শিবচরে সাপে কাটা রোগী চিকিৎসায় সুস্থ ৯১ জন
শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গত তিন মাসে ৯২ জন সাপে কাটা রোগী ভর্তি হন। এদের মধ্যে ৯০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েই সুস্থ্য হয়েছেন জানা গেছে। একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এবং গুরুতর অসুস্থ্য অবস্থায় এক রোগীকে হাসপাতালে আনার পর পরই মারা যায়। ভর্তি হওয়া ৯২ জন রোগীর মধ্যে ১২ জন বিষধর সাপের দংশনে আক্রান্ত ছিল। যাদের এন্টিভেনম দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদ বেষ্টিত শিবচর উপজেলার চরাঞ্চল ও নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকায় চলতি বছরের প্রথম থেকেই রাসেলস ভাইপার সাপের প্রকোপ দেখা দেয়।
গত জুলাই মাসের ১ তারিখে পাটজাগ দিতে গিয়ে উপজেলার চরজানাজাত এলাকার কৃষক সুলতান বেপারী(৫২) রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে আক্রান্ত হন। দ্রুত তাকে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে স্বজনেরা। পরে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে 'বিষধর' সাপের কামড় বলে নিশ্চিত হন।
পরে তাৎক্ষণিক মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তার চিকিৎসা শুরু করেন চিকিৎসকেরা। এন্টিভেনম প্রয়োগের পর রোগী সুস্থ্য হয়ে উঠে। সাপের দংশনের শিকার সুলতান বেপারী সুস্থ্য হয়ে উঠলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যপক সাড়া পড়ে। এরপর থেকে শিবচর ও আশেপাশের এলাকার সাপের কামড়ে আহত রোগীরা আসতে শুরু করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
এরপর গত ৭ জুলাই পদ্মাবেষ্টিত চরজানাজাত থেকে মমিন শেখ নামের এক ব্যক্তি বিষধর সাপের কামড়ে আক্রন্ত হন। পরে সাপসহ(রাসেলস ভাইপার) রোগীকে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন স্বজনেরা। একই দিন রাত ১ টার দিকে উপজেলার বাঁশকান্দি এলাকা থেকে সাপের কামড়ে গুরুতর আহত সজীব হাওলাদার নামের এক যুবককে নিয়ে আসা হয় হাসপাতালে। এন্টিভেনম প্রয়োগে তারা উভয়ই সুস্থ্য হন। পরবর্তীতে আরও একাধিক রোগী এন্টিভেনম প্রয়োগ সুস্থ্য হয়ে উঠেন।
একাধিক রোগীরা জানান, শিবচর হাসপাতালে ভর্তি হবার ২/৩ দিনের মধ্যেই অনেক রোগী সুস্থ্য হয়েছেন। এখন সাপে কাটলেই রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে চলে আসে আক্রান্তরা। আগে হাসপাতালে সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা হয়, অনেকেই জানতো না। তাছাড়া আগে হাসপাতালে ততটা গুরুত্বও দিতো না। বর্তমানে গুরুত্বসহকারে রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে।
শিবচর উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত তিন মাসে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে ৯২ জন রোগী ভর্তি হন। এদের মধ্যে ১২ জন রোগী বিষধর সাপের কামড়ে আক্রান্ত ছিল। এন্টিভেনম প্রয়োগে ১১ জন রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ্য হয়ে উঠেন। এর মধ্যে গুরুতর অবস্থা হাসপাতালে আনার পর একজনের মৃত্যু হয়। এছাড়া অন্যদের ২/১ দিন পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়।
হাসপাতাল সূত্র আরও জানায়, নদ-নদী বেষ্টিত শিবচরে সাপের উপদ্রব বেশি থাকায় চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমান এন্টিভেনম রাখা হয়। সাপের কামড়ে আক্রান্তদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে এলে এখানেই সঠিক চিকিৎসা সম্ভব। তাছাড়া চরাঞ্চলের রোগী এন্টিভেনম প্রয়োগে সুস্থ্য হবার পর সাপের কামড়ে আক্রান্ত অসংখ্য রোগী এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসছে।
শিবচর"উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের টি.এইচ.এ(থানা হেলথ এডমিনিস্ট্রেটর) ডা.ফাতিমা মাহজাবিন বলেন, আমাদের হাসপাতালে পর্যাপ্ত এন্টিভেনম রয়েছে। শেষ হবার আগেই আমরা চাহিদা দিয়ে থাকি। সাপের কামড়ে আক্রান্তদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসলে যথাযথ চিকিৎসার মধ্য দিয়ে সুস্থ্য করে তোলা সম্ভব । ওঝার কাছে না গিয়ে যতদ্রুত সম্ভব শিবচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী নিয়ে আসতে হবে। এব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। শিবচর হাসপাতালেই সাপের কামড়ে আক্রান্ত রোগীর সর্বোচ্চ চিকিৎসা হয়ে থাকে।
T.A.S / T.A.S