নিয়োগ পরীক্ষার আগেই ক্যান্ডিডেটের হাতে পরীক্ষার প্রশ্ন
বেলা ১২ টায় শুরু হবে নিয়োগ পরীক্ষা। সেই অপেক্ষায় পরীক্ষার্থীরা হঠাৎ ফাইল হাতে আরেকজন পরীক্ষার্থী এসে বললেন চলো ইউএনও স্যারের রুমে তোমাদের পরীক্ষা হবে। শুরু হলো পরীক্ষা। কিন্তু যে পরীক্ষার্থী বাকী পরীক্ষার্থীদেরকে ইউএনও'র রুমে নিয়ে গিয়েছে, তার হাতে থাকা ফাইলেই ছিলো নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন!
এমনই এক বিরল দৃশ্য প্রত্যক্ষ করলেন কিশোর কিশোরী ক্লাবের হাইমচর উপজেলার জেন্ডার প্রমোটার নিয়োগ পরীক্ষার পরীক্ষার্থীরা।
গত ৯ অক্টোবর হাইমচর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের মহিলা বিষয়ক শাখার অধীনে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন 'কিশোর কিশোরী ক্লাব স্থাপন ' আওতায় হাইমচর উপজেলায় স্থাপিত ক্লাব সমুহের জন্য দৈনিক ভিত্তিতে সম্পূর্ণ অস্থায়ীভাবে প্রকল্পের মেয়াদকালীন সময়ের জন্য জেন্ডার প্রোমটার, আবৃত্তি/ কন্ঠশীলন, সংগীত শিক্ষক এই তিন পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
৩০ অক্টোবর জেন্ডার প্রমোটার পদে হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে এই নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন মাত্র চার জন শিক্ষার্থী।
হাইমচর উপজেলার কিশোর-কিশোরী ক্লাব প্রকল্পের অধীনে জেন্ডার প্রোমোটার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সার্জিয়া আফরিনের বিরুদ্ধে। তিনি তারই অধীনে একটি প্রকল্পে পোশাক প্রশিক্ষণ ট্রেনার হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করা রেখা আক্তার নামে ওই পরীক্ষার্থীকে জেন্ডার প্রমোটার পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য একটি কথিত নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে বাকী পরীক্ষার্থীরা।
অভিযোগসূত্রে জানা যায়, পরীক্ষার আগে অন্য একটি প্রকল্পে ট্রেনার হিসেবে হাইমচর উপজেলার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অফিসে চাকরি করতেন রেখা আক্তার। সেও এবার জেন্ডার প্রোমোটার পদে চাকরির জন্য নিয়োগ পরীক্ষায় নিয়েছেন। অথচ নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন পরীক্ষার আগ মুহুর্তে পযর্ন্ত সেই পরীক্ষার্থী রেখার হাতেই ছিল বলে অভিযোগ করেছেন বাকি পরীক্ষার্থীরা।
বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা, রেখা নামের ঐ পরীক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরেই মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অফিসে চাকরি করার সুবাদে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সার্জিয়া আফরিনের সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠেছে। যার কারণে বেশিরভাগ সময়ে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অফিসে গিয়ে বিভিন্ন কাজ করতে দেখা যায় রেখাকে। সূত্র বলছে, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সার্জিয়া আফরিন তার বেশিরভাগ কাজ রেখাকে দিয়ে করান। রেখাকে দিয়েই মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তার কম্পিউটারের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করে থাকেন। যেহেতু এই নিয়োগ পরীক্ষার সদস্য সচিব ছিলেন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সার্জিয়া আফরিন। তাই তিনি এই প্রশ্নে রেখার আক্তারের সাহায্য নিয়ে এই তৈরি করেছেন। যার ফলে নিয়োগ পরীক্ষার দিন রেখার নিজেই তার হাতে করে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে এসেছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে।
এছাড়াও, রেখাকে জেন্ডার প্রোমোটার পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ভাইবা বোর্ডে ছিলেন, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সাথে ছিলেন তার স্বামী একই উপজেলায় কর্মরত যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা। স্বামী এবং স্ত্রী দুজন মিলেই রেখা কেই চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়ার জন্যই এমন কথিত নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করেছে বলে অভিযোগ বাকি পরীক্ষার্থীদের।
অনিয়র বিষয়ে হাইমচর উপজেলার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সার্জিয়া আফরিন বলেন, এই বিষয়ে আপনি কথা কেন বলেন। আপনার সমস্যা কি। রেখা আমার অফিসে আগে চাকরি করতো। এখনতো করে না। আপনি এ বিষয়ে ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলেন। তবে অভিযোগের বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
অভিযোগের সত্যতা মিললো নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চাই থোয়াইহলা চৌধুরীর বক্তব্যে, নিয়োগ পরীক্ষার এই অনিয়মের বিষয়ে তার মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি কেন বলছেন সে (রেখা) চাকরি করতো? সে একটা প্রজেক্টে ছিলো। সেই প্রজেক্ট তো শেষ। সে সেখানে কাজ করেছে, তার অনেক অভিজ্ঞ আছে । সে অনেক কিছু জানে। তাকে যদি প্রশ্ন করেন সে উওর জানবে। এটা স্বাভাবিক। আর নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন কে তৈরি করেছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বলেছেন তিনি করেছেন, পরে আবার বলেন তিনি তার সিএকে দিয়ে করিয়েছেন।
নিয়োগের অনিয়মের বিষয়ে চাঁদপুর মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অফিসের উপপরিচালক নাসিমা আক্তার বলেন, আমি শুনেছি নিয়োগ হয়ে গেছে। যেহেতু অভিযোগ উঠেছে আমি তার (হাইমচর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার) সাথে কথা বলে বিস্তারিত জানি। এখন কথা বলে যদি সমস্যা সমাধান করা যায়। তাহলে তো আর নিউজ করার দরকার নেই। আপনি আপাতত নিউজ করবেন না। আমি আপনাকে বিস্তারিত জানাবো। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আপনাকে জানাবো। যদিও গত ৭ দিনেও তিনি এই বিষয়ে কিছু জানানি। তাকে কয়েকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এমএসএম / এমএসএম