তাপপ্রবহে কাঁঠাল স্বাভাবিক বৃদ্ধি পাইনি , ফলন বিপর্যয়ের শংকায় চৌগাছার কৃষক
যশোরের চৌগাছা উপজেলায় এবছর কাঁঠালের ফলন নিয়ে শংকা দেখা দিয়েছে। বৈশাখ মাসে তীব্র তাপপ্রবাহের কারনে কাঁঠল তার পরিপূর্ণতা পাইনি, বেশির ভাগ গাছে কাঁঠল এখনও রয়েছে ছোট তাই ফলন বিপর্যয়ের আশংকায় চাষিরা।
চৌগাছা উপজেলার মাটি সব ধরনের ফসলাদি, ফল ফলাদি চাষে অত্যান্ত উপযোগী। এ জনপদের মানুষ যখন যে ফসল উৎপানে গেছেন তারা প্রাকৃতিক কোন দূর্যোগের কবলে না পড়লে হয়েছেন লাভবান। বর্তমানে উপজেলাতে অন্যান্য ফলের পাশাপাশি জাতীয় ফল কাঁঠালের বানিজ্যিক চাষ করছেন কৃষকরা। গত কয়েক বছর ধরে কাঁঠালের বাম্পার ফলনের পাশাপাশি বাজার দর ভাল পাওয়ায় কৃষক বেশ লাভবান হয়েছেন। তবে চলতি বছরে সেই ধরনের সম্ভবনা খুবই কম বলে মনে করছেন কাঁঠাল চাষিরা।
গতকাল উপজেলার কংশারীপুর, তরিনিবাস, কদমতলা, মাশিলাসহ বেশ কিছু গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, কাঁঠাল গাছে পর্যাপ্ত পরিমানে কাঁঠাল ধরেছে, কিন্তু এখনও অধিকাংশ গাছের কাঁঠাল রয়েছে তুলনা মুলক ছোট। সম্প্রতি তাপের কারনে কাঁঠাল বেড়ে উঠতে পারেনি বলে জানান চাষিরা।
কথা হয় কদমতলা গ্রামের রিপন হোসেন, তোতা মিয়া, তারিনিবাস গ্রামের হাফিজুর রহমান, ফজলুর রহমানের সাথে। তারা বলেন, কাঁঠাল গ্রাম বাংলা তো বটেই শহরের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি ফল। মৌসুম এলে রসালো এই ফলের স্বাদ নিতে কেউ ভুল করেনা। এক দশক আগেও গ্রামের পতিত জমি বা বাড়ির আশপাশে যেনতেন ভাবে কাঁঠাল গাছ বেড়ে উঠেছে। সেই সমস্ত গাছে যে কাঁঠাল ধরেছে তা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করা হতো। সময়ের সাথে পাল্টে গেছে অনেক কিছুই। এখন বাজারে কাঁঠালের চাহিদা রয়েছে ব্যাপক আর দামও সন্তোজনক। সে কারনে অনেকেই এখন বানিজ্যিক ভাবে কাঁঠাল চাষ করছেন।
গৃহবধু মর্জিনা খাতুন, সাথি খাতুন বলেন, জৈষ্ঠ্য মাস এলেই গ্রামের বাড়িতে কাঁঠাল না থাকলে বেজায় বেমানান দেখা যায়। কাঁঠালের স্বাদ আর সুগন্ধ সকলকে বিমোহিত করে। একটি কাঁঠাল হতে অনেক কিছুই মেলে সে কারনে কাঁঠালের যেন জুড়ি নেই। বিশেষ করে কাঁঠারের স্বাস (কুয়া) আমরা খাই, বিচি দিয়ে হয় হরেক রকমের তরকারি রান্না। দেশি মুরগী আর কাঁঠালের বিচি রান্নার স্বাদ যে একবার নিয়েছে সে তো বারবার খেতে চাই। কাঁঠালের বিচি ভাজি খেতেও বেশ সুস্বাদু। এ ছাড়া কাঁঠালের বাকল বাড়িতে পোষা প্রাণীরা খাই, সব মিলিয়ে একটি কাঁঠালের কোন কিছুই পড়ে থকে না সবই কাজের বলে তারা মনে করেন।
মৌসুমী কাঁঠাল ব্যবসায়ী আড়পাড়া গ্রামের হযরত আলী, জামাল হোসেন, বাবলুর রহমান বলেন, এবছর কাঁঠালের সংকট দেখা দিতে পারে। অন্য বছরের এই সময়ে আমরা গ্রাম হতে কাঁঠাল কিনে তা বাজারে বিক্রি শুরু করেছি। গাছে কাঁঠাল আছে প্রচুর পরিমানে কিন্তু সাইজে ছোট সে কারনে গাছ মালিকরা কাঁঠাল বিক্রি করতে চাইছে না। ব্যবসায়ীরা জানান, চৌগাছায় উৎপাদিত কাঁঠাল রাজধানী ঢাকাসহ খুলনা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাটি, মোংলা, বাগেরহাট জেলাতে যাই। মৌসুম শুরু হলে দলে দলে ব্যাপারীরা চৌগাছা হাটে আসেন এবং ট্রাক লোড নিয়ে কাঁঠাল নিয়ে যান স্বস্ব জেলাতে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসাব্বির হুসাইন বলেন, প্রচন্ড তাপ কাঁঠালের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করেছে ঠিকই। কিন্তু ওই সময়ে আমরা চাষিদের বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছি। আশা করছি কৃষক শেষমেষ লাভবান হবেন।
এমএসএম / এমএসএম