ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

দেনার দায়ে বন্ধ কেশবপুর এ্যাগ্রো লিমিটেড : সচল করতে নতুন ঋণ নেয়ার প্রচেষ্টা


সোহেল পারভেজ, কেশবপুর photo সোহেল পারভেজ, কেশবপুর
প্রকাশিত: ২-৬-২০২১ দুপুর ৩:৪২

যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের সাতবাড়িয়ায় অবস্থিত ‘কেশবপুর ‍এ্যাগ্রো লিমিডেট’ পুরাতন ঋণের দেনার দায়ে বন্ধ রয়েছে। চলছে নতুন করে ঋণ নেয়ার প্রক্রিয়া।

কেশবপুর সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কেশবপুর এ্যাগ্রো লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী ও ম্যানেজিং ডিরেক্টের শেখ বাবুর আলী। তিনি মির্জানগর গ্রামের মৃত শেখ ইসমাইল হোসেনের ছোট ছেলে ‍এবং ঢাকায় একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতি বলে জানা গেছে। ঢাকায় বর্তমান ঠিকানা ১২২/১ শান্তিনগর, পল্টন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা। কর্পোররেট ঠিকানা হিসেবে ৭৮, মতিঝিল সি/এ (৫ম তলা), ঢাকা-১০০০।

প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কেশবপুর এ্যাগ্রো লিমিটেডের কার্যক্রম এক দশকও পার হয়নি। কেশবপুর এ্যাগ্রো লিমিটেডের নামে সাতবাড়িয়া ২নং মৌজায় এসএ খতিয়ান ৪৬৬, ৪৬৭, ৪৬৮, আরএস খতিয়ান১০৪১, আরএস সেপারেশন-৪৬৮/২ খতিয়ানে ১১৮ শতক জমি; একই মৌজায় এসএ খতিয়ান ১৩৯৩, আরএস খতিয়ান ১০১১, আরএস সেপারেশন  ১৫৩৯ খতিয়ানে ১০.২৫ শতক জমিসহ মোট ১২৮.২৫ শতক জমি রয়েছে বলে জানা গেছে।

এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, সাতবাড়িয়া গালর্স স্কুলের গায়ে রউফ মাস্টারের বাড়ির পাশে ১৮-২০ কাঠা জমি রয়েছে। মির্জানগর বাওড় কান্দায় ১-২ বিঘা জমি আছে। নবাববাড়ির পাশে নিজের খরিদকৃত ১ বিঘা জমি তাও নাকি সম্প্রতি বিক্রি করে দিয়েছে। ঢাকায় শেখ বাবুর আলীর বাড়ি ও ফ্ল্যাট থাকলেও নিজ গ্রাম মির্জানগরে কোনো বাড়ি তিনি করেননি। নিজের সহদোর ভাই আব্দুল মান্নান মাস্টারের বাড়িতে বেড়াতে এসে থাকেন বলে জানা গেছে।      

গত ৩০ মে সরেজমিন দেখা গেছে, কেশবপুর এ্যাগ্রো লিমিটেড মেইন রোড ও সোলিং রোডের পার্শ্বে টাঙানো সাইনবোর্ডের অক্ষরগুলোর রং চটে গেছে। অযত্ন, অবহেলা ও ঋণের ভারের চিহৃ দেখা গেছে সাইনবোর্ড দুটিতে। বিকেলে দেখা যায় গেটের ভেতরে তালা দেয়া। বন্ধ রংচটা ফ্যাক্টরির সামনে একটি মোটরসাইকেল দেখা গেলেও বহু হাঁকডাকের পরও এ্যাগ্রোর ভেতর থেকে কোনো লোককে বের করা যায়নি। রংচটা টিনের ঘেরা কেশবপুর এ্যাগ্রো লিমিটেডের ছবি তোলার চেষ্টা করলেও মেইন গেটের বাইরে থেকে ভালো ছবি তোলা যায়নি। 

