"হাসান মামার বিরিয়ানী হাউজ"- ব্যতিক্রম দেশীয় খাবারের সমারোহ মিরপুর স্টেডিয়াম পাড়ায়
ঢাকার মিরপুরে এখন বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফের প্রাচুর্য দেখা যাচ্ছে। ক্রিকেট স্টেডিয়ামের চারপাশে, বিশেষত মিরপুর-২ রোডে ৪ নং গেটের সামনে অসংখ্য ফুডকার্ট পরিলক্ষিত হয়। মূলত, মিরপুর এলাকায় ফুডকার্ট চর্চা আবিষ্কার এবং ফুডকার্টের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী করেছেন করেছেন যিনি, তিনি অতি সাধারণ নড়াইলের মো: হাসান মোল্লা, ১০ বছরের অভিজ্ঞ বাবুর্চী। খাদ্যপ্রেমীদের কাছে বহুল পরিচিত "হাসান মামা" নামে; চমকপ্রদ সব খাবার প্রতিনিয়ত উপস্থাপন করে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ হাসান মামা, তবে তার রান্না অসাধারণ! মিরপুরবাসী তো বটেই, ঢাকার অধিকাংশ অধিবাসী অদ্ভুত কিছু আইটেমের সাথে পরিচিত হয়েছে হাসান মামার রান্না কৌশলের মাধ্যমে। মিরপুর শেরে বাংলা ন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ৪ নম্বর গেটের সন্নিকটে "হাসান মামার বিরিয়ানী হাউজ" ফুডকার্ট। এর আগে হাসান মামা ফুডকার্ট ব্যবসায় ছিলেন, তবে তা খুব উজ্জ্বল আলোর মুখ দেখেনি। করোনার সময় থেকে প্রধান খাদ্যসমূহ সীমিত পরিসরে গরম গরম বিক্রয় শুরু করেন স্টেডিয়াম গেট ৪ এ। অত:পর, আশ্চর্যজনক সব খাবারের আইটেম নিয়ে আসেন হাসান মামা। দিনে দিনে খাবারের উন্নত মান ও স্বাদের বদৌলতে রীতিমত ভাইরাল হয়ে গেছে এসব। দুর্দান্ত সব আইটেম দেখলে চোখে লাগে ধাধা, মনে জাগে নেশা, জিভে আসে পানি।
সাথে বিরল ও ব্যতিক্রম কিছু আইটেমের উপস্থাপনাও করেছেন হাসান মামা, সেগুলো খেতে খাদ্যরসিকদের ভীড় লেগে থাকে। যেমন- উট ভুনা, খরগোশ ভুনা, গরুর ল্যাঞ্জা ভুনা, বিরাটাকার নল্লী-নেহারী, পাহাড়ী ধাচের ব্যাম্বু চিকেন। এসব আইটেম খুব কম জায়গাতেই দেখা মেলে এবং সবাই দক্ষ হাতে রান্নাও করতে পারে না। হাসান মামার রান্না শৈলী দারুণ, তাই এসব আইটেম অসাধারণ সুস্বাদু হয়৷ গরম ভাত, খিচুড়ি এবং পোলাও এর সাথে খেতে জম্পেশ লাগে। মজার ব্যাপার, হাসান মামার ফুডকার্টে প্যাকেজ স্টাইলে খাবার বিক্রয় হয় এবং প্রতি প্যাকেজে ৫ প্রকার ভর্তা এবং ভাত ফ্রি! আরও আশ্চর্য হল- যে কোন অসহায়, দুস্থ, গরীব, পাগল, ফকির ভরপেট এসে যে কোন সময় খেতে পারবে হাসান মামার ফুডকার্টে।
মেজবানী গরু ভুনা, চুইঝাল গরু ভুনা, গরুর কালো ভুনা, হাঁস ভুনা, বিফ হান্ডি, ব্যাম্বু চিকেন- এসব আইটেম নিয়মিতভাবে প্রতিদিন রান্না হয়, বিকেল ৪ টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত পাওয়া যায় এবং ডেকের পর ডেক বিক্রি হয়। বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে প্রতি বৃহস্পতিবার পাওয়া যায় উটের মাংস ভুনা। প্রশ্ন জাগে, এসব মুখরোচক খাবার খেতে হবে কী দিয়ে? ধোঁয়া ওড়া গরম সাদা ভাত, পোলাও বা খিচুড়ী একদম যোগ্য সাথী। উষ্ণ টাটকা খাবার বসে যেমন উপভোগ করা যায়, আবার পার্সেলও চলে। একটু ঝাল খাবার পছন্দ করেন যারা, তাদের জন্য হাসান মামার নিজস্ব রেসিপির খাবার দারুণ উপভোগ্য। প্রতিটি মাংস আইটেম চমৎকার সিদ্ধ হয়, টানাটানি করে ছিড়েখুঁড়ে খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। মশলার অনুপাত মানানসই, রান্না হয়ে যাওয়ার পরপরই দারুণ সুবাসে নাক ও মন মাতোয়ারা হয়ে পড়ে। যত পরিমাণ ডেক রান্না হোক, অবশিষ্ট থাকে না কোন খাবার। দিনের খাবার দিনেই শেষ। ও, হাসান মামার ফুডকার্টে মাটির কাপে বিশেষ এক সুমিষ্ট দই পাওয়া যায়। সব শ্রেণী-পেশার মানুষ এই ফুডকার্টে খেতে আসে৷ দিন-রাত ভীড় লেগেই থাকে ক্রমাগত। চরম ব্যস্ততায় থাকে ২০ জন স্টাফ!
সুখবর হল, মিরপুর বিআরটিএ'র সামনে "হাসান মামার বিরিয়ানী হাউজ" নামের রেস্টুরেন্ট উদ্ধোধন হয়েছে যেখানে ১০০ জন একত্রে বসে হাসান মামার পরম যত্নশীল সব খাবার উপভোগ করতে পারবে৷ হাসান মামার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হল আরও কয়েকটি রেস্টুরেন্ট করা এবং মানুষকে ব্যতিক্রমী সব হালাল- সাস্থ্যসম্মত খাবার সুলভ মূল্যে পরিবেশন করা৷ পাশাপাশি, রেস্টুরেন্ট করার মধ্য দিয়ে শত শত মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাও হাসান মামার মুখ্য উদ্দেশ্য।
এমএসএম / এমএসএম