সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিলের দাবিতে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) নবম দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সহ প্রায় ৩৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।এ সময় এক বক্তা বলেন, আজকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক দেখাতে পারবেন না, যার কানাডার বেগম পাড়া বা মালেশিয়ায় নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। কিন্তু সরকারের নীতি নির্ধারকদের দেখবেন এসবের কোনো অভাব নেই। এইটা একটা ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র শিক্ষাকে ধ্বংস করে দেয়ার ষড়যন্ত্র। তাই আমরা আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাথে থেকে এই কর্মবিরতি পালন করে যাবো। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনের নিচ তলায় দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন এবং সম্পাদক অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান এর নেতৃত্বে শতাধিক শিক্ষকদের উপস্থিতিতে এই কর্মবিরতি চলাকালীন বিভিন্ন বক্তব্য প্রদান করে শিক্ষকরা। এসময় কর্মবিরতিতে অংশ নেয়া শিক্ষক নেতারা বলেন, একজন শিক্ষক তার চাকরি জীবন শেষ করে ৭৫ বছর পর কি আত্নহত্যার পথ বেছে নিবে? একজন শিক্ষক যদি তার চাকরি জীবন শেষ করে স্বনির্ভর না হতে পারে তার থেকে লজ্জার কিছু থাকবে বলে মনে হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জাতি গড়ার কারিগর। আর এই পেশায় এই প্রত্যয় স্কিম ঢুকিয়ে মেধাবীদের আসতে না দিয়ে জাতিকে তারা মেরুদণ্ডহীন করে দিবে। যেনো আর কেও তাদের উপর মাথা উঁচু করে কথা না বলতে পারে। তাই আমাদের ছাত্রদের প্রতি আহবান থাকবে তারাও এই ব্যাপারে সচেতন থাকে।তারা বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিমের নিয়ে গত পরশু সংবাদ সম্মেলন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সারাদেশে শিক্ষকদের সর্বাত্মক আন্দোলনে ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় অচল হয়ে গেলেও সর্বজনীন পেনশন নিয়ে শিক্ষকদের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো কথা বলেননি। আমাদের সরকারের প্রতি আহবান থাকবে যেনো দ্রুততম সময়ের মধ্যে এর সমাধান দিয়ে আমাদের ক্লাসে ফিরিয়ে নেয়।কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষকরা জাতির বিবেক, কিন্তু এই শিক্ষকদের আজকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। তাই শিক্ষার্থী যারা আছেন তারাও আমাদের সাথে একমত পোষণ করবেন।তিনি বলেন, আজকে শিক্ষার্থীদের নানাভাবে উস্কিয়ে দেয়া হচ্ছে। তাদেরকে বলা হচ্ছে কতজন তোমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারবা? তোমাদের তো লক্ষ্য হওয়া উচিত বিসিএস। তবে আমি শিক্ষার্থীদের বলবো দুইটি কারণে হলেও আমাদের সাথে থাকা উচিত তোমাদের। ১) আপনাদের পিতা-মাতার পরেই শিক্ষকদের স্থান এবং ২) জাতিকে মেরুদণ্ডহীন করার যে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য হলেও এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়া দরকার।প্রসঙ্গত, গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে বলা হয়, চলতি বছরের ১ জুলাইয়ের পর থেকে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার চাকরিতে যারা নতুন যোগ দেবেন, তারা বিদ্যমান ব্যবস্থার মতো আর অবসরোত্তর পেনশন-সুবিধা পাবেন না। তার পরিবর্তে নতুনদের বাধ্যতামূলক সর্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্ত করা হবে। এটি প্রত্যাহারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণও লাগাতার কর্মসূচি করে আসছেন।