কবি বন্দে আলী মিয়ার পৈত্রিক বাড়িটি অযত্ন অবহেলা দৈন্যদশায় পড়ে আছে

পাবনায় রাধানগর-নারায়ণপুরে শিশু সাহিত্যিক ও বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন কবি বন্দে আলী মিয়ার পৈতৃক বাড়িটি যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পড়ে আছে।
ভদ্র, বিনয়ী, মৃদুভাষী, ধীর বুদ্ধির ও শান্ত কবির ১১৮ বছরের পুরনো বাড়িটি প্রায় ছয় বিঘা জমিতে ঘাস-জঙ্গলে ঢাকা।
ভগ্নাদশা ভবনের জানালা ও দরজা নষ্ট হয়ে গেছে। ভবনের ছাদসহ অনেক জায়গায় গাছপালা জন্মেছে। মোটকথা, পুরো বাড়িটাই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
একজন অত্যন্ত প্রতিভাধর কবি, বন্দে আলী মিয়া ১৯০৬ সালের ১৭ জানুয়ারি পাবনা জেলা শহরের রাধানগর-নারায়ণপুর মহল্লায় একটি নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
তার পিতা মুন্সী উমেদ আলী পাবনা জজকোর্টে চাকরি করতেন। কবি বন্দে আলী মিয়া সারা জীবন দারিদ্র্যের সাথে সংগ্রাম করেছেন। তিনি রাজশাহী বেতারে চাকরি করতেন। তিনি নিরলসভাবে তার সাধনায় মগ্ন ছিলেন।
কবি বন্দে আলী মিয়া গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের আচার-আচরণ ও চরিত্রের বৈশিষ্ট্য এবং গ্রামীণ দৃশ্যগুলোকে ছড়ায় আকর্ষণীয় উপায়ে চিত্রিত করেছেন।
বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন কবি বন্দে আলী মিয়া। শিশু সাহিত্যিক কবি বন্দে আলী মিয়া কোমলমতি শিশুদের জন্য অসংখ্য কবিতা, ছড়াসহ প্রবন্ধ, উপন্যাস লিখে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। কিন্তু বাংলার কবি, প্রকৃতির কবি, গণমানুষের কবি বন্দে আলী মিয়ার পৈত্রিক বাড়িটি বড়ই অবহেলা ও দৈন্যদশা পড়ে আছে।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) বিকেলে কবির বাড়িতে গিয়ে কবির ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনিদের সাথে কথা হয়। তারা জানান,“ কবি বন্দে আলী মিয়া ছিলেন পিতা-মাতার এক মাত্র সন্তান। কবির ৩ মেয়ে ও ৬ ছেলের মধ্যে জীবিত আছেন ছোট ছেলে রমিজুল ইসলাম (৬২) ও দু’মেয়ে যথাক্রমে দিলরুবা বেগম ( ৬৭) ও আফরোজা বেগম(৬৮)।
রমিজুল ইসলাম হলেন বাকপ্রতিবন্দি। তিনি অত্যন্ত অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। অস্বচ্ছলতার কারণে বাবার বাড়িটি বিক্রির জন্য তারা অন লাইনে ঘোষণা দেন। ঘোষণাটি দৃষ্টিতে আসলে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্মকর্তারা কবির বাড়িতে আসেন এবং পবিারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বাড়িটির ঐতিহ্য রক্ষার্থে সংরক্ষণ করবে বলে জানান। এতে পরিবার সম্মত হয়েছেন বলে কবির মেয়ে আফরোজা বেগম জানান।
আফরোজা বেগম আলাপচারিতাকালে বলেন,‘ আব্বা রাজশাহী বেতার থেকে বাড়িতে এসে কিছু খাওয়ার শেষেই কলম নিয়ে টেবিলে বসে লেখা শুরু করতেন। আমরা কখনো তার রাগ দেখিনি। মেয়েদের ডাকার আগে মা শব্দটি ব্যবহার করতেন। অত্যন্ত ধীর মস্তিস্কে যে কোন কাজ করতেন। আমার বাবা বেশির ভাগ সময় পাঞ্জাবী পায়জামা পরিধান করতেন। তিনি প্রায় সময় বলতেন,‘ মিনতি করি,সুমতি হোক, শান্তি আসুক।’
আফরোজা বেগম ও তাদের পরিবারের সদস্যরা জানান,কবির লেখা অসংখ্য পান্ডলিপি বাংলা একাডেমিতে পড়ে আছে। অপ্রকাশিত ঐ সমস্ত লেখা প্রকাশের ব্যবস্থা, বিভিন্ন বই থেকে বিতাড়িত কবির লেখা গল্প ও কবিতা পুনরায় সংযোজন করার জন্য অনুরোধ করেছেন। তারা কবি কুঞ্জ বাড়িটি সরকারিভাবে রক্ষা এবং তার স্মৃতি জাগিয়ে রাখার প্রত্যাশা কবি পরিবারসহ পাবনাবাসির।