কেশবপুর এ্যাগ্রো লিমিটেডের পাশে বসবাসকারী এক মহিলা আমাদের দেখে বলেন, চাদড়া গ্রামের (বড় মসজিদের পার্শ্বে) জিয়াউর রহমান ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আর বাবুর আলীর পোতা ছেলে মোস্তাকিন ‍এবং ম্যানেজার মিলে দেখাশোনা করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মহিলা নিজে ডেকেও ম্যানেজার ও মোস্তাকিনের সাড়া না পেয়ে বলেন, মিলটি ঋণ দেনায় ভরা। প্রায় প্রতিদিন কেউ না কেউ আসে তাগাদা দিতে বা খোঁজ নিতে। না পেয়ে চলে যায়। কয়েক মাস হলো মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিয়েছে।

ঋণ দেনায় ভরা কেশবপুর এ্যাগ্রো লিমিটেড সম্পর্কে স্থানীয় কয়েকজনসহ তার নিজ গ্রাম মির্জানগরের বৌবাজারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, কেশবপুর এ্যাগ্রো লিমিটেড প্রকল্প দেখিয়ে ২০১৩ সালে আইসিবি (ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) থেকে বড় অংকের টাকা লোন নিয়েছিল। এছাড়া এ প্রকল্পটি দেখিয়ে আরো অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন বলে ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান যাচাই-বাছাই করলে জানতে পারবেন বলে দাবি করেন। 

প্রতিষ্ঠানের নামে আর কোন কোন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন তা জানতে চাইলে মিলের পাশে বসবাসকারী একজন বলেন, শুনেছি আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। সম্প্রতি আরব-বাংলাদেশ ব্যাংকে ১৩৭.২৫ শতক জমি মর্টগেজ দেখিয়ে ১০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার চেষ্টায় আছেন। ২০ মে কেশবপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে তিনটি মৌজায় প্রায় ১৩৮ শতক জমির বিপরীতে কেশবপুর এ্যাগ্রো লিমিটেডের নামে ১০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার চেষ্টাস্বরূপ উক্ত জমির মর্টগেজ দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিদ্যুৎ সংযোগ কর্তন সম্পর্কে ৩১ মে কেশবপুর পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিস সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাসের বিল বকেয়া থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ঋণ দেনায় ভরা, আপনাদের বকেয়ার টাকা উসুল হবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেশবপুর এ্যাগ্রো লিমিটেডে সংযোগ দেয়ার জন্য ৯ লাখ টাকা নিরাপত্তা জামানত কেশবপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে জমা আছে।  

কেশবপুর এ্যাগ্রো লিমিটেড সম্পর্কে মির্জানগর বৌবাজারে অবস্থিত সার ব্যবসায়ী তার ভাইপো শেখ লাল্টুর কাছে জানতে চাইলে তিনি কিছুই জানে না বলে জানান। এমনকি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর শেখ বাবুর আলীর মোবাইল নম্বর চাইলে তার (লাল্টুর) কাছে নেই বলে জানান। আমাদের নম্বরটি রেখে গেলে ওই নম্বরে জানাবেন বলে দাবি করলে আমাদের নম্বরটি রেখে এলেও তাতেও কোনো সাড়া মেলেনি।

কেশবপুর এ্যাগ্রো লিমিটেড ঋণ দেনায় ভরা জানালে এলাকাবাসী আরো বলেন, সরকারের উচ্চপদস্থ নেতা ও কর্মকর্তাদের দিয়ে ১০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করতে চলেছেন। ধরাচরা করে এই ছোট্ট একটি প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ঋণ নিয়েছেন। ঢাকায় তার নাকি গার্মেন্টস শিল্প রয়েছে বলে জানালেন কয়েকজন। তারা বলেন, শুনেছি প্রায় ১৩৮ শতক জমি মর্টগেজ দেখিয়ে ঋণ নিতে যাচ্ছে ১০ কোটি টাকা। বর্তমানে সাতবাড়িয়া মৌজায় জমির সরকারি মূল্য বাস্তু/পুকুর/পুকুর পাড় ৬০ হাজার ২০০ টাকা। জমির মূল্য চারগুণ সরকারি হিসাবে ধরলে প্রতি শতক ২ লাখ টাকা করে ১৩৮ শতকের দাম ২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আর কারখানার মূল্য হয়তো ২ কোটি টাকা হবে। বাকি টাকা আসবে কোথা থেকে? সরকার যদি বকেয়া রিকভারির জন্য নতুন করে একই প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তির নামে ঋণ দেয় তাহলে এর দায়-দেনা কাদের ওপর পড়বে? ঋণ দেয়া ও রিকভারির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের তো একটি নিয়মনীতি আছে? 

