর ইট ভাটা মালিকরা শ্রমিকদের কাজে লাগিয়ে নদী তীরের মাটি কেটে নিচ্ছে। ট্রলার থামিয়ে একদল শ্রমিক ভাঙন কবলিত এলাকার মাটি নির্বিঘ্নে কেটে ট্রলারে ভরে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। নদী তীরের মাটি কেনা বেচায় এখানে গড়ে উঠছে একটি বিরাট চক্র। এই চক্র নদী তীরের মাটি ইটবাটা মালিকদের কাছে বিক্রি করে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা। এর পর বাটা মালিকরা তাদের ইচ্ছে মতোন নদী তীর থেকে শুরু করে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ পর্যন্ত কেটে নেয় মাটি। উপজেলার চলাভাংগা এলাকায় দেখা গেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কোল ঘেসে তারা মাটি কেটে নিয়েছে। সেখানে বিষখালী নদীর তীর বলতে বুঝায় এখন সেই বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধকেই।
নদীর ভাঙনের অতি কাছ থেকে এক শ্রেণীর লোক নদীর মাটি কেটে নেওয়ায় নদীর পাড় আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। মাটি কাটা বন্ধে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় মাটি খেকোর দল যেন বেশী তাণ্ডব শুরু করেছে। স্থানীয়রা জানান, গত ঘূর্ণিঝড় সিডরের জালোচ্ছ্বাসে উপজেলার সকল বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ও বিষখালী নদীর তীর ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়। অথচ সেই বাঁধের অতি কাছ থেকে এক শ্রেণির লোক মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এই মাটি বামনা উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটাসহ পার্শ্ববর্তী মঠবাড়িয়া, কাঠালিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে। নাম প্রকাশ নাকরার শর্তে ইটভাটার সাথে সম্পৃক্ত এক কর্মচারী বলেন, পত্রিকায় লিখলে সরকারী আমলাদের ভাতার পরিমানটা বেড়ে যায় কিন্তু আমাদের কর্মকান্ড বন্ধ হয়না। এই কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে ইটভাটার মালিকরা মসোহারা দিয়ে থাকে। শুধু মধ্য থেকে খরচের পরিমানটা বেড়ে যায়। ভাটা মালিকেদের কিছুই হয়না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেন, নদীর তীরের মাটি কাটা অবৈধ। মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়ে কেউ এর আগে জানায়নি। সরেজমিনে গিয়ে মাটি খেকোদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত ৫০ বছরে বিষখালী নদী ভাঙনে বামনার বিস্তীর্ণ জনপদ বিলীন হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। শুধুমাত্র চেঁচান থেকে বামনা লঞ্চঘাট পর্যন্ত মাত্র দেড় কিলোমিটার নদী ভাঙ্গন রোধে পাইলিং এর কাজ করা হয়েছে। এখনো বিষখালীর অনেকাংশ জুড়ে ভাঙ্গন অব্যহত রয়েছে। অথচ শুনেছি নদীর পাড় থেকে কে বা কাহারা ইটবাটার জন্য মাটি কেটে নিচ্ছে। এটি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন না হলে নদী ভাঙ্গন আরো ত্বরান্নিত হবে।
এমএসএম / এমএসএম

মান্দায় অবৈধ ইট গুড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন

ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

পাবনায় ছাত্র আন্দেলনের সময় দু’ছাত্র হত্যকারী সেই আ.লীগ নেতা সাঈদ চেয়ারম্যানের ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন

ধর্ষকের শাস্তি চেয়ে শিবগঞ্জে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা

চিলমারীতে মহাসড়কের পাশে অবৈধ ভাবে চলছে জ্বালানী তেল বিক্রি

পটুয়াখালীতে আলোচিত কন্টেন্ট ক্রিয়েটর কাফির বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় ছাত্রলীগের দুই কর্মী গ্রেফতার

আইনশৃঙ্খলা অবনতির দায় নিয়ে ইউনুস সরকারের পদত্যাগ দাবি ছাত্রদল নেতার

রাণীশংকৈলে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস পালিত

শ্রীপুরে চার বছরের শিশুর গায়ে সৎ বাবার গরম ছুরির ছ্যাঁকা

দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষায় দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে : লুনা

বাউফল প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সম্মানে ইফতার মাহফিল

কবরস্থান থেকে পাথর উত্তোলন নিয়ে আ.লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষ
