চৌগাছায় দেড়’শ হেক্টরে চাষ হয়েছে তিল বিরুপ আবাহওয়ায় ফলন বিপর্যয়ের শংকা
যশোরের চৌগাছা অঞ্চল হতে প্রায় বিলুপ্তি হয়ে যাওয়া দেশের অন্যতম তেলজাত ফসল তিলের চাষ আবারও ফিরিয়ে এনেছেন কৃষক। উপজেলার প্রতিটি এলাকাতেই কম বেশি চাষ হয়েছে তিলের। বপনের পর হতে সব কিছু ঠিক থাকলেও বর্তমানে প্রচন্ড রোদ আর গরমে ফলন বিপর্যের শংকা দেখা দিয়েছে এমনটিই জানান তিল চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মৌসুমে চৌগাছায় ১৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের তিল হয়েছে। এরমধ্যে বারী-৩,৪ বিনা- ২,৩ ও ৪ এবং স্থানীয় জাত উল্লেখযোগ্য। কৃষি অফিসের প্রচেষ্টায় হারিয়ে যাওয়া ফসলে কৃষক আবারও মনোযোগী হয়ে উঠেছেন।গতকাল উপজেলার পাতিবিলা, হাকিমপুর, স্বরুপদাহসহ বেশ কিছু ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে তিল খেত গুলো এখনও ফুলে ভরে আছে। তিলের সাদা ফুল হতে মধু সংগ্রহে মৌমাছি ব্যস্ত। মাঠ জুড়ে মৌমাছির গুনগুন শব্দে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
পাতিবিলা ইউনিয়নের মুক্তদাহ মাঠে ক্ষেত পরিচর্জায় ব্যস্ত কৃষক কালু মিয়া। তিনি জানান, এ বছর দেড় বিঘা জমিতে তিল চাষ করেছেন। গত কয়েক বছর ধরে বলাচলে তিল চাষ বাদই দিয়েছিলেন এই কৃষক। কিন্তু কৃষি অফিসের ফিল্ড অফিসারদের সহযোগীতায় তিল চাষ করেছেন। প্রচন্ড খরার কারনে তিলে কিছুটা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। গরম আবহাওয়া কেটে গেলে তিলের ফলন ভালই হবে বলে তিনি মনে করছেন।
উপজেলার বুড়িন্দিয়া গ্রামের তিল চাষি হাববুর রহমান, দেবীপুর গ্রামের আব্দুস ছাত্তার, চাঁদপাড়া গ্রামের কৃষক জাহেদ আলী বলেন, তারা প্রত্যেকে ১ থেকে দেড় বিঘা পর্যন্ত তিল চাষ করেছেন। বাংলা সনের মাঘ মাসের শেষে ও ফাল্গুনের প্রথমে জমি প্রস্তুত করে বীজ বপন করেন। এক বিঘা জমিতে ৮শ গ্রাম বীজ লাগে, তিল চাষে তুলনামুলক ব্যায় কম ফলন ভাল হয়ে বেশ আয় হয়। ভাল ফলন হলে এবং তিলের ফল হতে বীজ বের করার সময় বৃষ্টির কবলে না পড়তে বিঘায় ৫/৬ মন তিল পাওয়া যায়। তিল যেহেতু তেলজাত ফসল তাই বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সে কারনে তিল উঠার সাথে সাথে কাংখিত মুল্যে বাজারে বিক্রি করা সম্ভব হয়। নানা কারনে তিলের চাষ হারিয়ে যায়, বর্তমানে আবারও এর চাষ বেড়েছে বলে মনে করছেন চাষিরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তিল পুষ্টি উপাদানে ভরা। তিলের বীজে প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্্িরডেন্টস, ভিটামিন ই,বি কমপ্লেক্্র, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের মত খনিজ দিয়ে ভরা থাকে। এটি স্বাস্থ্যকর ভোজ্যতেল গুলোর মধ্যে একটি। এই তেল কেবল রান্নার জন্যই নয়, চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয়। পুষ্টি উপাদান গুলোর জন্য এটি ’তেলের রানী’ হিসেবে পরিচিত। নিয়মিত তিলের তেল খেলে রক্তচাপ হ্রাস পাই, বøাড সুগার কমায়, ত্বকের সুরক্ষা করে, হাঁড় সুস্থ্য রাখে, দাঁতের সমস্যা দুর করে, হার্ট ভালো রাখে এবং মানাষিক স্বাস্থ্যকে ভাল রাখতে সহায়তা করে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসাব্বির হোসাইন বলেন, তিল চাষ বৃদ্ধির লক্ষে আমরা কৃষকদের উৎসাহ দিচ্ছি, বলাচলে এ বছর আশানুরুপ চাষ হয়েছে। আগামীতে চাষ আরও বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এমএসএম / এমএসএম