বকেয়া টাকা উসুলের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির নামে মঞ্জুরিকৃত ঋণ বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ইইএফ’-এর প্রধান ইডি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ যোগসাজশে পাস করানোর জন্য বিভিন্ন অবৈধ সুযোগ গ্রহণ করে থাকেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অবসরপ্রাপ্ত এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন।

ব্যাংকের নিয়মনীতি অনুযায়ী কোনো গ্রাহকের নামে বা প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো ঋণ বরাদ্দ করতে হলে অন্য কোনো ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ নিয়েছে কি-না তা বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘সিআইবি’ রিপোর্টে উল্লেখ থাকে। কেশবপুর এ্যাগ্রো লিমিটেডেএর নামে ইতিপূর্বে কোথাও থেকে কোনো ঋণ নেয়া আছে কি-না নথিতে ‘সিআইবি’র রিপোর্ট না থাকায় ঋণ মঞ্জুরকারী ব্যাংক তা জানতে পারেনি। সিআইবির রিপোর্ট না থাকায় যে কোনো ঋণ ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানান ওই অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

বেকারত্ব সমস্যা সমাধানে এলাকায় শিল্পকারখানা গড়ে উঠুক বলে এলাকাবাসী জানান। স্থানীয় শিক্ষিত বেকাররা চাকরি পেয়ে স্বাবলম্বী হবে বলে তারা আশা করেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই নানা সমস্যায় জর্জরিত ও বন্ধ আছে। বন্ধ কেশবপুর এ্যাগ্রো লিমিটেড আবার সচল হোক সবাই চায়। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে এলাকার বেকার সমস্যার সমাধান করতে এ প্রতিষ্ঠানে জনবল নিয়োগে কী কী পদ আছে, জনবল কতজন নিয়োগ করা যাবে, জনবলের পেছনে বার্ষিক কত টাকা বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় হয়- এসব কিছু জানার জন্য প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার জিয়াউর রহমানকে পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট নিকটতম কোনো লোকের কাছে জানতে চেয়েও পাওয়া যায়নি। এমনকি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর শেখ বাবুর আলীর সাথে মুঠোফোনে কথা বলতে চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।  

এমএসএম / জামান

শালিখায় তিলাওয়াতুল কুরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

বীজ কিনে প্রতারণার শিকার কৃষক শফিকুলের ১০ বিঘার ধানে চিটা

শিবচরে হত্যা মামলার প্রধান আসামি শাহাদাত গ্রেফতার

ধামরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় চার শ্রমিক নিহত

পিরোজপুরে উদ্দীপনের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান

শাজাহানপুরে বাসের ধাক্কায় যুবক নিহত

পিরোজপুরে উদ্দীপনের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান

উলিপুরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে শিশুর মৃত্যু

মান্দায় আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা

ব্রহ্মপুত্র তীরের কাশফুলের খর: অর্থনৈতিক উৎসে পরিণত

ধামইরহাটে জর্ডানে নারী কর্মী পাঠাতে প্রশাসনের উদ্যোগে কর্মশালা ও জব ফেয়ার

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশে ৭৮ লাখ চক্ষু পরীক্ষা ও ৪৫ লাখ লোকের চিকিৎসা করেছে অরবিস