রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত হলেন ভাষাসৈনিক মীর আনিসুল হক পেয়ারা
সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় স্ত্রীর কবরের পাশে সমাহিত হলেন উত্তরের সবর্জনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী, সংগঠক, বিশিষ্ট রাজনীতিক, স্কাউটার মীর আনিসুল হক পেয়ারা (৮৬)। আজ (৩১ মে) সোমবার বেলা ১১টায় মাহিগঞ্জ শাহী মসজিদ প্রাঙ্গণে জেলা প্রশাসক আসিব আহসানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি প্লাটুন রাষ্ট্রীয় সম্মামনা গার্ড অব অনার প্রদান করে। এরপর জানাজা শেষে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এ সময় রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সফি, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ইলিয়াছ আহমেদ, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সিটিএসবি প্রধান উপ-কমিশনার আবু বক্কর সিদ্দিক, স্কাউটস কমিশনার সিদ্দিকুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমিটি রংপুর জেলার সভাপতি কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম, জেলা যুবলীগের পক্ষে কামরুজ্জামান শাহীন, জেলা ছাত্রলীগের মেহেদী হাসান রনি, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা জানানো শেষে মাহিগঞ্জ সরকারি কবরস্থানে স্ত্রীর পাশে তাকে দাফন করা হয়।
মীর আনিসুল হক পেয়ারা রোববার (৩০ মে) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়ছিল ৮৬ বছর। তিনি ৪ কন্যা ১ পুত্রসন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেলেন।
১৯৩৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেন আনিসুল হক পেয়ারা। তিনি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। এ কারণে ’৫২-এর পরে তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয়েছিল। দীর্ঘদিন তাকে আত্মগোপনে থাকতে হয়েছিল। ১৯৬১ সালে মাহিগঞ্জ আফানউল্ল্যাহ উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন আনিসুল হক পেয়ারা। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ৬৬’র ছয় দফা আন্দোলনের সময় দুই মাস কারাবন্দি ছিলেন। একাত্তরে স্বাধীনতাযুদ্ধে তিনি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
তিনি সংবাদ সংস্থা বাসস-এর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতা করেছিলেন। বাংলাদেশ স্কাউটস-এর জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা স্কাউটার মীর আনিসুল হক পেয়ারা ছিলেন স্কাউটিংয়ের আত্মনিবেদনকারী। তিনি আফানুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক স্কাউট লিডার ও রংপুর জেলা স্কাউটে দীর্ঘ সময় (১৯৮৫-২০০৩ সাল পর্যন্ত) ধরে জেলা স্কাউট কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ স্কাউটস-এর সর্বোচ্চ পদক রোপ্য বাঘ্র অর্জন করেন। ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা স্কাউটার মীর আনিসুল হক পেয়ারার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ স্কাউটস রংপুর জেলা রোভার ও জেলা স্কাউট পরিবারের সকল কর্মকর্তা, লিডার ও সদস্যবৃন্দ। স্কাউট অঙ্গনের এমন একজন অবিভাবকের মৃত্যুতে জেলা রোভার ও স্কাউট পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
তার মৃত্যুতে সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল ওয়াহাব ভুঞা, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহা. আবদুল আলীম মাহমুদ, ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য, জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি, জাসদ বাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, পেশাজীবী, সামাজিক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান শোকবার্তা দিয়েছে। শোকবার্তায় মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে।
এমএসএম / জামান