দীর্ঘদিন ধরে কবির পরিবারসহ শিল্প সংস্কৃতিসম্পন্ন পাবনাবাসি কবির বাসভবনকে ‘কবি বন্দে আলী মিয়া স্মৃতি জাদুঘর-সংগ্রহশালা’ বা মিউজিয়াম পার্ক, লাইব্রেরী বা আর্ট কেন্দ্র অথবা অন্য কিছু করার নিরলস প্রচেষ্টা করেও কোন সাড়া না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন।
যদিও অতি সম্প্রতি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্মকর্তাগণ বাড়িটি পরিদর্শণ করেছেন এবং কবির বাড়িটির স্মৃতির ঐতিহ্য সংরক্ষণের আশ্বাস দিয়েছেন।
দীর্ঘদিন আগে কিছু সংস্কৃতি ভাবাসম্পন্ন ব্যক্তির সমন্বয়ে “কবি বন্দে আলী মিয়া স্মরণ পরিষদ” নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহবায়ক পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ এই প্রতিবেদককে বলেন,“খ্যাতিমান কবি বন্দে আলী মিয়ার স্মরণ করার জন্য এই কমিটিটি গঠন করেছি। নিজেদের সংগৃহীত অর্থ দিয়ে অন্তত কবির জন্ম বার্ষিকী ও মৃত্যবার্ষিকী পালন করা হয়। আমি কবির বাড়িটির ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”
অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী কবি বন্দে আলী মিয়া ১৯০৬ সালের ১৭ জানুয়ারি পাবনা জেলা শহরের রাধানগর-নারায়ণপুর মহল্লায় তিনি এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মুন্সী উমেদ আলী। তিনি পাবনা জজকোর্টে চাকরি করতেন।
কবি বন্দে আলী মিয়া আজীবন দরিদ্রতার সাথে লড়াই করেছেন। রাজশাহী বেতারে তিনি চাকরি করতেন। লেখকপ্রেমিক কবি বন্দে আলী মিয়া কখনো সাহিত্যপ্রেম ত্যাগ করেননি। নিরলসভাবে নিজের সাধনায় নিমগ্ন ছিলেন।
কবি বন্দে আলী মিয়া কবিতায় আকর্ষণীয় ছন্দে গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের জীবন-আচরণ, গ্রামের দৃশ্যপট চিত্রিত করেছেন। বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন কবি বন্দে আলী মিয়া একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, শিশু সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও চিত্রকর ছিলেন।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, কবি বন্দে আলী মিয়া ১৯২৩ সালে পাবনা শহরে মজুমদার একাডেমি থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। এরপর কলকাতা আর্ট একাডেমিতে ভর্তি হন এবং প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। সে সময় তিনিই ছিলেন সেখানকার একমাত্র মুসলিম ছাত্র। ১৯২৫ সালে ‘ইসলাম দর্শন’ পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। ১৯৩০ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত কলকাতা কর্পোরেশন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর তিনি কলকাতা জীবনে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সান্নিধ্য লাভ করেন।
বিভিন্ন গ্রামোফোন কোম্পানি তার পালাগান ও নাটিকা রেকর্ড করে বাজারে ছাড়ে। তার প্রায় ২০০ গ্রন্থ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ময়নামতির চর, অনুরাগ, পদ্মানদীর চর, মধুমতির চর, ধরিত্রী, অরণ্য, গোধূলী, ঝড়ের সংকেত। শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-চোর জামাই, মেঘকুমারী, মৃগপরী, বোকা জামাই, কামাল আতাতুর্ক, ছোটদের নজরুল।
