ঢাকার প্রথম হান্ডি বিফ-হান্ডি মাটন নিয়ে সুমন মিয়া’র আবেশ হোটেল ও বিরিয়ানী হাউজ
ঢাকার জনবহুল এলাকা মিরপুরে খাদ্যপ্রেমীদের বিভিন্ন ঘরানার রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফের প্রাচুর্য দেখা যায়। বাংলাদেশী স্টাইলের খাবার বিশেষত মাছ-মাংসের মুখরোচক রেসিপি সবাইকে আকর্ষণ করে। গরুর মাংসের ঘরোয়া রান্নার পাশাপাশি মেজবানী গরুর গোশত, গরুর কালাভুনা, গরুর চুইঝাল, গরুর রেজালা এবং অতি সম্প্রতি গরুর হান্ডি বা বিফ হান্ডি আইটেম দুর্দান্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ঢাকায় অনেকে হান্ডি বিফ এখন তৈরি করছে, তবে এই প্রচলনের জন্ম-লগ্ন বা উৎস খুঁজতে গেলে মোঃ সুমন মিয়া'র নাম আসবে সবার আগে। ২৮ বছরের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বাংলা খাবারের নির্ভরযোগ্য বাবুর্চি মোঃ সুমন মিয়ার রেসিপিতে ৫ বছর আগে ঢাকায় প্রথমবারের মত শুরু হয় অথেন্টিক হান্ডি বিফ এবং হান্ডি মাটন। ক্রমাগত এই খবর ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মুখে মুখে। মিরপুর-২ এবং মিরপুর-১২’র সুনামধারী আবেশ হোটেল ও বিরিয়ানী হাউজে ২০১৯ সাল থেকে এই আইটেম চলতে শুরু করে। ভারত এবং পাকিস্তান ধাঁচের এই অথেন্টিক বিফ ও মাটন হান্ডি’র গোশত টুকরাগুলো দারুণ মোলায়েম এবং সিদ্ধ হয়, মনে হয় পরতে পরতে মসলা পৌঁছে গেছে। একটু বেশী জ্বাল দেওয়া, মাখামাখা ধরণের মাঝারী আকারের গোশতের সাথে সিদ্ধ হয়ে যাওয়া রসুন এবং কাঁচা শুকনো মসলার পরিণত রান্নায় হান্ডি বিফ ও মাটন অপূর্ব স্বাদের অবতারণা করে। শুধু ঘন ঝোল দিয়েই ধোঁয়া ওড়া ভাত ১ প্লেট খেয়ে ফেলা সম্ভব। টাটকা গোশত, সর্ষের তেল এবং পরিমিত মসলা, পেঁয়াজ, রসুন ও শুকনো মরিচ ব্যবহৃত হয় বিধায় স্বাদ হয় দুর্দান্ত, ঘরোয়া রান্নার কথা স্মরণ চলে আসে ! মূলত কয়েক ধরণের মসলা উপাদান মেরিনেট করা গোশতে মিশিয়ে অনেকগুলো মাটির হাঁড়ি বিশেষ কায়দায় চুলার আগুণে রাখা হয় এবং আড়াই ঘণ্টার ধীরগতির আগুণের তাপে প্রস্তুত হয়ে ওঠে উষ্ণতায় ভরা বিফ হান্ডি ও মাটন হান্ডি। প্রতিটি দম হাড়িতে আড়াই কেজি গোশত আঁটে। উল্লেখ্য, আবেশ হোটেলের সব শাখাতে হান্ডি ছাড়াও সুস্বাদু খাবারের তালিকায় রয়েছে দেশী মুরগী ও হাঁস ভুনা, দারুণ মজাদার গরুর বট ভুনা, কেবল দুপুরে খাওয়ার জন্য দেশীয় নদীর মাছের সমারোহ এবং খাঁটি দুধে তৈরি গাজরের হালুয়া। ও, আবেশের গুড়ের দুধ চা কিন্তু বেজায় স্বাদের! মোট কথা, এসব আইটেম দেখলে চোখে লাগে ধাঁধা, মনে জাগে নেশা, জিভে আসে পানি।
লম্বা আলাপের ফাঁকে বাংলাদেশে হান্ডি বিফের আবিষ্কারক মোঃ সুমন মিয়া আমাদের টিমকে জানান- “১৯৯৬ সালে খুব অল্প বয়সে ভাগ্য পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে নিজ জেলা হবিগঞ্জ থেকে ঢাকায় আগমণ করি। একটি রেস্টুরেন্টে চাকরী নিয়ে ধীরে ধীরে নিজের সততা, নিষ্ঠা, কাজের দক্ষতা এবং পরিশ্রম দিয়ে বছর দশেকের মধ্যে ভাল অবস্থানে পৌঁছে যাই। চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে খাদ্যমান ও গুণের কারণে আমি তৎকালীন সময়ে অনেক রাষ্ট্রীয় এবং ভিআইপি জাতীয় অনুষ্ঠানে ক্যাটারিং করার সুযোগ পেয়েছি। বর্তমানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আমার এই বিশেষ আইটেম খেয়েছেন কয়েকবার। মূলত, ২০১৯ সালে ভারতের কলকাতা বেড়াতে যাই, সেখানে চরম জনপ্রিয় কলকাতার মাটন হান্ডি গোশত আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তখন আমি দ্রুততার সাথে হান্ডি গোশত’র রেসিপি উক্ত ওস্তাদের কাছ থেকে শিখে ফেলি এবং সেটি তৎক্ষণাৎ দেশে ফিরে এসে রান্নায় প্রয়োগ করি। ২ কেজি বিফ হান্ডি পরীক্ষামূলক ভাবে রান্না করি মিরপুরের বর্তমান আবেশ হোটেলে, তখন ছোট পরিসরে ৪ টি টেবিলে ১৬ জন বসে খাবার উপভোগ করতে পারত। এদেশে বিফ হান্ডি’র নাম আমার দেওয়া। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে মানুষের মুখে মুখে হান্ডি বিফের সুনাম ছড়ায়। সময়ের সাথে এখন ৩ টি শাখা খোদ মিরপুরেই হয়েছে গত ৪ বছরে, আর পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আমার এই হান্ডি গোশতের চাহিদা। পাকিস্তান, ভারত এবং দুবাই থেকে আগত অনেকে এই আইটেম খেয়ে প্রশংসা করে গেছে। আবেশ হোটেলে সব শাখা মিলে এখন দুই শতাধিক কর্মী কাজ করছে একত্রে, আর শত শত মানুষ সব শাখাতে বসে খাদ্য উপভোগ করতে পারছেন। ঢাকার রামপুরা বনশ্রীতে মেইন রোডে চতুর্থ শাখা ২০২৫- ফেব্রুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে শুভ সূচনা করছে। আমরা চেষ্টা করি খাবার রান্নার সময় যত্ন নিতে এবং দাম অনুপাতে পরিমাণে খাবার একটু বেশী দিতে। প্রতিটি খাদ্য উপাদান সলিড ও ভাল রাখতে আমরা মনোযোগী। সব খাবারের দাম বাজার অনুপাতে রাখা হয়, সবার হাতের নাগালে। মানবিক দিকটাও বিশেষ বিবেচনায় থাকে আমাদের, সেজন্য অনেক অভাবী বা টাকা খুইয়ে বিপদে পড়া কেউ আবেশ হোটেলে খেতে চাইলে আমরা বিনে পয়সায় সাধ্যমত আপ্যায়ন করে দেই।"
বলা বাহুল্য, আবেশ হোটেলের যৌথ কর্ণধার রয়েছেন। বাবুর্চি মোঃ সুমন মিয়া অবশ্যই তাদের একজন, আরেকজন হলেন যার নামে এই হোটেলের নাম, সেই আবেশের পিতা। মিরপুর-১২ এবং চিড়িয়াখানা রোডের ইদ্গাহ সংলগ্ন শাখা দিন-রাত ২৪ ঘন্টাই খোলা থাকে। বাকি শাখা দুটি সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত খোলা। বসে উপভোগ করার পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে বহু লোক পছন্দের খাবার পার্সেলও নিয়ে থাকেন। দিনের খাবার দিনেই শেষ হয়ে যায়, বরং অসময়ে এলে পরম আরাধ্য হান্ডি বিফ বা মাটন পাওয়াই যায় না! সুতরাং, মনোমুগ্ধকর হান্ডি বিফ- হান্ডি মাটন এবং দেশীয় স্বাদময় খাবার খেতে ঢাকার মিরপুর এলাকায় আবেশ হোটেলে অবশ্যই আগে আগে ঘুরে আসবেন।
এমএসএম / এমএসএম