তিনি সহজ-সরল শব্দ চয়নে কবিতা নির্মাণ করে প্রতিভার সাক্ষও রেখেছেন। তিনি শুধু একজন কবি ছিলেন না, ছিলেন চিত্রকর, ইসক্রিপ্ট লেখক। ১৯২৭ সালে কলকাতার আশুতোষ লাইব্রেরী থেকে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ‘ চোর-জামাই’ প্রকাশিত হয়। ১৯৩১ সালে কলকাতার ডিএম লাইব্রেরী থেকে তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘ময়নামতির চর’ প্রকাশিত হয়। এই কাব্যের মাধমে তিনি তৎকালীন কবিদের মধ্যে নিজের স্থান কওে নেন এবং কবি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায় কবি বন্দে আলী মিয়ার কাব্য প্রতিভা প্রস্ফুটিত হতে শুরু করে কিশোর বয়সেই। পাবনার মজুমদার একাডেমীতে তিনি নবম শ্রেণির ছাত্র সময়কাল থেকেই কাব্য চর্চা শুরু করেন। ‘ছিন্নপত্র’ নামে তাঁর প্রথম কবিতা নাটোরের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সী গেজেটে ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয়।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর কবি বন্দে আলী মিয়া কলকাতা থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। ১৯৬৪ সালে ঢাকা বেতারে এবং পরে রাজাশাহী বেতারে যোগ দেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সেখানেই কর্মরত ছিলেন।
কবি বন্দে আলী মিয়া শিশু সাহিত্যে উল্লেখযোগ অবদানের জন্য ১৯৬২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৬৫ সালে প্রেসিডেন্ট পুরস্কার, ১৯৬৭ সালে প্রাইড অফ পারফরম্যান্স পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৮ সালে রাজশাহীর উত্তরা সাহিত্য মজলিস পদক পান। তিনি মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন।
পাবনা জেলার আটঘরিয়া উপজেলায় দেবোত্তর কবি বন্দে আলী মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এছাড়া পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ২০২২ সালে ‘কবি বন্দে আলী মিয়া মুক্তমঞ্চে’র উদ্বোধন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের দিন এটি ক্যাম্পাসে অবস্থিত একটি লেকের পাশে মুক্তমঞ্চের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হাফিজা খাতুন।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাসিনা খান।
এছাড়া তার নামের আর কোনো স্মৃতিমূলক কিছুই নেই।
৭৩ বছর বয়সে ১৯৭৯ সালে ২৭ জুন রাজশাহীতে তিনি মারা যান।
এমএসএম / এমএসএম

লোহাগড়া বাজারে সরকারি সড়ক গিলে খাচ্ছে তিনতলা ভবন

জয়ের ঘ্রাণ পাচ্ছেন শেখ সাদী ?

যমুনা ব্যাংকের ঢাকা উত্তর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের ম্যানেজারস’ মিটিং অনুষ্ঠিত

মিরসরাইয়ে মহাসড়ক সংলগ্ন অবৈধ বাউন্ডারি ওয়াল গুঁড়িয়ে দিল উপজেলা প্রশাসন

চিলমারীতে যৌথ অভিযানে, অনলাইন জুয়ার সরঞ্জামসহ দুই যুবক আটক

পারিবারিক দ্বন্দ্বে আহত হয়েও ‘জুলাই যোদ্ধা’ গেজেটে নাম পেলেন বাঘার জাহিদ

মহেশখালীতে শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর অনুষ্ঠিত

তাড়াশে আগুনে বসত ঘর পুড়ে ছাই, ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি

সুবর্ণচরে বিশিষ্ট সমাজসেবক আকবর হোসেনকে সংবর্ধনা

কোটালীপাড়ায় পুকুরে ডুবে প্রতিবন্ধী যুবকের মৃত্যু

ধামরাইয়ে পোশাক কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
